সোমবার, ১৫ জুন, ২০১৫

সভ্যতার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ


পৃথিবীটা এখন ঠিকভাবে চলছে না। এর কারণ প্রহসনের রাজনীতি। নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে রাজনীতি এখন যেন চাতুর্য ও প্রোপাগান্ডার বিষয় হয়ে উঠেছে। দেশে-বিদেশে ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে এখন একই বাতাবরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনীতির এমন বাতারণে এখন সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব। লাখো মুসলিম এখন জুলুম-নির্যাতনের শিকার। কোটি কোটি মুসলিম শান্তিময় জীবন-যাপনের মাধ্যমে শান্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এমন বাতাবরণের মধ্যে কখনও কখনও মুসলিম নামধারী কিছু মানুষকে নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী কিছু কার্যক্রম চালাতে দেখা যাচ্ছে। ঘৃণ্য এসব কার্যক্রমের কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে বেরিয়ে আসছে রহস্যজনক বিষয়-আশয়। এসব কর্মকা-কে উপলক্ষ করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মিডিয়া ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- উদ্দেশ্যমূলক এসব প্রচারণার ব্যাপারে বর্তমান সভ্যতা সঙ্গত ভূমিকা পালন করছে না। এমন অবস্থায় বঞ্চনা ও অপপ্রচারের শিকার মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। সচেতন ও প্রাজ্ঞ মুসলমানরা অবশ্য অনাকাক্সিক্ষত এই হতাশা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক জবাব দেয়ারও চেষ্টা করছেন।
বর্তমান সময়ে আইএস ও বোকো হারামের মতো সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে মুসলিমবিরোধী যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, তা আর ধোপে টিকছে না। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও এখন স্বীকার করছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তৎপর আইএস আমেরিকা থেকে অস্ত্র পাচ্ছে। তিনি মার্কিন ফক্স নিউজকে গত বুধবার বলেছেন, আইএসকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়ে আমেরিকাই দায়ী। ১৫ জুন দৈনিক সংগ্রামে মুদ্রিত খবরে আরও বলা হয়, গত মার্চ মাসে ইরাকের বাদর সংস্থার প্রধান কাশিম আল-আরাজী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, তার কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, আমেরিকা ইচ্ছাকৃতভাবে উগ্রবাদীদের অস্ত্র দিচ্ছে। এছাড়াও ইরাকের গণমাধ্যম ও অন্য কয়েকটি সূত্র অন্তত দু’বার বলেছে, মার্কিন সামরিক বিমান থেকে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অস্ত্র ফেলা হয়েছে। এছাড়া ইরাকের গোয়েন্দা সংস্থা গত ডিসেম্বর মাসে বলেছিল, মার্কিন সামরিক বিমান থেকে আইএস-এর জন্য কয়েকটি প্রাণ-কার্গো ফেলা হয়েছিল। যাতে করে তারা ইরাকের সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর অবরোধ ভাঙতে সক্ষম হয়। এ প্রসঙ্গে কিসিঞ্জার বলেন, এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, আমেরিকা এসব অস্ত্র শুধু তাদের কাছেই পাঠাচ্ছে, যারা পেন্টাগনকে সহায়তা করছে। আর এর মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে, আইএসকে অস্ত্র দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা একটা ভূমিকা পালন করছে। গত বছরের জুন মাসে অ্যারোন ক্লেইন নামে এক সাংবাদিক ওয়ার্ল্ড নেট ডেইলিতে রিপোর্ট করেছিলেন যে, ২০১২ সালে জর্ডানের একটি গোপন ঘাঁটিতে মার্কিন প্রশিক্ষকদের কাছে আইএস সন্ত্রাসীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
এমন ফিরিস্তি আরো বাড়ানো যেতে পারে। তবে মূল কথা হলো, ইসলাম কখনও মুসলমানদের সন্ত্রাসী হতে বলে না কিংবা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে বলে না। এখন মুসলিম নামধারীদের হাতে যে সব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে, তা যে শক্তিমান মহলের পরিকল্পনায় ও কারসাজিতে ঘটছে তা অনেকটাই স্পষ্ট। প্রোপাগান্ডায় জর্জরিত মুসলমানদের এখন আবেগের পরিবর্তে তথ্যভিত্তিক জবাব দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে যে, ইসলামে জিহাদ ও সন্ত্রাস এক কথা নয়। ব্যক্তিগত আবেগ বা ক্ষোভ দিয়ে জিহাদ করা যায় না। জিহাদ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যে কোনো শুভ ও ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টা। জিহাদ নিজের প্রবৃত্তি বা রিপুর বিরুদ্ধে হতে পারে। জিহাদ হতে পারে সামাজিক অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে, জিহাদ হতে পারে পরিবেশ প্রতিবেশে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াসে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও প্রয়োজন হতে পারে জিহাদের। তবে কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ ইচ্ছে করলেই জিহাদ ঘোষণা করতে পারে না। বৃহত্তর জিহাদ ঘোষণা করতে গেলে প্রয়োজন হয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রের। ব্যক্তিগত, ক্ষুদ্র বা বৃহত্তর জিহাদ বা প্রচেষ্টার উত্তম উদাহরণ পাওয়া যায় শেষ নবী হযরত মুহম্মদ মুস্তফা (সাঃ)-এর উজ্জ্বল জীবনে। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং সঙ্গত আচরণের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডার।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads