শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বিএনপির আন্দোলন কোথায় ও কোন পথে ?


 সিরাজুর রহমান
ইলিয়াস আলীকে কারো মনে আছে? এপ্রিল মাসের এক রাতে বনানীতে নিজের গাড়ি থেকে যে ইলিয়াস আলীকে ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল? ইলিয়াস আলী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সফল সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিএনপি সিলেট শাখার প্রধান ছিলেন। জোরালো অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে বর্তমান সরকারের ঘাতক বাহিনী র‌্যাব তাকে ছিনতাই ও গুম করেছে। তার গাড়ির চালক রাজনীতিক ছিলেন না। কিন্তু তাকেও গুম করেছে ঘাতকেরা। তাদের ভয় ছিল তিনি ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে পারেন।
দেশের ভেতরে এই জঘন্য গুমের ঘটনায় ঘৃণা ও ক্রোধ উথলে পড়ছিল। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এবং মার্কিন সিনেটরেরা ইলিয়াস আলীর ছিনতাই ও গুমের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন, অবিলম্বে তাকে জীবিত মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া অবিলম্বে তার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। যেখানে যেখানে তিনি প্রতিবাদ সভা করেছেন হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে তার কথা শুনেছে। তারও আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে তার আন্দোলনেরও ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ইলিয়াস আলীর মুক্তির দাবিতে জনতা আরো বিশাল, আরো প্রাণবন্ত ছিল।
সেটা স্বাভাবিকই ছিল। কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেটা আরো গভীর বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়। তা ছাড়া নির্বাচনের আরো পৌনে দুই বছর বাকি তখনো। কিন্তু ইলিয়াস আলী একজন জলজ্যান্ত এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ এবং ভারতের ভারী যন্ত্রপাতিকে ট্রানজিট দেয়ার উদ্দেশ্যে তিতাস নদীতে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে তিনি গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাকে ওরা রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলল! এমন অন্যায় আর অবিচার হজম করা সাধারণ মানুষের পক্ষেও সম্ভব ছিল না। মে মাসেই এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যখন আন্দোলনের মুখে বর্তমান অত্যাচারী আর দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের পতন সত্যি আসন্ন মনে হচ্ছিল।
রাজনীতির পথ সরল নয়। সে পথ জটিল ও রহস্যের আবর্তে ঘেরা। বিশেষ করে বাংলাদেশেÑ যে দেশে আকাশ কখনো গলিত লাশ সন্ধানী শকুনিদের উপস্থিতিমুক্ত নয়। মে মাসের সে সম্ভাবনার সময় কুইক মার্চ হঠাৎ করে হুমড়ি খেয়ে মুখ বুজে পড়ল। নেতৃত্ব আন্দোলনে ঢিলে দিলো। মেহরুন রুনি ও তার স্বামী সাংবাদিক ছিলেন। পেশাগত সহানুভূতির কারণেও সাংবাদিকেরা মাঝে মাঝে তাদের হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেন। কিন্তু ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ একেবারেই চাপা পড়ে গেছে বলে মনে হয়। আবার প্রমাণ হলো সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক স্মৃতি খুবই দুর্বল। আন্দোলন যখন তুঙ্গে একাধিক কলামে লিখেছিলাম লোহা তপ্ত থাকতেই হাতুড়ির ঘা দিতে হয়। বহু পাঠক এখন আমারই কৈফিয়ত দাবি করছেন। বলছেন, কই, কোথাও হাতুড়ির ঘা পড়তে তো দেখলাম না!
বিএনপি নেতৃত্বে বহু দুর্বলতা আছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠন ৬০-৬৫ বছরের পুরনো। অভিযোগ আছে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-হেনলীগ-তেনলীগের ক্যাডার বাহিনী বিগত সাড়ে তিন বছরে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপির তেমন কোনো ক্যাডার নেই, তাদের তৃণমূল সংগঠনও তেমন শক্তিশালী নয়। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী মিডিয়ার অভাব আছে, মিডিয়াকে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় বিএনপির নেতৃত্ব সে সম্বন্ধে শিক্ষিত নয়। তাদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে আওয়ামী লীগের মিডিয়া তখন বিএনপির নেতৃত্বের অন্তর্বিরোধ এবং আন্দোলনের পন্থা নিয়ে মতানৈক্যের বহু বাস্তব কিংবা কাল্পনিক কাহিনী রটিয়েছে, আশরাফ ও হানিফ প্রমুখ শূন্যভাণ্ডগুলো বহু কর্কশ ঢক্কানিনাদ করেছে। বিএনপির নেতারা মোকাবেলা করার পরিবর্তে অবশ আর অলস হয়ে বসেছিলেন।

কবে হবে কঠোর কর্মসূচি?
রমজানের আগে খালেদা জিয়া ঈদের পরে ‘কঠোর কর্মসূচি’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঈদুল ফিতর এলো আর গেল। এখন শোনা যাচ্ছে, কঠোর কর্মসূচি আসবে ঈদুল আজহার পরে। আগামী বছরের ঈদের কথাও উঠবে কি না কে জানে! সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন আর সংশয়। সর্বত্রই জল্পনা হচ্ছে, বিএনপির ভেতরে হচ্ছে কী? এটা বুঝতে বুদ্ধিমান না হলেও চলে যে বর্তমান অবস্থা বিএনপির ভেতরের অন্তর্নিহিত কোনো শক্তির পরিচয় দেয় না।
আমার শৈশবের কথা। জমিদার বাড়িতে বিয়ে হবে। ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে প্রজাদের দাওয়াত করা হলো। জমিদার বাড়ির ভোজের লোভে ভোর থেকে জনসমাগম হতে শুরু করে। তারপর প্রতীক্ষা আর প্রতীক্ষা। বিকেল নাগাদ ‘ভোজ’ এলো। প্রত্যেককে এক টুকরো করে পেয়ারা। সে হতাশার চিত্র সহজেই কল্পনা করা যায়। বিএনপির আন্দোলন সম্বন্ধে সাধারণ মানুষেরও এই হচ্ছে মনের অবস্থা।
ড্যান মজিনা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পদে স্থাণু হয়ে বসার পরপরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে উঠেপড়ে লেগেছেন। তখনই এক কলামে প্রকারান্তরে তাকে অনুরোধ করেছিলাম, আপনার দাক্ষিণ্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, দয়া করে আপনার কুকুর সামলান। সে পরামর্শ অপ্রাসঙ্গিক ছিল না। ২০০৬-০৭ সালে সচরাচর কালা জাহাঙ্গীর নামে পরিচিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রির সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রয়াস পেয়েছিলেন। তার উত্তরসূরি রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বুটেনিসও হুবহু একই রকম চেষ্টা করেছেন।
ফলাফল বাংলাদেশের জন্য ভালো হয়নি। একই গোষ্ঠীর একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি দৈনিকের ষড়যন্ত্রের জের ধরে এই রাষ্ট্রদূতেরা প্রথমে একটা ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা নিয়ে ময়দানে নামেন। স্বার্থের জোর বরাবরই বেশি ছিল ভারতের। ক্রমে ক্রমে অদৃশ্যভাবে সেটা ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলায় পরিণত হয়। তারই জের ধরে বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করার চেষ্টা হয়। শেষে ভারতের ‘বস্তা বস্তা টাকা ও পরামর্শে’ দিল্লির আজ্ঞাবহ আওয়ামী লীগ সরকার গদিতে আসে। বিগত সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময়ে তারা এক দিকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক এলাকা ও সম্পদ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে, অন্য দিকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নমুখিতার প্রয়োজনীয় হাতিয়ারগুলো (আইনশৃঙ্খলা, ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচার, দলনিরপেক্ষ প্রশাসন এবং জাতীয় ঐক্য-সংহতি) ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিগত কিছু দিনে আকাশচুম্বী দুর্নীতির আরো কাহিনী ফাঁস হচ্ছে পরতে পরতে। ডেসটিনির কেলেঙ্কারি ঝিমিয়ে পড়ার আগেই হলমার্ক কেলেঙ্কারি ধরা পড়েছে। হলমার্ক রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকের ৩৬ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। হলমার্কের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মোদাচ্ছের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ডেসটিনির ক্ষেত্রে জড়িত ছিলেন ক্ষমতাসীন মহলের ব্যক্তিত্ব অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. হারুন অর রশিদ। এর আগে আগেই ধরা পড়ল পদ্মা সেতু নিয়ে ৩৫ মিলিয়ন (তিন কোটি ৫০ লাখ) ডলারের দুর্নীতি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তার সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগ গ্রহণে এক মাস দেরি করেছিলেন, বলেছিলেন দুর্নীতির জন্য নয়, দেশপ্রেমের কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তাতেও সন্তুষ্ট নয়, তারা এখনো প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে অনড় আছে। এ দুর্নীতির আন্তর্জাতিক তদন্তে এখন সরকারি দলের শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিবিদদের পরিবারও জড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হয়।

সরকারের দুর্নীতি ও দুর্নীতির সরকার
রেলওয়ে কেলেঙ্কারির ব্যাপারে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মাথায় আবার তাকে আলিঙ্গন করেন। সুরঞ্জিতকে আবারো মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। বিনা টেন্ডারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কারখানার কন্ট্রাক্ট দিয়ে জাতীয় সম্পদের ২০ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠিত হতে দেয়া হয়েছে। শোনা যায়, এ ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় বর্তমান বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক ব্যবসায়ী গ্রুপ। তার আগে শেয়ার মার্কেট থেকে ৪০ হাজার কোটি লুণ্ঠনের সাথেও সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলগুলো জড়িত বলে সর্বসাধারণের বিশ্বাস। সে কেলেঙ্কারিতে ৩৫ লাখ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
এগুলো বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির মাত্র কয়েকটি বিরাট দৃষ্টান্ত। দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্ত বেছে বেছেই হাসিনা মন্ত্রী ও উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন। বস্তুত বর্তমান সরকার ও দুর্নীতি সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি হয়তো ভাবতে পারে এসব দুর্নীতির পুরো বিবরণ সর্বসাধারণকে জানতে দেয়ার জন্য তাদের আন্দোলন আপাতত নিচুগ্রাম রাখলে সুবিধা হবে। তার পেছনে যে যুক্তি নেই তা নয়। কিন্তু বড় দুর্নীতি ছোট মানুষকে সরাসরি স্পর্শ করে না। তা ছাড়া মিডিয়ার একাংশে প্রকাশিত খবরাদিও বেশির ভাগ মানুষের কাছে পৌঁছে না।
বিএনপি এখন আন্দোলন ছেড়ে জনসংযোগে নেমেছে। খালেদা জিয়া এবং অন্য নেতারা দেশের সর্বত্র সভা-সমিতি করবেন। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। রাজধানীতে নেতারা রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সাথে গণসংযোগ করছেন। খালেদা জিয়া ঈদে-চাঁদে লেডিজ কাবে তাদের সংবর্ধনা দিচ্ছেন। বিদেশী অভ্যাগতরা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা গুলশানে বেগম জিয়ার অফিসে কিংবা তার বাড়িতে তার সাথে দেখা করছেন। অন্য নেতারা মাত্র গত রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করলেন। বেগম জিয়া এবং তার উপদেষ্টারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বর্তমান সরকারের আমলে সমাজের অন্তর্নিহিত শোষণ-অত্যাচারের কাহিনী সবিস্তারে বলছেন রাষ্ট্রদূতদের।
কিন্তু একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এই রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা অজ্ঞ কিংবা অন্ধ নন। স্বাগতিক দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উপলব্ধি ও বিশ্লেষণের যোগ্যতা আছে বলেই তাদের সেসব দেশে পাঠানো হয়েছে। তাই বলে চলে বিএনপির নেতারা বহুলাংশে ‘কনভার্টেডদের’ কাছে ‘প্রিচ’ করছেন। বিএনপি নেতাদের যে কথাটা বুঝতে হবে সেটা এই যে বিএনপির, এমনকি বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার জন্যও নিজ নিজ দেশ এই কূটনীতিকদের বাংলাদেশে পাঠায়নি। পাঠিয়েছে তাদের নিজেদের স্বার্থে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমুদ্রে বাংলাদেশ বড়জোর ডোবা কিংবা পুকুর মাত্র। সে সমুদ্রের তিমিরা নিজেরাই একটা জগৎ, চুনোপুঁটিদের নিয়ে তাদের মাথাব্যথা বড়জোর ক্ষণিকের। ভারত একটা বড় দেশ। তার কূটনৈতিক বাহুবল বিএনপির চেয়ে অনেক বেশি। তার ওপর রণকৌশলগত কারণে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রও এখন তার ঘনিষ্ঠ মিত্র। শেখ হাসিনাকে গদিতে রাখা ভারতের স্বার্থ। শুধু ন্যায়নীতির কথা বিবেচনা করে বিশ্ব সমাজ ভারতকে চটিয়ে বিএনপিকে মদদ দিতে আসবে না।

গণ-আন্দোলনের বিকল্প নেই
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে গদিচ্যুত করে ক্ষমতা পেতে হলে বিএনপিকে কূটনৈতিক জনসংযোগের পরিবর্তে স্বদেশের গণশক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। সে জন্য আন্দোলন ও কর্মসূচির বিকল্প নেই। খালেদা জিয়া ও বিএনপির অন্য নেতারা অবশ্যই বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। জেলায় জেলায় সভা-সমাবেশও করছেন তারা। কিন্তু তাতে তাদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে কি?
বিএনপির আন্দোলন যেন এক ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন হয়ে দাঁড়িয়েছেÑ তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতিতেই নির্বাচন চাই। এ ইস্যুর মূল লক্ষ্যের সাথে সাধারণ মানুষের দ্বিমত নেই। কিন্তু আগেই বলেছি এ বিষয়টা আপাতত তাদের কাছ থেকে কিছুটা দুস্তর। আরো আশু বিষয় হচ্ছে দেশজুড়ে খুনখারাবি, ভারতকে সড়ক রেল ও নদীপথে করিডোর দেয়ার মারাত্মক পরিণতি, বুয়েট সঙ্কট, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিপদ্ধতি, দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে চলে যাওয়া, তিস্তা নদী শুকিয়ে যাওয়া, টিপাইমুখে বাঁধ হলে সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা নদীপদ্ধতি শুকিয়ে পূর্ব বাংলাদেশের মরুভূমি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, সীমান্তে বিএসএফের অবলীলায় বাংলাদেশী হত্যা ইত্যাদি।
এই বিষয়গুলো বিএনপি নেতা-নেত্রীদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে কতটা প্রাধান্য পাচ্ছে? সেটা তাদের ভেবে দেখতে হবে। খালেদা জিয়া হয়তো শিগগিরই ভারত ও চীন সফরে যাবেন। আন্দোলনে ঢিলে দেয়ার সেটাও একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু বিএনপিকে মনে রাখতে হবে যে আন্দোলন ছাড়া তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির বিকল্প কোনো পথ নেই। এবং তাদের আন্দোলন যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। আওয়ামী লীগ যে বলে থাকে বিএনপি আন্দোলন করতে জানে না তাতে কিছু সত্যতা অবশ্যই আছে। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে মনে রাখতে হবে যত কূটনৈতিক সংযোগই তারা করুন না কেন, বিদেশীরা ক্ষমতা পেতে তাদের সাহায্য করবে নাÑ ২০০৮ সালেও করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
লন্ডন, ০৪.০৯.১২
serajurrahman34@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads