আমরা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের কথা শুনেছি। সে সময় নারী সন্তানদের হত্যা বা জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সমাজে নারীর কোনো মর্যাদা ছিলো না। কথা বলার অধিকার ছিলো না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার কোনো ভূমিকাও ছিল না। কন্যা সন্তানকে মনে করা হতো পরিবার বা সমাজের জন্য অভিশাপ। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের আগে নারীকে মানুষের কোনো মর্যাদা দেয়ার বিধান চালু ছিলো না। এসব বিধিবিধান তৈরিও করেছিলেন সমাজের পুরুষ সমাজপতিরাই, কোনো নারীর গর্ভ ছাড়া যাদের জন্মগ্রহণও সম্ভব ছিলো না বা সম্ভব হতো না।
সেই যুগকেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বলে ইসলামে অভিহিত করা আছে। তখনকার পুরুষশাসিত সমাজের অকল্পনীয় বিধিবিধান স্মরণ করলে আতঙ্কে ঘৃণায় গা শিউরে ওঠে। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে নারী কল্পনা করা হতো নিতান্ত বস্তু হিসেবে বা দুম্বা বা ভেড়ার মতো নিজস্ব সম্পদ হিসেবে, তার বাইরে আর কিছুই ছিলো না নারীর মর্যাদা। সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষেত্রেই নারীর মতামত গ্রহণের কথাও ছিলো নিতান্তই অকল্পনীয় ব্যাপার। নারী ছিলো পুরুষের ভোগের সামগ্রী মাত্র। পুরুষেরা স্ত্রী বা ক্রীতদাসী হিসেবে যুদ্ধশেষে নারীদের কিনে নিয়ে যেতো। এই ছিলো সামাজিক বিধান।
আরও ভয়ঙ্কর যেসব সামাজিক বিধান প্রচলিত ছিলো, ইসলামের আবির্ভাবের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত তা আর কল্পনাও করা যায় না। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কোনো নারীর স্বামীর মৃত্যু হলে, তার পূর্ববর্তী স্ত্রীর পুত্র বা সৎ পুত্র সে নারীর ওপর অধিকার পেতো। যদি তার পূর্ববর্তী স্ত্রীর কোনো পুত্রসন্তান না থাকতো, তাহলে তার আপন গর্ভজাত সন্তানই হতো তার স্বামী। তবে নারী এ বিধান মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাতে চাইতো তবে তাকে পুরুষের চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ দিতে হতো, যা ছিলো একেবারেই অসম্ভব। কারণ তার হাতে তেমন কোনো অর্থ থাকার কোনো সামাজিক ব্যবস্থাই ছিলো না। আবার কোনো সন্তান যদি তার মাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী না হতো, তবে তাকে সমাজের বাইরে একটি অন্ধকার আলোবাতাসহীন কুটিরে একাকী থাকতে দেয়া হতো। এক বছর এ রকম দুর্ভোগ কাটিয়ে বের হবার পর সে সমাজে পরিত্যক্ত, ঘৃণীত নিন্দিতই থাকতো। স্বামী কিংবা পিতার সম্পদের ওপর নারীর কোনো অধিকার ছিলো না।
মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের ১৬ বছর পর ৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই অবস্থার পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময়ই প্রথম নারীদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যদিও তাদের ওপর আগের মতোই পুরুষের কর্তৃত্ব বহাল থাকে। এই মানবিক স্বীকৃতির পথ ধরে নারীদের মানুষ হিসেবে যাত্রা শুরু। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থেকে তাদের অনেক দূরেই রাখা হয়। এখানেও একটি কথা উল্লেখের দাবি রাখে। তা হলো যেভাবেই কোনো নারী যদি বিত্তবান থাকতেন, তবে যতো পুরুষ শাসিতই হোক সমাজে তখন তিনি মর্যাদাবান থাকতেন। আরবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবার পর মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ দূর করার ঘোষণা দেন মহানবী (সাঃ)। ইসলামে নারী-পুরুষের ভেদাভেদও দূর হয়ে যায়। সমমর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন নারীরা।
আওয়ামী লীগের সীমাহীন দুঃশাসন ও অপশাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আবারও ফিরে এসেছে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ। ২০০৯ সালের ‘আঁতাতের নির্বাচনে’র মধ্য বাংলাদেশে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। আর তারপর থেকেই লুণ্ঠন অত্যাচার নিপীড়ন, হত্যা, দখল নারী নির্যাতন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সেখান থেকে বের হওয়ার স্বাভাবিক সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মীয়করণ, দলীয়করণ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে। যে যত বড় গুণ্ডা, যত বড় বদমাশ, আওয়ামী নেতৃবৃন্দের কাছে সে ততবেশি প্রিয়ভাজন। খুন, রাহাজানি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, যে কোনও অপরাধই করুক না কেন তার সাত খুন মাফ যদি সে হয় আওয়ামী লীগ। গোপালীকরণের ফলে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
গোপালী কনস্টেবল সমস্ত আদবকায়দা ও শৃঙ্খলা ভেঙে কান চুলকাতে চুলকাতে ওসির রুমে হাজির হয়। ওসির নির্দেশও সে থোড়াই পরোয়া করে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিতে অপরাগ। তারা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেয় যে, তাদের বাড়ি হ্যাপারে (ওপারে)। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কিল খেয়ে কিল হজম করতে হয়। পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে একেবারে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তারা ছাত্রলীগের নাম শুনলে সম্ভবত থরথরিয়ে কাঁপতে থাকেন। সে যত বড় অপরাধই করুন না কেন, তাকে গ্রেফতারের কোনো বিধান নাই। এমনকি অপরাধের সময় পুলিশ আটক করলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তারা ছাড়া পেয়ে আবারও নানা ধরনের অপকর্ম ও কুকীর্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থা প্রায় সর্বত্রই চলছিল। টেন্ডার, ডাকাতি, ছিনতাই, নরহত্যাÑ হেন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নেই। এখন এসব অপরাধের একচ্ছত্র মালিক মোক্তার তারাই। কখনও কখনও এসব অপরাধে তাদের থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলেও স্থানীয় এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগারদের নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করা হয়, কিংবা আলোচনায় বসে অপরাধী ছাত্রলীগারদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
এসব ঘটনার সূত্র ধরে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পুলিশ বাহিনীও। ছাত্রলীগ অপরাধ করলে যদি তাদের ধরাও না যায়, শাস্তি না দেয় তাহলে পুলিশের নিজেরই বা অপরাধ করতে বাধা কোথায়। সে কারণে পুলিশ এখন সব ধরনের অপরাধ কর্মে নেমে পড়েছে। তারা খুন, মুক্তিপণ আদায়, ক্রস ফায়ার, হাঁটুর উপর গুলি চালিয়ে পঙ্গু করে দেয়া Ñ এধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যখন শোরগোল শুরু হয়, তখন পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে যে, দোষী পুলিশদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ কর্তৃপক্ষ শাস্তি বলতে প্রধানত যা বোঝায়, তা হলো, কয়েকদিনের জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তাকে ক্লোজড করে রাখা কিংবা মিরপুর থানা থেকে সূত্রাপুর থানায় বদলি করে দেয়া। অর্থাৎ এ থানায় যা করেছিস, করেছিস বাবা, এখন বাকি কাজ অন্য থানায় গিয়ে র্ক। পুলিশকে বড় ধরনের শাস্তি দেয়ার কথা কখনওই খুব একটা শোনা যায় না। তা তার অপরাধ যত গুরুতরই হোক না কেন। ফলে পুলিশ আরও বিপুল প্রতাপে আরও বড় ধরনের অপরাধে নিঃশঙ্ক চিত্তে জড়িয়ে পড়ে।
ছাত্রলীগের স্থান এরও ঊর্ধ্বে। তাদের কোনো অপরাধ আইনের মধ্যে ধর্তব্য নেই। সেসব আইনের সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে। তাদের সকল অপরাধকে যেন আগে থেকেই দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। খুন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোনো বড় অপরাধেই ছাত্রলীগের কারো শাস্তি হয়েছে, এমনটা শোনা যায় না।
গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে এবং একই সঙ্গে সারা দেশে ছাত্রলীগ বাংলাদেশে আবার আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ ফেরত এনেছে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার লোকের সামনে স্বামীর পাশ থেকে স্ত্রীকে, মায়ের পাশ থেকে কন্যাকে, কন্যার পাশ থেকে মাকে, বন্ধুর কাছ থেকে বান্ধবীকে, ভাইয়ের কাছ থেকে বোনকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বিবস্ত্র করে এক নারকীয় তা-ব চালায়। সেই বীভৎস ভয়াবহ দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। টিএসসি এলাকায় বৈশাখী উৎসবে শরীক হতে আসা নারীরা এভাবেই লাঞ্ছনার শিকার হন। আর এই সকল অপকর্মের হোতা ছিল ছাত্রলীগ।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি ও সন্নিহিত এলাকাই নয়, একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দক্ষিণাঞ্চলের এক ভাই তার বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়েছিল। ছাত্রলীগারলা ছুরি মেরে পিটিয়ে তাকে হত্যাও করেছে। কেউ ধরা পড়েছে বলে শুনিনি। ধরা পড়লেও হয়তো এতদিনে ছাড়া পেয়ে আবারও কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে।
ছাত্রলীগের এই পৈশাচিক তা-বের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করতে দাঁড়িয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের এই নারী নির্যাতনে বাধা দেয়া ছাত্র ইউনিয়নের ঐ কর্মীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে তারা। অদূরেই দাঁড়িয়েছিল গোপালী পুলিশের দল। উদ্ধারকারী ছেলেরা মাত্র পাঁচ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সহায়তা যখন চাইছিল, তখন পুলিশ বলছিল, এখানে ডিউটি এরিয়া ভাগ করে দেয়া আছে। ওটা আমাদের ডিউটি এরিয়ার ভেতরে পড়ে না। ফলে তারা অস্ত্র হাতে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রলীগারদের নারী নির্যাতনের এই দৃশ্য যেন উপভোগই করেছে। দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে, বিপন্ন নারীর ইজ্জত রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। কেননা, কাজটা করছিল ছাত্রলীগ।
টেলিভিশন টকশোতে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পণ্ডিতকে আলোচনা করতে শুনলাম, এ কাজ করেছে তারাই যারা পহেলা বৈশাখের মতো ‘বাঙালি’ সার্বজনীন উৎসবকে বাঁকা চোখে দেখে ও ভ-ুল করে দিতে চায়। এরাও নিশ্চয়ই শিক্ষক হয়েছেন আওয়ামী দলীয় বিবেচনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার ন্যূনতম যোগ্যতাও এসব লোকের আছে কিনা সন্দেহ।
ওরা যদি ছাত্রলীগই না হবে তাহলে যে পাঁচ নারী নির্যাতনকারীকে সাধারণ মানুষ ধরে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করল, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়া হলো কেন? ওরা যদি ছাত্রলীগই না হবে, তাহলে পুলিশ ও রকম সাফাই কেন গাইবে যে, আসলে শাহবাগে নারী নির্যাতনের মতো ও ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি? ওরা যদি ছাত্রলীগারই না হবে, তাহলে ঐ এলাকায় স্থাপিত ১৩টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পুলিশ লুকিয়ে ফেলবে কেন? ওরা যদি ছাত্রলীগারই না হয়,তাহলে পুলিশ কেমন করে বলল যে, ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না? তারপরেও যখন সংবাদপত্রগুলো এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র দেখালো, ছাপালো ও প্রচার করলো, তাতে নির্যাতনকারী প্রতিটি লোককেই শনাক্ত করা গেল, এরা যদি ছাত্রলীগারই না হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ কেন বলল যে, এদের শনাক্ত করা যায়নি? এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এতে আজ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।
এভাবে আশকারা পাওয়ার পর আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের মতো ছাত্রলীগাররা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতা কলেজেই তার মাতৃতুল্য শিক্ষকের বস্ত্রহরণ করে এবং তার গায়ে হাত দেয়ার মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পুলিশ ঐ নরপিশাচকে থানা থেকে চা খাইয়ে বিদায় করে দেয়। এ নিয়েও কোনো মামলা হয়নি। বিচারের চেষ্টা হয়নি।
পহেলা বৈশাখের নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে একটি ছাত্র সংগঠন ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করা কর্মসূচি দিয়েছিল গত রোববার। ডিএমপি কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়েছিল তাদের ছোটখাট মিছিলটি। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ছাত্রীরাও ছিলেন। পুলিশ তাদের বিশেষভাবে মেয়েদের নিতম্বে লাথি মেরেছে। চুলের মুঠি ধরে পিটাতে পিটাতে সামনের দিকে নিয়ে গেছে। একজন শিক্ষার্থী উপুড় হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। আগে জানতাম সরকারের হাত অনেক লম্বা। এবার দেখলাম পুলিশদের পাগুলোও বেশ লম্বা। বুট পরা বেশ কয়েকটি পা এক সঙ্গে ঐ শিক্ষার্থীকে লাথি মারছে।
পুরুষ নির্যাতনের পাশাপাশি যেখানে সেখানে যত্রতত্র নারীদের উপর অকথ্য অবর্ণীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে এ সরকারের আমলে। নির্যাতন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ, পুলিশ, পেশাদার মাস্তান, এবং অন্যরা। কিন্তু আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের মতো এখানেও নারীর অধিকার এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে।
সেই যুগকেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বলে ইসলামে অভিহিত করা আছে। তখনকার পুরুষশাসিত সমাজের অকল্পনীয় বিধিবিধান স্মরণ করলে আতঙ্কে ঘৃণায় গা শিউরে ওঠে। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে নারী কল্পনা করা হতো নিতান্ত বস্তু হিসেবে বা দুম্বা বা ভেড়ার মতো নিজস্ব সম্পদ হিসেবে, তার বাইরে আর কিছুই ছিলো না নারীর মর্যাদা। সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষেত্রেই নারীর মতামত গ্রহণের কথাও ছিলো নিতান্তই অকল্পনীয় ব্যাপার। নারী ছিলো পুরুষের ভোগের সামগ্রী মাত্র। পুরুষেরা স্ত্রী বা ক্রীতদাসী হিসেবে যুদ্ধশেষে নারীদের কিনে নিয়ে যেতো। এই ছিলো সামাজিক বিধান।
আরও ভয়ঙ্কর যেসব সামাজিক বিধান প্রচলিত ছিলো, ইসলামের আবির্ভাবের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত তা আর কল্পনাও করা যায় না। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কোনো নারীর স্বামীর মৃত্যু হলে, তার পূর্ববর্তী স্ত্রীর পুত্র বা সৎ পুত্র সে নারীর ওপর অধিকার পেতো। যদি তার পূর্ববর্তী স্ত্রীর কোনো পুত্রসন্তান না থাকতো, তাহলে তার আপন গর্ভজাত সন্তানই হতো তার স্বামী। তবে নারী এ বিধান মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাতে চাইতো তবে তাকে পুরুষের চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ দিতে হতো, যা ছিলো একেবারেই অসম্ভব। কারণ তার হাতে তেমন কোনো অর্থ থাকার কোনো সামাজিক ব্যবস্থাই ছিলো না। আবার কোনো সন্তান যদি তার মাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী না হতো, তবে তাকে সমাজের বাইরে একটি অন্ধকার আলোবাতাসহীন কুটিরে একাকী থাকতে দেয়া হতো। এক বছর এ রকম দুর্ভোগ কাটিয়ে বের হবার পর সে সমাজে পরিত্যক্ত, ঘৃণীত নিন্দিতই থাকতো। স্বামী কিংবা পিতার সম্পদের ওপর নারীর কোনো অধিকার ছিলো না।
মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের ১৬ বছর পর ৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই অবস্থার পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময়ই প্রথম নারীদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যদিও তাদের ওপর আগের মতোই পুরুষের কর্তৃত্ব বহাল থাকে। এই মানবিক স্বীকৃতির পথ ধরে নারীদের মানুষ হিসেবে যাত্রা শুরু। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থেকে তাদের অনেক দূরেই রাখা হয়। এখানেও একটি কথা উল্লেখের দাবি রাখে। তা হলো যেভাবেই কোনো নারী যদি বিত্তবান থাকতেন, তবে যতো পুরুষ শাসিতই হোক সমাজে তখন তিনি মর্যাদাবান থাকতেন। আরবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবার পর মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ দূর করার ঘোষণা দেন মহানবী (সাঃ)। ইসলামে নারী-পুরুষের ভেদাভেদও দূর হয়ে যায়। সমমর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন নারীরা।
আওয়ামী লীগের সীমাহীন দুঃশাসন ও অপশাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আবারও ফিরে এসেছে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ। ২০০৯ সালের ‘আঁতাতের নির্বাচনে’র মধ্য বাংলাদেশে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। আর তারপর থেকেই লুণ্ঠন অত্যাচার নিপীড়ন, হত্যা, দখল নারী নির্যাতন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সেখান থেকে বের হওয়ার স্বাভাবিক সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মীয়করণ, দলীয়করণ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে। যে যত বড় গুণ্ডা, যত বড় বদমাশ, আওয়ামী নেতৃবৃন্দের কাছে সে ততবেশি প্রিয়ভাজন। খুন, রাহাজানি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, যে কোনও অপরাধই করুক না কেন তার সাত খুন মাফ যদি সে হয় আওয়ামী লীগ। গোপালীকরণের ফলে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
গোপালী কনস্টেবল সমস্ত আদবকায়দা ও শৃঙ্খলা ভেঙে কান চুলকাতে চুলকাতে ওসির রুমে হাজির হয়। ওসির নির্দেশও সে থোড়াই পরোয়া করে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিতে অপরাগ। তারা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেয় যে, তাদের বাড়ি হ্যাপারে (ওপারে)। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কিল খেয়ে কিল হজম করতে হয়। পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে একেবারে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তারা ছাত্রলীগের নাম শুনলে সম্ভবত থরথরিয়ে কাঁপতে থাকেন। সে যত বড় অপরাধই করুন না কেন, তাকে গ্রেফতারের কোনো বিধান নাই। এমনকি অপরাধের সময় পুলিশ আটক করলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তারা ছাড়া পেয়ে আবারও নানা ধরনের অপকর্ম ও কুকীর্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থা প্রায় সর্বত্রই চলছিল। টেন্ডার, ডাকাতি, ছিনতাই, নরহত্যাÑ হেন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নেই। এখন এসব অপরাধের একচ্ছত্র মালিক মোক্তার তারাই। কখনও কখনও এসব অপরাধে তাদের থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলেও স্থানীয় এমপি বা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগারদের নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করা হয়, কিংবা আলোচনায় বসে অপরাধী ছাত্রলীগারদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
এসব ঘটনার সূত্র ধরে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পুলিশ বাহিনীও। ছাত্রলীগ অপরাধ করলে যদি তাদের ধরাও না যায়, শাস্তি না দেয় তাহলে পুলিশের নিজেরই বা অপরাধ করতে বাধা কোথায়। সে কারণে পুলিশ এখন সব ধরনের অপরাধ কর্মে নেমে পড়েছে। তারা খুন, মুক্তিপণ আদায়, ক্রস ফায়ার, হাঁটুর উপর গুলি চালিয়ে পঙ্গু করে দেয়া Ñ এধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যখন শোরগোল শুরু হয়, তখন পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে যে, দোষী পুলিশদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ কর্তৃপক্ষ শাস্তি বলতে প্রধানত যা বোঝায়, তা হলো, কয়েকদিনের জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তাকে ক্লোজড করে রাখা কিংবা মিরপুর থানা থেকে সূত্রাপুর থানায় বদলি করে দেয়া। অর্থাৎ এ থানায় যা করেছিস, করেছিস বাবা, এখন বাকি কাজ অন্য থানায় গিয়ে র্ক। পুলিশকে বড় ধরনের শাস্তি দেয়ার কথা কখনওই খুব একটা শোনা যায় না। তা তার অপরাধ যত গুরুতরই হোক না কেন। ফলে পুলিশ আরও বিপুল প্রতাপে আরও বড় ধরনের অপরাধে নিঃশঙ্ক চিত্তে জড়িয়ে পড়ে।
ছাত্রলীগের স্থান এরও ঊর্ধ্বে। তাদের কোনো অপরাধ আইনের মধ্যে ধর্তব্য নেই। সেসব আইনের সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে। তাদের সকল অপরাধকে যেন আগে থেকেই দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। খুন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোনো বড় অপরাধেই ছাত্রলীগের কারো শাস্তি হয়েছে, এমনটা শোনা যায় না।
গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে এবং একই সঙ্গে সারা দেশে ছাত্রলীগ বাংলাদেশে আবার আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ ফেরত এনেছে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার লোকের সামনে স্বামীর পাশ থেকে স্ত্রীকে, মায়ের পাশ থেকে কন্যাকে, কন্যার পাশ থেকে মাকে, বন্ধুর কাছ থেকে বান্ধবীকে, ভাইয়ের কাছ থেকে বোনকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বিবস্ত্র করে এক নারকীয় তা-ব চালায়। সেই বীভৎস ভয়াবহ দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। টিএসসি এলাকায় বৈশাখী উৎসবে শরীক হতে আসা নারীরা এভাবেই লাঞ্ছনার শিকার হন। আর এই সকল অপকর্মের হোতা ছিল ছাত্রলীগ।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি ও সন্নিহিত এলাকাই নয়, একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দক্ষিণাঞ্চলের এক ভাই তার বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়েছিল। ছাত্রলীগারলা ছুরি মেরে পিটিয়ে তাকে হত্যাও করেছে। কেউ ধরা পড়েছে বলে শুনিনি। ধরা পড়লেও হয়তো এতদিনে ছাড়া পেয়ে আবারও কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে।
ছাত্রলীগের এই পৈশাচিক তা-বের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদ করতে দাঁড়িয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের এই নারী নির্যাতনে বাধা দেয়া ছাত্র ইউনিয়নের ঐ কর্মীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে তারা। অদূরেই দাঁড়িয়েছিল গোপালী পুলিশের দল। উদ্ধারকারী ছেলেরা মাত্র পাঁচ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সহায়তা যখন চাইছিল, তখন পুলিশ বলছিল, এখানে ডিউটি এরিয়া ভাগ করে দেয়া আছে। ওটা আমাদের ডিউটি এরিয়ার ভেতরে পড়ে না। ফলে তারা অস্ত্র হাতে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রলীগারদের নারী নির্যাতনের এই দৃশ্য যেন উপভোগই করেছে। দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে, বিপন্ন নারীর ইজ্জত রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। কেননা, কাজটা করছিল ছাত্রলীগ।
টেলিভিশন টকশোতে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পণ্ডিতকে আলোচনা করতে শুনলাম, এ কাজ করেছে তারাই যারা পহেলা বৈশাখের মতো ‘বাঙালি’ সার্বজনীন উৎসবকে বাঁকা চোখে দেখে ও ভ-ুল করে দিতে চায়। এরাও নিশ্চয়ই শিক্ষক হয়েছেন আওয়ামী দলীয় বিবেচনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার ন্যূনতম যোগ্যতাও এসব লোকের আছে কিনা সন্দেহ।
ওরা যদি ছাত্রলীগই না হবে তাহলে যে পাঁচ নারী নির্যাতনকারীকে সাধারণ মানুষ ধরে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করল, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়া হলো কেন? ওরা যদি ছাত্রলীগই না হবে, তাহলে পুলিশ ও রকম সাফাই কেন গাইবে যে, আসলে শাহবাগে নারী নির্যাতনের মতো ও ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি? ওরা যদি ছাত্রলীগারই না হবে, তাহলে ঐ এলাকায় স্থাপিত ১৩টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পুলিশ লুকিয়ে ফেলবে কেন? ওরা যদি ছাত্রলীগারই না হয়,তাহলে পুলিশ কেমন করে বলল যে, ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না? তারপরেও যখন সংবাদপত্রগুলো এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র দেখালো, ছাপালো ও প্রচার করলো, তাতে নির্যাতনকারী প্রতিটি লোককেই শনাক্ত করা গেল, এরা যদি ছাত্রলীগারই না হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ কেন বলল যে, এদের শনাক্ত করা যায়নি? এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এতে আজ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।
এভাবে আশকারা পাওয়ার পর আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের মতো ছাত্রলীগাররা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতা কলেজেই তার মাতৃতুল্য শিক্ষকের বস্ত্রহরণ করে এবং তার গায়ে হাত দেয়ার মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পুলিশ ঐ নরপিশাচকে থানা থেকে চা খাইয়ে বিদায় করে দেয়। এ নিয়েও কোনো মামলা হয়নি। বিচারের চেষ্টা হয়নি।
পহেলা বৈশাখের নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে একটি ছাত্র সংগঠন ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করা কর্মসূচি দিয়েছিল গত রোববার। ডিএমপি কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়েছিল তাদের ছোটখাট মিছিলটি। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ছাত্রীরাও ছিলেন। পুলিশ তাদের বিশেষভাবে মেয়েদের নিতম্বে লাথি মেরেছে। চুলের মুঠি ধরে পিটাতে পিটাতে সামনের দিকে নিয়ে গেছে। একজন শিক্ষার্থী উপুড় হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। আগে জানতাম সরকারের হাত অনেক লম্বা। এবার দেখলাম পুলিশদের পাগুলোও বেশ লম্বা। বুট পরা বেশ কয়েকটি পা এক সঙ্গে ঐ শিক্ষার্থীকে লাথি মারছে।
পুরুষ নির্যাতনের পাশাপাশি যেখানে সেখানে যত্রতত্র নারীদের উপর অকথ্য অবর্ণীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে এ সরকারের আমলে। নির্যাতন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ, পুলিশ, পেশাদার মাস্তান, এবং অন্যরা। কিন্তু আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের মতো এখানেও নারীর অধিকার এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন