সোমবার, ১১ মে, ২০১৫

সিটি নির্বাচনে উল্টো পথে ছিলো নির্বাচন কমিশন


নমুনা! নমুনা বুঝেন? অর্থাৎ স্যাম্পল!! যদি ২০ দলীয় জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতো ফলাফল কেমন হতো তার একটা নমুনা ছিল সিটি নির্বাচন। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী সরকারের আমলে ভোট ডাকাতি, জাল ভোট প্রদান এক ধরনের স্যাম্পল ছিলো। আগামী দিনে বাংলাদেশের নির্বাচন কেমন হবে তারও একটা নমুনা ছিলো সিটি নির্বাচন। ভোট চুরি থেকে ভোট ডাকাতি, ভোটারদের ভোট দেয়ার পূর্বে ভোট দিয়ে দেয়ার সুসংবাদ দেয়া আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বাহির করে দিয়ে, বাসায় নিয়ে ভোট দেয়া এগুলো সবই আওয়ামী সরকারের ডিজিটাল নির্বাচনী ভোট গ্রহণের নমুনা বা স্যাম্পল।
তামাশার নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন : আওয়ামী লীগ বলতেই পারে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দুই একটা কেন্দ্রে এগুলো হতেই পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার কিভাবে শান্তিপূর্ণ বলতে পারে? মানুষের চোখের সামনে কেন্দ্র দখল, আওয়ামী সরকারবিরোধী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া। জাল ভোট দেয়া। ১৩ বছরের একটি বালককে দিয়ে ৩৩টি ভোট দেয়ানো। পুরাতন ঢাকার কবি নজরুল কলেজের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তাড়া করা। এ রকম শত শত ঘটনা পানির মত পরিষ্কার হওয়ার পরেও কিভাবে নির্বাচন কমিশনার সিটি নির্বাচনকে অবাধ শান্তি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করতে পারে? তিনি এইসব কথা কি নিজে থেকে বলছেন? না কি ওনাকে দিয়ে বলানো হচ্ছে? তিনি কিসের ভয়ে কার জন্য দেখে শুনে সত্যকে আড়াল করছেন? না কি নির্বাচন কমিশনার সত্য বলতে সাহস পাচ্ছে না?
নির্বাচন কমিশনারের কাছে বহুবার আবেদন করা হয়েছিল সেনাবাহিনী নিয়োগ করার জন্য কিন্তু নির্বাচন কমিশনার বরাবর আগের মতই সেনাবাহিনী থাকবে কিন্তু সেনা ছাউনিতে থাকবে। আর ভাই ছাউনিতেই যদি থাকবে ফাঁকা বুলি ছাড়ার কি আছে? জনগণ কি বোকা নাকি? তারা কি জানে না সেনাবাহিনী ছাউনিতে থেকে কি করবে আর বাইরে থেকে কি করবে? তবে তিনি যাই করুন না কেন তিনি যদি মানুষের মৌলিক অধিকার ভোট নিয়ে তামাশা করেন, চালাক চাতুরামি করেন অবশ্যই একদিন না একদিন জনতার আদালতে তিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। জনতা কখনই অন্যায়কে মাফ করেনি। সময়ের ব্যবধানে বিচার হয়েছে।
পুলিশের ভূমিকা: অতি উৎসাহিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তা নিজ দায়িত্বে কথা ভুলে গিয়ে আওয়ামী সরকারের হুকুমের গোলামি করেছে। তা না হলে পুলিশ কিভাবে জাল ভোট প্রদানকারীদের গ্রেফতার না করে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে? পুলিশের কাজ হলো চোরকে গ্রেফতার করা এখন পুলিশ চোরের নিরাপত্তা দিচ্ছে। অর্থাৎ পুলিশ চোরদের কাতারে শামিল হয়েছে। যাদেরকে দেশের সেবার জন্য রাখা হয়েছে তারা আজ গোলামি করছে।
দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন আমাদের জন্য শিক্ষা : গত কয়েক মাস পূর্বে দিল্লীতে হয়ে গেল দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন। দিল্লীর আম আদমী পার্টি ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭ আসন পেয়েছে। মাত্র ৩টি আসন পেয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে কোথাও ভোট চুরি বা জাল ভোটের কথা শোনা যায়নি। নরেন্দ্র মোদি যদি চাইতেন তিনি ভোট কেন্দ্র দখল করে, পুলিশের সহযোগিতায় জাল ভোটের ব্যবস্থা করতে পারতেন। নির্বাচন কমিশনারকে দিয়ে যেনো তেনো একটি নির্বাচন করে বিজেপি প্রার্থীকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি, তিনি জনগণের রায়কে সম্মান দেখিয়েছেন। গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছেন। আমাদের সরকারগুলো কথায় কথায় তাদের উদাহরণ দিয়ে থাকে। আমাদের সরকার তাদের থেকে এই উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিতে পারবেন না? কেন আমাদের সরকার শান্তিপূর্ণ অবাধ, ভোট ডাকাতিবিহীন একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না? দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ সরকার জনগণের রায়কে অসম্মান করেছে। ভোট চুরি করেছে। কেন্দ্র দখল করেছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সরকারগুলোকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে যে কোন মূল্যে জেতা আসলে কোন বিজয় নয়।
মূলত বিএনপির কথায় বলি বা ২০ দলীয় জোটের কথায় বলি, তারা না আওয়ামী লীগকে বুঝতে পেরেছে, না আওয়ামী লীগের তরিকাকে বুঝতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ যতনা জনগণের উপর ভরসা করেছিল তার চাইতে আওয়ামী লীগ ভরসা করেছিল প্রশাসনের উপর। প্রশাসনের শতভাগ সহায়তায় শতভাগ সফলতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে কোন পরাজয়ই অপূরণীয় ক্ষতির বাহক নয়। যে কোন খারাপ থেকে ভালো করা যায়। যে কোন পরাজয়কে ভিত্তি করে জয়ের সৌধ গড়ে তোলা যায়। যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করেও অনেক জাতি পরবর্তী যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। অনেক দুঃসহ অত্যাচারের ভেতর থেকে এমন এক অদম্য শক্তি জন্মলাভ করে যা একদিন সমস্ত অধঃপতিত জাতিকে মুক্তি এনে দেয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads