মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ছাত্রলীগের হামলায় ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি ছাত্রদল : জমিদারির তালুক নাকি!



একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছাত্রদলের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি দায়িত্ব লাভের পর ভিসির সঙ্গে দেখা করতে এসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছিলেন তত্কালীন সভাপতি। সোমবার ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা একই ঘটনার মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলার যে ছবি ও খবর ছাপা হয়েছে, তা ২০০৬ সালের লগি-বৈঠা আন্দোলনে পল্টন মোড়ের নৃশংসতা মনে করিয়ে দেয়। যারা ভিন্ন সংগঠনের কর্মীকে এমন নির্মমভাবে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে ফেলে দিয়ে তার ওপর উন্মত্তের মতো লাফাতে পারে, তারা আর যা-ই হোক গণতন্ত্র চর্চায় যে অভ্যস্ত নয়—সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আবারও প্রমাণ করল ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতারা মুখে যা-ই বলুন না কেন, ছাত্রলীগ ক্ষমতার দম্ভ আর সন্ত্রাস আঁকড়ে রয়েছে ‘আসল’ শক্তির জোরে। দেশের অন্যান্য স্থানের ঘটনা থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে।
ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ক্যাম্পাসে আসতে চেয়েছিলেন। তাদের ঠেকাতে ছাত্রলীগ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দলবদ্ধ হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ কারও অজানা ছিল না। এ খবর পেয়ে ছাত্রদল নেতারা পরিস্থিতি জানতে যাদের পাঠায়, তারাই প্রথম হামলার শিকার হয়। প্রক্টর ও পুলিশের সামনে হামলা হলেও কেউই এগিয়ে আসেনি। এভাবে দফায় দফায় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় শেষপর্যন্ত সাক্ষাত্প্রার্থীরা কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হন। তবে ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রথমে প্রক্টর ও পরে ভিসির সঙ্গে দেখা করে এবং জানায়, তারা ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছে। একেই বলে ভূতের মুখে রাম নাম।
অবশ্য ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। তারা সবসময় যা বলেন, করেন তার উল্টো। ছাত্রলীগও যথাযথভাবে তাদের অনুসরণ করে ভবিষ্যতে দলীয় নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে চাইবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপরও ছাত্রলীগ একইভাবে হামলে পড়েছিল। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররাই। তাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক’দিন আগে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা স্থানীয় একটি সিএনজি স্টেশনে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাংচুর করায় সেখানে সিএনজি ও পেট্রল পাম্পে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে প্রক্টর অফিস ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। খুলনা আলিয়া মাদরাসা ও পিরোজপুর থেকেও ছাত্রলীগের তাণ্ডব চালানোর খবর পাওয়া গেছে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলার অভিযোগে আটক ছাত্রলীগ নেতার মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে তার অনুসারীরা। শুধু ছাত্রলীগই নয়, আওয়ামী লীগ ক্যাডাররাও কম যান না। গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনের উপনির্বাচনের প্রচার শুরুর প্রথম দিনেই তারা হামলা চালিয়েছে দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সমর্থকদের ওপর। দেশজুড়ে এমন হামলা-মারামারি বেড়ে যাওয়া দেশে জংলী শাসন কায়েম হওয়ার সত্যতাই তুলে ধরে।
বুয়েটে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা জনমনে যে স্বস্তি জাগিয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে। ঘটনা দেখে প্রশ্ন জাগে, ঢাবি ক্যাম্পাস কি ছাত্রলীগের একক জমিদারি যে ছাত্রদল সেখানে যেতে পারবে না? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের সামনেই প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের তাণ্ডব থামাতে কারও এগিয়ে না আসাই প্রমাণ করে তাদের পেছনে উচ্চপর্যায়ের মদত রয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসে পুলিশ একইভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা আর পুলিশ কর্তৃক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব চেয়ে চেয়ে দেখার ঘটনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার—দেশজুড়েই আওয়ামী লীগ জমিদারি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যদিও ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত কেউই বুঝতে পারে না পায়ের তলার মাটি কীভাবে সরে যায়। জমিদারি এখন অতীতের বিষয়, এ সত্য ভুলে যাওয়ার মাশুল কতটা ভয়াবহ হতে পারে—সেটা এদেশের মানুষ বারবারই দেখেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads