এই লেখাটি শুরু করেছি মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত রচনা কবর নাটকের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে। নাটকটির পটভূমি ছিল মহান ভাষা আন্দোলনের। লেখক কারাবন্দী অবস্থায় এই নাটকটি লেখেছিলেন। আমরা যারা একটু আধটুকু পড়ালেখা করেছি তারা সবাই কম বেশি কবর নাটকের মর্মার্থ বুঝতে পেরেছি। ইতিহাসের পাঠে কবরের কথা শুনেছি কিন্তু গণকবরের কথা শুনেনি। গত কয়েকদিন ধরে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে গণকবর সম্পর্কিত প্রতিবেদন। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে এমনিতে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তারপরে আবার গণকবরের সংবাদ দেশবাসীর মনে আরও ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
আমি যে সময়ে এই লেখাটি লেখছি সে সময়েও সংবাদের শিরোনামে মানবপাচারের ভয়াবহতার নির্মম কাহিনীর সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। আর এই লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখনও হয়তো বা নিহত বা আহতদের সংবাদের কথা শুনতে হবে। এই মানবপাচার হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেল সেই প্রশ্ন কেউ করেনি বা করার সাহসটুকু পাচ্ছে না। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার একশ্রেণীর দলকানা সুশীলরা যতই উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বোকা বানাতে চাচ্ছে ততই কেন জানি দেশের আসল চিত্র জাতির সামনে ফুটে ওঠছে। বাসন্তীর কথা কেউ মনে রাখেনি। বাসন্তী তার লজ্জাকে ঢাকতে শরীরে মাছ ধরার জাল পরেছিল। আজ হয়তো বা বাসন্তীর মতো কেউ জাল পড়ছে না। কিন্তু জীবনের সকল মায়া ত্যাগ করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে বাসন্তীর ভাই ব্রাদার।
মানবপাচার যে এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সমস্যার অন্যতম শিকার বাংলাদেশের মানুষ। মানবপাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে দেশের শত শত মানুষ ভিটেবাড়ি বিক্রি করে পাড়ি দিচ্ছে অজানা গন্তব্যে। মালয়েশিয়ায় চাকরির আশায় অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তার হিসেব নেই। পাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে জীবন দান কিংবা ক্রীতদাসের জীবনবরণ করার ঘটনাও কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সাগরপথে মানবপাচারের ঘটনা বেড়েই চলছে। জীবনের তাগিদে মানুষ ছুটে চলে গ্রাম থেকে শহরে কিংবা দেশ থেকে দেশান্তরে। অভাবের তাড়নায় ভালোবাসাও জানালা দিয়ে চলে যায় দূর আকাশে। তখন প্রিয়ার মিষ্টি হাসি আর রঙিন স্বপ্নের কথা শুধু মাত্র রুপকথার গল্পের মতো আকাশে ভাসতে থাকে। এই সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ডিপ ফ্রিজের ভিতরে রয়েই গেল। ক্রসফায়ার মামলা কিংবা গ্রেফতার কোন কিছুই মানবপাচারের টুঁটি চেপে ধরতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি। সরকারের অন্যায়মূলক কোন কথার প্রতিবাদ করলে বা লিখলে সরকারদলীয় লোকজন তেড়ে আসেন। আবার সরকারের জয়গান গাইলে অন্যায় করেও পার পাওয়া যায়। নিকট অতীতে সরকারের সোনার ছেলেরা নিজেরা নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের আজ্ঞাবহ সুশীলরা কোন কথা বলতে অক্ষম।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম অন্যায় যে করে আর যে সহে তারা সমান অপরাধী। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সুজলা সুফলার এই দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে হন্যে হয়ে অবৈধ উপায়ে যখন ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার কৌশল গ্রহণ করে তখন আর আইনের শাসন বা সুশাসন সমাজ বা দেশে থাকে না। আমার কথার সাথে কেউ কেউ হয়ত বা দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। আর করাটাই স্বাভাবিক। নবাব সিরাজউদদৌল্লার পতন ত্বরান্বিত করার পিছনে যতখানি না ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দায়ী ছিল তার চেয়ে বেশি দায়ী ছিল নবাবের কাছের প্রিয় সহচররা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সারা বিশ্ব যেখানে বলেছেন এটি একটি প্রহসনের নির্বাচন সেখানে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সরকার জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি সেই সরকার কি করে মানবপাচার বন্ধ করবে এটাই প্রশ্ন? যে শ্রমিকের কর্মস্থল চামড়ার কারখানায়, চামড়ার গন্ধ সে টের পায় না। অথচ অন্যরা বহুদূর থেকে সে গন্ধ টের পায়। তেমনি অবস্থা বাংলাদেশের জনগণের। দেশ যে ডুবছে- সেটি তারা বুঝতেই পারছে না। আগুনের জ্বলন্ত শিখা দেখার পরও সেখানে যে আগুন জ্বলছে সেটি বুঝতে কি পণ্ডিত হওয়া লাগে? চোখ-কান থাকলেই সেটি বোঝা যায়। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের চোখ-কান আছে বলেই কি মানবপাচারের মহামারি বন্ধ করতে পারছে না।
রাষ্ট্রে যখন নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে পারে না, কলকারখানার শ্রমিকদের শ্রমের প্রকৃত মজুরি ও নিরাপত্তার কর্ম পরিবেশ দিতে পারে না, শিক্ষিত যুবকদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে না তখনই কেবল জীবিকার খোঁজে অবৈধ পথে পাড়ি জমায় মানুষ। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় খুঁজছে কেন তা রাষ্ট্রের উচিত সবার আগে খতিয়ে দেখার। এ কথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হওয়ায় তরুণরা অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইসিআরের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিন বছরে পাচার হওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) আরেক হিসেবে জানা যায়। ২০১৪ সালে পাচারের সময় ৫৪০ জন বাংলাদেশী গভীর সমুদ্রে মারা গেছেন, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। ৮ মে ব্যাংক পোস্টেও এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে জঙ্গলের ঘাঁটি থেকে ১১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯১ জন বাংলাদেশী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১০ মে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে ৪টি ট্রলার থেকে ৪৬৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশী এবং মালাক্কা প্রণালীতে সমুদ্রে নৌকায় ভাসমান অবস্থায় আছে ৭-৮ হাজার অভিবাসী। এর পরদিন উদ্ধারকৃত ১ হাজার ১৮ জনের মধ্যে ৫৫৫ জন বাংলাদেশী ও ৪৬৩ জন রোহিঙ্গা, যাদের মধ্যে ১০১ জন নারী ও ৫২টি শিশু। এ যাবত থাইল্যান্ডে মোট ৩৩টি গণকবর থেকে ৩৩ জন অভিবাসীর দেহাবশেষ ও কংকাল উদ্ধার করা হয়েছে। আর এ মানবপাচারে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এ চার দেশের ২৪১ জন দালাল জড়িত (দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মে ২০১৫)। বিদেশের মাটিতে এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হবে? গত ৬ বছরে ৫৬টি দেশ থেকে ১৪ হাজার প্রবাসীর লাশ এসেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে (প্রথম আলো ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। যাদের ঘাম আর রক্তে উপার্জিত রেমিটেন্সে দেশীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়, সেই অর্থনীতির সোনার ডিম দেয়া প্রবাসীরা যখন দেশে আসে লাশ হয়ে, তখন প্রতিকার ও প্রতিরোধহীন নির্বিকার অকৃতজ্ঞ রাষ্ট্রকে ধিক্কার জানায় বিমানবন্দরের কফিনের সারিগুলো। আমরা বিদেশের মাটিতে আর কোনো বাংলাদেশীর দাসত্বের বন্দীজীবন আর অনাহারে মৃত্যু দেখতে চাই না। সাগরের নৌকায় ভাসমান মানবেতর জীবন, বিমানবন্দরে কফিনের মিছিল, কবর থেকে উঠিয়ে আনা কংকাল কিংবা সাগরের পানিতে ফেলে দেয়া মানুষের লাশ দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।
আমি যে সময়ে এই লেখাটি লেখছি সে সময়েও সংবাদের শিরোনামে মানবপাচারের ভয়াবহতার নির্মম কাহিনীর সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। আর এই লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখনও হয়তো বা নিহত বা আহতদের সংবাদের কথা শুনতে হবে। এই মানবপাচার হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেল সেই প্রশ্ন কেউ করেনি বা করার সাহসটুকু পাচ্ছে না। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার একশ্রেণীর দলকানা সুশীলরা যতই উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বোকা বানাতে চাচ্ছে ততই কেন জানি দেশের আসল চিত্র জাতির সামনে ফুটে ওঠছে। বাসন্তীর কথা কেউ মনে রাখেনি। বাসন্তী তার লজ্জাকে ঢাকতে শরীরে মাছ ধরার জাল পরেছিল। আজ হয়তো বা বাসন্তীর মতো কেউ জাল পড়ছে না। কিন্তু জীবনের সকল মায়া ত্যাগ করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে বাসন্তীর ভাই ব্রাদার।
মানবপাচার যে এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সমস্যার অন্যতম শিকার বাংলাদেশের মানুষ। মানবপাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে দেশের শত শত মানুষ ভিটেবাড়ি বিক্রি করে পাড়ি দিচ্ছে অজানা গন্তব্যে। মালয়েশিয়ায় চাকরির আশায় অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তার হিসেব নেই। পাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে জীবন দান কিংবা ক্রীতদাসের জীবনবরণ করার ঘটনাও কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সাগরপথে মানবপাচারের ঘটনা বেড়েই চলছে। জীবনের তাগিদে মানুষ ছুটে চলে গ্রাম থেকে শহরে কিংবা দেশ থেকে দেশান্তরে। অভাবের তাড়নায় ভালোবাসাও জানালা দিয়ে চলে যায় দূর আকাশে। তখন প্রিয়ার মিষ্টি হাসি আর রঙিন স্বপ্নের কথা শুধু মাত্র রুপকথার গল্পের মতো আকাশে ভাসতে থাকে। এই সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ডিপ ফ্রিজের ভিতরে রয়েই গেল। ক্রসফায়ার মামলা কিংবা গ্রেফতার কোন কিছুই মানবপাচারের টুঁটি চেপে ধরতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি। সরকারের অন্যায়মূলক কোন কথার প্রতিবাদ করলে বা লিখলে সরকারদলীয় লোকজন তেড়ে আসেন। আবার সরকারের জয়গান গাইলে অন্যায় করেও পার পাওয়া যায়। নিকট অতীতে সরকারের সোনার ছেলেরা নিজেরা নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের আজ্ঞাবহ সুশীলরা কোন কথা বলতে অক্ষম।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম অন্যায় যে করে আর যে সহে তারা সমান অপরাধী। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সুজলা সুফলার এই দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে হন্যে হয়ে অবৈধ উপায়ে যখন ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার কৌশল গ্রহণ করে তখন আর আইনের শাসন বা সুশাসন সমাজ বা দেশে থাকে না। আমার কথার সাথে কেউ কেউ হয়ত বা দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। আর করাটাই স্বাভাবিক। নবাব সিরাজউদদৌল্লার পতন ত্বরান্বিত করার পিছনে যতখানি না ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দায়ী ছিল তার চেয়ে বেশি দায়ী ছিল নবাবের কাছের প্রিয় সহচররা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সারা বিশ্ব যেখানে বলেছেন এটি একটি প্রহসনের নির্বাচন সেখানে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সরকার জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি সেই সরকার কি করে মানবপাচার বন্ধ করবে এটাই প্রশ্ন? যে শ্রমিকের কর্মস্থল চামড়ার কারখানায়, চামড়ার গন্ধ সে টের পায় না। অথচ অন্যরা বহুদূর থেকে সে গন্ধ টের পায়। তেমনি অবস্থা বাংলাদেশের জনগণের। দেশ যে ডুবছে- সেটি তারা বুঝতেই পারছে না। আগুনের জ্বলন্ত শিখা দেখার পরও সেখানে যে আগুন জ্বলছে সেটি বুঝতে কি পণ্ডিত হওয়া লাগে? চোখ-কান থাকলেই সেটি বোঝা যায়। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের চোখ-কান আছে বলেই কি মানবপাচারের মহামারি বন্ধ করতে পারছে না।
রাষ্ট্রে যখন নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে পারে না, কলকারখানার শ্রমিকদের শ্রমের প্রকৃত মজুরি ও নিরাপত্তার কর্ম পরিবেশ দিতে পারে না, শিক্ষিত যুবকদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে না তখনই কেবল জীবিকার খোঁজে অবৈধ পথে পাড়ি জমায় মানুষ। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় খুঁজছে কেন তা রাষ্ট্রের উচিত সবার আগে খতিয়ে দেখার। এ কথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হওয়ায় তরুণরা অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইসিআরের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিন বছরে পাচার হওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) আরেক হিসেবে জানা যায়। ২০১৪ সালে পাচারের সময় ৫৪০ জন বাংলাদেশী গভীর সমুদ্রে মারা গেছেন, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। ৮ মে ব্যাংক পোস্টেও এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে জঙ্গলের ঘাঁটি থেকে ১১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯১ জন বাংলাদেশী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১০ মে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে ৪টি ট্রলার থেকে ৪৬৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশী এবং মালাক্কা প্রণালীতে সমুদ্রে নৌকায় ভাসমান অবস্থায় আছে ৭-৮ হাজার অভিবাসী। এর পরদিন উদ্ধারকৃত ১ হাজার ১৮ জনের মধ্যে ৫৫৫ জন বাংলাদেশী ও ৪৬৩ জন রোহিঙ্গা, যাদের মধ্যে ১০১ জন নারী ও ৫২টি শিশু। এ যাবত থাইল্যান্ডে মোট ৩৩টি গণকবর থেকে ৩৩ জন অভিবাসীর দেহাবশেষ ও কংকাল উদ্ধার করা হয়েছে। আর এ মানবপাচারে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এ চার দেশের ২৪১ জন দালাল জড়িত (দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ মে ২০১৫)। বিদেশের মাটিতে এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হবে? গত ৬ বছরে ৫৬টি দেশ থেকে ১৪ হাজার প্রবাসীর লাশ এসেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে (প্রথম আলো ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। যাদের ঘাম আর রক্তে উপার্জিত রেমিটেন্সে দেশীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়, সেই অর্থনীতির সোনার ডিম দেয়া প্রবাসীরা যখন দেশে আসে লাশ হয়ে, তখন প্রতিকার ও প্রতিরোধহীন নির্বিকার অকৃতজ্ঞ রাষ্ট্রকে ধিক্কার জানায় বিমানবন্দরের কফিনের সারিগুলো। আমরা বিদেশের মাটিতে আর কোনো বাংলাদেশীর দাসত্বের বন্দীজীবন আর অনাহারে মৃত্যু দেখতে চাই না। সাগরের নৌকায় ভাসমান মানবেতর জীবন, বিমানবন্দরে কফিনের মিছিল, কবর থেকে উঠিয়ে আনা কংকাল কিংবা সাগরের পানিতে ফেলে দেয়া মানুষের লাশ দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।
মো: তোফাজ্জল বিন আমীন
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন