শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তাণ্ডব, এরা কি শিক্ষাব্যবস্থা চুরমার করে ছাড়বে?



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্যদের ওপর ছাত্রলীগের ক্যাডারদের পৈশাচিক তাণ্ডবের পর এখন তাদের নিয়োগ বাণিজ্যের দাবানলে জ্বলে পুড়ে খাক হতে চলেছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়। আমার দেশ-এর গতকালের খবর, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানের ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। বুধবার মধ্যরাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা পর্যন্ত তাদের সন্ত্রাসের মুখে পুরোপুরি অচল হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। সশস্ত্র ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পেট্রল বোমা মেরে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর, ভিসির কার্যালয়, প্রক্টর অফিস, টিএসসি পরিচালকের অফিস, পরিবহন প্রশাসকের অফিস, মেডিকেল সেন্টারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস ভাংচুর করেছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল অসহায়, পুলিশ ছিল নির্লিপ্ত। ছাত্রলীগের এ তাণ্ডবের হেতু হচ্ছে নিয়োগ বাণিজ্য। যতদূর জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫৪টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। এর প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ নেতারা ভিসির হাতে ২০০ জনের একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়ে দাবি জানায়, এদের প্রত্যেককে নিয়োগ দিতে হবে। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ‘চাপ’ সামলাতে গিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৭তম সিন্ডিকেট সভা ৫৪টি পদের বিপরীতে ছাত্রলীগের দেয়া তালিকা থেকে ১১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ অনুমোদন করে। তাতেও তাদের খাই না মেটায় উপাচার্য সব নিয়ম উপেক্ষা করে নিজের ক্ষমতাবলে আরও ৪২ জনকে নিয়োগ দেন। তারপরও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ‘শান্ত’ করা যায়নি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বাস্তব অর্থেই ‘জঙ্গলরাজ’ কায়েম হয়ে গেছে, তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী তাণ্ডব। যারা তাণ্ডব চালায় তারা ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ ধন্য বলেই নিরীহ মানুষকে পশুর মতো পেটাতে অভ্যস্ত পুলিশরা এসব ঘটনা দেখেও দেখে না। নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বেশ মোটা অংকের টাকা হাতবদল না হলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে এমন তুলকালাম কাণ্ড ঘটতো না। এসব অপকর্মের হোতাদের ক্যাডার, সন্ত্রাসী, ছাত্র নামধারী গুণ্ডা ইত্যাদি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তারা অন্তত ১০ বছর স্কুলে পড়ে এসএসসি পাস করেছে এবং অন্তত ২ বছর কলেজে পড়ে এইচএসসি পাস করে তবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, ছাত্রলীগের নেতা হতে পেরেছে। দেখা যাচ্ছে, এতো বছর শিক্ষা গ্রহণ এবং সে সুবাদে শিক্ষিত হিসেবে সার্টিফিকেট পাওয়া এই ছাত্রনেতারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করতে প্রস্তুত নয়। তারা যা দাবি করবে তা তাদের দিতেই হবে। এছাড়া আর কিছুই তারা বুঝতে চাইছে না। শিক্ষাঙ্গনে এবং শিক্ষাঙ্গনের বাইরে তাণ্ডব সৃষ্টিকারী এদেরই কেউ প্রতিপক্ষের হামলা অথবা নিজেদের কোন্দলে মারা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সে আবার ‘মেধাবী ছাত্র’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায়। এ ধরনের ‘মেধাবী ছাত্রের’ সংখ্যা রক্তবীজের বংশের মতো কেন বেড়েই চলেছে সে প্রশ্নের জবাব দেয়ার দায় রাষ্ট্র ও সমাজ এড়াতে পারে না। অর্থলোলুপতা আর সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ পাওয়া এই ‘মেধাবী ছাত্ররা’ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে তখন আমাদের দশা কেমন হবে তার লক্ষণ এরই মধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। দেরি না করে নির্মোহভাবে দলীয় বিবেচনার বিবর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আরও ভয়ঙ্কর, এমনকি অকল্পনীয় ভবিষ্যত্ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads