গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো বাংলাদেশের জনগণের প্রিয় বিষয়। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করায় এই জনপদের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে এবং অবশেষে লিপ্ত হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে। ইতিহাসের এই সত্য বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের গুরুত্বের সাথে স্মরণে রাখা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের দৃশ্য এবং রাজনীতিবিদদের আচরণ দেখে মনে হয় না তারা জনগণের চিন্তাচেতনা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন। ভাবতে অবাক লাগে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে কী করে লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়! গণতান্ত্রিক সমাজে মতপার্থক্য, বহুমত ও বহুদলের অস্তিত্ব খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অপরের মতকে সম্মান প্রদর্শন তথা সহিষ্ণুতা-গুণকে ধারণ করে মত ও পথের পার্থক্যকে স্বীকার করে নিয়েই গণতান্ত্রিক সমাজ প্রগতির পথে এগিয়ে যায়। গণতান্ত্রিক সমাজে ক্ষমতালিপ্সা কখনো রাজনীতিবিদদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে না। বরং নিজেদের আদর্শ ও কর্মসূচির আলোকে সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তারা ক্ষমতায় যেতে চাইবেন এবং সেই লক্ষ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে কর্মতৎপরতার মাধ্যমে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে না এমন রাজনীতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন দমন-পীড়ন এবং শঠতা ও চাতুর্যের জন্য লাগাতার অবরোধ ও হরতাল পালনের অধিকার নেই বিরোধী দলের। কিন্তু দুঃখের সাথে উল্লেখ করতে হয়, রাজনীতির কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক চিত্র আজ দেশে বর্তমান নেই। আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের কারণ এবং বিঘোষিত লক্ষ্যের কথা যেন ভুলে গেছি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানির বিবৃতির পর আমরা কী করে এ কথা মেনে নেব যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা সঠিক পথে আছেন এবং নিজেদের আত্মসম্মানের ব্যাপারে তারা সচেতন? গত ১৬ জানুয়ারি রাভিনা যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা প্রকারান্তরে বাংলাদেশের বিবদমান দুই পক্ষের প্রতি এক হুঁশিয়ারি বার্তা। বিবৃতিতে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, গভীরতর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে হত্যাকা-ের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এর দায় তাদের নেতারা এড়াতে পারবেন না। ওই বিবৃতিতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেয়া নাভিপিল্লাইয়ের বিবৃতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকায় জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন যে, নাভিপিল্লাইয়ের দফতরের একজন মুখপাত্র তখন চলমান সহিংসতার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের সম্মুখীন করার দিকে ইঙ্গিত করার কারণ ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছিলেন। ওই মুখপাত্র বলেছিলেন, সংলাপের মাধ্যমে সুরাহা না হলে এই সহিংসতা আরও নিকৃষ্ট রূপ নিতে পারে। আর ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কেউই শুধু পদমর্যাদার কারণে রেহাই পেতে পারেন না। উল্লেখ্য যে, এবার ১৬ জানুয়ারির বিবৃতিতে উল্লেখ করা ‘ডেসট্রাকটিভ ব্রিঙ্ক ম্যানশিপ’ কথাটি ২০১৩ সালে পিল্লাইয়ের বিবৃতিতেও বলা হয়েছিল। যার অর্থ হলো, ‘কোনো বিপদজনক নীতি অনুসরণ করার ফলে যুদ্ধ বা ধ্বংসের প্রান্তসীমায় পৌঁছানো।’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনার নাভিপিল্লাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তাদের মতপার্থক্য দূর করে অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক নীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর তাতে হেগের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছিল। পিল্লাই আরো বলেছিলেন, বাংলাদেশ রোম সংবিধির দস্তখতকারী দেশগুলোর অন্যতম। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জাতিসংঘের নতুন বিবৃতিতে এক বছর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। চলমান সংঘাতকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। জেনেভায় এক সংবাদ-বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে যেসব হত্যাকা- হয়েছে তার সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকা- সরকার বা সরকারের বাইরে যাদের দ্বারাই হোক না কেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সেগুলোর নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গ-ির মধ্যে থাকে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালে কেনিয়ায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় এক হাজারের বেশি নাগরিকের মৃত্যুর দায়ে কেনীয় প্রেসিডেন্ট ও ডেপুটি প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। বর্তমানে বিশ্বের আটটি দেশে আইসিসি মামলা তদন্ত করছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানির বিবৃতিতে যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতিবিদদের জন্য মোটেও সম্মানজনক নয়। আমাদের রাজনীতিবিদরা কেন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হবেন? তারা চাইলে বরং সংলাপের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে পুরস্কৃত হতে পারেন। তেমন সামর্থ্য তাদের আছে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। ৫ জানুয়ারি কি ধরনের নির্বাচন হয়েছে এবং বর্তমানে দেশ কিভাবে চলছে, তা তো সবার জানা। তাই এ নিয়ে অযথা বিতর্ক না বাড়িয়ে বরং গণআকাক্সক্ষার অনুকূলে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণই এখন সময়ের দাবি। এমন লক্ষ্যে এগুতে চাইলে একটি কার্যকর সংলাপের কোনো বিকল্প আছে কী?
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানির বিবৃতির পর আমরা কী করে এ কথা মেনে নেব যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা সঠিক পথে আছেন এবং নিজেদের আত্মসম্মানের ব্যাপারে তারা সচেতন? গত ১৬ জানুয়ারি রাভিনা যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা প্রকারান্তরে বাংলাদেশের বিবদমান দুই পক্ষের প্রতি এক হুঁশিয়ারি বার্তা। বিবৃতিতে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, গভীরতর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে হত্যাকা-ের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এর দায় তাদের নেতারা এড়াতে পারবেন না। ওই বিবৃতিতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেয়া নাভিপিল্লাইয়ের বিবৃতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকায় জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন যে, নাভিপিল্লাইয়ের দফতরের একজন মুখপাত্র তখন চলমান সহিংসতার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের সম্মুখীন করার দিকে ইঙ্গিত করার কারণ ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছিলেন। ওই মুখপাত্র বলেছিলেন, সংলাপের মাধ্যমে সুরাহা না হলে এই সহিংসতা আরও নিকৃষ্ট রূপ নিতে পারে। আর ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কেউই শুধু পদমর্যাদার কারণে রেহাই পেতে পারেন না। উল্লেখ্য যে, এবার ১৬ জানুয়ারির বিবৃতিতে উল্লেখ করা ‘ডেসট্রাকটিভ ব্রিঙ্ক ম্যানশিপ’ কথাটি ২০১৩ সালে পিল্লাইয়ের বিবৃতিতেও বলা হয়েছিল। যার অর্থ হলো, ‘কোনো বিপদজনক নীতি অনুসরণ করার ফলে যুদ্ধ বা ধ্বংসের প্রান্তসীমায় পৌঁছানো।’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনার নাভিপিল্লাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তাদের মতপার্থক্য দূর করে অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক নীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর তাতে হেগের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছিল। পিল্লাই আরো বলেছিলেন, বাংলাদেশ রোম সংবিধির দস্তখতকারী দেশগুলোর অন্যতম। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জাতিসংঘের নতুন বিবৃতিতে এক বছর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। চলমান সংঘাতকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। জেনেভায় এক সংবাদ-বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে যেসব হত্যাকা- হয়েছে তার সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকা- সরকার বা সরকারের বাইরে যাদের দ্বারাই হোক না কেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সেগুলোর নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গ-ির মধ্যে থাকে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালে কেনিয়ায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় এক হাজারের বেশি নাগরিকের মৃত্যুর দায়ে কেনীয় প্রেসিডেন্ট ও ডেপুটি প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। বর্তমানে বিশ্বের আটটি দেশে আইসিসি মামলা তদন্ত করছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানির বিবৃতিতে যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতিবিদদের জন্য মোটেও সম্মানজনক নয়। আমাদের রাজনীতিবিদরা কেন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হবেন? তারা চাইলে বরং সংলাপের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে পুরস্কৃত হতে পারেন। তেমন সামর্থ্য তাদের আছে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। ৫ জানুয়ারি কি ধরনের নির্বাচন হয়েছে এবং বর্তমানে দেশ কিভাবে চলছে, তা তো সবার জানা। তাই এ নিয়ে অযথা বিতর্ক না বাড়িয়ে বরং গণআকাক্সক্ষার অনুকূলে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণই এখন সময়ের দাবি। এমন লক্ষ্যে এগুতে চাইলে একটি কার্যকর সংলাপের কোনো বিকল্প আছে কী?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন