বুধবার, ৬ মে, ২০১৫

গ্রহটি ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে


বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে সমাধানের পথ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত শুক্রবার টেলিফোনে কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খোঁজার আহ্বান জানালো জাতিসংঘ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আহ্বান কতটা ফলপ্রসূ হবে? জাতিসংঘ তো নির্দিষ্ট করে কাউকে কিছু বলেনি। আর কোন সংকটে সবার দায় ও দায়িত্ব তো এক রকম নয়। আসলে এই ধরনের আহ্বানের একটি কাগুজে মূল্য থাকতে পারে, নৈতিক চাপও সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু প্রশ্ন হলো- বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় নৈতিকতাকে আসলে কি কোনো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে? নৈতিকতার মানন্ডে যেমন জাতিসংঘ ও বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার শাসকরা উত্তীর্ণ নন, তেমনি উত্তীর্ণ নন বাংলাদেশের শাসক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও। সংকটটা আসলে এখানেই। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় নৈতিকতা গুরুত্ব পেলে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন মানুষের মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত হতো না। কাশ্মীরেও মানবতা এভাবে আর্তনাদ করতো না। মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদেরও উত্তাল সমুদ্রে যাযাবরের মতো ভেসে বেড়াতে হতো না। নৈতিকতাহীন বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় পৃথিবী নামক আমাদের প্রিয় এই গ্রহটি ক্রমেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। বর্তমান পৃথিবীর নেতা-নেত্রীরা সবাই মিলেমিশেই যেন পৃথিবীটাকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
বিশ্ব-বাতাবরণের অভিঘাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশেও। চতুর রাজনীতিবিদরা জনগণের কথা বলে প্রশ্নবিদ্ধ-কৌশলে ক্ষমতায় এসে, ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। মুক্তির ডঙ্কা বাজিয়ে বাজিয়ে আপন অভিলাষে সবকিছু বন্দী করার মায়াজাল বিস্তৃত করা হচ্ছে দেশজুড়ে। চাতুর্যের জালে মানুষ বন্দী, গণতন্ত্র বন্দী, আর লাগাতার বন্দী হয়ে চলেছেন বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। অনাকাক্সিক্ষত এমন পরিবেশের জন্য সরকারকে তো দায়ী করা চলেই, কিন্তু এমন পরিবেশ রচনায় বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক দর্শন ও কর্ম-কৌশলের ত্রুটি এবং নৈতিক মেরুদন্ডের দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। আর ক্ষমতার দম্ভ ও প্রতাপ তো পৃথিবীতে নতুন কোনো বিষয় নয়। ইতিহাস এ কথার সাক্ষী দেয় যে, একদেশদর্শী দাম্ভিক নেতারা ক্ষমতা ও চাতুর্যের বদৌলতে বিরোধী পক্ষের লোকদের নাস্তানাবুদ করতে কোনো কসুর করেন না। তবে প্রাকৃতিক নিয়মেই অন্যায় ও অমানবিক কর্মকান্ডের পরিণতিতে তাদের ভাগ্যেও যথা সময়ে নেমে আসে পরাজয় ও সর্বনাশ। কিন্তু ক্ষমতার উত্তাপটা এমনই যে, সেই সময়টায় অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক ও সুস্থ বিবেচনা গুরুত্ব পায় না। মানুষের ও সমাজের জন্য এটা একটা বড় ট্র্যাজেডি।
গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে প্রতিবেদন মুদ্রিত হচ্ছে। কোনো পত্রিকার শিরোনাম ‘বিরোধী নেতাদের টর্চার সেল কারাগার।’ কোনো পত্রিকার শিরোনাম ‘কারাগারে ভাল নেই তারা।’ কোনো পত্রিকার শিরোনাম ‘উৎকণ্ঠায় বিএনপির কারারুদ্ধ নেতাদের পরিবার।’ এইসব প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আটক নেতারা, নানা কায়দায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণকারী বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দীর্ঘ ৪ মাস ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে অমানবিক কষ্ট ভোগ করছেন। বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধার গুলিবিদ্ধ পা অবশ হয়ে গেছে ঘুম ও হাঁটাচলার অসুবিধার কারণে। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণে তার ওজন কমে গেছে ৮ কেজি। ৬ মে মানবজমিনে প্রকাশিত রিপোর্টটিতে আরো বলা হয়, একই অবস্থা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, মোসাদ্দেক আলী ফালু, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ বিরোধী জোটের ১৫ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। কেউবা ডায়াবেটিস, হার্ট আবার কেউ বা উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর মৃত্যু ঘটায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে কারারুদ্ধ নেতা-কর্মীদের পরিবারগুলোর মধ্যে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গ্রীষ্মের প্রচ- গরমে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বয়সের ভারে ন্যুব্জ নেতাদের জীবনে। গত ৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এই মর্মে অভিযোগ করেন যে, কারারুদ্ধ নেতাদের চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
আমরা জানি, অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক সমাজে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের উপর জুলুম-নির্যাতন ও কারা-নিপীড়নের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে করতে যে দেশটি স্বাধীন হলো, সেই দেশটিতে এখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন ও কারা-নিপীড়নের মাত্রা যে কোনো সময়ের চাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত ৬ জানুয়ারি গ্রেফতার হন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জটিল নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ৭৯টি রাজনৈতিক মামলা। বর্তমান সরকার আরো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে এই ৭৯টি মামলায় হাজিরা দিতে দিতেই হয়তো ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জীবনের অবসান হয়ে যেতে পারে। মির্জা আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, মস্তিষ্কের ধমনী ও হার্টে ব্লক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে এখন কারাগারে আছেন তিনি। রাহাত আরা বেগম আরো জানান, আমার স্বামীর মস্তিষ্কের ধমনীতে যে ২টি ব্লক ধরা পড়েছে তার ৮০ ভাগই অকেজো বলে চিকিৎকরা জানিয়েছেন। যে কোনো সময় তার ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণে তার ১৫ কেজি ওজন কমে গেছে। কিন্তু তার সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। কারাগারে অন্য নেতাদের অবস্থাও বেশ করুণ। গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা তা জানতে পারছি। পরিতাপের বিষয় হলো, সেই সাংবাদিকরাও এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ‘আর্টিকেল ১৯’। উল্লেখ্য যে, বেসরকারি এই সংগঠনটি বাক-স্বাধীনতা ও তথ্যাধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া বিচারহীনতার কারণে রাষ্ট্রযন্ত্র, এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও সংবাদকর্মীদের উপর সহিংসতা ও আক্রমণের ঘটনা সংঘটিত করে। ৩ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আর্টিকেল ১৯ এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অযাচিত আক্রমণ, সহিংস ঘটনার বিচারিক তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য চরম বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তা আপাত দৃষ্টিতে হয়রানিমূলক। তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর সুরক্ষা কৌশল ও নীতিমালা তৈরির জন্য, যা গণমাধ্যম কর্মীসহ সকলের মুক্ত চিন্তা প্রকাশে সহায়ক হবে, যেখানে একটি স্বাধীন সংস্থা উক্ত নীতিমালার তদারকি করবে।
আর্টিকেল ১৯ এর ২০১৪ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে ২১৩ জন সাংবাদিক ও ৮ জন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, ৪০ জন গুরুতর জখম হয়েছেন, ৬২ জনকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, ৮ জন ব্লগার ও অনলাইন-এ্যাক্টিভিস্টসহ ’১৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন; সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতৃত্বসহ ১৩ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আদালত অবমাননার শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যে, আরো জানা যায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের আওতায় পরিষ্কারভাবে কিছুই বলা হয়নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। এটি একটি বড় সমস্যা সঙ্কুল বিষয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আর্টিকেল ১৯ এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তো জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়ে থাকে জনগণের সেবা ও জীবনমান উন্নত করার জন্য। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে সরকারের কার্যক্রমের স্বচ্ছতাবিধান ও তার প্রকাশ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কারণ জনগণের স্বার্থরক্ষা ও সরকারের ভুল-ত্রুটির চিত্র তুলে ধরা কেবল স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষেই সম্ভব। তবে পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকাকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন। গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিকরা আসলে সরকার কিংবা সরকারি দলের প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রু নয়। সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে সাংবাদিকরা আসলে সরকারকে তার অঙ্গীকার পালনে সহযোগিতা করে থাকেন। তাই বিদগ্ধজনরা গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ এমন তৎপরতাকে সরকারের জন্য বন্ধুসুলভ বলেই বিবেচনা করে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সরকার ও সরকারি দলের অনেকেই স্থূল বিবেচনার কারণে প্রকৃত সত্যটি উপলব্ধি করতে পারেন না। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা সাংবাদিক নির্যাতনে ব্যবহার করে থাকেন। এমন আচরণ সরকার, রাষ্ট্র এবং জনগণ- কারো জন্যই কল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে না। বিষয়টি আমাদের সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা উপলদ্ধি করলেই মঙ্গল।
রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে মেনে নেয়া যায় না। সরকার যখন এ পথে হাঁটে তখন ধরে নেয়া যায় যে, সরকার ভুলপথে হাঁটছে। ভুল পথের পথিক কখনও দেশকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads