সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫

পদ্মা সেতু পাইলিং-এ পশুবলি ও অভিজিৎ হত্যা


খবরটি ছোট হলেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রিন্ট ও সামাজিক মিডিয়ায় তা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক আর্থিক ও কূটনৈতিক কেলেঙ্কারি সৃষ্টির পর অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজ শুরু করেছেন।
বলাবাহুল্য এর আগে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে চারটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সরকারের মন্ত্রী ও শীর্ষ মহলের দুর্র্নীতির অভিযোগ তুলে একতরফাভাবে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করেছিলেন। সরকার ব্যাংকের চাহিদা ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কাজে সহযোগিতা না করায় চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হয়নি। এর পর পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা সংগ্রহ করেছে। চাঁদা ভাগাভাগি করতে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে মারামারি করে একজন সতীর্থকে খুন করেছে। এখন বিকল্প উৎসের অর্থ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রকাশিত খবরানুযায়ী পাইলিং-এর কাজ করতে গিয়ে সরকার আরেকটি বড় কেলেঙ্কারি করেছেন বলে মনে হয়। এই কেলেঙ্কারিটি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ঈমান-আকিদার দিক থেকে অত্যন্ত আপত্তিকর।
প্রকাশিত খবরানুযায়ী পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজ শুরুর প্রাক্কালে ষাঁড়, পাঁঠা ও মোরগ বলি দেয়া হয়েছে এবং তাদের রক্ত বেদীমূলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য রিপোর্টে বলি শব্দের পরিবর্তে উৎসর্গ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে ফাউন্ডেশন যদি সফল হয় তা হলে পাইলিং-এর সংশ্লিষ্ট পয়েন্টে সেতু নির্মাণ শুরু হবে।
গত মঙ্গলবার এই স্তম্ভে আমি এই উপমহাদেশে পুলসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অতীতে নরবলি দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছিলাম যে, বর্তমানে এই প্রথাটি নেই। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা গেল যে, আমাদের সরকার অথবা তাদের প্রতিনিধি পশু বলি বা উৎসর্গের নামে এটি পুনরুজ্জীবিত করেছেন। দেব দেবতার নামে কোনও স্থাপনায় মানুষ বা পশু বলি আমাদের ঈমান আকিদা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। তা¤্র ও বৈদিক যুগে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ইহুদীদের মধ্যে এই প্রথাটি চালু ছিল। তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ ও পশু মেরে দেবতার নামে উৎসর্গ করা হতো। দেবতার পাশাপাশি অশরীরী আত্মা ও মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যেও এই বলি দেয়া হতো। রাজা বাদশারা মরলে পরকালে তাদের খেদমতের জন্য চাকর বাকরদেরও মেরে তাদের সাথে কবর দেয়া হতো। চীনের মহাপ্রাচীরের তলায়ও হাজার হাজার লোকের কবর রয়েছে বলে জানা যায়। ভবন সুরক্ষার জন্য নির্মাণ কাজের নিচে অথবা তার পাশে অবিবাহিতা মেয়েদের জীবন্ত কবর দিয়ে দেয়াল তৈরির বহু দৃষ্টান্তও হিন্দু অধ্যুষিত ভারত ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত চীন, জাপানে পাওয়া যায়। সভ্যতার উষালগ্নে এই কুসংস্কারগুলো উঠে যায় এবং এসব কর্মকা- খুন ও অসভ্য আচরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশে এই প্রথা সম্পূর্ণ রহিত হয়ে যায়। ভারতে ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তিনটি নরবলির খবর পাওয়া যায়। তবে তিনটি ক্ষেত্রেই সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশে হঠাৎ করে ষাঁড়, পাঁঠা আর মোরগ উৎসর্গ করে পদ্মা সেতুর পাইলিং উদ্বোধন আমাকে বিস্মিত করেছে। এই কাজটি কি নরবলির পথ সুগম করলো? পত্র-পত্রিকায় আমি এর কোন প্রতিবাদ দেখিনি।
(দুই)
দেশের রাজনীতিতে সহিংসতার প্রকোপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই মনে হয়। সমস্যা সুরাহা করার দেশী বিদেশী উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ছে কিনা অনেকে প্রশ্ন করছেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এই উদ্যোগ নিয়ে বিপদে পড়েছেন। তিনি এখন কারান্তরালে দশদিনের রিমান্ডে। সম্ভবত কোনও রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না থাকায় তার মুক্তির দাবি সোচ্চার হচ্ছে না। বেচারার জন্য আমার খুবই কষ্ট হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগের মার খেয়ে তিনি ফিরে আসতে বাধ্য হন এবং ইবনে সিদ্দিক ছদ্মনামের একজন লেখক হিসেবে মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে জাতির খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশ হবার পর চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে তার অনন্য ভূমিকা, অসাধারণ বাগ্মিতা ও ক্ষুরধার লেখনী তাকে মানুষের কাছাকাছি আসতে সাহায্য করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি তাকে হতাশ করে। প্রমাণিত হয় যে, প্রতিভাবানদের জন্য এই দলে কোনও ঠাঁই নেই। এ প্রেক্ষিতে তাকে একলা চল নীতি অবলম্বন করতে হয়। তার উচিত এখন আদর্শিক রাজনীতিতে ফিরে আসা। জাতি তার কাছ থেকে অনেক কিছুই আশা করে। অবশ্য রিমান্ডের নির্যাতন এই বয়সে তাকে কতটুকু কর্মক্ষম রাখতে পারে তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।
আমি দেশের দ্রুত অবনতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার কথা বলছিলাম। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের তাগিদ দিয়ে পত্র লিখেছেন। উভয় নেত্রী এই পত্রের জবাব দিয়েছেন। যতদূর জানা গেছে জবাব পরস্পর বিরোধী। প্রধানমন্ত্রী সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে বেগম জিয়া ফলপ্রসূ সংলাপে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে সরকার বিরোধীদলের চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সকল রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করছে। কিন্তু পরিস্থিতি আয়ত্তে আসছে না। সরকার ক্ষমতা ছাড়তে অথবা ছাড়ার কোনও প্রশ্নে কথা বলতে নারাজ। সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে সক্রিয় সহযোগিতায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বিরোধীদল দমনে তাদেরও কাজে লাগানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে উপদেষ্টা ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে সংকট নিরসনের বিরোধিতা করছেন এবং বিরোধী দলকে নির্মূলের ঘোষণা দিচ্ছেন। একজন মন্ত্রী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতেও বিরোধী দলকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ তারাই ক্ষমতায় থাকবেন। বিনা নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় আছেন। নতুন নির্বাচনের প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন হলে জনগণ যাকে ক্ষমতায় নেন তারাই ক্ষমতায় থাকবে। সরকার ও তার মন্ত্রীরা জনগণের উপর আস্থা না রেখে ক্ষমতায় থাকতে চান কেন? ক্ষমতা ছাড়তে তারা ভয় পান কেন? সব অপকর্ম, খুন, সন্ত্রাস, গুম, লুটপাটের হিসাব দিতে হবে বলে? জনগণ মনে করে যদি এসবের কিছুই না করে থাকেন তা হলে তো ভয় পাবার কথা নয়। করে থাকলে মুরুব্বি ধরলেও জনগণ ক্ষমা করবে বলে মনে হয় না। এ প্রেক্ষিতে সকল গুয়ার্তুমি পরিহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে আসা দরকার বলে দেশবাসী মনে করেন। 
তিন.
কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিজিৎ রায় নামে একজন ব্লগারের নির্মম হত্যাকা- দেশ-বিদেশে খবরের শিরোনাম হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ও একজন ব্লগার। আততায়ীরা তাকে কুপিয়ে খুন করে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে চলে গেছে। তিনি যেখানে খুন হন তার চারপাশে পুলিশ আগেই ব্যারিকেড দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করেছিল। চোখের সামনে তারা হেঁটে চলে গেলেও পুলিশ তাদের ধাওয়া করেনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর দেহ সেখানে পড়েছিল। তার স্ত্রী সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছে; কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। পুলিশ তাদের হাসপাতালেও নেয়নি। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার পিতা অধ্যাপক অজয় রায় বলেছেন, “অভিজিৎ একজন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী লেখক ছিলেন এবং ১০টি পুস্তক রচনা করেছেন। তার মুক্ত চিন্তার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কট্টরপন্থী সমর্থকরা তাকে একাধিকবার মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল এবং তিনি আইজি/ডিআইজিকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। অভিজিতের মৃত্যু তাকে বিখ্যাত করেছে, বিশেষ করে আমাদের দেশের বামপন্থী নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষীদের সোচ্চার হতে সাহায্য করেছে।
অভিজিৎকে আমি চিনতাম না। মরার পরে চিনলাম। মুক্তমনা নামক তার একটি ব্লগ ছিল। মুক্তমন ও মুক্ত চিন্তার নামে এটি ছিল নাস্তিক ও কট্টর ধর্ম তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের একটি ব্লগ। তার ব্লগটি আমি ভিজিট করেছি। তিনি শুধু নাস্তিক ছিলেন না। তিনি নিজেকে মুক্ত চিন্তার প্রবক্তা, যুক্তিবাদী, সংশয়বাদী এবং মানবতাবাদী বলেও দাবি করতেন। ২০১৩ সালে ব্লগাররা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, তার রাসূল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, ফেরেশতাগণ এবং উম্মুল মুমেনীন বিবি আয়েশাকে (রা.) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে লেখা প্রকাশ করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ ও সরকার তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছিল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রতিবাদ সমন্বয় করার দায়িত্বও তিনি পালন করতেন। তার মৃত্যুতে এ দেশের ব্লগাররা একজন সুহৃদ হারিয়েছেন সন্দেহ নেই। তবে এর ফলে ধর্ম বিদ্বেষীদের বিদ্বেষ প্রচার কতটুকু বাধাগ্রস্ত সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার হত্যার সাথে পারিবারিক কলহ, নারীঘটিত কোনও বিষয় সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ অথবা অন্যকিছু জড়িত আছে কি না নিরপেক্ষ একটি তদন্ত তা বলে দিতে পারে। তবে তদন্ত ছাড়া জামায়াতের ন্যায় একটি প্রতিষ্ঠানের সমর্থকদের এর জন্য দায়ী করা তার পিতার ন্যায় স্বনামধন্য একজন অধ্যাপকের অনুমান অযৌক্তিক এবং সত্যের অপলাপ বই আর কিছুই নয়। এ ক্ষেত্রে আমার মন্তব্য হচ্ছে, প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ করা অসভ্য অশিক্ষিতদের কাজ। হত্যার হুমকির ব্যাপারে আইজি/ডিআইজিকে তিনি বলে থাকলে তাদের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা দরকার। ব্লগার রাজিবকে যখন হত্যা করা হলো তখন সরকার প্রধান তদন্ত ছাড়াই বলে দিলেন যে এটা জামায়াত-শিবিরের কাজ। কিন্তু পরে দেখা গেলো যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের সাথে জামায়াত-শিবিরের দূরতম সম্পর্কও নেই। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কেন? মুক্তমনা, সংশয়বাদী, যুক্তিবাদী নাস্তিক ও বিজ্ঞানমনস্ক যে কেউ হতে পারেন। আমি বলবো আমার ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত দেয়ার অধিকার তার বা তাদের নেই। লাশরিক আল্লায় বিশ্বাস, নবী-রাসূল (সা.) আসমানী কেতাব, ফেরেশতাগণ এবং আখেরাত তথা মৃত্যুপরবর্তী দুনিয়ায় বিশ্বাস আমার ঈমানের অঙ্গ। এই ঈমান বা বিশ্বাসের উপর আঘাত হানার অধিকার কারুর নেই। সারা দুনিয়ার দু’শ কোটি এবং বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমান এই ঈমান বা বিশ্বাসকে লালন করে। মুক্ত চিন্তার নামে এই ঈমান বা বিশ্বাসকে কেউ যদি আঘাত করে তাহলে কেউ না কেউ অধৈর্য হয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করতে পারে।
অভিজিতের লেখা ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ এবং ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসকে প্রচ-ভাবে আঘাত করেছে। অবশ্য আমার একথা বলার উদ্দেশ্য এ নয় যে, তার প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে তাকে মেরে ফেলা বৈধ। ইসলামের মূল স্পিরিট এবং আইনের শাসন তা বলে না। আমি আশা করবো যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করেন তারা প্ররোচনা সৃষ্টি থেকে বিরত হবেন এবং দেশে সহনশীলতা এবং সৌহার্দ্যরে পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করবেন।
ড. মোঃ নূরুল আমিন 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads