মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

‘খালেদাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে’



বিরোধী নেতা খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে ফের অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি অনলাইন নিউজ সার্ভিসে প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে করে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও তিনি এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধী নেতা খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। বিদেশী একটি অনলাইন পত্রিকায় উইলিয়াম নিকোলাস গোমেজ নামে একজন লিখেছেন- বাংলাদেশের  বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছে। এ বিষয়টি ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই। সমপ্রতি ইন্ডিয়ান টাইমস রিপোর্ট করেছে- শেখ হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল বিজয়ী হবে। এ কারণেই এসব ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে বলছি, খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন। ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৪র্থ কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে কৃষক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অর্থমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগও দাবি করেছেন। বলেছেন, অর্থমন্ত্রী প্রথমে বললেন- চার হাজার কোটি টাকা কিছুই না। এর পরেই বললেন- সোনালী ব্যাংকেই শুধু নয়, অনেক প্রতিষ্ঠানেই চুরি হয়েছে। আবার বললেন, ৯ মাস আগেই চলে যেতে চেয়েছিলাম। যদি তাই যেতে চান, তাহলে নৈতিক কারণেই এখন তার পদত্যাগ করা উচিত। মির্জা আলমগীর বলেন, ভিসি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের কোন উদ্যোগ নেননি। মেধাবী ছাত্রদেরও থাকার সুযোগ করে দেননি। ছাত্রদলের নতুন কমিটিকে সাক্ষাতের সময় দিয়েও দেখা না করে উল্টো তাদের ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার বানিয়েছেন। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে তারও পদত্যাগের দাবি জানাই। ভিসিকে অবশ্যই সব সংগঠনের সহ-অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। অর্থমন্ত্রীর সামপ্রতিক এক বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন- আমি নাকি তার সম্পর্কে অসত্য কথা বলেছি। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কোন কথাটি অসত্য বলেছি- তিনি যদি তা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো। তিনি বলেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনার কারণে পুঁজিবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনি প্রথমে কোন কথাই স্বীকার করেননি। উল্টো বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতিবাজ বলেছেন। কিন্তু পরে দুর্নীতির অপরাধে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিয়েছেন। আর আজ দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন। যদি প্রথমে স্বীকার করতেন তাহলে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ হতো না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমলের তুলনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের সময়ে ইউরিয়া সার ছিল ৩০০ টাকা, এখন হয়েছে ১১০০ টাকা। সেচের খরচ বেড়েছে। কৃষকরা ধান, চাল, পাট, আলুর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সবক্ষেত্রে সরকারের অবস্থা এমন হয়েছে যে, উচ্চপর্যায়ে যারা আছে তারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আগে শুনেছি, সোনালী ব্যাংক থেকে ৪০০০ কোটি টাকা লুট হয়েছে। এখন শুনছি, বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দুর্নীতির চাপেই বাংলাদেশ নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর সরকার এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। দুর্নীতির কাদায় ডুবে সরকার কোনমতে নাক উঁচু করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোক কারা দুর্নীতিতে জড়িত এবং পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের দেয়া চিঠিতে কাদের নাম আছে দেশবাসী জানতে চায়। তিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বক্তব্য দেন।
অর্থমন্ত্রী জড়িত: ড. মোশাররফ
ওদিকে দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বদেশ মঞ্চ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া’ শীর্ষক আলোচনাসভায় অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বলেছেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বললেন, এটা সামান্য টাকা। অবচেতন মনেই তিনি হয়তো এটা বলে ফেলেছেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণ হয় হলমার্কের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্বয়ং অর্থমন্ত্রী  জড়িত। তবে আমরা বুঝি, ডেসটিনি, ইউনিপেটুসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে সরকারের লোকজন। সেজন্যই হয়তো অর্থমন্ত্রী এমন কথা বলে ফেলেছেন। অর্থমন্ত্রী যদি ভদ্রলোক হতেন তাহলে পদত্যাগ করতেন। তা না করে বেহায়া হয়েছেন। ড. মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন- আমি চোরের খনি পেয়েছি। আর বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন ডাকাতের খনি। কারণ তার পাশে সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো দুর্নীতিবাজরা ঘোরাফিরা করছে। অন্যদিকে কানাডায় পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিচার হচ্ছে। ড. মোশাররফ বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর মইন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য এমন কোন ষড়যন্ত্র নেই, যা করেনি। কিন্তু তিনি তাদের পরিষ্কার বলেছিলেন- এ দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। মরতে হলে দেশে মরবেন, কিন্তু বিদেশে যাবেন না। অথচ তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিদেশে অবস্থান করছিলেন। স্বদেশ মঞ্চের সভাপতি মামুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা রহমান ও সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না: আনোয়ার
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জেড ফোর্স ঢাকা মহানগর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। তারা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংসের পাঁয়তারায় নেমেছে। জনগণকে জিম্মি করে দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার ঘৃণ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেনি। কিন্তু ইতিহাস তা বলে না। মুক্তিযুদ্ধের ঊষালগ্নে তারা দেশে ছিলেন না। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের মেহমানখানায়, আর অন্যরা ভারতের মেহমানখানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি করে তিনি বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হবে। জেড ফোর্স ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও জাসাস সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান বক্তব্য দেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads