শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আরেকটি ১/১১’র আলামত



দেশের রাজনীতির অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না। নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি হবে না! এ নিয়ে এখন সন্দেহের দানা বেঁধেছে নানা মহলে। কেউ বলছে, এদেশে কেউ এক বারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। তাই মহাজোট সরকারও পারবে না। আবার কেউ কেউ বলছে, আওয়ামী লীগই আগামীতে ক্ষমতায় থাকবে। এ নিয়ে এখন জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নানাজনের নানা কথা। মহাজোট ও ১৮ দল উভয়কেই শক্ত হাতে হাল ধরার চেষ্টা করতে হবে। তাই সাধু সাবধান!
এদিকে গত কয়েকদিন আগে মহাজোটের অন্যতম শরিকদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ভারত সফরে গিয়েছিলেন। এ সফর শেষে ঢাকার বিমানবন্দরে এসেই নানা কথা বলেছেন। মনে হচ্ছে, যে কোনো সময় তিনি মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসছেন। কিন্তু তার ওপর এখন আর জনগণ আস্থা রাখতে পারছে না। তিনি কখন কোন কথা বলেন, তিনিই জানেন না। ফলে তার কথার গুরুত্ব এখন আর জনগণের কাছে নেই। তবুও তাকে বাইরে রেখে কোনো কিছু ভাবা যাবে না, এ কথাটাও সত্য। গত কয়েকদিন আগে বর্তমান ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। একই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় সরকার ও সরকারের বাইরে নানা কথা উঠেছিল। কেউ কেউ বলছে, এই তিন জন বাংলাদেশ কেমনভাবে পরিচালিত হবে, তার রূপরেখা তৈরি করে গেছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ভিন্ন কথা।
এদিকে এক বছর আগে থেকেই রাজনীতির অন্দরমহলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনের যে খবর চাউর হয়েছিল, তা ক্রমেই প্রকাশ্য রূপ নেবে। মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি এককভাবে অংশ নেবেন। তার লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া। সম্প্রতি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এরশাদ দিল্লি গেলে এ দেশের রাজনীতিতে তার অবস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফিরে এসে এরশাদ বলেন, তিনি একক নির্বাচন করবেন এবং জাতীয় পার্টির মহাজোট ছেড়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার বদলে বিরোধ যত বাড়ছে, বিএনপিকে বাইরে রেখে এরশাদকে বিরোধী দলের আসনে বসানোর নির্বাচনী সরকারি কৌশল ততই পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
এদিকে বিএনপি লাগাতার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। সরকারও অনড়—আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপি তাদের প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে ছাড় দিলে তা মেনে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সংবিধান সংশোধন করে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ কিছুতেই মেনে নেবে না। দুই পক্ষের না মানার মাঝপথে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য করে আলাদা আলাদা ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মহাজোটের সব শরিক আলাদাভাবে নির্বাচন করবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা প্রার্থী দেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়, এ ঘোষণায় আন্দোলনে থাকলে নির্বাচন প্রতিরোধ করতে বিএনপি ব্যর্থ হবে—এমন চিন্তাই সরকারি মহলে। অন্যদিকে সরকারি মহল মনে করে, বিএনপির একাংশ বেরিয়ে এসে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে।
এদিকে সাবেক সেনাশাসক এরশাদ এ কারণে উত্ফুল্ল যে, বিগত তিন বছরের শাসনে মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি নাখোশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপি না এলে ভোটের লড়াইয়ে মানুষ আওয়ামী লীগ নয়, তাকেই বেছে নেবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এসে চমক সৃষ্টি করবে বলে তিনি স্বপ্ন দেখছেন। শোনা যাচ্ছে, এরশাদ খুঁজছেন শক্তিশালী সব প্রার্থী। বিএনপির অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধান বিরোধী দল হিসেবেও আগামী জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। এ লক্ষ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী তৈরি করছেন এরশাদ। সম্প্রতি ভারত সফর শেষে চাঙ্গা এরশাদ মাঠ গোছাতে তৃণমূল পর্যায়ে সফরে বেরোচ্ছেন। পাশাপাশি মহাজোটে থাকা ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টিসহ বাম দলগুলোও আলাদাভাবে জোট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে দিয়ে আরও একটি আলাদা বলয় গড়ার চেষ্টাও চলছে।
এছাড়া বিএনপিতে ভাঙন ধরানো, কিংবা কোন্দল জিইয়ে রাখার কাজটি করবে সরকারি দল। ফলে আগামী নির্বাচনে মাহাজোট বা আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করবে। আর দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে নানামুখী কৌশল নেবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ কোনো ইস্যুতেই আন্দোলন জোরদার করতে না পারে, সেজন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং তা হতেও দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাইলে এ দেশের মানুষ তা প্রতিহত করবে। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেছেন, আমাদের দল নির্বাচনমুখী দল। আমরা দেশে সাংবিধানিক শাসন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে চাই। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি বেশ অনিশ্চিত ঠেকছে। দেশের পরিস্থিতি আরেকটি ১/১১-র আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads