বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ছাত্রলীগের অন্যায়ের প্রতিকার নেই কেন?

সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাতভর নির্যাতন


শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খলা ও অপকীর্তির শেষ নেই। ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পরিবর্তে ক্যাম্পাসে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। প্রতিদিনই দেশের নানা স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। ছাত্রলীগের জন্য চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ইত্যাদি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলের ৩০ জন ছাত্রকে রাতভর পিটিয়েছেন ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যখন ৩০ জন সাধারণ ছাত্র কয়েক ঘণ্টা ধরে তাদের পৈশাচিক আচরণের শিকার হচ্ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরীহ ছাত্রদের বাঁচাতে দায়িত্ব পালন করেনি।

হলটির দু’টি গণ-রুমে প্রায় ৮০ জন ছাত্র থাকেন। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এসব ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে সপ্তাহে চার দিন হল গেস্টরুমে তাদের হাজিরা দিতে হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দীর্ঘ বক্তৃতা ও নানা আদেশ-নিষেধ তাদের গলাধঃকরণ করতে হয়। সোমবার ছিল তাদের হাজিরা দেয়ার দিন। কিন্তু গেস্টরুমে সাধারণ ছাত্রদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। এতে নেতারা নাখোশ হন। এরপর শুরু হয় অভিযান। গণ-রুম থেকে ৩০ ছাত্রকে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করা হয়। ছাত্রসংখ্যার তুলনায় হলগুলোতে সিট অপ্রতুল। এ জন্য প্রত্যেকটি হলে গণ-রুম তৈরি করা হয়েছে। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের এসব গণ-রুমে থাকতে দেয়া হয়। ছাত্রনেতারা তাদের থাকার সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেন। নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য গণ-রুম থেকে জোরপূর্বক ছাত্রদের জোগান দেয়া হয়। এসব ছাত্রকে প্রায়ই নানা রকম অত্যাচার-নির্যাতন সইতে হয়।

তাদের পড়াশোনার কোনো সুযোগ নেই। কথিত গণ-রুমের ব্যবস্থা তুলে দেয়া দরকার। এসব রুমকে সাধারণ রুমে রূপান্তর করাই শ্রেয়। ক্ষমতার দাপটে যেভাবে ছাত্রদের ওপর অত্যাচার চালানো হয় তাতে এটি স্পষ্ট যে, কর্তৃপক্ষ বলতে যেন কেউ নেই। সাধারণ ছাত্রদের অভিভাবক হিসেবে হল প্রশাসন চোখ বুজে থাকতে পারেন না। তারা যেন জঘন্য অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য হলের আবাসিক শিক্ষকের কাছে পৌঁছাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাধারণ ছাত্রদের বেপরোয়া মারধরকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেই। যারা ছাত্রদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নেয়া হবে না? ছাত্রদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া, তাদের মারধর করা কি বেআইনি নয়? যদি এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন চরম বিশৃঙ্খলা চলতে পারত না।

ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্রদের রাতভর মারধর করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এ দীর্ঘ সময়ে আবাসিক শিক্ষকদের কেউ বিষয়টি টের পাননি, এটা বিশ্বাস করা যায় না। প্রয়োজন ছিল শিক্ষকদের সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া। দরকার হলে পুলিশ ডাকা। কিন্তু কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। রাতে না হয় প্রশাসন ‘কিছু জানতে পারেনি’। কিন্তু পরদিন এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? যারা ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করেছে, তারা হলের অতি পরিচিত রাজনৈতিক ক্যাডার। একই অবস্থা দেশের প্রায় সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে। এ জন্য সরকারের দলীয় চিন্তা প্রধানত দায়ী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে বিনাবাক্যে আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের প্রথমে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তারা যদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads