দেশের মন্ত্রী ও এমপিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সংবিধান ও শপথের আলোকে তারা দায়িত্ব পালন করলে দেশের মানুষ উপকৃত হয়। আর এর পরিবর্তে যদি তারা অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করেন তাহলে মানুষের দুঃখ বাড়ে, দেশও হয় ক্ষতিগ্রস্ত। পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে প্রায়ই রিপোর্ট মুদ্রিত হয়। কিন্তু বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়ার পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সংবিধান ও ন্যায় নীতি বিরোধী এমন বাতাবরণে জনমনে হতাশার মাত্রাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা শুধু দেশ নয়, সরকারের জন্যও এক অশনি-সংকেত।
৮ নবেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘এমপির বেপরোয়া ভাতিজারা’ শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়: ভালুকা উপজেলায় তিন ভাতিজার নাম মানুষের মুখে মুখে। বেপরোয়া কাজকর্ম চালান বলে এরা এলাকায় বিখ্যাত। রসিকজনের মতে, ভালুকা সংসদীয় আসনে এমপি ৪ জন। একজন ঘোষিত আর ৩ জন অঘোষিত। ঘোষিত এমপি হলেন অধ্যাপক ডা. এম আমানউল্লাহ। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এমপি আমানের ৩ ভাতিজা এখন চালান সরকারি-বেসরকারি সব দফতর। রিকশাচালকের ওপর থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে এমপির ভাতিজাদের খবরদারি। এ তিন ভাতিজা হলেনÑ ভালুকা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক রওনাক জাহান রব্বানী খাজা, যুবলীগ নেতা রিদুয়ান সারোয়ার রব্বানী, আরেক ভাতিজা লুৎফে ওয়ালি রব্বানী ওলি। আর এই তিন ভাতিজাই সব কাজের ওস্তাদ। অভিযোগ আছে, আদরের তিন ভাতিজা দিনকে রাত আর রাতকে দিন বললেও এমপি তাই মেনে নেন। এমপি আমানের ভাতিজাদের অত্যাচারে যেমন সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ তেমনি অতিষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভাতিজাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই ওই ব্যক্তির ওপর নামে নির্যাতনের খড়গ। ওদের একটি গোপন টর্চার সেলও রয়েছে। ওই চর্টার সেলে একবার কেউ ঢুকলে আর অক্ষত ফেরে না। এমপি আমানের ভাতিজাদের অত্যাচারে উপজেলায় দাপ্তরিক কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান বিভিন্ন কর্মকর্তা। ভাতিজাদের কবল থেকে রেহাই পাননি দলীয় নেতা-কর্মীরাও। আর বিরোধী দলের নেতারা তো অনেক আগে থেকেই এলাকা ছাড়া।
এমপি আমানউল্লাহ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ৩ ভাতিজাকে প্রশ্রয় দিয়ে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তাতো কোনো এমপির কাজ হতে পারে না। দেশের সংবিধান ও শপথের আলোকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, তিনি অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। এমন অবস্থায় আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চললে ৩ ভাতিজাসহ এমপি মহোদয় শাস্তির আওতায় আসার কথা ছিল। কিন্তু তেমন দৃশ্য জনগণ লক্ষ্য করেনি। আজকাল এমপি মহোদয়রা তো জনগণকে তেমন তোয়াক্কা করেন না। কারণ আজকাল তো জনগণের ভোট ছাড়াও এমপি হওয়া যায়। দলীয় মনোনয়নটাই এখন যেন অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন বাতাবরণে এমপিরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন, দলীয় মনোনয়ন ও পেশীশক্তি এখন আসল বিষয়। ফলে এমপির ভাই-ভাতিজারা এখন পেশী শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমপিরা এখন জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধির প্রতীক হয়ে উঠছেন। এ বিষয়ে সরকারের করণীয় আছে। কারণ জনপ্রতিনিধিরা গণশত্রুতে পরিণত হলে তা দেশের জন্য, দলের জন্য শুধু ক্ষতির মাত্রাই বৃদ্ধি করবে। বিষয়টি শীর্ষমহল উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন