বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের সমুদ্রে ভাসছে শত-সহস্র বিপন্ন মানুষ। জীবন বাঁচাতে লড়ছে তারা প্রবল ও কষ্টকর জীবন সংগ্রামে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এবং বিশ্ব নেতৃত্বের সামনে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে এসেছে। সমুদ্রে মৃত্যুর খবরের পাশাপাশি এসেছে বিশ্বের নানা দেশের গণকবর আর কারাগারে বাংলাদেশের মানুষের করুণ চিত্র। আমরা বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা ও অর্থ সানন্দে গ্রহণ করি বটে। কিন্তু তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পারি না। এটা এক চরম ব্যর্থতা।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট, বাংলাদেশের ঠিকানা ইত্যাদি বিশ্বের নানা দেশে কেমন অমর্যাদার শিকার হচ্ছেন, সেটা ভুক্তভোগী মাত্রেই অবগত রয়েছেন। অবক্ষয় ও মর্যাদাহীনতা এখন দেশ ছাড়িয়ে বাইরেও প্রকট হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রবেশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। কমছে শ্রমবাজারের পরিধিও। যারা বিদেশে এখনো নানা রকমের কষ্ট সহ্য করে টিকে আছেন, তাদেরকে পোহাতে হচ্ছে বিরূপ সমস্যা। অমানবিক নানা শ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে আমাদের শ্রমশক্তিকে।
বাংলাদেশ বিগত আশি দশকে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমশক্তি রফতানিকারী দেশ। বাংলাদেশের বিশাল শ্রম বাজার ছড়িয়ে ছিল মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায়। সেটা বাড়ার বদলে কমেছে। শ্রমিকদের জীবন ও নিরাপত্তার উন্নয়নের বদলে অবনতি হয়েছে।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে মানব পাচারের চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক নানা খবর মিডিয়ায় আসছে। দেশের নানা স্থান থেকে লোকজনকে লোভ-লালসা দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে টেকনাফ-কক্সবাজারের ঘাঁটি থেকে। সাগরে সেসব মানুষের মৃত্যুদৃশ্য আর বেঁচে থাকার আকুতি প্রকাশ না পেলে, কেউ জানতেই পারতো না দেশে গোপনে চলছে এক ধরনের দাস ব্যবসা। সরকার বা প্রশাসনের চোখের সামনে কিভাবে এসব ঘটতে পারে? কিভাবে নানা গডফাদার মানব পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কাজ-কারবার? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের মানুষ কেন জীবন বাজি রেখে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছেন? এতো উন্নয়ন, সুযোগ-সুবিধার কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলোকে গ্রাহ্য না করে মানুষ চলে যাচ্ছে কেন? সুশাসন, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা থাকলে তো মানুষের দেশ ছাড়ার কথা নয়? কেন মানুষ এতো বিপদ মাথায় নিয়েও দেশ ত্যাগ করছে, সেটা কর্তাব্যক্তিরা ভেবে দেখতে পারেন। সাধারণ মানুষকেও ভাবতে হবে, কেন নাগরিকরা মৃত্যুভয় আছে জেনেও দেশ ছাড়ছে? এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত বাস্তবতা।
ইতিহাসে দেখা গেছে, মানুষ নানা কারণে দেশ ত্যাগ করেন, অভিবাসী হন। এর মধ্যে প্রধান হলো আর্থিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা। ধর্মীয় কারণেও মানুষ দেশ ছাড়ে। উপমহাদেশে অতীতে ধর্মগত কারণেও মানুষ ভারত বা পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। আজকের বাস্তবতা অন্য রকম। আজকের এই আধুনিক যুগে মানুষ কেন আদিম পন্থায় এবং অবৈধ ও অনিরাপদ পথে দেশ ছাড়ছেন? এর পেছনে পার্শ্ববর্তী দেশের জাতিগত নিপীড়ন যেমন আছে, তেমনি রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ সহিংসতার কঠোরতা। আমরা এখন ভারতে হিন্দু মৌলবাদীদের রক্তলোলুপতা এবং মিয়ানমানের বৌদ্ধ মৌলবাদীদের পাশবিকতা দেখছি। এবং মজার ব্যাপার হলো এটাই যে, হিন্দু বা বৌদ্ধ মৌলবাদীরা মুসলমান নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সবাইকে কচু-কাটা করলেও বিশ্ব বিবেকের কিছুই হয় না। দক্ষিণ এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে মুসলমান সম্প্রদায় ধর্মীয়-রাজনৈতিক-জাতিগত নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অকাতরে মৃত্যুবরণ করলেও কারোই কিছু যায়, আসে না। বরং সব দোষ হচ্ছে উল্টো মুসলমানদের। মুসলমানদের মধ্যে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদ খোঁজা হচ্ছে। একতরফাভাবে সব দোষ দেয়া হচ্ছে মুসলমানকেই। এ এক আশ্চর্য প্রহসন। উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর আধুনিক কোসেস।
বিদ্যমান পরিস্থিতি ও আক্রমণাত্মক অবস্থায় বিশ্বের দেশে দেশে মুসলমানদের সচেতন, সতর্ক ও আত্মঅধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এতো আক্রমণ, হামলা, মৃত্যুর পরেও যদি মুসলমানদের চোখ উন্মোচিত না-হয়, বিবেক জাগ্রত না-হয়, তবে আক্রান্ত মুসলমানদের বাঁচাবে কে? নিজে যদি শিক্ষা, দীক্ষা, আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা, প্রযুক্তি এবং সামগ্রিক সচেতনায় ঋদ্ধ হতে না পারি, তবে কাকে দোষ দেবো? নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হবো না, প্রকৃত শত্রু শনাক্ত করতে পারবো না, মিত্রকে শত্রু জ্ঞান করবো, তাহলে তো বিপদ হবেই? শত্রু ষড়যন্ত্র করবেই, এটা জানা কথা। শত্রুর ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা কি করবো? সেটাও তো ঠিক করতে হবে।
সন্দেহ নেই, বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জাতিগোষ্ঠী বর্তমানে নানা দিক থেকে চরম বিপদের মধ্যে নিপতিত হয়ে আছে। দেশে দেশে ছদ্মবেশীরা চক্রান্তের জাল বিস্তার করছে। ক্রমেই সে জালে ধরা পড়ছে বহু মানুষ। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক বিপদ একই সঙ্গে ধেয়ে আসছে। শুধু বিদেশগামী বা সমুদ্রের মানুষ নয়; ডাঙ্গায় যারা আছেন, তাদের নিরাপত্তাও সীমিত হয়ে আসছে। জাতীয়-আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র একেবারেই সামনে চলে এসেছে। এখনো সতর্ক না হলে আর কবে বিপদ উত্তরণ করা হবে?
বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করেন যে দেশে ও বিদেশে তারা যেন নিরাপদ থাকেন। সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে পারেন। কোথাও যেন তারা অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের শিকার না হন। কোথাও যেন তারা অবহেলার সম্মুখীন না হন। এটা তাদের মানবিক অধিকার। এটা তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এই অধিকার দেশে ও বিদেশে নিশ্চিত করতে হবে। নেতৃবৃন্দকে এজন্য কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে তাদের কৃতিত্ব দেখাতে হবে। রাজনৈতিক কৃতিত্ব কেবল পোস্টার, ব্যানার আর বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।
বাংলাদেশের মানব পাচারসহ নানাবিধ জাতীয় দুর্যোগে সর্বদলীয় সংলাপ ও আলোচনাও হতে পারে। কিন্তু অতি বেদনার বিষয় এটাই যে, দলগুলো পরস্পর এক টেবিলে বসতে পারছে না। হিংসা, বিদ্বেষ, পরস্পরের ক্ষতির চিন্তায় সকলেই যেন মশগুল। সরকার আর বিরোধী পক্ষ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এদের মুখ দেখাদেখি নেই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের প্রতি চরম বিরূপ। এই বিরূপতা মঙ্গলজনক নয়। বরং এই অনৈক্য নানা রকমের ক্ষতির কারণ হবে। সামনের দিনগুলোতে যদি দেশের রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য হ্রাস করা সম্ভব না হয়, তবে আমাদের শক্তিই দুর্বল হবে। রাজনৈতিক ঐক্য ও সমঝোতা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদেরকে বিপদ উত্তরণে সাহায্য করবে। অতএব জাতির জন্য দরকার, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সরকারকে এজন্য এগিয়ে এসে নানা জাতীয় দুর্যোগ ও বিপদের মধ্যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে এবং বিভেদের অবসান ঘটাতে হবে। তাহলেই সকল জন ও মানবিক সমস্যার সম্মানজনক সমাধান বের হয়ে আসবে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট, বাংলাদেশের ঠিকানা ইত্যাদি বিশ্বের নানা দেশে কেমন অমর্যাদার শিকার হচ্ছেন, সেটা ভুক্তভোগী মাত্রেই অবগত রয়েছেন। অবক্ষয় ও মর্যাদাহীনতা এখন দেশ ছাড়িয়ে বাইরেও প্রকট হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রবেশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। কমছে শ্রমবাজারের পরিধিও। যারা বিদেশে এখনো নানা রকমের কষ্ট সহ্য করে টিকে আছেন, তাদেরকে পোহাতে হচ্ছে বিরূপ সমস্যা। অমানবিক নানা শ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে আমাদের শ্রমশক্তিকে।
বাংলাদেশ বিগত আশি দশকে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমশক্তি রফতানিকারী দেশ। বাংলাদেশের বিশাল শ্রম বাজার ছড়িয়ে ছিল মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায়। সেটা বাড়ার বদলে কমেছে। শ্রমিকদের জীবন ও নিরাপত্তার উন্নয়নের বদলে অবনতি হয়েছে।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে মানব পাচারের চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক নানা খবর মিডিয়ায় আসছে। দেশের নানা স্থান থেকে লোকজনকে লোভ-লালসা দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে টেকনাফ-কক্সবাজারের ঘাঁটি থেকে। সাগরে সেসব মানুষের মৃত্যুদৃশ্য আর বেঁচে থাকার আকুতি প্রকাশ না পেলে, কেউ জানতেই পারতো না দেশে গোপনে চলছে এক ধরনের দাস ব্যবসা। সরকার বা প্রশাসনের চোখের সামনে কিভাবে এসব ঘটতে পারে? কিভাবে নানা গডফাদার মানব পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কাজ-কারবার? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের মানুষ কেন জীবন বাজি রেখে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছেন? এতো উন্নয়ন, সুযোগ-সুবিধার কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলোকে গ্রাহ্য না করে মানুষ চলে যাচ্ছে কেন? সুশাসন, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা থাকলে তো মানুষের দেশ ছাড়ার কথা নয়? কেন মানুষ এতো বিপদ মাথায় নিয়েও দেশ ত্যাগ করছে, সেটা কর্তাব্যক্তিরা ভেবে দেখতে পারেন। সাধারণ মানুষকেও ভাবতে হবে, কেন নাগরিকরা মৃত্যুভয় আছে জেনেও দেশ ছাড়ছে? এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত বাস্তবতা।
ইতিহাসে দেখা গেছে, মানুষ নানা কারণে দেশ ত্যাগ করেন, অভিবাসী হন। এর মধ্যে প্রধান হলো আর্থিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা। ধর্মীয় কারণেও মানুষ দেশ ছাড়ে। উপমহাদেশে অতীতে ধর্মগত কারণেও মানুষ ভারত বা পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। আজকের বাস্তবতা অন্য রকম। আজকের এই আধুনিক যুগে মানুষ কেন আদিম পন্থায় এবং অবৈধ ও অনিরাপদ পথে দেশ ছাড়ছেন? এর পেছনে পার্শ্ববর্তী দেশের জাতিগত নিপীড়ন যেমন আছে, তেমনি রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ সহিংসতার কঠোরতা। আমরা এখন ভারতে হিন্দু মৌলবাদীদের রক্তলোলুপতা এবং মিয়ানমানের বৌদ্ধ মৌলবাদীদের পাশবিকতা দেখছি। এবং মজার ব্যাপার হলো এটাই যে, হিন্দু বা বৌদ্ধ মৌলবাদীরা মুসলমান নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সবাইকে কচু-কাটা করলেও বিশ্ব বিবেকের কিছুই হয় না। দক্ষিণ এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে মুসলমান সম্প্রদায় ধর্মীয়-রাজনৈতিক-জাতিগত নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অকাতরে মৃত্যুবরণ করলেও কারোই কিছু যায়, আসে না। বরং সব দোষ হচ্ছে উল্টো মুসলমানদের। মুসলমানদের মধ্যে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদ খোঁজা হচ্ছে। একতরফাভাবে সব দোষ দেয়া হচ্ছে মুসলমানকেই। এ এক আশ্চর্য প্রহসন। উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর আধুনিক কোসেস।
বিদ্যমান পরিস্থিতি ও আক্রমণাত্মক অবস্থায় বিশ্বের দেশে দেশে মুসলমানদের সচেতন, সতর্ক ও আত্মঅধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এতো আক্রমণ, হামলা, মৃত্যুর পরেও যদি মুসলমানদের চোখ উন্মোচিত না-হয়, বিবেক জাগ্রত না-হয়, তবে আক্রান্ত মুসলমানদের বাঁচাবে কে? নিজে যদি শিক্ষা, দীক্ষা, আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা, প্রযুক্তি এবং সামগ্রিক সচেতনায় ঋদ্ধ হতে না পারি, তবে কাকে দোষ দেবো? নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হবো না, প্রকৃত শত্রু শনাক্ত করতে পারবো না, মিত্রকে শত্রু জ্ঞান করবো, তাহলে তো বিপদ হবেই? শত্রু ষড়যন্ত্র করবেই, এটা জানা কথা। শত্রুর ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা কি করবো? সেটাও তো ঠিক করতে হবে।
সন্দেহ নেই, বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জাতিগোষ্ঠী বর্তমানে নানা দিক থেকে চরম বিপদের মধ্যে নিপতিত হয়ে আছে। দেশে দেশে ছদ্মবেশীরা চক্রান্তের জাল বিস্তার করছে। ক্রমেই সে জালে ধরা পড়ছে বহু মানুষ। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক বিপদ একই সঙ্গে ধেয়ে আসছে। শুধু বিদেশগামী বা সমুদ্রের মানুষ নয়; ডাঙ্গায় যারা আছেন, তাদের নিরাপত্তাও সীমিত হয়ে আসছে। জাতীয়-আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র একেবারেই সামনে চলে এসেছে। এখনো সতর্ক না হলে আর কবে বিপদ উত্তরণ করা হবে?
বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করেন যে দেশে ও বিদেশে তারা যেন নিরাপদ থাকেন। সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে পারেন। কোথাও যেন তারা অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের শিকার না হন। কোথাও যেন তারা অবহেলার সম্মুখীন না হন। এটা তাদের মানবিক অধিকার। এটা তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এই অধিকার দেশে ও বিদেশে নিশ্চিত করতে হবে। নেতৃবৃন্দকে এজন্য কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে তাদের কৃতিত্ব দেখাতে হবে। রাজনৈতিক কৃতিত্ব কেবল পোস্টার, ব্যানার আর বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।
বাংলাদেশের মানব পাচারসহ নানাবিধ জাতীয় দুর্যোগে সর্বদলীয় সংলাপ ও আলোচনাও হতে পারে। কিন্তু অতি বেদনার বিষয় এটাই যে, দলগুলো পরস্পর এক টেবিলে বসতে পারছে না। হিংসা, বিদ্বেষ, পরস্পরের ক্ষতির চিন্তায় সকলেই যেন মশগুল। সরকার আর বিরোধী পক্ষ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এদের মুখ দেখাদেখি নেই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের প্রতি চরম বিরূপ। এই বিরূপতা মঙ্গলজনক নয়। বরং এই অনৈক্য নানা রকমের ক্ষতির কারণ হবে। সামনের দিনগুলোতে যদি দেশের রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য হ্রাস করা সম্ভব না হয়, তবে আমাদের শক্তিই দুর্বল হবে। রাজনৈতিক ঐক্য ও সমঝোতা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদেরকে বিপদ উত্তরণে সাহায্য করবে। অতএব জাতির জন্য দরকার, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সরকারকে এজন্য এগিয়ে এসে নানা জাতীয় দুর্যোগ ও বিপদের মধ্যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে এবং বিভেদের অবসান ঘটাতে হবে। তাহলেই সকল জন ও মানবিক সমস্যার সম্মানজনক সমাধান বের হয়ে আসবে।