ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর এবং তার ফলাফল তথা বাংলাদেশের লাভ ও প্রাপ্তি নিয়ে এখনো সব মহলে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটাই স্বাভাবিক। আমরাও এতে অংশ নেবো। কিন্তু তারও আগে বেগম খালেদা জিয়ার সম্প্রতি ফাঁস করে দেয়া একটি তথ্য সম্পর্কে জানানো দরকার। ভারতের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন সানডে গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, মূলত নিজের প্রাণনাশের আশংকা ছিল বলেই ২০১৩ সালের মার্চে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অংশ নেননি। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, সেদিন জামায়াতে ইসলামীর ডাকে হরতাল পালিত হচ্ছিল। হরতালের মধ্যে গাড়িতে চড়ে সোনারগাঁও হোটেলে আসার বা যাওয়ার পথে তার ওপর হামলা চালানো হতো এবং হামলা ও হত্যার দায় চাপানো হতো জামায়াতের ওপর। এটাই ছিল সরকারের পরিকল্পনাÑ ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্র। কিন্তু বিষয়টি আগেই জেনে গিয়েছিলেন বলেই খালেদা জিয়া বৈঠক বাতিল করেছিলেন। সানডে গার্ডিয়ানের সাংবাদিককে খালেদা বলেছেন, এতদিন পর এসে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার ‘প্রকৃত’ কারণ আপনাকে জানালাম।
স্মরণ করা যেতে পারে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের ৪ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আরো অনেকের সঙ্গেই দেখা ও কথা হয়েছিল তার। নড়াইলে শ্বশুরবাড়িতে গেছেন তিনি, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহের দীঘিতে নৌকায় বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত উপভোগ করেছেন। খাওয়া-দাওয়াও যথেষ্টই করেছিলেন। কিন্তু এতকিছুর পরও প্রণব মুখার্জি নাকি খুশি হতে পারেননি বরং ফিরতি পথে বিমানে তাকে যথেষ্ট ‘ক্ষুব্ধ’ দেখেছিলেন ভারতের সাংবাদিকরা। কথাটা ভারতীয় পত্রপত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ক্ষুব্ধ’ হওয়ার কারণ ছিল একটাইÑ বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি এবং পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেছিলেন। প্রণব মুখার্জির প্রতিক্রিয়া জানারও আগে এ ব্যাপারে জানান দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা। তারা এমন এক প্রচারণা চালিয়েছিলেন যেন ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে খালেদা জিয়া বিরাট কোনো ‘অপরাধ’ করে ফেলেছিলেন! ভারতীয়রাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়াই দেখিয়েছিলেন। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছিল, প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি বাতিল করার মাধ্যমে খালেদা জিয়া নাকি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ব্যাপারে ‘সুদূরপ্রসারী বার্তা’ দিয়েছেন! রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার আরও জানিয়েছিল, খালেদা জিয়া আসবেন না- এ খবরটি জানার পর প্রণব মুখার্জির মুখের হাসি নাকি কিছুক্ষণের জন্য ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিল!
সন্দেহ নেই, কথাগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরের আগে-পরে প্রচারণার প্রাধান্যে আনা হয়েছিল। কিন্তু সেদিকে যাওয়ার পরিবর্তে অন্য কিছু তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। গত ৬ জুন মাত্র ৩৬ ঘণ্টার সফরে এসে পুরো বাংলাদেশকেই নৃত্যে মাতিয়ে গেছেন মোদি। এর পেছনে অবদান বেশি ছিল অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের, সেই সাথে অবশ্যই মিডিয়ারও। মনে হচ্ছিল যেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ভারতপন্থী রাজনীতিক এবং সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিক থেকে শুরু করে সাংবাদিক নামধারী পর্যন্ত সকলেরই একমাত্র কাজ হয়ে উঠেছিল মোদি বন্দনা! শুধু তা-ই নয়, বেশ কয়েকদিন আগে থেকে এমন এক প্রচারণাকে সর্বাত্মক করা হয়েছিল যেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘চাহিবা মাত্র’ সবকিছু দিয়ে একেবারে ধন্য করে দেবেন বাংলাদেশকে! তিস্তা চুক্তি তো হবেই, আরো অনেক ‘চমক’ও দেখাবেন ভারতের এই নাটকীয় চরিত্রের প্রধানমন্ত্রী! অন্যদিকে মিস্টার মোদিও তার পূর্বসুরীদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। কেবলই নিয়ে গেছেন তিনি, প্রকৃতপক্ষে কিছুই দেননি বাংলাদেশকে। ফলে বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি ‘হনুজ দূর ওয়াস্ত’ই রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে যথারীতি আবারও খেল দেখিয়ে গেছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ঢাকায় এসেছেন এবং ছোট্ট খুকুমনির মতো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে আদর নিয়েছেন। কিন্তু তিস্তার প্রশ্নে ‘এক চুল’ পরিমাণও সরে যাননি। তিনি বরং বুঝিয়ে গেছেন, জাতীয় স্বার্থে ভারতীয়রা সবাই সমান!
মমতার এই খেল বা ‘পলিট্রিক্স’ নিয়ে আগেও লিখেছি বলে আজকের নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্যের দিকে পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। বাংলাদেশে আসার প্রাক্কালে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা পাওয়া এই মন্তব্যে মিস্টার মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তির নিষ্পত্তি যে আসলে কত বড় অর্জন তা নাকি ভারতের গণমাধ্যমগুলো অনুধাবন করতে পারেনি। এটা বিশ্বের অন্য কোথাও হলে একে ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর পতনের সঙ্গে তুলনা করা হতো, ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর মতো বড় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। প্রধানমন্ত্রী মোদির এই মন্তব্য কিন্তু নিতান্ত কথার কথা নয়, এর অন্তরালে রয়েছে গুরুতর উদ্দেশ্য। দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তি বলতে তিনি ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর স্বাক্ষরিত ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেছেন, যে চুক্তিটি দীর্ঘ ৪১ বছর পর অতি সম্প্রতি ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় অনুমোদন পেয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়ি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল মুজিব সরকার। এজন্য সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী পাস করতে হয়েছিল। কিন্তু ভারতকে বেরুবাড়ি তুলে দিলেও বিনিময়ে তিনবিঘা করিডোরসহ বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো আদায় এবং সীমান্ত চিহ্নিত করতে পারেনি সেকালের আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু তা-ই নয়, ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারত একই সঙ্গে পেয়েছিল ফারাক্কা বাঁধ চালু করার সম্মতি।
প্রশ্ন উঠেছে, ৪১ বছর আগে তারই পূর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে চুক্তিটি স্বাক্ষর করে গেছেন এবং যে চুক্তির বাস্তবায়ন করা ভারতের সকল সরকারের কর্তব্য ছিল, এতদিন পর সে চুক্তির অনুমোদনকে মিস্টার মোদি কেন ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন? এর তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে প্রসঙ্গক্রমে ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর ইতিহাস স্মরণ করা দরকার। সংক্ষেপে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-৪৫) হিটলার ও মুসোলিনির পরাজয়ের পর প্রধান দুই বিজয়ী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া পুরো ইউরোপকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। এ সময়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল জার্মানীকে বিভক্ত বা দ্বিখ-িত করা। এডলফ হিটলারের জার্মানীকে দুটি দেশ বানিয়ে পূর্ব জার্মানীর দখল নিয়েছিল রাশিয়া। অন্যদিকে পশ্চিম জার্মানী গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানীর মাঝখানে নির্মিত হয়েছিল ‘বার্লিন প্রাচীর’। এই প্রাচীর দেশ দুটিকে বিভক্ত করেছিল। অর্থাৎ ‘বার্লিন প্রাচীর’ পরিণত হয়েছিল বিভক্তির প্রতীক হিসেবে। নামে দেশ দুটি অবশ্য স্বাধীনই ছিল। পূর্ব জার্মানীর রাজধানী ছিল বার্লিন, বনকে করা হয়েছিল পশ্চিম জার্মানীর রাজধানী। দুই জার্মানী ছাড়াও পোল্যান্ড, যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া প্রভৃতি দেশের ওপর রাশিয়ার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসব দেশে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র চাপিয়েছিল রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালীসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ। সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বের নতুন নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকায় পশ্চিম জার্মানী ক্রমাগত উন্নতি করেছিল এবং ধনী দেশের অবস্থান অর্জন করেছিল। অন্যদিকে কমিউনিস্ট রাশিয়ার অধীনস্থ হয়ে পড়ায় পূর্ব জার্মানীর অবস্থা দ্রুত শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। মানুষ এমনকি দু’ বেলা ঠিকমতো খাবারও পেতো না। সে কারণেই পশ্চিম জার্মানীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল পূর্ব জার্মানীতে। সেদেশের আন্দোলনকারীরা মাঝেমধ্যেই ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে। এই আন্দোলন জোরদার হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে, যখন তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে রাশিয়ার কোমর ভেঙে গিয়েছিল। এ অবস্থার সুযোগ নিয়েই ১৯৮৯ সালে পূর্ব জার্মানীর জনগণ ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভেঙে ফেলেছিল। তারা শুধু প্রাচীরই ভাঙেনি, দলে দলে গিয়ে পশ্চিম জার্মানীতে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গেও মিলিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের ধনী দেশগুলো সক্রিয় সমর্থন দেয়ায় এবং রাশিয়া তখন নিজেকে বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত থাকায় দুই জার্মানীর পুনর্মিলনকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। পূর্ব ও পশ্চিম শব্দ দুটি হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল এবং জার্মানী আবারও এক দেশে পরিণত হয়েছিল। সেই থেকে বার্লিন জার্মানীর রাজধানী হিসেবে টিকে আছে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও দেশটির রাজধানী।
ইতিহাসের এই অংশটুকুর পর্যালোচনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের বিশেষ ব্যাখ্যাই তুলে ধরবে। সে ব্যাখ্যা হলো, ১৯৪৭ সালে আজকের বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। মিস্টার মোদি সম্ভবত ইতিহাসের এই অংশটুকুই স্মরণ করেছেন এবং বাংলাদেশকে পূর্ব জার্মানীর পথ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে ইতিহাস কিন্তু মিস্টার মোদির ব্যাখ্যাকে অসম্পূর্ণ এবং ভুল হিসেবেই চিহ্নিত করবে। কারণ, একথা সত্য, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের বঙ্গ নামক কোলকাতাকেন্দ্রিক প্রদেশের অংশ ছিল। পরিচিতি ছিল পূর্ব বঙ্গ নামে। কিন্তু ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে মুসলিম প্রধান এ অঞ্চলের সঙ্গে মূল ভারতের দ্বন্দ্ব ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দু’-চারজন ছাড়া জমিদারদের প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। মুসলমান কৃষকদের ওপর হিন্দু জমিদাররা যথেচ্ছ শোষণ-নির্যাতন চালাতো। মুসলমানরা এমনকি জমিদার বাড়ির আশপাশ দিয়ে জুতো পরে বা ছাতা মাথায় দিয়েও যাতায়াত করতে পারতেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি ছিল হিন্দুদের দখলে। শিক্ষাতেও হিন্দুরাই একচেটিয়াভাবে এগিয়ে ছিল। সব মিলিয়েই মুসলমানরা ছিলেন নির্যাতিত, উপেক্ষিত ও পশ্চাদপদ অবস্থায়।
হিন্দুদের প্রাধান্য বহাল রেখে মুসলমানদের পক্ষে যেহেতু উন্নতি-অগ্রগতি অর্জন করা একেবারেই সম্ভব ছিল না, সেহেতু মুসলিম প্রধান পূর্ব বঙ্গ ও প্রতিবেশী রাজ্য আসামকে নিয়ে পৃথক একটি প্রদেশ গঠনের দাবিতে মুসলমানরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে পূর্ব বঙ্গ ও আসামকে নিয়ে নতুন একটি প্রদেশ গঠন করে। ঢাকাকে এর রাজধানী করা হয়। এটাই ইতিহাসে ‘বঙ্গভঙ্গ’ নামে পরিচিতি। এর ফলে ঢাকাসহ বর্তমান বাংলাদেশের দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের এই উন্নতি ও সম্ভাবনার বিরুদ্ধে হিন্দুরা পাল্টা তৎপরতা শুরু করে। কারণ, হিন্দুদের দৃষ্টিতে এটা ছিল তাদের ‘বঙ্গমাতা’কে দ্বিখন্ডিত করার পদক্ষেপ। কোলকাতায় বসবাস করে পূর্ব বঙ্গের ওপর যারা শোষণ-নির্যাতন চালাতো এবং এখানকার অর্থবিত্ত লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসে যারা নাচ-গান ও আনন্দ-ফ’র্তি করতো, সেই হিন্দু জমিদারদের প্রত্যক্ষ সাহায্যে ও উস্কানিতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড দুর্বার হয়ে ওঠে। হিন্দুরা একে সন্ত্রাসবাদী ‘আন্দোলন’ নাম দেয়। এই সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে ভীত হওয়ার অভিনয় করে মুসলিম বিরোধী ব্রিটিশ সরকারও হিন্দুদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়, ঢাকাসহ পূর্ব বঙ্গ আবারো কোলকাতার এবং হিন্দুদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। হিন্দুদের মধ্যে যে ‘বঙ্গমাতা’র জন্য প্রীতির লেশমাত্র ছিল না এবং মুসলিম বিদ্বেষই যে বিরোধিতার প্রধান কারণ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেছে একটি বিশেষ ঘটনায়। সন্ত্রাসের অভিযোগে শত বছরের রাজধানী কোলকাতাকে পরিত্যাগ করে ব্রিটিশ সরকার এ সময় দিল্লিকে ভারতের রাজধানী বানিয়েছিল। কিন্তু হিন্দুরা কোনো প্রতিবাদই করেনি। অন্যদিকে মুসলমানদের হিন্দু ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। পর্যায়ক্রমে সেটাই মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমির আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছিল সে আন্দোলনেরই সফল পরিণতি।
এভাবে ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যাবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যাখ্যা ও হিসাবে মারাত্মক ভুল রয়েছে। বাংলাদেশকে কোনোদিক থেকেই পূর্ব জার্মানীর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কারণ, পূর্ব জার্মানীর ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ চাপিয়ে দেয়া। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ সব দিক থেকে নিজের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা অনুযায়ী এগিয়েছিল। অন্যের পদানত থাকতে রাজি নয় বলেই ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশীরা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র বানিয়েছে। সুতরাং কেউ যদি মনে করে থাকেন, বাংলাদেশ পূর্ব জার্মানীর পথ ধরবে এবং পশ্চিম বঙ্গ তথা ভারতের সঙ্গে আবারও মিলিত হবে তাহলে সেটা হবে গর্দভের স্বর্গযাত্রার মতো ফালতু কল্পনাবিলাস। সে বিলাস যে কেউ করতেই পারেন। কিন্তু যুগে যুগে প্রমাণিত সত্য হলো, বাংলাদেশ কারো অধীনস্থ থাকে না। তেমন যে কোনো প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়ার যোগ্যতা, সাহস ও ক্ষমতাও বাংলাদেশীদের রয়েছে। এখানে অন্য কিছু কথাও বলা দরকার। মিস্টার মোদি শুধু ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর কথাই বলেছেন। অন্যদিকে প্রকৃত ইতিহাস হলো, ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এশিয়া ও ইউরোপে আরো অনেক পরিবর্তনও ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে রাশিয়া নিজেকে সোভিয়েট ইউনিয়ন নামের বিশাল এক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। আশপাশের বহু স্বাধীন দেশকে রাশিয়া দখল করে নিয়েছিল। জার্মানীতে যখন ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভেঙে ফেলার আন্দোলন তুঙ্গে ঠিক একই সময় ওই দেশগুলোও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত করেছিল। মিখাইল গরবাচভের নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার সরকারকে একের পর এক শুধু পরাজয়ই স্বীকার করতে হয়েছিল। এর ফলে ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, অ্যাস্টোনিয়া, আজারবাইজান ও লাটভিয়াসহ ডজনের বেশি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল। রাষ্ট্রগুলো সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এসব তথ্য বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবনায় থাকা দরকার ছিল। কারণ, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডসহ ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত ভারতের রাজ্যগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। কে জানে, এসব রাজ্যও কখনো ইউক্রেন ও উজবেকিস্তানের মতো ভারতের ‘ইউনিয়ন’ থেকে বেরিয়ে আসবে কি না এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে কি না। অমন কোনো সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করার পরিবর্তে এখানে শুধু এটুকু বলে রাখাই যথেষ্ট যে, ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর উদাহরণ দিতে গিয়ে মিস্টার মোদি সম্ভাবনার একটি দিককেই প্রাধান্যে এনেছেন। বাস্তবে সম্ভাবনা কিন্তু অন্যরকমও রয়েছে!
এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দু-একটি প্রসঙ্গ। খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এত আলোড়ন সৃষ্টিকারী সফরেও মিস্টার মোদি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একাই এসেছিলেন। ৮১ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে একজনও মন্ত্রী বা রাজনীতিক ছিলেন না। ছিলেন শুধু আমলা এবং ব্যবসায়ীরা। অনেক শিল্পী-সাংবাদিকও ছিলেন কিন্তু আগে থেকে ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও তার সঙ্গে আসেননি আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা। এসেছিলেন শুধু পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাও মোদির সঙ্গে নয়। একদিন আগে এসেছিলেন তিনি। মমতা থেকেছেনও আলাদা হোটেলে। এর মধ্য দিয়ে একটি কথাই মমতা পরিষ্কার করেছিলেন। সে কথাটা ছিল, আর যা-ই হোক, তিস্তা চুক্তি অন্তত স্বাক্ষরিত হচ্ছে না। বাস্তবেও হয়নি। স্মরণ করা দরকার, একই মমতার কারণে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরেও একেবারে ‘হবেই’ পর্যায়ে এসে যাওয়ার পরও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারেনি। সেবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে ঢাকায় আসতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন মমতা। মাঝখানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে এসে তার ওপর ‘আস্থা’ রাখার আহ্বান জানিয়ে গেছেন মমতা। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল, ঢাকা থেকে ‘হাসিনাদি’র ফোন পেয়ে শ্রীমতি মমতা নাকি এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন যে, তার মনে হচ্ছিল, ‘দুই বাংলা যেন এক হয়ে গেছে’! তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ‘ওপার বাংলা’ পশ্চিম বঙ্গের মতো ভারতের একটি রাজ্য মাত্র নয় বরং সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র! বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। এখানে সংক্ষেপে বলা দরকার, মোদির এই সফরকালেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভারতীয়দের বাংলাদেশ নীতিই প্রাধান্যে এসেছে। কারণ, তিস্তা বেশি আলোচিত হলেও ভারত পানি আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে বহু বছর ধরে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে টেলিভিশন ও সিনেমাসহ সকল ব্যাপারেই বাংলাদেশ ভারতীয়দের চাণক্য কৌশলের অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে। এই কৌশলের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের স্বার্থে যা কিছু করছে ও করেছে সেগুলোর কোনোটিতেই বাংলাদেশের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কথা আরো আছে। একদিকে মিস্টার মোদি শুনিয়েছেন ‘বার্লিন প্রচীর-এর কথা, অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে হয়েছে দুই বাংলা যেন ‘এক’ হয়ে গেছে! পাঠকরা চিন্তা করে দেখতে পারেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের ৪ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আরো অনেকের সঙ্গেই দেখা ও কথা হয়েছিল তার। নড়াইলে শ্বশুরবাড়িতে গেছেন তিনি, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহের দীঘিতে নৌকায় বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত উপভোগ করেছেন। খাওয়া-দাওয়াও যথেষ্টই করেছিলেন। কিন্তু এতকিছুর পরও প্রণব মুখার্জি নাকি খুশি হতে পারেননি বরং ফিরতি পথে বিমানে তাকে যথেষ্ট ‘ক্ষুব্ধ’ দেখেছিলেন ভারতের সাংবাদিকরা। কথাটা ভারতীয় পত্রপত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ক্ষুব্ধ’ হওয়ার কারণ ছিল একটাইÑ বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি এবং পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেছিলেন। প্রণব মুখার্জির প্রতিক্রিয়া জানারও আগে এ ব্যাপারে জানান দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা। তারা এমন এক প্রচারণা চালিয়েছিলেন যেন ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে খালেদা জিয়া বিরাট কোনো ‘অপরাধ’ করে ফেলেছিলেন! ভারতীয়রাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়াই দেখিয়েছিলেন। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছিল, প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি বাতিল করার মাধ্যমে খালেদা জিয়া নাকি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ব্যাপারে ‘সুদূরপ্রসারী বার্তা’ দিয়েছেন! রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজার আরও জানিয়েছিল, খালেদা জিয়া আসবেন না- এ খবরটি জানার পর প্রণব মুখার্জির মুখের হাসি নাকি কিছুক্ষণের জন্য ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিল!
সন্দেহ নেই, কথাগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরের আগে-পরে প্রচারণার প্রাধান্যে আনা হয়েছিল। কিন্তু সেদিকে যাওয়ার পরিবর্তে অন্য কিছু তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। গত ৬ জুন মাত্র ৩৬ ঘণ্টার সফরে এসে পুরো বাংলাদেশকেই নৃত্যে মাতিয়ে গেছেন মোদি। এর পেছনে অবদান বেশি ছিল অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের, সেই সাথে অবশ্যই মিডিয়ারও। মনে হচ্ছিল যেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ভারতপন্থী রাজনীতিক এবং সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিক থেকে শুরু করে সাংবাদিক নামধারী পর্যন্ত সকলেরই একমাত্র কাজ হয়ে উঠেছিল মোদি বন্দনা! শুধু তা-ই নয়, বেশ কয়েকদিন আগে থেকে এমন এক প্রচারণাকে সর্বাত্মক করা হয়েছিল যেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘চাহিবা মাত্র’ সবকিছু দিয়ে একেবারে ধন্য করে দেবেন বাংলাদেশকে! তিস্তা চুক্তি তো হবেই, আরো অনেক ‘চমক’ও দেখাবেন ভারতের এই নাটকীয় চরিত্রের প্রধানমন্ত্রী! অন্যদিকে মিস্টার মোদিও তার পূর্বসুরীদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। কেবলই নিয়ে গেছেন তিনি, প্রকৃতপক্ষে কিছুই দেননি বাংলাদেশকে। ফলে বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি ‘হনুজ দূর ওয়াস্ত’ই রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে যথারীতি আবারও খেল দেখিয়ে গেছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ঢাকায় এসেছেন এবং ছোট্ট খুকুমনির মতো আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে আদর নিয়েছেন। কিন্তু তিস্তার প্রশ্নে ‘এক চুল’ পরিমাণও সরে যাননি। তিনি বরং বুঝিয়ে গেছেন, জাতীয় স্বার্থে ভারতীয়রা সবাই সমান!
মমতার এই খেল বা ‘পলিট্রিক্স’ নিয়ে আগেও লিখেছি বলে আজকের নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্যের দিকে পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। বাংলাদেশে আসার প্রাক্কালে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা পাওয়া এই মন্তব্যে মিস্টার মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তির নিষ্পত্তি যে আসলে কত বড় অর্জন তা নাকি ভারতের গণমাধ্যমগুলো অনুধাবন করতে পারেনি। এটা বিশ্বের অন্য কোথাও হলে একে ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর পতনের সঙ্গে তুলনা করা হতো, ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর মতো বড় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। প্রধানমন্ত্রী মোদির এই মন্তব্য কিন্তু নিতান্ত কথার কথা নয়, এর অন্তরালে রয়েছে গুরুতর উদ্দেশ্য। দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তি বলতে তিনি ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর স্বাক্ষরিত ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেছেন, যে চুক্তিটি দীর্ঘ ৪১ বছর পর অতি সম্প্রতি ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় অনুমোদন পেয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়ি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল মুজিব সরকার। এজন্য সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী পাস করতে হয়েছিল। কিন্তু ভারতকে বেরুবাড়ি তুলে দিলেও বিনিময়ে তিনবিঘা করিডোরসহ বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো আদায় এবং সীমান্ত চিহ্নিত করতে পারেনি সেকালের আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু তা-ই নয়, ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারত একই সঙ্গে পেয়েছিল ফারাক্কা বাঁধ চালু করার সম্মতি।
প্রশ্ন উঠেছে, ৪১ বছর আগে তারই পূর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে চুক্তিটি স্বাক্ষর করে গেছেন এবং যে চুক্তির বাস্তবায়ন করা ভারতের সকল সরকারের কর্তব্য ছিল, এতদিন পর সে চুক্তির অনুমোদনকে মিস্টার মোদি কেন ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর পতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন? এর তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে প্রসঙ্গক্রমে ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর ইতিহাস স্মরণ করা দরকার। সংক্ষেপে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-৪৫) হিটলার ও মুসোলিনির পরাজয়ের পর প্রধান দুই বিজয়ী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া পুরো ইউরোপকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। এ সময়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল জার্মানীকে বিভক্ত বা দ্বিখ-িত করা। এডলফ হিটলারের জার্মানীকে দুটি দেশ বানিয়ে পূর্ব জার্মানীর দখল নিয়েছিল রাশিয়া। অন্যদিকে পশ্চিম জার্মানী গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানীর মাঝখানে নির্মিত হয়েছিল ‘বার্লিন প্রাচীর’। এই প্রাচীর দেশ দুটিকে বিভক্ত করেছিল। অর্থাৎ ‘বার্লিন প্রাচীর’ পরিণত হয়েছিল বিভক্তির প্রতীক হিসেবে। নামে দেশ দুটি অবশ্য স্বাধীনই ছিল। পূর্ব জার্মানীর রাজধানী ছিল বার্লিন, বনকে করা হয়েছিল পশ্চিম জার্মানীর রাজধানী। দুই জার্মানী ছাড়াও পোল্যান্ড, যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া প্রভৃতি দেশের ওপর রাশিয়ার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসব দেশে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র চাপিয়েছিল রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালীসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ। সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বের নতুন নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকায় পশ্চিম জার্মানী ক্রমাগত উন্নতি করেছিল এবং ধনী দেশের অবস্থান অর্জন করেছিল। অন্যদিকে কমিউনিস্ট রাশিয়ার অধীনস্থ হয়ে পড়ায় পূর্ব জার্মানীর অবস্থা দ্রুত শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। মানুষ এমনকি দু’ বেলা ঠিকমতো খাবারও পেতো না। সে কারণেই পশ্চিম জার্মানীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল পূর্ব জার্মানীতে। সেদেশের আন্দোলনকারীরা মাঝেমধ্যেই ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে। এই আন্দোলন জোরদার হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে, যখন তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে রাশিয়ার কোমর ভেঙে গিয়েছিল। এ অবস্থার সুযোগ নিয়েই ১৯৮৯ সালে পূর্ব জার্মানীর জনগণ ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভেঙে ফেলেছিল। তারা শুধু প্রাচীরই ভাঙেনি, দলে দলে গিয়ে পশ্চিম জার্মানীতে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গেও মিলিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের ধনী দেশগুলো সক্রিয় সমর্থন দেয়ায় এবং রাশিয়া তখন নিজেকে বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত থাকায় দুই জার্মানীর পুনর্মিলনকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। পূর্ব ও পশ্চিম শব্দ দুটি হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল এবং জার্মানী আবারও এক দেশে পরিণত হয়েছিল। সেই থেকে বার্লিন জার্মানীর রাজধানী হিসেবে টিকে আছে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও দেশটির রাজধানী।
ইতিহাসের এই অংশটুকুর পর্যালোচনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের বিশেষ ব্যাখ্যাই তুলে ধরবে। সে ব্যাখ্যা হলো, ১৯৪৭ সালে আজকের বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। মিস্টার মোদি সম্ভবত ইতিহাসের এই অংশটুকুই স্মরণ করেছেন এবং বাংলাদেশকে পূর্ব জার্মানীর পথ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে ইতিহাস কিন্তু মিস্টার মোদির ব্যাখ্যাকে অসম্পূর্ণ এবং ভুল হিসেবেই চিহ্নিত করবে। কারণ, একথা সত্য, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের বঙ্গ নামক কোলকাতাকেন্দ্রিক প্রদেশের অংশ ছিল। পরিচিতি ছিল পূর্ব বঙ্গ নামে। কিন্তু ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে মুসলিম প্রধান এ অঞ্চলের সঙ্গে মূল ভারতের দ্বন্দ্ব ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দু’-চারজন ছাড়া জমিদারদের প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। মুসলমান কৃষকদের ওপর হিন্দু জমিদাররা যথেচ্ছ শোষণ-নির্যাতন চালাতো। মুসলমানরা এমনকি জমিদার বাড়ির আশপাশ দিয়ে জুতো পরে বা ছাতা মাথায় দিয়েও যাতায়াত করতে পারতেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি ছিল হিন্দুদের দখলে। শিক্ষাতেও হিন্দুরাই একচেটিয়াভাবে এগিয়ে ছিল। সব মিলিয়েই মুসলমানরা ছিলেন নির্যাতিত, উপেক্ষিত ও পশ্চাদপদ অবস্থায়।
হিন্দুদের প্রাধান্য বহাল রেখে মুসলমানদের পক্ষে যেহেতু উন্নতি-অগ্রগতি অর্জন করা একেবারেই সম্ভব ছিল না, সেহেতু মুসলিম প্রধান পূর্ব বঙ্গ ও প্রতিবেশী রাজ্য আসামকে নিয়ে পৃথক একটি প্রদেশ গঠনের দাবিতে মুসলমানরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে পূর্ব বঙ্গ ও আসামকে নিয়ে নতুন একটি প্রদেশ গঠন করে। ঢাকাকে এর রাজধানী করা হয়। এটাই ইতিহাসে ‘বঙ্গভঙ্গ’ নামে পরিচিতি। এর ফলে ঢাকাসহ বর্তমান বাংলাদেশের দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের এই উন্নতি ও সম্ভাবনার বিরুদ্ধে হিন্দুরা পাল্টা তৎপরতা শুরু করে। কারণ, হিন্দুদের দৃষ্টিতে এটা ছিল তাদের ‘বঙ্গমাতা’কে দ্বিখন্ডিত করার পদক্ষেপ। কোলকাতায় বসবাস করে পূর্ব বঙ্গের ওপর যারা শোষণ-নির্যাতন চালাতো এবং এখানকার অর্থবিত্ত লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসে যারা নাচ-গান ও আনন্দ-ফ’র্তি করতো, সেই হিন্দু জমিদারদের প্রত্যক্ষ সাহায্যে ও উস্কানিতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড দুর্বার হয়ে ওঠে। হিন্দুরা একে সন্ত্রাসবাদী ‘আন্দোলন’ নাম দেয়। এই সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে ভীত হওয়ার অভিনয় করে মুসলিম বিরোধী ব্রিটিশ সরকারও হিন্দুদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়, ঢাকাসহ পূর্ব বঙ্গ আবারো কোলকাতার এবং হিন্দুদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। হিন্দুদের মধ্যে যে ‘বঙ্গমাতা’র জন্য প্রীতির লেশমাত্র ছিল না এবং মুসলিম বিদ্বেষই যে বিরোধিতার প্রধান কারণ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেছে একটি বিশেষ ঘটনায়। সন্ত্রাসের অভিযোগে শত বছরের রাজধানী কোলকাতাকে পরিত্যাগ করে ব্রিটিশ সরকার এ সময় দিল্লিকে ভারতের রাজধানী বানিয়েছিল। কিন্তু হিন্দুরা কোনো প্রতিবাদই করেনি। অন্যদিকে মুসলমানদের হিন্দু ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। পর্যায়ক্রমে সেটাই মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমির আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছিল সে আন্দোলনেরই সফল পরিণতি।
এভাবে ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যাবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যাখ্যা ও হিসাবে মারাত্মক ভুল রয়েছে। বাংলাদেশকে কোনোদিক থেকেই পূর্ব জার্মানীর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কারণ, পূর্ব জার্মানীর ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ চাপিয়ে দেয়া। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ সব দিক থেকে নিজের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা অনুযায়ী এগিয়েছিল। অন্যের পদানত থাকতে রাজি নয় বলেই ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশীরা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র বানিয়েছে। সুতরাং কেউ যদি মনে করে থাকেন, বাংলাদেশ পূর্ব জার্মানীর পথ ধরবে এবং পশ্চিম বঙ্গ তথা ভারতের সঙ্গে আবারও মিলিত হবে তাহলে সেটা হবে গর্দভের স্বর্গযাত্রার মতো ফালতু কল্পনাবিলাস। সে বিলাস যে কেউ করতেই পারেন। কিন্তু যুগে যুগে প্রমাণিত সত্য হলো, বাংলাদেশ কারো অধীনস্থ থাকে না। তেমন যে কোনো প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়ার যোগ্যতা, সাহস ও ক্ষমতাও বাংলাদেশীদের রয়েছে। এখানে অন্য কিছু কথাও বলা দরকার। মিস্টার মোদি শুধু ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর কথাই বলেছেন। অন্যদিকে প্রকৃত ইতিহাস হলো, ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এশিয়া ও ইউরোপে আরো অনেক পরিবর্তনও ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে রাশিয়া নিজেকে সোভিয়েট ইউনিয়ন নামের বিশাল এক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। আশপাশের বহু স্বাধীন দেশকে রাশিয়া দখল করে নিয়েছিল। জার্মানীতে যখন ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভেঙে ফেলার আন্দোলন তুঙ্গে ঠিক একই সময় ওই দেশগুলোও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত করেছিল। মিখাইল গরবাচভের নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার সরকারকে একের পর এক শুধু পরাজয়ই স্বীকার করতে হয়েছিল। এর ফলে ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, অ্যাস্টোনিয়া, আজারবাইজান ও লাটভিয়াসহ ডজনের বেশি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল। রাষ্ট্রগুলো সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এসব তথ্য বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবনায় থাকা দরকার ছিল। কারণ, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডসহ ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত ভারতের রাজ্যগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। কে জানে, এসব রাজ্যও কখনো ইউক্রেন ও উজবেকিস্তানের মতো ভারতের ‘ইউনিয়ন’ থেকে বেরিয়ে আসবে কি না এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে কি না। অমন কোনো সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করার পরিবর্তে এখানে শুধু এটুকু বলে রাখাই যথেষ্ট যে, ‘বার্লিন প্রাচীর’-এর উদাহরণ দিতে গিয়ে মিস্টার মোদি সম্ভাবনার একটি দিককেই প্রাধান্যে এনেছেন। বাস্তবে সম্ভাবনা কিন্তু অন্যরকমও রয়েছে!
এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দু-একটি প্রসঙ্গ। খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এত আলোড়ন সৃষ্টিকারী সফরেও মিস্টার মোদি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একাই এসেছিলেন। ৮১ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে একজনও মন্ত্রী বা রাজনীতিক ছিলেন না। ছিলেন শুধু আমলা এবং ব্যবসায়ীরা। অনেক শিল্পী-সাংবাদিকও ছিলেন কিন্তু আগে থেকে ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও তার সঙ্গে আসেননি আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা। এসেছিলেন শুধু পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাও মোদির সঙ্গে নয়। একদিন আগে এসেছিলেন তিনি। মমতা থেকেছেনও আলাদা হোটেলে। এর মধ্য দিয়ে একটি কথাই মমতা পরিষ্কার করেছিলেন। সে কথাটা ছিল, আর যা-ই হোক, তিস্তা চুক্তি অন্তত স্বাক্ষরিত হচ্ছে না। বাস্তবেও হয়নি। স্মরণ করা দরকার, একই মমতার কারণে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরেও একেবারে ‘হবেই’ পর্যায়ে এসে যাওয়ার পরও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারেনি। সেবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে ঢাকায় আসতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন মমতা। মাঝখানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে এসে তার ওপর ‘আস্থা’ রাখার আহ্বান জানিয়ে গেছেন মমতা। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল, ঢাকা থেকে ‘হাসিনাদি’র ফোন পেয়ে শ্রীমতি মমতা নাকি এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন যে, তার মনে হচ্ছিল, ‘দুই বাংলা যেন এক হয়ে গেছে’! তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ‘ওপার বাংলা’ পশ্চিম বঙ্গের মতো ভারতের একটি রাজ্য মাত্র নয় বরং সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র! বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। এখানে সংক্ষেপে বলা দরকার, মোদির এই সফরকালেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভারতীয়দের বাংলাদেশ নীতিই প্রাধান্যে এসেছে। কারণ, তিস্তা বেশি আলোচিত হলেও ভারত পানি আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে বহু বছর ধরে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে টেলিভিশন ও সিনেমাসহ সকল ব্যাপারেই বাংলাদেশ ভারতীয়দের চাণক্য কৌশলের অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে। এই কৌশলের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের স্বার্থে যা কিছু করছে ও করেছে সেগুলোর কোনোটিতেই বাংলাদেশের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কথা আরো আছে। একদিকে মিস্টার মোদি শুনিয়েছেন ‘বার্লিন প্রচীর-এর কথা, অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে হয়েছে দুই বাংলা যেন ‘এক’ হয়ে গেছে! পাঠকরা চিন্তা করে দেখতে পারেন।
আহমদ আশিকুল হামিদ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন