শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

অভিমত : জিয়াউর রহমান উচ্চারণ



পারভেজ আহমেদ চৌধুরী
বাংলাদেশের জনগণের পরিচয়ের দাবি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির দর্শন বিশ্বময় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অধিবাসীদের স্বাধীন-সার্বভৌম পরিচয়কে নির্দেশ করে থাকে। দলটি প্রতিষ্ঠা করেন স্বাধীনতার এমন এক প্রবাদ পুরুষ, যিনি বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের এক বীর যোদ্ধা। যিনি তার বিশ্বকণ্ঠে ধারণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সর্বশেষ শব্দ সমষ্টি ‘ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ’, যা উচ্চারণের জন্য বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে শত শত বছর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। আন্দোলন ও সংগ্রামের সর্বশেষ পটভূমি আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে গণহত্যার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিদ্রোহ-পরবর্তী মুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ষোলশহরে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিকামী বিদ্রোহী সেনাদের তৈরি করা সৃজনশীল ঘোষণামঞ্চের ওপর উপবিষ্ট হয়ে জিয়া তার বিদ্রোহী কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। গোলা-গুলি ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পরদিন ২৭ মার্চ বিদ্রোহী মেজর জিয়াউর রহমান ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তার বিশ্বকণ্ঠের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ‘ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেন। বিশ্বসভ্যতা সেদিন জানতে পারে বাংলাদেশ তার ন্যায়সঙ্গত স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এদিকে দেশ জনপদে এ ঘোষণার প্রভাব এতটাই তীব্র ছিল, বাংলাদেশের মানুষকে সশস্ত্র যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে ন্যূনতম সেকেন্ড পরিমাণ সময়ও বিলম্ব করতে দেয়নি। মুক্তিকামী জনতা তাত্ক্ষণিকভাবে অন্ন-বস্ত্রের পরিবর্তে গুলি-অস্ত্রের সন্ধানে জান বাজি রেখে বেরিয়ে পড়েছিল। কারণ তারা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছিল, এটি তাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে পাকা ধানের সোনালি মানচিত্রের ঘোষণা; গাঢ় সবুজ বনানীর পূর্বদিকে প্রভাতের টকটকে লাল সূর্যের ঘোষণা, চির বহমান পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ঘোষণা; সাড়ে সাত কোটি প্রাণের এক দুর্জয় ও দুর্নিবার ঘোষণা। মেজর জিয়াউর রহমানের ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ ঘোষণা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক অমর বাণী, অক্ষয় কীর্তি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকারী বিদ্রোহী মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি স্বাধীনতার সর্বশেষ অমিয় বাণী ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ উচ্চারণের চিরন্তন প্রতীক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। হানাদার ও বাকশালমুক্ত বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান এক দিগ্বিজয়ী নাম। মার্চের বিদ্রোহ ও নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তিনি এদেশের জনগণের ত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার অক্ষয় নামটি স্বাধীনতা ঘোষণা ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের কাছে গর্বের সর্বোচ্চ অনুভূতি। তারা জিয়ার অম্লান স্থানটুকুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। যে কোনো সঙ্কটে, সংগ্রামে তারা চায় মেজর জিয়া উচ্চারণ; সব ধরনের সমৃদ্ধিতে রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্মরণ। তারা চায় না এমন কোনো গণমাধ্যম, যেখানে জিয়া অনুপস্থিত থাকেন; চায় না এমন কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, যেখানে আলোচকরা জিয়াকে স্মরণ করবেন না। জিয়ার দর্শন ও ঐতিহ্যের ধারক দলটির কাছে তাদের চাওয়া জিয়াউর রহমান নামটির অধিকতর উচ্চারণ। কারণ জাতীয়তাবাদী দল এদেশের জনগণের অন্যতম প্রভাবশালী মুখপাত্র। যেখানে দলটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য, বিবৃতি বা ঘোষণা প্রদান করা হলে পুরো দেশবাসী মুহূর্তের মধ্যেই তা নিজের মনে করে দেশব্যাপী এক জাতীয়তাবাদী আবহ তৈরি করে থোকে। যার প্রমাণ পাই বিএনপির সাম্প্রতিক রোডমার্চ ও ১২ মার্চ ২০১২-এর সমাবেশের দিকে তাকালেই। তাই দলটির উচিত, তার রাজনৈতিক জীবন প্রণালীর প্রত্যেকটি পদক্ষেপে জিয়া নামটির অধিকতর উচ্চারণ, যাতে করে শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার সাধারণ সমর্থকরা নেতাদের কথার সূত্র ধরে জিয়া নামটি জোরালোভাবে উচ্চারণের সুযোগ পায়। কারণ এটা অত্যন্ত স্পষ্ট, তৃণমূলে পড়ে থাকা লোকগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণই তাদের চেতনাময়ী হতে সাহায্য করে এবং যা অনেক সময় অন্য বিরুদ্ধবাদীদের উপরও যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অতএব বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রতি আমাদের মিনতি, তারা যেন অধিকতরভাবে জিয়াউর রহমান নামটি উচ্চারণ করেন। কারণ তাদের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণই একটি চেতনাময়ী জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের প্রধান সহায়িকা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads