সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

এখন দোষারোপের সময় নয়


‘এম কে-১১ বাংলাদেশে এলো কিভাবে?’ এমন শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে মানবজমিনে। ২৮ ডিসেম্বর মুদ্রিত ওই খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামে ‘জঙ্গি’ আস্তানা থেকে স্নাইপার রাইফেল উদ্ধারের ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, অত্যাধুনিক এ অস্ত্র বাংলাদেশে কোথা থেকে কীভাবে এলো এটিও প্রশ্নের বিষয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সমাজের মধ্যে বিভাজন-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মসজিদে হামলা করা হচ্ছে। যারাই করুক জেনেশুনে পরিকল্পনা করে করছে। কাদিয়ানী মসজিদে হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে যে ধরনের হামলা হয় সে ধরনের হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, সৌদী সামরিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনলো কি না সেটিও দেখার বিষয়। চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা থেকে এমকে-১১ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। এ রাইফেল তো সর্বাধুনিক অস্ত্র। এ অস্ত্র জঙ্গিদের কাছে কীভাবে এলো? মধ্যপ্রাচ্যের ইরাকে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এ অস্ত্র তো খোলাবাজারে কেউ কিনতে পারবে না। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এদিকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনীরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হলো। এর দায় আইএস স্বীকার করেছে। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ধরনের দিক থেকে নতুন মাত্রা যোগ হলো। এর আগে এত অত্যাধুনিক অস্ত্র বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাতে দেখা যায়নি। এটি ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয়।
চট্টগ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে এমকে-১১ রাইফেল উদ্ধারের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের কথা স্পষ্টভাবেই বলছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র ইরাকে ব্যবহার করা হয়। খোলাবাজার থেকে এই অস্ত্র কেনা যায় না। আর কাদিয়ানী মসজিদে আত্মঘাতী হামলার ধরনকে তারা মধ্যপ্রাচ্যে হামলার ধরনের সাথে মিলিয়ে দেখছেন। সব মিলিয়ে এখন তাদের প্রশ্ন, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো কি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে?
আমরা মনে করি, নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা উচিত সরকারের। বর্তমান বিশ্ববাতাবরণে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসীহামলা হলে কীভাবে মোকাবিলা করবে সরকার? এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সরকারের প্রস্তুতিতে তেমন সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, জঙ্গি আস্তানাগুলো খুঁজে বের করার দায়িত্ব যাদের তারা কতটা পারদর্শী? গোয়েন্দাদের দুর্বলতা আছে। তাদের যে মুখ্য কাজ, তারা সেটা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করছে। বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, যারা সরকারের সঙ্গে সুর মেলায় তাদের কথা শুনলে হবে না। এ নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন। আমরা মনে করি, নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে। জঙ্গি হামলার বিষয়গুলোকে হালকাভাবে নেয়া সঙ্গত হবে না। আর কোথাও হামলা হলে তার সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। এর পরিবর্তে যদি ব্লেমগেমের মন্দ উদাহরণ চলতে থাকে, তাহলে আমাদের সঙ্কট আরো বাড়তে পারে। ভাবতে অবাক লাগে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে সঙ্কট সমাধানের প্রকৃত পথে চলার পরিবর্তে রাজনীতিবিদরা দোষারোপের রাজনীতি করেন কোন কাণ্ডজ্ঞানে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads