‘গণতন্ত্র’ ও ‘উন্নয়ন’ এখন বিশ্ব রাজনীতিতে বহুল চর্চিত দু’টি শব্দ। বিশেষ করে যারা সরকার পরিচালনা করছেন, তারা বিরোধী পক্ষের সমালোচনা কিংবা আন্দোলনের জবাবে ওই শব্দ দু’টি ব্যবহারে বেশ পারঙ্গমতা প্রদর্শন করছেন। পাশাপাশি নিজেদের শাসনকে প্রলম্বিত করার খায়েশে ইচ্ছেমতো ‘মৌলবাদ’, ‘জঙ্গিবাদ’সহ আরো কিছু শব্দ ব্যবহারে শাসকরা এখন বেশ উৎসাহী। কিন্তু এতসব চাতুর্য ও কসরতের পরও শাসকরা কি জনগণকে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উপহার দিতে পারছেন? আসলে ক্ষমতালিপ্সু চতুর রাজনীতিবিদরা নানা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার কাজে সফল হলেও জনগণের আশা-আকাংক্ষা পূরণে তারা সক্ষম নন। বর্তমান পৃথিবীতে এমন শাসকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক জনগণের দুর্ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন বাতাবরণে সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বলার যে প্রহসন চলছে, তা মানবসমাজ এত ব্যাপক মাত্রায় আগে লক্ষ্য করেনি। প্রসঙ্গত পাকিস্তানের জিও টিভির নির্বাহী সম্পাদক হামিদ মীরের একটি লেখার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি সম্প্রতি ইউরোপের ছোট্ট দেশ লাটভিয়ায় গিয়েছিলেন। ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে ইউনেস্কো আয়োজিত একটি কনফারেন্সে। উক্ত কনফারেন্সে ৮০টি দেশের তিন শতাধিক সাংবাদিক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত শরিক হয়েছিলেন। হামিদ মীর উক্ত কনফারেন্সে বক্তব্য রেখেছেন এবং অংশগ্রহণকারীদের সাথে নানা বিষয়ে মতবিনিময়ও করেছেন। এইসব বিষয় নিয়ে তার একটি লেখা গত ১৮ মে পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জং-এ মুদ্রিত হয়। তার লেখায় প্রসঙ্গত উল্লেখ করেছেন, ‘কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী নাইজেরিয়ার এক সাংবাদিক অত্যন্ত তিক্ত ভঙ্গিমায় বলেন, বোকো হারামের মতো ধর্মীয় উগ্রপন্থী এবং আল-সিসির মতো সেনা শাসকরা মুসলিম সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আমাকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, মনে রাখবেন যদি মিসরের সেনা সরকার মুহাম্মদ মুরসিকে মৃত্যুদ- প্রদান করে তাহলে আফ্রিকা, মধ্যএশিয়া ও তুরস্কে অস্থিরতার নতুন উন্মাদনা জেগে উঠবে, যা থেকে পাকিস্তানও নিরাপদ থাকবে না। জিজ্ঞাসা করলাম, তা কীভাবে? বর্ষীয়ান কৃষ্ণাঙ্গ ওই সাংবাদিক বললেন, মুহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে সেনা বিপ্লব আফ্রিকা ও মধ্যএশিয়ায় ধর্মের নামে উগ্রপন্থীদের মজবুত করেছে। মিসরে সেনা বিদ্রোহের পরেই ইরাকে আইএস এবং নাইজেরিয়াতে বোকো হারামের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংগঠনগুলো গণতন্ত্রের বিরোধী। ওই লেখায় হামিদ মীর উল্লেখ করেন, ‘মুরসি ও ইউসুফ আল কারজাবি গণতন্ত্রের সমর্থক। উভয়কে এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে মিসরের সেনা সরকার আল কায়েদা, আইএসআর বোকো হারামের পথ সুগম করে দিয়ে তাদের কর্মসূচিকে সহজ করে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- পরিবর্তনের জন্য গণতন্ত্র নয়, বন্দুকের পথ বেছে নিতে হবে। মিসর সরকারের এই জুলুমপূর্ণ অন্যায় রায় শুধু মিসর নয় বরং মুসলিম দেশগুলোর সব গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য নতুন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা যদি সত্যিই উগ্রপন্থীদের মূল থেকে উপড়ে ফেলতে চাই, তাহলে আমাদের জোরালোকণ্ঠে মুহাম্মদ মুরসি ও ইউসুফ আল কারজাবির বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানো উচিত; যাতে মুসলমান সমাজকে অভ্যন্তরীণ ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায়। মুসলিম সমাজের জন্য শুধু বোকো হারাম নয়, বরং জেনারেল আল-সিসির মতো ব্যক্তিরাও বিপজ্জনক’।
হামিদ মীর ধর্মীয় উগ্রপন্থী ও স্বৈরশাসকদের প্রসঙ্গে প্রকৃত সত্য বলার যে দায়িত্ব পালন করেছেন তা অনেকটা ব্যতিক্রম বলেই মনে হয়। কারণ, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যেভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা করা হচ্ছে, যেভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রাজ্ঞ আলেমদের সন্ত্রাসী তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে, তাতে বিবেকবান মানুষরা এ বিষয়টি বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করেছেন যে- শক্তি ও প্রোপাগান্ডার জোরে এখন সহজেই নির্দোষকে অপরাধী এবং অপরাধীকে নির্দোষ বানানো যায়। যেমনটি লক্ষ্য করা গেছে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি এবং খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন ইউসুফ আল কারজাবির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও একই চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রসম্মতভাবে রাজনীতি করে আসছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছে, এমন সংগঠনকেও এখন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে রাজনীতি থেকে বিদায় করার আয়োজন চলছে। যারা গণতন্ত্র বোঝেন, দেশকে ভালোবাসেন তারা কখনও চাতুর্যপূর্ণ এমন ফ্যাসিবাদী কৌশলকে সমর্থন করতে পারেন না। তবে বর্তমান সময়ের ট্র্যাজেডি হলো, গণতন্ত্রের কথা বলেই এখন গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। আর উগ্র সেক্যুলারপন্থীরা উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেই মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। কারো মধ্যে সামান্য সত্যনিষ্ঠা ও সততা থাকলে খুব সহজেই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার বৈষম্যমূলক রাজনীতি ও অপপ্রচারের চিত্রটা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। ইসলামকে আদর্শ মেনে যারা এখন সততার পথে চলতে চাইছেন, উগ্রপন্থার বদলে যারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ রচনা করতে চাইছেন, তাদের জন্য বর্তমান সময়টা খুবই দুঃসময়। তথাকথিত গণতন্ত্রের এমন চিত্র দেখে ভবিষ্যতে ইতিহাসের পাঠকরা হয়তো বিস্ময় প্রকাশ করবেন।
লেখার শুরুতেই বলেছিলাম গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কথা। গণতন্ত্রের নামে যে প্রহসন চলছে তার কিছুটা আভাস তো আমরা পেলাম। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও চলছে সেই একই প্রহসন। গত কয়েক দশকে উন্নয়নের যে ধারা লক্ষ্য করা গেছে, তাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর খুশী হওয়ার মত কোনো বার্তা নেই। আমরা যদি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের দিকে তাকই, সেখানে লক্ষ্য করা যাবে সুবিধাভোগী ক্ষুদ্র একটা অংশের মধ্যে বিপুল সম্পদ ও ঐশ্বর্য্যরে ছড়াছড়ি। তারা নির্লজ্জভাবে ভোগ-বিলাস ও অপচয়ে মত্ত। দুর্বৃত্তায়নের যে অর্থনীতি তার দাপটেই এমনটি হতে পারছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানে ভারসাম্যহীন অর্থনীতির পাশাপাশি ওরা বিপুল সম্পদ ব্যয় করছে যুদ্ধ-উন্মাদনায়। দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা ও বঞ্চনাক্লিষ্ট দুটো দেশের শাসকরাই বিপুল অর্থ ব্যয়ে তৈরি করছে ভয়ঙ্কর পারমাণবিক বোমা। এতেই তারা গর্বিত এবং জনগণের মধ্যেও সেই উন্মাদনা ছড়াতে তারা ব্যস্ত। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপরি) সংকলিত তথ্য অনুযায়ী ভারত বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবং এক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থান তৃতীয়। ব্যাপক দারিদ্র্যের পাশাপাশি ঐশ্বর্য আর ধ্বংস-উন্মাদনার এমন চিত্রকে কি কোনো গণতান্ত্রিক দেশের উন্নয়ন চিত্র হিসেবে অভিহিত করা যায়? রাজনীতির এমন বাতাবরণেই সরকারগুলো কোথাও জাতীয়তাবাদ, কোথাও ধর্মচেতনা, কোথাও বা উন্নয়নের শ্লোগান দিয়ে জনগণকে তাদের পতাকাতলে সংঘবদ্ধ করতে চাইছে। এক্ষেত্রে করপোরেট জগতের নায়করাও সরকারকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা উভয়ে মিলেমিশে না চললে যে কায়েমি স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই যুগল কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নে বেশ তৎপর। কিন্তু সাধারণ মানুষ একথা বেশ ভাল করেই জানে যে, উড়াল সেতু, পিচঢালা সড়ক আর ঝলমলে বাতির জৌলুসই উন্নয়নের সবকিছু নয়। তারা চায় জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা। তারা চায় ব্যাপক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার। লাখো মানুষকে উচ্ছেদ করে ‘করপোরেট-হাব’ নির্মাণের বিপক্ষে তারা। জনগণ নদী, পানি, বন ও খনিজ সম্পদকে সবার তথা জাতীয় সম্পদ বলে মনে করে। এগুলোর কর্তৃত্ব মুনাফাখোরদের হাতে ছেড়ে দিতে চায় না। কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলের বাস্তবতা হলো, করপোরেট-কর্তা ও ক্ষমতাবানরা মিলেমিশে জাতীয় সম্পদকে লুটেপুটে খেতে চায়। ফলে এমন উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা এবং যেসব সংগঠন কথা বলে, তাদের উন্নয়নবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেও কার্পণ্য করা হয় না। আমাদের উপমহাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উন্নয়নের এমন অনাকাঙ্খিত চিত্রই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমি, জল ও বনের উপর ঘরে-বাইরে এখন আগ্রাসন চলছে। করপোরেট আগ্রাসন এবং আধিপত্যবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সম্পর্কসূত্র আমাদের রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করতে হবে। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। নইলে উন্নয়নের হাজারো বুলি শ্রবণ করলেও জনগণের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন হবে না। আসলে আমাদের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন, প্রহসন ও প্রতারণার চোরাবালিতে পড়ে গেছে। অনাকাক্সিক্ষত এমন পরিস্থিতি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হলে এখন প্রয়োজন আদর্শের রাজনীতি এবং নৈতিক মেরুদ-বিশিষ্ট ত্যাগী রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এই দুয়ের সম্মিলনে গণমুখী রাজনীতির অপেক্ষায় আছে বঞ্চিত জনগণ।
হামিদ মীর ধর্মীয় উগ্রপন্থী ও স্বৈরশাসকদের প্রসঙ্গে প্রকৃত সত্য বলার যে দায়িত্ব পালন করেছেন তা অনেকটা ব্যতিক্রম বলেই মনে হয়। কারণ, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যেভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা করা হচ্ছে, যেভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রাজ্ঞ আলেমদের সন্ত্রাসী তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে, তাতে বিবেকবান মানুষরা এ বিষয়টি বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করেছেন যে- শক্তি ও প্রোপাগান্ডার জোরে এখন সহজেই নির্দোষকে অপরাধী এবং অপরাধীকে নির্দোষ বানানো যায়। যেমনটি লক্ষ্য করা গেছে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি এবং খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন ইউসুফ আল কারজাবির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও একই চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রসম্মতভাবে রাজনীতি করে আসছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছে, এমন সংগঠনকেও এখন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে রাজনীতি থেকে বিদায় করার আয়োজন চলছে। যারা গণতন্ত্র বোঝেন, দেশকে ভালোবাসেন তারা কখনও চাতুর্যপূর্ণ এমন ফ্যাসিবাদী কৌশলকে সমর্থন করতে পারেন না। তবে বর্তমান সময়ের ট্র্যাজেডি হলো, গণতন্ত্রের কথা বলেই এখন গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। আর উগ্র সেক্যুলারপন্থীরা উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেই মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। কারো মধ্যে সামান্য সত্যনিষ্ঠা ও সততা থাকলে খুব সহজেই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার বৈষম্যমূলক রাজনীতি ও অপপ্রচারের চিত্রটা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। ইসলামকে আদর্শ মেনে যারা এখন সততার পথে চলতে চাইছেন, উগ্রপন্থার বদলে যারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ রচনা করতে চাইছেন, তাদের জন্য বর্তমান সময়টা খুবই দুঃসময়। তথাকথিত গণতন্ত্রের এমন চিত্র দেখে ভবিষ্যতে ইতিহাসের পাঠকরা হয়তো বিস্ময় প্রকাশ করবেন।
লেখার শুরুতেই বলেছিলাম গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কথা। গণতন্ত্রের নামে যে প্রহসন চলছে তার কিছুটা আভাস তো আমরা পেলাম। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও চলছে সেই একই প্রহসন। গত কয়েক দশকে উন্নয়নের যে ধারা লক্ষ্য করা গেছে, তাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর খুশী হওয়ার মত কোনো বার্তা নেই। আমরা যদি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের দিকে তাকই, সেখানে লক্ষ্য করা যাবে সুবিধাভোগী ক্ষুদ্র একটা অংশের মধ্যে বিপুল সম্পদ ও ঐশ্বর্য্যরে ছড়াছড়ি। তারা নির্লজ্জভাবে ভোগ-বিলাস ও অপচয়ে মত্ত। দুর্বৃত্তায়নের যে অর্থনীতি তার দাপটেই এমনটি হতে পারছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানে ভারসাম্যহীন অর্থনীতির পাশাপাশি ওরা বিপুল সম্পদ ব্যয় করছে যুদ্ধ-উন্মাদনায়। দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা ও বঞ্চনাক্লিষ্ট দুটো দেশের শাসকরাই বিপুল অর্থ ব্যয়ে তৈরি করছে ভয়ঙ্কর পারমাণবিক বোমা। এতেই তারা গর্বিত এবং জনগণের মধ্যেও সেই উন্মাদনা ছড়াতে তারা ব্যস্ত। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপরি) সংকলিত তথ্য অনুযায়ী ভারত বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবং এক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থান তৃতীয়। ব্যাপক দারিদ্র্যের পাশাপাশি ঐশ্বর্য আর ধ্বংস-উন্মাদনার এমন চিত্রকে কি কোনো গণতান্ত্রিক দেশের উন্নয়ন চিত্র হিসেবে অভিহিত করা যায়? রাজনীতির এমন বাতাবরণেই সরকারগুলো কোথাও জাতীয়তাবাদ, কোথাও ধর্মচেতনা, কোথাও বা উন্নয়নের শ্লোগান দিয়ে জনগণকে তাদের পতাকাতলে সংঘবদ্ধ করতে চাইছে। এক্ষেত্রে করপোরেট জগতের নায়করাও সরকারকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা উভয়ে মিলেমিশে না চললে যে কায়েমি স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই যুগল কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নে বেশ তৎপর। কিন্তু সাধারণ মানুষ একথা বেশ ভাল করেই জানে যে, উড়াল সেতু, পিচঢালা সড়ক আর ঝলমলে বাতির জৌলুসই উন্নয়নের সবকিছু নয়। তারা চায় জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা। তারা চায় ব্যাপক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার। লাখো মানুষকে উচ্ছেদ করে ‘করপোরেট-হাব’ নির্মাণের বিপক্ষে তারা। জনগণ নদী, পানি, বন ও খনিজ সম্পদকে সবার তথা জাতীয় সম্পদ বলে মনে করে। এগুলোর কর্তৃত্ব মুনাফাখোরদের হাতে ছেড়ে দিতে চায় না। কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলের বাস্তবতা হলো, করপোরেট-কর্তা ও ক্ষমতাবানরা মিলেমিশে জাতীয় সম্পদকে লুটেপুটে খেতে চায়। ফলে এমন উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা এবং যেসব সংগঠন কথা বলে, তাদের উন্নয়নবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেও কার্পণ্য করা হয় না। আমাদের উপমহাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উন্নয়নের এমন অনাকাঙ্খিত চিত্রই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমি, জল ও বনের উপর ঘরে-বাইরে এখন আগ্রাসন চলছে। করপোরেট আগ্রাসন এবং আধিপত্যবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সম্পর্কসূত্র আমাদের রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করতে হবে। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। নইলে উন্নয়নের হাজারো বুলি শ্রবণ করলেও জনগণের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন হবে না। আসলে আমাদের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন, প্রহসন ও প্রতারণার চোরাবালিতে পড়ে গেছে। অনাকাক্সিক্ষত এমন পরিস্থিতি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হলে এখন প্রয়োজন আদর্শের রাজনীতি এবং নৈতিক মেরুদ-বিশিষ্ট ত্যাগী রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এই দুয়ের সম্মিলনে গণমুখী রাজনীতির অপেক্ষায় আছে বঞ্চিত জনগণ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন