অবরোধ চলছে আজ ১৪ দিন হলো। এর মধ্যে গত ১৫ এবং ১৬ জানুয়ারি দুইটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ১৫ তারিখে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনসব কথা বলেছেন যেগুলোকে বোমা ফাটানোর শামিল বলে গণ্য করা যায়। পরদিন অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশের মহাপরিচালক শহিদুল হক এবং র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এমনসব উক্তি করেছেন যেগুলো পলিটিক্যাল লিডারের মতো। তাদের এসব কথা বার্তায় জনগণ হতভম্ব হয়েছেন। জনগণ জানেন যে, পুলিশ, র্যাব বা বিজিবি সাধারণত কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন ধরেন। কিন্তু তাই বলে তারা যে একটি দলের নেতা ও ক্যাডারের মতো বক্তৃতা করলেন সেটা ছিল সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। সেভাবে বক্তৃতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন এমন কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রী, তার মন্ত্রী সান্ত্রী, পুলিশ ও র্যাব প্রধানরা যা বলছেন বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই। দুইজন মন্ত্রী বলেছেন, ৭ দিনের মধ্যেই নাকি আন্দোলন ঠা-া হয়ে যাবে। কোন সংবাদের ভিত্তিতে এবং কোন হিসাব নিকাশের ভিত্তিতে তারা এসব বলেছেন সেটা আমরা জানি না। কিন্তু গত শনিবার একাধিক পত্রিকা পড়ার পর সেসব পত্রিকার যেসব শিরোনামকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেগুলো নিম্নে তুলে ধরলাম।
০১. রাজধানীতে ৫টি গাড়িতে আগুন।
০২. তেজগাঁওয়ে সাত রাস্তার মোড়ে বাসে আগুন।
০৩. নেত্রকোনায় ট্রাকে আগুন : চালক দগ্ধ।
০৪. ধানমন্ডিতে আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটের অফিসে আগুন।
০৫. রাজধানীর বিজয় নগরে অটো রিক্সায় আগুন।
০৬. বঙ্গভবনের পাশে লেগুনায় আগুন।
০৭. ধানমন্ডিতে বাসে আগুন।
০৮. টিএসসিতে বাসে আগুন।
০৯. রাজধানীর মিরপুরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ।
১০. পান্থপথে ককটেল ফাটার শব্দে জনমতে আতঙ্ক।
১১. রাতে লক্ষ্মীপুরে ১০ গাড়ি ভাংচুর: অটোরিকশায় আগুন: আহত-৫।
১২. অবরোধে ভাংচুর আগুন: রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ।
১৩. নোয়াখালিতে ৩ অটোরিক্সায় আগুন।
১৪. মাধবদীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ঝলসে গেছে যাত্রীবাহী বাস।
১৫. বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাস ভবনে ককটেল বিস্ফোরণ।
১৬. বিজিবির প্রহরায় গাড়ি চলাচল।
১৭. কুষ্টিয়ায় পত্রিকা অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ।
১৮. রাজধানীতে দুটি বাসে আগুন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী দগ্ধ।
এগুলো ছাড়া চিত্রের অন্যদিকও রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলী করা হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। একাধিক গুলী তার কোমর ও উরু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. মইন খানের বাস ভবনে কে বা কারা গুলী করেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার বাস ভবনে একাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের বাস ভবনে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। বেগম জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক সচিব সাবি উদ্দিনের গাড়ি জালিয়ে দেয়া হয়েছে।
এসব কারা ঘটাচ্ছে সেগুলো আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা ঢালাওভাবে সব ধরনের অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ, গাড়ি ঘোড়া ভাংচুর এবং গুলীবর্ষণের ঘটনার জন্য বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এ ব্যাপারে অত্যন্ত নিরপেক্ষ বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গত শুক্রবার রাত ১০টার ‘সময়’ টেলিভিশনের ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে তিনি দ্বায়িত্বপূর্ণ উক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন যে, প্রতিটি হামলার ঘটনাই নিন্দাজনক। কিন্তু আমরা নিশ্চিত নই যে, কারা এসব ঘটাচ্ছে। প্রতিটি ঘটনার জন্যই সরকার বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে। কিন্তু একটি ঘটনারও তদন্ত করেনি।
দুই
এ ব্যাপারে দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এবং দৈনিক ‘যুগান্তরের’ দুটি সংবাদ প্রনিধানযোগ্য। গত ১৫ জানুয়ারি দৈনিক ‘প্রথম আলো’র প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান সংবাদে লেখা হয়েছে, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের গাড়ি, কার্যালয় ও বাড়িঘরে হামলাকারীদের পরিচয় নিয়ে পুলিশের ভেতরেই নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ। পুলিশ মনে করছে, হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করতে আসা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এটা ছিল অত্যন্ত দক্ষ হাতের নির্ভুল আঘাত। কারা করেছে তা জানি না। তবে যারা করেছে তারা সব বুঝে শুনেই করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহা পরিদর্শক এ এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যখন কোনো সংকট শুরু হয়, তখন সুযোগ সন্ধানী মহল নানা ধরনের অঘটন ঘটায়। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের উচিত, এদের শক্ত হাতে দমন করা। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
গুলশান থানা পুলিশ জানায়, রিয়াজ রহমানের ঘটনা তদন্তে নেমে গতকাল পুলিশ বেশকিছু তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি গুলীর খোসা ও ব্যবহৃত বুলেটের অংশ। গতকাল আলামত সংগ্রহে আসা সিআইডি কর্মকর্তারা এসব পরীক্ষা করেন। ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্রও পুলিশ হাতে পেয়েছে। ওই ভিডিও চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার পর চারটি মোটর সাইকেলে করে লোকজন চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি মোটর সাইকেলে একটি কম বয়সী ছেলে আছে। তবে ছবিতে এদের চেহারা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। রিয়াজ রহমানের গাড়ি চালককে পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। উদ্ধার করা গাড়িটি পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সিআইডির কর্মকর্তারা গতকাল গাড়ি থেকে বিভিন্ন ছাপ সংগ্রহ করেন।
হাসপাতালের ব্রিফিংয়ের আগে বিএনপির চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির পররাষ্ট্র-সংক্রান্ত বিষয়গুলো যাঁরাই দেখছেন, বেছে বেছে তাঁদের ওপরই হামলা চালানো হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছে, সরকারের উচিত তাদের খুঁজে বের করা। এর আগে বিএনপি চেয়ার পারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, সরকারের মদদপুষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ১০ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দীন আহমেদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এর এক ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলী ছুঁড়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক। পরদিন রাত ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গুলশান-২ নম্বরের বাসার সামনে ফাঁকা গুলী ছোঁড়ে দুর্বৃত্তরা। একইদিন বেলা তিনটার দিকে আরেক উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের রামপুরার মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার চেম্বারের সামনে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ওইদিন রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকারের বাসার সামনে ফাঁকা গুলী ছোড়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এরা কারা? এরা কী ভাড়াটে সন্ত্রাসী? না অন্য কেউ? জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ‘প্রথম আলোকে’ বলেন, হামলাকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। দুটি ঘটনায় হামলাকারীদের ছবি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে। এসব ভিডিও এখনো পুলিশের হাতে আসেনি। ছবি পেলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
তিন
গত ১৬ জানুয়ারি দৈনিক ‘যুগান্তর’ প্রথম পৃষ্ঠায় একটি বিশ্লেষণধর্মী খবর ছেপেছে। খবরটির শিরোনাম, ‘অপরাধী কারা’? খবরে বলা হয়েছে, কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্পর্শ কাতর ও জনবহুল স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলী ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনার পরপরই নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা গুলী ছুঁড়ছে, তারা খুবই দক্ষ এবং তাদের নিশানাও নির্ভুল। এমনকি তারা অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করছে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনাও। সবকিছুই ঘটছে সুপরিকল্পিতভাবে। টার্গেট করে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে তারা। কিন্তু অপরাধী কারা, তা এখনও চিহ্নিত হয়নি। নিরাপত্তার ভারি চাদরে ঢাকা বেশ কয়েকটি স্থানে নাশকতা হওয়ায় কর্তব্যরত আইন শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা, বিচারক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গাড়ি, কার্যালয় ও বাড়ি-ঘরে হামলাকারীদের পরিচয় নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি কর্মী নাও হতে পারে বলে ধারণা তাদের। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ ও হরতালসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে চলেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অন্যদিকে সরকারের পুরো মেয়াদ স¤পন্ন করতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের এমন অনড় অবস্থানকে পুঁজি হিসেবে বার বার ব্যবহার করেছে স্বার্থান্বেষী মহল। এর খেসারত দিতে হয়েছে দুই দলকেই। তাদের ধারণা, এ মুহূর্তে আবারও তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে ওই মহলটি। চলমান অবরোধে আইনমন্ত্রীর বাড়িতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমাবেশে, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও হাইকোর্ট চত্বরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ওপর বিক্ষিপ্ত হামলার ঘটনায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতংক ও উদ্বেগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কূটনীতিক পাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কারও পক্ষে সহজেই পার পাওয়ার কথা নয়। কানাডিয়ান ও সৌদি দূতাবাসের সামনে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। গুলশানসহ রাজধানীর যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, সেখানকার অধিকাংশ স্থানেই এই ক্যামেরা দিয়ে বেষ্টনী। ককটেল নিক্ষেপের সময়ও নিক্ষেপকারীদের দেখে ফেলা সম্ভব। পুলিশের এ সক্ষমতা আছে। কিন্তু নিক্ষেপকারীরা ধরা পড়ছে না। আবার যেখানে টহল জোরদার আছে তার আশপাশেই নিক্ষেপ করা হচ্ছে ককটেল।
চার
প্রথমে শুরু করেছেন জাসদের সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদল। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য কিন্তু বাদল সাহেবকে কোনো ইলেকশন করতে হয়নি। কারো ভোটও দিতে হয়নি। মুফতে তিনি এমপি হয়ে গেছেন। সেদিন তিনি বললেন, যারা অবরোধের আন্দোলন করছেন প্রথমে তাদের পায়ে গুলী করতে হবে। তাতে যদি কোনো কাজ না হয় তাহলে বুকে গুলী করতে হবে। এরপর দৃশ্যপটে এলেন বিজিবি বা বর্ডার গার্ডের মহা পরিচালক মেজর জেনারেল আজীজ আহমেদ। গত ১৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কারো হাতে পেট্রোল বোমা দেখলে বিজিবি সদস্যরা অবশ্যই অস্ত্র তুলে নেবে। কারণ একজনের পেট্রোল বোমায় হয়তো পাঁচজনের জীবন চলে যাবে। তাই তাকে দমন করাটাই শ্রেয়। এরপর আবার বলেন, “একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায় তাহলে ৫ জন লোক নিহত হতে পারে। এই দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি করা তার দায়িত্ব’।
র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের পরেই অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর বাইরে কোনো কিছু নয়।
পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, অবরোধ আর হরতাল সংবিধান পরিপন্থী। হরতাল আর অবরোধের নামে যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করছে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিগুলোর দুর্বলতার কারণে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মানুষ হত্যা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানবতা বিরোধী, সন্ত্রাসী, দেশ ও জনগণের শত্রুদের রুখতে হবে। গতকাল শুক্রবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস ও নাশকতারোধে সুধীজনের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন। এই সভায় র্যাবের মহা পরিচালক বেনজীর আহমেদ সন্ত্রাসীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এবার সন্ত্রাস করতে হলে জীবন হাতে নিয়ে এসো। জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল ও অবরোধকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের কোথাও লেখা নেই গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করতে হরতাল এবং অবরোধ দিয়ে মানুষ মারা ও জনগণের স¤পদ নষ্ট করতে হবে।
এ সব উক্তির ওপর মন্তব্য করার প্রয়োজন পড়ে না। এরা সরকারি অফিসার। তারা আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীর মতো কথা বলতে পারেন কি না, সেটা বিবেচনা করবেন জনগণ।
০১. রাজধানীতে ৫টি গাড়িতে আগুন।
০২. তেজগাঁওয়ে সাত রাস্তার মোড়ে বাসে আগুন।
০৩. নেত্রকোনায় ট্রাকে আগুন : চালক দগ্ধ।
০৪. ধানমন্ডিতে আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটের অফিসে আগুন।
০৫. রাজধানীর বিজয় নগরে অটো রিক্সায় আগুন।
০৬. বঙ্গভবনের পাশে লেগুনায় আগুন।
০৭. ধানমন্ডিতে বাসে আগুন।
০৮. টিএসসিতে বাসে আগুন।
০৯. রাজধানীর মিরপুরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ।
১০. পান্থপথে ককটেল ফাটার শব্দে জনমতে আতঙ্ক।
১১. রাতে লক্ষ্মীপুরে ১০ গাড়ি ভাংচুর: অটোরিকশায় আগুন: আহত-৫।
১২. অবরোধে ভাংচুর আগুন: রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ।
১৩. নোয়াখালিতে ৩ অটোরিক্সায় আগুন।
১৪. মাধবদীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ঝলসে গেছে যাত্রীবাহী বাস।
১৫. বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাস ভবনে ককটেল বিস্ফোরণ।
১৬. বিজিবির প্রহরায় গাড়ি চলাচল।
১৭. কুষ্টিয়ায় পত্রিকা অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ।
১৮. রাজধানীতে দুটি বাসে আগুন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী দগ্ধ।
এগুলো ছাড়া চিত্রের অন্যদিকও রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলী করা হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। একাধিক গুলী তার কোমর ও উরু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. মইন খানের বাস ভবনে কে বা কারা গুলী করেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার বাস ভবনে একাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের বাস ভবনে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। বেগম জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক সচিব সাবি উদ্দিনের গাড়ি জালিয়ে দেয়া হয়েছে।
এসব কারা ঘটাচ্ছে সেগুলো আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা ঢালাওভাবে সব ধরনের অগ্নিসংযোগ, বোমা বিস্ফোরণ, গাড়ি ঘোড়া ভাংচুর এবং গুলীবর্ষণের ঘটনার জন্য বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এ ব্যাপারে অত্যন্ত নিরপেক্ষ বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গত শুক্রবার রাত ১০টার ‘সময়’ টেলিভিশনের ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে তিনি দ্বায়িত্বপূর্ণ উক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন যে, প্রতিটি হামলার ঘটনাই নিন্দাজনক। কিন্তু আমরা নিশ্চিত নই যে, কারা এসব ঘটাচ্ছে। প্রতিটি ঘটনার জন্যই সরকার বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে। কিন্তু একটি ঘটনারও তদন্ত করেনি।
দুই
এ ব্যাপারে দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এবং দৈনিক ‘যুগান্তরের’ দুটি সংবাদ প্রনিধানযোগ্য। গত ১৫ জানুয়ারি দৈনিক ‘প্রথম আলো’র প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান সংবাদে লেখা হয়েছে, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের গাড়ি, কার্যালয় ও বাড়িঘরে হামলাকারীদের পরিচয় নিয়ে পুলিশের ভেতরেই নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ। পুলিশ মনে করছে, হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করতে আসা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এটা ছিল অত্যন্ত দক্ষ হাতের নির্ভুল আঘাত। কারা করেছে তা জানি না। তবে যারা করেছে তারা সব বুঝে শুনেই করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহা পরিদর্শক এ এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যখন কোনো সংকট শুরু হয়, তখন সুযোগ সন্ধানী মহল নানা ধরনের অঘটন ঘটায়। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের উচিত, এদের শক্ত হাতে দমন করা। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
গুলশান থানা পুলিশ জানায়, রিয়াজ রহমানের ঘটনা তদন্তে নেমে গতকাল পুলিশ বেশকিছু তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি গুলীর খোসা ও ব্যবহৃত বুলেটের অংশ। গতকাল আলামত সংগ্রহে আসা সিআইডি কর্মকর্তারা এসব পরীক্ষা করেন। ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্রও পুলিশ হাতে পেয়েছে। ওই ভিডিও চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার পর চারটি মোটর সাইকেলে করে লোকজন চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি মোটর সাইকেলে একটি কম বয়সী ছেলে আছে। তবে ছবিতে এদের চেহারা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। রিয়াজ রহমানের গাড়ি চালককে পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। উদ্ধার করা গাড়িটি পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সিআইডির কর্মকর্তারা গতকাল গাড়ি থেকে বিভিন্ন ছাপ সংগ্রহ করেন।
হাসপাতালের ব্রিফিংয়ের আগে বিএনপির চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির পররাষ্ট্র-সংক্রান্ত বিষয়গুলো যাঁরাই দেখছেন, বেছে বেছে তাঁদের ওপরই হামলা চালানো হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছে, সরকারের উচিত তাদের খুঁজে বের করা। এর আগে বিএনপি চেয়ার পারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, সরকারের মদদপুষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ১০ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দীন আহমেদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এর এক ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলী ছুঁড়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক। পরদিন রাত ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গুলশান-২ নম্বরের বাসার সামনে ফাঁকা গুলী ছোঁড়ে দুর্বৃত্তরা। একইদিন বেলা তিনটার দিকে আরেক উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের রামপুরার মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার চেম্বারের সামনে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ওইদিন রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকারের বাসার সামনে ফাঁকা গুলী ছোড়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এরা কারা? এরা কী ভাড়াটে সন্ত্রাসী? না অন্য কেউ? জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ‘প্রথম আলোকে’ বলেন, হামলাকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। দুটি ঘটনায় হামলাকারীদের ছবি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে। এসব ভিডিও এখনো পুলিশের হাতে আসেনি। ছবি পেলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
তিন
গত ১৬ জানুয়ারি দৈনিক ‘যুগান্তর’ প্রথম পৃষ্ঠায় একটি বিশ্লেষণধর্মী খবর ছেপেছে। খবরটির শিরোনাম, ‘অপরাধী কারা’? খবরে বলা হয়েছে, কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্পর্শ কাতর ও জনবহুল স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলী ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনার পরপরই নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা গুলী ছুঁড়ছে, তারা খুবই দক্ষ এবং তাদের নিশানাও নির্ভুল। এমনকি তারা অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করছে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনাও। সবকিছুই ঘটছে সুপরিকল্পিতভাবে। টার্গেট করে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে তারা। কিন্তু অপরাধী কারা, তা এখনও চিহ্নিত হয়নি। নিরাপত্তার ভারি চাদরে ঢাকা বেশ কয়েকটি স্থানে নাশকতা হওয়ায় কর্তব্যরত আইন শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা, বিচারক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গাড়ি, কার্যালয় ও বাড়ি-ঘরে হামলাকারীদের পরিচয় নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি কর্মী নাও হতে পারে বলে ধারণা তাদের। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ ও হরতালসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে চলেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অন্যদিকে সরকারের পুরো মেয়াদ স¤পন্ন করতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের এমন অনড় অবস্থানকে পুঁজি হিসেবে বার বার ব্যবহার করেছে স্বার্থান্বেষী মহল। এর খেসারত দিতে হয়েছে দুই দলকেই। তাদের ধারণা, এ মুহূর্তে আবারও তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে ওই মহলটি। চলমান অবরোধে আইনমন্ত্রীর বাড়িতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমাবেশে, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও হাইকোর্ট চত্বরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ওপর বিক্ষিপ্ত হামলার ঘটনায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতংক ও উদ্বেগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কূটনীতিক পাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কারও পক্ষে সহজেই পার পাওয়ার কথা নয়। কানাডিয়ান ও সৌদি দূতাবাসের সামনে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। গুলশানসহ রাজধানীর যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, সেখানকার অধিকাংশ স্থানেই এই ক্যামেরা দিয়ে বেষ্টনী। ককটেল নিক্ষেপের সময়ও নিক্ষেপকারীদের দেখে ফেলা সম্ভব। পুলিশের এ সক্ষমতা আছে। কিন্তু নিক্ষেপকারীরা ধরা পড়ছে না। আবার যেখানে টহল জোরদার আছে তার আশপাশেই নিক্ষেপ করা হচ্ছে ককটেল।
চার
প্রথমে শুরু করেছেন জাসদের সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদল। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য কিন্তু বাদল সাহেবকে কোনো ইলেকশন করতে হয়নি। কারো ভোটও দিতে হয়নি। মুফতে তিনি এমপি হয়ে গেছেন। সেদিন তিনি বললেন, যারা অবরোধের আন্দোলন করছেন প্রথমে তাদের পায়ে গুলী করতে হবে। তাতে যদি কোনো কাজ না হয় তাহলে বুকে গুলী করতে হবে। এরপর দৃশ্যপটে এলেন বিজিবি বা বর্ডার গার্ডের মহা পরিচালক মেজর জেনারেল আজীজ আহমেদ। গত ১৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কারো হাতে পেট্রোল বোমা দেখলে বিজিবি সদস্যরা অবশ্যই অস্ত্র তুলে নেবে। কারণ একজনের পেট্রোল বোমায় হয়তো পাঁচজনের জীবন চলে যাবে। তাই তাকে দমন করাটাই শ্রেয়। এরপর আবার বলেন, “একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায় তাহলে ৫ জন লোক নিহত হতে পারে। এই দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি করা তার দায়িত্ব’।
র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের পরেই অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর বাইরে কোনো কিছু নয়।
পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, অবরোধ আর হরতাল সংবিধান পরিপন্থী। হরতাল আর অবরোধের নামে যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করছে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিগুলোর দুর্বলতার কারণে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মানুষ হত্যা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানবতা বিরোধী, সন্ত্রাসী, দেশ ও জনগণের শত্রুদের রুখতে হবে। গতকাল শুক্রবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস ও নাশকতারোধে সুধীজনের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন। এই সভায় র্যাবের মহা পরিচালক বেনজীর আহমেদ সন্ত্রাসীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এবার সন্ত্রাস করতে হলে জীবন হাতে নিয়ে এসো। জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল ও অবরোধকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের কোথাও লেখা নেই গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করতে হরতাল এবং অবরোধ দিয়ে মানুষ মারা ও জনগণের স¤পদ নষ্ট করতে হবে।
এ সব উক্তির ওপর মন্তব্য করার প্রয়োজন পড়ে না। এরা সরকারি অফিসার। তারা আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীর মতো কথা বলতে পারেন কি না, সেটা বিবেচনা করবেন জনগণ।
আসিফ আরসালান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন