বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

স্মৃতিময় রবিউল আউয়াল


রবিউল আউয়ালের এমনি এক দিনে এমন এক যুগে মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল, যখন বিশ্বের অন্য সব দেশ ও অঞ্চলের মতো সৌদি আরবও অশিক্ষা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল বৈষম্য, হানাহানি। গোটা আরবের মানুষ ছিলেন মানবেতর অবস্থায়। নানা দেব-দেবীর পূজা করতেন তারা। সব মিলিয়েই ওই সময়কালকে বলা হয়েছে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’। অর্থাৎ অন্ধকারের যুগ। অমন এক সমাজে জন্ম নিলেও ছেলেবেলা থেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) একজন ব্যতিক্রমী ও আদর্শ মানব হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন। সাদাসিধে, কিন্তু অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মুহাম্মদ (সা.) কৈশোরেই পেয়েছিলেন ‘আল আমীন’ বা বিশ্বাসী হিসেবে সম্মান ও পরিচিতি। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি নবুওত লাভ করেন। নবী (সা.)-এর উপর আল্লাহর তরফ থেকে প্রথম বাণীই ছিল : ‘ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’ ছিল প্রথম কালাম যার অর্থ, ‘পাঠ করো, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি রক্তপিন্ড থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। পাঠ করো, তোমার রব (প্রতিপালক) মহামহিম, মানুষকে যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষ যা জানতো না।’ নবুওয়াত শুধু নয়, সর্বশেষ নবীর মর্যাদাও পেয়েছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। সত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আত্মরক্ষামূলক অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে তাঁকে। নিজের জন্মভূমি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে মদিনায় হিজরত করেছেন তিনি। কিন্তু আল্লাহর পথ থেকে সামান্যও সরানো যায়নি তাঁকে। মদিনায় তিনি প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধানও তিনিই দিয়েছিলেন। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়। বলা হয়েছিল, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সম্পত্তিতে অধিকার দেয়াসহ নারীকেও তিনি উচ্চমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে গেছেন। মেয়ে শিশুকে হত্যা এবং বিয়ে না করে নারীর দেহভোগকে নিষিদ্ধ করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা, শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে বিয়ে ও পারিবারিক উত্তরাধিকার পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসলামে। সব আইন ও বিধানের উৎস কুরআন এবং সুন্নাহ। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনকে বলা হয়েছে, আল কুরআনের প্রতিচ্ছবি। তাই তাঁর জীবন সব মানুষের জন্যে অনুসরণীয় মডেল।
ইসলাম প্রচলিত অর্থের সাধারণ কোনো ধর্ম নয়, বরং ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনবিধান। ব্যক্তির জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। আর ইসলাম শব্দটির অর্থই শান্তি। বিচ্ছিন্ন বা খন্ডিতভাবে না দেখে সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যাবে, সব অশান্তি, সব ফ্যাসাদ থেকে মানুষকে মুক্ত করা ও সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে একমাত্র রাসূল (সা.)-এর আদর্শই পারে।
আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রচারিত আদর্শ ইসলামই পারে শোষণ-বৈষম্যসহ সব অন্যায়ের অবসান ঘটিয়ে সংঘাতে বিপন্ন বিশ্বকে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বর্তমান বিশ্বে একদিকে সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানো হচ্ছে; অন্যদিকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আন্দোলনের পরিবর্তে মুসলমানদেরও অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে সীমা লঙ্ঘনের পথে পা বাড়াচ্ছে। এর ফলে মুসলমানদের চিহ্নিত করা হচ্ছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হিসেবে। শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে প্রশংসিত হয়ে আসা বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর অভিযোগ উঠছে। এই অজুহাতে দুনিয়ায় ইসলামের বিরুদ্ধে যেমন অপপ্রচার চলছে, তেমনি আমাদের নানা রকমের সাজানো অভিযোগ তুলে ইসলামী আদর্শ, ইসলামী রাজনীতি ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্মূল করে দেয়ার ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি আমরা মনে করি, অশুভ উদ্দেশ্যে চালিত হওয়ার পরিবর্তে ইসলামবিরোধী সব পক্ষের উচিত পবিত্র ইসলামের নিকটবর্তী হওয়া এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন করা। তাহলেই ইসলাম সম্পর্কে সব ভুল ধারণার অবসান ঘটবে। রাসূল (সা.)-এর জন্মগ্রহণের মাস উপলক্ষে আমাদের আহ্বান, আসুন, ইসলাম সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করি এবং ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং আল্লাহর রাসূল নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে আমরা ‘উসওয়াতুন হাসানা’ খুঁজি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads