সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০১৫

মানুষ গুম করে কারা?


সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে নিখোঁজ হয়েছে বহু মানুষ। গত ৫ বছরে নিখোঁজের সংখ্যা শতাধিক। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, গত ২ মাসে সারা দেশে ২১ জন মানুষ গুম হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৪ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে নিখোঁজ হয়েছেন ৭ জন। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ২ মাসে বিরোধী জোটের ৩৬ জন নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কয়েকজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বাকি ১৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে ২০১৩ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় বিরোধী জোটের ৬৫ জন নেতকর্মী গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সবগুলো গুমের ঘটনার ধরন ছিল একই রকম। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে মানুষ নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। নিখোঁজ হওয়াদের উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান মানবজমিনকে বলেন, প্রতিমাসেই মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে, আমরা এর তালিকা প্রকাশ করছি, কিন্তু এ ধরনের জলজ্যান্ত মানুষ হারিয়ে যাওয়া খুবই উদ্বেগজনক ও অগ্রহণযোগ্য ব্যাপার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি মানুষগুলোকে তুলে না নিয়ে থাকে, তাহলে কারা তাদের নিয়ে গেছে? তা খুঁজে বের করার দায়িত্বও তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায়। এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে। মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে। আমরা এসব ঘটনায় উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু এসব মানুষ নিখোঁজ হওয়ার পর সরকারের উচ্চমহল থেকে যে ধরনের কথাবার্তা বলা হচ্ছে, এতে ঘটনার নায়করা আরও উৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে এ ধরনের ঘটনা না কমে ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। তার পরিবারের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই নিয়ে গেছে তাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনাও তাই। এখন পর্যন্ত হদিস মেলেনি তার। জনমনে প্রশ্ন, হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো যায় কোথায়?
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও বলেছে, গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আর প্রায় সব গুমের ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে। আমরা জানি, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তায়। গুম হওয়া কোনো মানুষকে যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে না নিয়ে থাকে, তাহলে কারা তুলে নিয়েছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্বও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরই বর্তায়। সে দায়িত্ব পালিত না হলে মানুষ তো সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযুক্ত করবে। বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে অনেক আশাব্যঞ্জক কথা বলেছেন। তারা দিন বদলের কথা বলেছেন। সুশাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় কথা বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, দিন বদল হয়নি। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ও বন্ধ হয়নি। বরং দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে আজ জনমনে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে তা হলো, হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো যায় কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিতে হবে। কারণ এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। দেশে যদি মানুষ গুম হওয়া বন্ধ হয় এবং মানুষের লাশ রাস্তায় পড়ে না থাকে, তাহলে জনমনে আস্থার ভাব ফিরে আসতে পারে। তবে সামনের দিনগুলোতে সরকার তেমন দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয় কি-না, সেটাই জনগণ আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads