ক্রিকেট নিয়ে গত বছর জাতীয় নিশান পত্রিকায় ‘ক্রিকেটে ষড়যন্ত্রের জাল’ শিরোনামে লিড নিউজ করেছি আমি। সেদিন যত ক্ষুব্ধ ছিলাম আজ তা এমন রূপ ধারণ করেছে অঙ্গিকার করেছি ক্রিকেট দেখবো না এমনকি শুভ কামনাও থাকবে না। ক্রিকেটে হেরেছি এর নেপথ্যে একটি বিস্ময়কর কারণ আমি শেষে বলছি। ছোটকালে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। মনে আছে, টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও হয়েছে। পুলিশ এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ আলোড়ন তোলা খবর হচ্ছে মরহুম গোলাম সরোয়ার স্মৃতি ফুলবল টুর্নামেন্ট। কি এক পাগল করা উন্মাদনা। জাতীয় আদলে টিমগুলোর আলাদা পতাকা, ঢাকা থেকে খেলোয়াড় নিয়ে আসা, দুপুরের পর থেকেই বাসের ছাদে করে দূর থেকে দর্শকদের ঢল নামা আরো কত কি। আমাদের জয়াগ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাজারো দর্শকের গগনবিদারী উচ্ছ্বাসের সেই খেলাটি মনে ঝড় তোলে এখনো। এখনো মাঝে মাঝে খেলা দেখি। গত বছর রাতের বেলায় নিজ এলাকায় ক্রিকেট ফাইনাল খেলায় দাওয়াত পেয়ে সেখানে গিয়েছি। কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জে একটি খেলায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছি। তবে টিভি স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা দেখার বিরোধী আমি। স্কুল ফেলে ছাত্র, শিশু ফেলে তার মা, কাজ ফেলে শ্রমিক ক্রিকেটে ডুব মেরে ক্ষতি করে নিজের এবং দেশের। প্রস্তাব রাখি, শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ওয়ানডে ম্যাচ ব্যতীত সব খেলা সম্প্রচার বন্ধ রাখা হোক টিভিতে। এরই মাঝে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ সম্পন্ন হয়ে গেলো। এদেশের তরুণরা ভিন্ন এক উৎসব করেছে। ক্ষোভের উৎসব।
পরাজিতের জন্য উৎসব। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সেটাই দেখা গেল। মাঠে খেলা দেখা ভারতের দর্শকরা উৎসব করেছেন নিজ দেশ বিজয়ী হওয়ায়। আর বাংলাদেশের দর্শকরা উৎসব করেছেন ভারত জয়ী হওয়ায়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের তরুণরা ভারতের বিজয়ে রাতেই ক্ষোভের মিছিল বের করে। ক্ষোভে বন্ধুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ব্লগের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুদেশ ভারতের প্রতি এদেশের মানুষের যে এত ক্ষোভ, ঘৃণা বিশ্বকাপে ভারত জয়ী হওয়ার পর আনন্দ উৎসবেই প্রমাণ হয়। প্রান্তিক গ্রামেও মানুষকে ক্ষোভের আনন্দ করতে দেখা গেছে। খেলায় একের পর এক বিতর্কিত অ্যাম্পায়রিংয়ে গোল্ড, ডেভিস আর আলিমদারকে নিয়ে চলছে বিষোদগার। প্রামাণ্য ও ব্যঙ্গ চিত্র, হ্যাসট্যাগ দিয়ে অনলাইনে প্রতিবাদের মিছিলে শামিল হচ্ছেন নেটিজেনরা। খোলা হয়েছে একাধিক ফেসবুক ও টুইট পেজ। এর পাশাপাশি দারুণ সব ব্যঙ্গ চিত্র আর তীর্যক মন্তব্য নিয়ে ‘ক্রিকেট রঙ্গ’ প্রকাশ করেছে বাংলাভাষীদের কমিউনিটি ব্লগ ‘বেশ তো’। এই পোর্টালটির ‘আম্পায়ার না ভ্যাম্পায়ার’ এখন ঘুরেছে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। একইসঙ্গে ইমোটিন সহযোগে তীর্যক মন্তব্য ‘বাংলাদেশের জন্য Target 303 (তিন সতীন...!!!)। তিন সতীন কে কে দেখে নিন- ১. ইন্ডিয়া, ২. আম্পায়ার, ৩. আইসিসি, তীর্যক মন্তব্যটিও বেশ সাড়া ফেলেছে। সব ছাপিয়ে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ রূপ ‘ইন্ডিয়া ছিঃ ছিঃ’ এখন হটকেক ডায়ালগে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তো রীতিমতো সয়লাব হয়েছে আইসিসি, অ্যাম্পায়র ইস্যুতে। সেখানে ফাঁস হয়ে গেছে ভারতকে জেতাতে আইসিসির ছক! অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ২৩ তারিখের খেলা পরিবর্তন করে ১৯ তারিখ নিয়ে আসা ও সঙ্গে ভেন্যু পরিবর্তন, ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানের আম্পায়ার দিয়ে দেয়া, মিডিয়া দিয়ে চাপ সামলানো ইত্যাদি প্রসঙ্গ। কেউ আবার খেলাজুড়ে শর্মার লাইফ পাওয়া এবং মাহমুদুল্লাহর ক্যাচটির রি-প্লে ভালোভাবে না দেখানো এবং এ বিষয়ে ধারাভাষ্যকারদের নীরবতা এবং সর্বোপরি খেলা চলাকালে স্কোর বোর্ডে “জিতেগারে জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা” বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিবাদ জানাতে এখানে ‘ক্রিকেট বাঁচাও, ভারতের নগ্ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ ও ‘আজ বাংলাদেশকে হারানো হয়নি হারানো হয়েছে ক্রিকেটকে’-এর মতো নানা পেজ খোলা হয়েছে। নানামুখী স্ট্যাটাসের পাশাপাশি সয়লাব হয়েছে কোলাজ কার্টুনে। এর মধ্যে মেসি’র ছবি দিয়ে ‘ভাগ্যিস ইন্ডিয়া ফুটবল খেলে না, চিটিং কইরাই ট্রফি নিয়া লইতো’, ‘আইসিসি মানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ ইত্যাদি নানা মন্তব্যে সয়লাব ফেসবুক পেজ। স্ট্যাটাসে #IndiaBoughtICC #SaveCricketFromICCGes #ShameIndia ইত্যাদি হ্যাস ট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমনই একটি পেজ থেকে ‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নির্লজ্জ একপাক্ষিক আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমে হারতে বাধ্য করার প্রতিবাদে ২০ মার্চ, শুক্রবার টিএসসিতে বিকাল ৩টা সাধারণ নাগরিকদের ‘মানববন্ধন’র ডাক দেয়া হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যান ইউনিটি (বিসিএফই) নামে একটি গ্রুপও তাদের ফেসবুক ইভেন্ট পেজে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদে আম্পায়ারদের কুশপুত্তলিকা দাহ করার ঘোষণা দিয়েছে। মাইক্রো ব্লগ টুইটারে @ICCShame#, @ICC=Indian Cricket Council!# ইত্যাদি টুইটে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। এক পাকিস্তানের সোয়েব আক্তার টুইটবার্তায় লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের আলিমদার ভারতকে ‘মওকা’ দিলেন।”
গুগল প্লাসে @#rip_icc #shamefulcricket #iccwc2015 ইত্যাদি হ্যাস ট্যাগের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ক্রিকেট এখন কমার্শিয়াল গেম। আর সেখানে টাকা সবচেয়ে বেশি লগ্নি করে ভারত। সুতরাং ভারতকে জেতানোর জন্য আইসিসির এই ছক আম্পায়ারদের কল্যাণে নগ্নতা পেয়েছে’। এছাড়াও তালহা বিন নজরুল লিখেছেন, ‘বাণিজ্যের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ’। আমিও কথাটি আগেই বলেছি। ক্রিকেট এখন আর নিছক কোন খেলা নয়। ক্রিকেটও আজ পণ্য। অর্থ আয়ের মেশিন। মানুষের আগ্রহকে পুঁজি করে ক্রিকেটের সব আজ বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। সোয়াশ’ কোটি লোকের দেশ ভারত বিশ্বের সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উত্তম বাজার। আর এ সুযোগটা তারা নিচ্ছে ভালোভাবেই। ক্রিকেটকে এখন তিন মোড়লের সংগঠনে দাঁড় করানো হয়েছে। আইসিসির বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশের আ হ ম মুস্তফা কামাল হলেও ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান ভারতের শিল্পপতি এন শ্রী নিবাসন। দেশে তিনি ম্যাচ গড়াপেটার আসামী। আইপিএল-এ ইন্ডিয়ান সিমেন্টের এই কর্ণধারের দল চেন্নাই সুপার কিংস। আর এই দলের অধিনায়কও মহেন্দ্র সিং ধোনি। শ্রী নিবাসনের জামাতা মিয়াপ্পান এই দলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপের সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে যে স্টার স্পোর্টসে তারাই ভারতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক। ধারা বিবরণীতেও ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটারদের আধিপত্য। ভারত যদি বিদায় হয়ে যায় তবে কি ক্ষতি হয় তা আইসিসি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ২০০৭-এ। ৫০ শতাংশের কম আয় হয় তাদের। সেবার বাংলাদেশের কাছেই হেরে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় ২০০৩-এর রানার্স আপ ভারত। ২০১১ এর চ্যাম্পিয়ন বিদায় নিলে ক্ষতির পরিমাণটা সব অনুমান ছাড়িয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাতেও নামতো ধস। সেখানে দর্শকই নেমে আসবে অর্ধেকে যদি ভারত না থাকে। এ বাস্তবতা উপেক্ষার কি উপায়? কর্তাদের মর্জির বলি আম্পায়াররা হতেই পারে। আমাদের ক্রিকেট দল। পরম মমতায় ডাকি টাইগার দল। ডাকি লাল সবুজের দল।
ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। ৯০ সালের শেষের দিকে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রতিপক্ষ বিজয়ী হওয়ায় ভারতীয় দর্শকরা মাঠে জুতা-পানির বোতল ছুড়ে সেই ভদ্রতা ভেঙেছে। এবার ক্রিকেটে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। তবে টি-২০ ফাইনালে দেখা গেছে ভারতের সমর্থকরা শত শত ভারতীয় পতাকা নিয়ে মিরপুর মাঠে উপস্থিত। এফডিসির পরিচালক পিযূষ বন্দ্যোপধ্যায়ের স্ত্রী আমাদের জাতীয় পতাকা কুকুরে মুড়িয়ে এনেছে আর ভারতীয় পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে। সরকার না দেখার ভান করে আছে। যারা ভারতীয় পতাকা হাতে খেলা দেখেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না। শুধু কি পাকিস্তান দলের সমর্থকদের ঠেকানোর জন্যই খেলার মাঠে বিদেশী পতাকা বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে? নয়তো কিসের এই আইন। স্টেডিয়ামে দেখা যায়, ভারতের খেলোয়াড়দের নিরুৎসাহী করতে বাংলাদেশী তরুণরা ‘ভুয়া ভুয়া’ ধ্বনি দিয়েছে। দেখা যায়, ভারত পরাজিত হচ্ছে বুঝতে পেরে বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। লংকানদের উৎসাহ দিতেও দেখা গেল তরুণ দর্শকদের। মহেন্দ্র সিং ধোনিদের পরাজয়ে যেন ভারতবিদ্বেষী বাংলাদেশের তরুণদের দারুণ উজ্জীবিত করে। দুঃখ হয় বিসিবিকে নিয়ে। বাংলাদেশে কি স্পন্সর করার মতো কোন কোম্পানি নেই। তবে কেন ক্রিকেটে সাহারা? শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে যে সাহারা অভিযুক্ত। যে সাহারার মালিক সুব্রত জেলে আছেন, মানুষ মুখে কালি মেরে চরম শিক্ষা দিয়েছে, সেই সাহারা কোম্পানি আমাদের অহংকার জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে থাকবে তা লজ্জার-অপমানের। জাতীয় ক্রিকেট দল বিশ্ব কাঁপাবে যখন তখন তার গায়ে থাকবে ভিনদেশী সাহারা। আমাদের তারুণ্য যখন ক্রিকেট নিয়ে গর্বে লাল সবুজের জার্সিতে রাস্তায় নেমে আসবে তখন তার গায়ে লেখা থাকবে ভারতীয় কলংক সাহারা! শুধু তাই নয়, গভীর দৃষ্টিতে তাকালেও সাহারা ক্রিকেটের জন্য অশুভ শক্তি। আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করার নীল নকশা এঁটেছে ভারত। আমাদের কোন টিভি চ্যানেল তাদের দেশে চলে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, এই ক্ষোভের কারণ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের স্বার্থকেন্দ্রিক আচরণ। ভারত দীর্ঘ ৪৩ বছরেও বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা দেয়নি। ৫৪ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখে বাঁধ, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ কমিশন, গজলডোবা বাঁধ, ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশকে পানি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার পথে। ভারত ট্রানজিট ও বিদ্যুৎ ট্রানজিট নিচ্ছে। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে কলকাতার পাশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে বাংলাদেশে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ভারতের কংগ্রেস ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকার পরও তিস্তা পানি চুক্তি, সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধ, ছিটমহল বিনিময়সহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কিছুই হয়নি। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে বেরুবাড়ী ভারতের হাতে তুলে দেয়া হলেও দীর্ঘদিনেও তিন বিঘা বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। বিগত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের পক্ষে দেশটির অবস্থান নেয়া তরুণরা মেনে নেয়নি। কিশোরী ফেলানীর লাশ আজও বাংলাদেশীদের হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়। এই যখন লিখছি তখন গণমাধ্যমে খবর এলো, আজ (৮ এপ্রিল ২০১৪) তিন বাংলাদেশী নাগরিককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয় নাগরিকরা। এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই শহরের গৌরনগর মজুমদারবাড়ী এলাকায়। নিহত তিন বাংলাদেশী সম্পর্কে পত্র-পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, এক. তারা গরুর ব্যবসা করতেন। সম্ভবত গরু কিনতে তারা সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলেন। দুই. তারা সেখানে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। বলা হয়েছে, তারা রোববার ভোরে ওই এলাকায় যান। স্থানীয় লোকেরা তাদের গরুচোর বলে সন্দেহ করে ধাওয়া করে। তারা একটি গাছে আশ্রয় নেন। ভারতীয় নাগরিকরা গাছে উঠে তাদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তাদের সঙ্গে যাওয়া আরও দু’জন দেশে ফিরে এ ঘটনা তাদের পরিবারকে জানান। নিহত তিনজনের লাশ ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে আছে। সেই ভারতের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সাহারার কাছে ক্রিকেটকে বন্দী করা হলো। ক্রিকেট ভারতীয় বাজিকরদের কাহিনী আমাদের জানা। আশরাফুলকে নিয়ে কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল। বাজিকরসমৃদ্ধ ভারতীয় সাহারা আমাদের ক্রিকেটে কোন কালো ছায়া মেখে দেয় তা কি কেউ ভেবেছে। গভীর এক পরিকল্পনা থেকেই এই কাজটি করা হয়েছে। জাতীয় সংগীত গাইতে যদি ১০০ কোটি টাকা বিত্তবানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। ক্রিকেটের জন্যও যাবে। সাথে আছে ক্রিকেটপ্রেমী বিশাল তরুণ বাহিনী। আমরা পারবো। তার আগে তরুণ-যুবক সর্বস্তরের জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে। প্রয়োজনে ‘কুইট ইন্ডিয়া’ আদলে ‘কুইট সাহারা’ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসুন বাধ্য করি সাহারাকে বিতাড়িত করতে। আসুন তাদের প্রতিরোধ করে প্রাণের ক্রিকেট মুক্ত করি।
পরাজিতের জন্য উৎসব। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সেটাই দেখা গেল। মাঠে খেলা দেখা ভারতের দর্শকরা উৎসব করেছেন নিজ দেশ বিজয়ী হওয়ায়। আর বাংলাদেশের দর্শকরা উৎসব করেছেন ভারত জয়ী হওয়ায়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের তরুণরা ভারতের বিজয়ে রাতেই ক্ষোভের মিছিল বের করে। ক্ষোভে বন্ধুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ব্লগের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুদেশ ভারতের প্রতি এদেশের মানুষের যে এত ক্ষোভ, ঘৃণা বিশ্বকাপে ভারত জয়ী হওয়ার পর আনন্দ উৎসবেই প্রমাণ হয়। প্রান্তিক গ্রামেও মানুষকে ক্ষোভের আনন্দ করতে দেখা গেছে। খেলায় একের পর এক বিতর্কিত অ্যাম্পায়রিংয়ে গোল্ড, ডেভিস আর আলিমদারকে নিয়ে চলছে বিষোদগার। প্রামাণ্য ও ব্যঙ্গ চিত্র, হ্যাসট্যাগ দিয়ে অনলাইনে প্রতিবাদের মিছিলে শামিল হচ্ছেন নেটিজেনরা। খোলা হয়েছে একাধিক ফেসবুক ও টুইট পেজ। এর পাশাপাশি দারুণ সব ব্যঙ্গ চিত্র আর তীর্যক মন্তব্য নিয়ে ‘ক্রিকেট রঙ্গ’ প্রকাশ করেছে বাংলাভাষীদের কমিউনিটি ব্লগ ‘বেশ তো’। এই পোর্টালটির ‘আম্পায়ার না ভ্যাম্পায়ার’ এখন ঘুরেছে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। একইসঙ্গে ইমোটিন সহযোগে তীর্যক মন্তব্য ‘বাংলাদেশের জন্য Target 303 (তিন সতীন...!!!)। তিন সতীন কে কে দেখে নিন- ১. ইন্ডিয়া, ২. আম্পায়ার, ৩. আইসিসি, তীর্যক মন্তব্যটিও বেশ সাড়া ফেলেছে। সব ছাপিয়ে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ রূপ ‘ইন্ডিয়া ছিঃ ছিঃ’ এখন হটকেক ডায়ালগে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তো রীতিমতো সয়লাব হয়েছে আইসিসি, অ্যাম্পায়র ইস্যুতে। সেখানে ফাঁস হয়ে গেছে ভারতকে জেতাতে আইসিসির ছক! অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ২৩ তারিখের খেলা পরিবর্তন করে ১৯ তারিখ নিয়ে আসা ও সঙ্গে ভেন্যু পরিবর্তন, ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানের আম্পায়ার দিয়ে দেয়া, মিডিয়া দিয়ে চাপ সামলানো ইত্যাদি প্রসঙ্গ। কেউ আবার খেলাজুড়ে শর্মার লাইফ পাওয়া এবং মাহমুদুল্লাহর ক্যাচটির রি-প্লে ভালোভাবে না দেখানো এবং এ বিষয়ে ধারাভাষ্যকারদের নীরবতা এবং সর্বোপরি খেলা চলাকালে স্কোর বোর্ডে “জিতেগারে জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা” বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিবাদ জানাতে এখানে ‘ক্রিকেট বাঁচাও, ভারতের নগ্ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ ও ‘আজ বাংলাদেশকে হারানো হয়নি হারানো হয়েছে ক্রিকেটকে’-এর মতো নানা পেজ খোলা হয়েছে। নানামুখী স্ট্যাটাসের পাশাপাশি সয়লাব হয়েছে কোলাজ কার্টুনে। এর মধ্যে মেসি’র ছবি দিয়ে ‘ভাগ্যিস ইন্ডিয়া ফুটবল খেলে না, চিটিং কইরাই ট্রফি নিয়া লইতো’, ‘আইসিসি মানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ ইত্যাদি নানা মন্তব্যে সয়লাব ফেসবুক পেজ। স্ট্যাটাসে #IndiaBoughtICC #SaveCricketFromICCGes #ShameIndia ইত্যাদি হ্যাস ট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমনই একটি পেজ থেকে ‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নির্লজ্জ একপাক্ষিক আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমে হারতে বাধ্য করার প্রতিবাদে ২০ মার্চ, শুক্রবার টিএসসিতে বিকাল ৩টা সাধারণ নাগরিকদের ‘মানববন্ধন’র ডাক দেয়া হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যান ইউনিটি (বিসিএফই) নামে একটি গ্রুপও তাদের ফেসবুক ইভেন্ট পেজে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদে আম্পায়ারদের কুশপুত্তলিকা দাহ করার ঘোষণা দিয়েছে। মাইক্রো ব্লগ টুইটারে @ICCShame#, @ICC=Indian Cricket Council!# ইত্যাদি টুইটে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। এক পাকিস্তানের সোয়েব আক্তার টুইটবার্তায় লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের আলিমদার ভারতকে ‘মওকা’ দিলেন।”
গুগল প্লাসে @#rip_icc #shamefulcricket #iccwc2015 ইত্যাদি হ্যাস ট্যাগের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ক্রিকেট এখন কমার্শিয়াল গেম। আর সেখানে টাকা সবচেয়ে বেশি লগ্নি করে ভারত। সুতরাং ভারতকে জেতানোর জন্য আইসিসির এই ছক আম্পায়ারদের কল্যাণে নগ্নতা পেয়েছে’। এছাড়াও তালহা বিন নজরুল লিখেছেন, ‘বাণিজ্যের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ’। আমিও কথাটি আগেই বলেছি। ক্রিকেট এখন আর নিছক কোন খেলা নয়। ক্রিকেটও আজ পণ্য। অর্থ আয়ের মেশিন। মানুষের আগ্রহকে পুঁজি করে ক্রিকেটের সব আজ বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। সোয়াশ’ কোটি লোকের দেশ ভারত বিশ্বের সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উত্তম বাজার। আর এ সুযোগটা তারা নিচ্ছে ভালোভাবেই। ক্রিকেটকে এখন তিন মোড়লের সংগঠনে দাঁড় করানো হয়েছে। আইসিসির বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশের আ হ ম মুস্তফা কামাল হলেও ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান ভারতের শিল্পপতি এন শ্রী নিবাসন। দেশে তিনি ম্যাচ গড়াপেটার আসামী। আইপিএল-এ ইন্ডিয়ান সিমেন্টের এই কর্ণধারের দল চেন্নাই সুপার কিংস। আর এই দলের অধিনায়কও মহেন্দ্র সিং ধোনি। শ্রী নিবাসনের জামাতা মিয়াপ্পান এই দলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপের সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে যে স্টার স্পোর্টসে তারাই ভারতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক। ধারা বিবরণীতেও ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটারদের আধিপত্য। ভারত যদি বিদায় হয়ে যায় তবে কি ক্ষতি হয় তা আইসিসি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ২০০৭-এ। ৫০ শতাংশের কম আয় হয় তাদের। সেবার বাংলাদেশের কাছেই হেরে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় ২০০৩-এর রানার্স আপ ভারত। ২০১১ এর চ্যাম্পিয়ন বিদায় নিলে ক্ষতির পরিমাণটা সব অনুমান ছাড়িয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাতেও নামতো ধস। সেখানে দর্শকই নেমে আসবে অর্ধেকে যদি ভারত না থাকে। এ বাস্তবতা উপেক্ষার কি উপায়? কর্তাদের মর্জির বলি আম্পায়াররা হতেই পারে। আমাদের ক্রিকেট দল। পরম মমতায় ডাকি টাইগার দল। ডাকি লাল সবুজের দল।
ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। ৯০ সালের শেষের দিকে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রতিপক্ষ বিজয়ী হওয়ায় ভারতীয় দর্শকরা মাঠে জুতা-পানির বোতল ছুড়ে সেই ভদ্রতা ভেঙেছে। এবার ক্রিকেটে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। তবে টি-২০ ফাইনালে দেখা গেছে ভারতের সমর্থকরা শত শত ভারতীয় পতাকা নিয়ে মিরপুর মাঠে উপস্থিত। এফডিসির পরিচালক পিযূষ বন্দ্যোপধ্যায়ের স্ত্রী আমাদের জাতীয় পতাকা কুকুরে মুড়িয়ে এনেছে আর ভারতীয় পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে। সরকার না দেখার ভান করে আছে। যারা ভারতীয় পতাকা হাতে খেলা দেখেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না। শুধু কি পাকিস্তান দলের সমর্থকদের ঠেকানোর জন্যই খেলার মাঠে বিদেশী পতাকা বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে? নয়তো কিসের এই আইন। স্টেডিয়ামে দেখা যায়, ভারতের খেলোয়াড়দের নিরুৎসাহী করতে বাংলাদেশী তরুণরা ‘ভুয়া ভুয়া’ ধ্বনি দিয়েছে। দেখা যায়, ভারত পরাজিত হচ্ছে বুঝতে পেরে বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। লংকানদের উৎসাহ দিতেও দেখা গেল তরুণ দর্শকদের। মহেন্দ্র সিং ধোনিদের পরাজয়ে যেন ভারতবিদ্বেষী বাংলাদেশের তরুণদের দারুণ উজ্জীবিত করে। দুঃখ হয় বিসিবিকে নিয়ে। বাংলাদেশে কি স্পন্সর করার মতো কোন কোম্পানি নেই। তবে কেন ক্রিকেটে সাহারা? শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে যে সাহারা অভিযুক্ত। যে সাহারার মালিক সুব্রত জেলে আছেন, মানুষ মুখে কালি মেরে চরম শিক্ষা দিয়েছে, সেই সাহারা কোম্পানি আমাদের অহংকার জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে থাকবে তা লজ্জার-অপমানের। জাতীয় ক্রিকেট দল বিশ্ব কাঁপাবে যখন তখন তার গায়ে থাকবে ভিনদেশী সাহারা। আমাদের তারুণ্য যখন ক্রিকেট নিয়ে গর্বে লাল সবুজের জার্সিতে রাস্তায় নেমে আসবে তখন তার গায়ে লেখা থাকবে ভারতীয় কলংক সাহারা! শুধু তাই নয়, গভীর দৃষ্টিতে তাকালেও সাহারা ক্রিকেটের জন্য অশুভ শক্তি। আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করার নীল নকশা এঁটেছে ভারত। আমাদের কোন টিভি চ্যানেল তাদের দেশে চলে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, এই ক্ষোভের কারণ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের স্বার্থকেন্দ্রিক আচরণ। ভারত দীর্ঘ ৪৩ বছরেও বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা দেয়নি। ৫৪ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখে বাঁধ, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ কমিশন, গজলডোবা বাঁধ, ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশকে পানি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার পথে। ভারত ট্রানজিট ও বিদ্যুৎ ট্রানজিট নিচ্ছে। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে কলকাতার পাশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে বাংলাদেশে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ভারতের কংগ্রেস ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকার পরও তিস্তা পানি চুক্তি, সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধ, ছিটমহল বিনিময়সহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কিছুই হয়নি। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে বেরুবাড়ী ভারতের হাতে তুলে দেয়া হলেও দীর্ঘদিনেও তিন বিঘা বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। বিগত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের পক্ষে দেশটির অবস্থান নেয়া তরুণরা মেনে নেয়নি। কিশোরী ফেলানীর লাশ আজও বাংলাদেশীদের হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়। এই যখন লিখছি তখন গণমাধ্যমে খবর এলো, আজ (৮ এপ্রিল ২০১৪) তিন বাংলাদেশী নাগরিককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয় নাগরিকরা। এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই শহরের গৌরনগর মজুমদারবাড়ী এলাকায়। নিহত তিন বাংলাদেশী সম্পর্কে পত্র-পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, এক. তারা গরুর ব্যবসা করতেন। সম্ভবত গরু কিনতে তারা সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলেন। দুই. তারা সেখানে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। বলা হয়েছে, তারা রোববার ভোরে ওই এলাকায় যান। স্থানীয় লোকেরা তাদের গরুচোর বলে সন্দেহ করে ধাওয়া করে। তারা একটি গাছে আশ্রয় নেন। ভারতীয় নাগরিকরা গাছে উঠে তাদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তাদের সঙ্গে যাওয়া আরও দু’জন দেশে ফিরে এ ঘটনা তাদের পরিবারকে জানান। নিহত তিনজনের লাশ ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে আছে। সেই ভারতের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সাহারার কাছে ক্রিকেটকে বন্দী করা হলো। ক্রিকেট ভারতীয় বাজিকরদের কাহিনী আমাদের জানা। আশরাফুলকে নিয়ে কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল। বাজিকরসমৃদ্ধ ভারতীয় সাহারা আমাদের ক্রিকেটে কোন কালো ছায়া মেখে দেয় তা কি কেউ ভেবেছে। গভীর এক পরিকল্পনা থেকেই এই কাজটি করা হয়েছে। জাতীয় সংগীত গাইতে যদি ১০০ কোটি টাকা বিত্তবানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। ক্রিকেটের জন্যও যাবে। সাথে আছে ক্রিকেটপ্রেমী বিশাল তরুণ বাহিনী। আমরা পারবো। তার আগে তরুণ-যুবক সর্বস্তরের জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে। প্রয়োজনে ‘কুইট ইন্ডিয়া’ আদলে ‘কুইট সাহারা’ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসুন বাধ্য করি সাহারাকে বিতাড়িত করতে। আসুন তাদের প্রতিরোধ করে প্রাণের ক্রিকেট মুক্ত করি।
আনোয়ার বারী পিন্টু
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন