রবিবার, ৪ মে, ২০১৪

প্রশ্নবোধক শাপলা চত্বর ক্র্যাকডাউন


২০১৩ সালের ৫ মের হেফাজতে ইসলামের  শাপলা চত্বরের সমাবেশ এ দেশের বহুল আলোচিত ঘটনার একটি। তার চেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ৫ ও ৬ মের মধ্যবর্তী রাতে হেফাজতের সমাবেশকে ঘিরে ঘটিত ক্র্যাকডাউন। ভবিষ্যতে এ ঘটনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিভাবে স্মরণ করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এরই মধ্যে শাপলা চত্বরের ক্র্যাকডাউনকে অনেকেই একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এখনো করছেন।
মাদরাসা শিক্ষক ও আলেম ওলামাদের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন  হেফাজতে ইসলাম। এ সংগঠনের আয়োজনে ইসলাম  প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের ১৩ দফা দাবিতে এ সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ৫ মে এই সমাবেশ শেষে রাতে এক অনাকাক্সিত ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে এ সমাপ্তি ঘটে। সরকার পুলিশ ও বিভিন্ন কাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে এই সমাবেশের ওপর চরম দমন-পীড়ন  চালায়। এ অভিযানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
৫ মে শুরুতে এটি ছিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি। এর এক মাস আগে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে এ সংগঠনের ঘোষিত ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ফজরের নামাজের পরপর হেফাজতের নেতাকর্মীরা ছয়টি ভাগে বিভক্ত হয়ে নগরীর ছয়টি প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেন। এর ফলে রাজধানী ঢাকার সাথে সারা দেশের যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরে থেকে কোনো পরিবহন রাজধানীতে প্রবেশ করেনি এবং রাজধানীর বাইরেও যায়নি। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে ৫ মে বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের অনুমোদন চাওয়া হলেও একদম বিকেলের দিকে পুলিশ প্রশাসন সে অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী নগরীর ছয়টি প্রবেশদ্বার থেকে হেফাজতে ইসলামের লাখ লাখ নেতাকর্মী শাপলা চত্বরে এসে সমবেত হতে শুরু করেন।
এ পর্যন্ত সব কিছু চলছিল শান্তিপূর্ণভাবেই। কিন্তু বাবুবাজার সেতু এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে সমাবেশমুখী নেতাকর্মীরা। এর পরও পুলিশের বাধা পেরিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরের দিকে আসতে থাকেন। দুপুরের পর তারা গুলিস্তান-পল্টন এলাকায় আবারো পুলিশের বাধা ও গুলিবর্ষণের মুখে পড়েন। নগরীর অনেক এলাকায় এ ধরনের বাধার মুখে পড়ে শাপলা চত্বরের সামবেশে যোগ দিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু গুলিস্তান-পল্টন এলাকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে ওঠে যখন গুলিস্তান  ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় যুবলীগ-আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সাথে নিয়ে পুলিশ ও হেফাজতকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একই সাথে শুরু হয় গাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। কারা এসব ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অংশ নেয় সে ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ ওঠে। থেমে থেমে এই বিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকে। শোনা যায়, কিছু লুটেরাচক্র এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে গোটা এলাকায় ব্যাপক লুটপাট চালায়। দিনের বেলায়ই এ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কয়েকজন প্রাণ হারান। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী শাপলা চত্বরে সমাপনী বক্তব্য দিতে আসতে পারেন নি। এ পরিস্থিতিতে সমাবেশে আসা অন্য নেতাকর্মীরা রাতে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। এ দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতের মধ্যে শাপলা চত্বর ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু এরা শাপলা চত্বর ছাড়েন নি। এ প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে গভীর রাতে। শপলা চত্বরে অবস্থানকারী  নেতাকর্মীদের ওপর তখন র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার হামলায় হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত-নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুহুর্মুহু গুলিতে শাপলা চত্বর মতিঝিলের আশপাশের এলাকা পরিণত হয় এক ভুতুড়ে নগরীতে। মতিঝিল এলাকায় সব আলো নিভিয়ে ও কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে চালানো হয় সরকারের এই অভিযান।
গীভর রাতে নিরস্ত্র হেফাজতকর্মীদের ওপর এভাবে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বহু  লোককে হতাহত করে শাপলা চত্বর থেকে তাড়ানোর ঘটনাটি অনেক প্রশ্নেরই জন্ম দিয়েছে। আজ এই ঘটনার এক বছর পূর্তির দিন। এই এক বছরেও এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কত তা দেশবাসী জানতে পারেনি। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ও সুপারিশ এসেছিল ঘটনাটির একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের। সে দাবিও পূরণ হলো না। ফলে সে দিন আসলেই কী ঘটেছিল, সে ব্যাপারে আজ সাধারণ মানুষ অন্ধকারেই রয়ে গেছে। হতাহত সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের দাবি ওঠে। গণমাধ্যমেও হতাহতের বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেয়া হয়। ঘটনার এক দিন পর ৭ মে প্রথম আলোর নিজস্ব সংবাদদাতা তার রিপোর্টে উল্লেখ করেনÑ রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এক পুলিশসহ ২২ জন নিহত হওয়ার প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে এই ২২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৯ জন গুলিবিদ্ধ ও দুজন চুরিকাঘাতে মারা যান। প্রথম আলো আরো জানায়, ৬ মে সোমবার ২৭ জন নিহত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ, হাটহাজারী ও বাগেরহাটে। দৈনিক ইত্তেফাক ৯ মে জানায়, গভীর রাতে শাপলা চত্বরে পরিচালিত শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে পুলিশ ও বুয়েটের ছাত্রসহ নিহত ১২ জন। কাঁচপুরে নিহত ১৭। বাগেরহাটে নিহত ৯। দৈনিক যুগান্তর লিখেছে ৫ মের অপারেশনে প্রায় এক লাখ ৫৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ খরচ হয়। এর বেশির ভাগই খরচ হয় অপারেশনে সিকিউরড শাপলায়। এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় শাপলা চত্বরে পরিচালিত অনাকাক্সিত অভিযানে আহত ও নিহতের সংখ্যা বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে কোনো পত্রিকা বা গণমাধ্যম বলেনি, এ অভিযানে কোনো হতাহত হয়নি। কিন্তু সোমবার বিকেলে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব-উল-আলম হানিফ তার দলের পক্ষে দাবি করেন, শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়া হেফাজতিদের সরাতে পরিচালিত যৌথ অভিযানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনো প্রাণহানি ছাড়াই হেফাজতকে ঢাকা ছাড়িয়ে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। এ সময় বিএনপির শত শত লাশ গুম করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে। একইভাবে ১৪ দলীয় জোটও দাবি করে, এ অভিযানে কোনো হতাহত হয়নি। এ দিকে বিষয়টি নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে ঘটনার দুই দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমদ বলেন, ৫ মে সকাল থেকে রাতের অভিযান পর্যন্ত সময়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও আওয়ামী লীগের ও ১৪ দলের দাবি এ অভিযানে কোনো হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 
পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সরকারি দল-জোট ও পুলিশ প্রশাসন যখন হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়া হচ্ছিল, তখন জনমনে এ অভিযান সম্পর্কে নানা ধরনের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট বলল কোনো হতাহত হয়নি, পুলিশ বললো ১১ জন মারা গেছে; একটি দৈনিকের প্রতিবেদক লিখেছেন ২২ জনের লাশ দেখতে পাওয়া গেছে আর এর বিপরীতে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘটনার পরদিন দাবি করে সরকার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ছাড়াও প্রচুর বিদেশী সশস্ত্র লোক দিয়ে আচমকা সমাবেশস্থলে ব্রাশফায়ার শুরু করে। তাতে হেফাজতের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আহতের সংখ্যা আড়াই হাজারের মতো। একইভাবে ১৮ দলীয় জোটের দাবি ওই দিন শাপলা চত্বরে এক ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে শত শত লাশ গুম করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের পরস্পরবিরোধী দাবির মুখে সাধারণ মানুষ চাইবে প্রকৃত ঘটনা কী? কারা সত্য বলছেন? কারা মিথ্যা দাবি করছেন? এ প্রশ্নের সুরাহার জন্য প্রয়োজন এ ব্যাপারে একটি অবাধ বিচারবিভাগীয় তদন্তের। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে সে দাবি উঠতেও দেখা গেছে। কিন্তু সরকার সে দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত তথ্য সাধারণ মানুষের সামনে এখন পর্যন্ত তুলে ধরা হয়নি। শুধু সরকারি দল, দলের কোনো কোনো নেতা ও সরকারের বিভিন্ন অবস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন যেসব বক্তব্য রয়েছে, তাতেও পরস্পরবিরোধী তথ্য থাকায় গোটা বিষয়টি জনগণের কাছে সন্দেহের বেড়াজালে আটকা পড়ে। যেমনটি হওয়া কখনোই উচিত ছিল না, প্রত্যাশিত ছিল না।
আমরা দেখেছি, গোটা বিষয়টি নিয়ে দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলোও গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার৭ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করে গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকা হেফাজতকর্মীদের হত্যা করার এ অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডারাও অংশ নেয়। এরা শত শত নিরস্ত্র হেফাজতকর্মীকে হত্যা করে। অধিকার দাবি করে, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতের পর গত ৪২ বছরে ঢাকায় এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আর ঘটেনি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৭ মে এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় ৪৪ জন নিহত হওয়ার কথা দাবি করে আরো বলে ঠিক কী ঘটেছে এবং কেন এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, এ নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি রয়েছে। অবশ্যই এ ব্যাপারে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন শাপলা চত্বরে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানকে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড’ (ম্যাসাকার) বলে আখ্যায়িত করে তা বন্ধে জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। এমনই প্রেক্ষাপটে গোটা বিষয়টি আঁধারেই থেকে গেছে। সত্য উদঘাটনের কোনো প্রয়াসই আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। আবার প্রশ্নÑ কেন?
এই অভিযানের ঠিক আগে গভীর রাতে সরকার দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। আজ পর্যন্ত সরকার এসব টিভির সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। দীর্ঘ দিন ধরে দৈনিক আমার দেশে প্রকাশনা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফ্রিডম হাউসের রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম আংশিক স্বাধীন। সাংবাদিকেরা নিরাপত্তাহীন। তাই এখানেও প্রশ্ন উঠেছে, প্রকৃত সত্য ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্যই সরকার ভিন্ন মতের টিভি চ্যানেলগুলোকে ও অন্যান্য গণমাধ্যম অন্যায়ভাবে সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। আসলে এ সরকার ভিন্ন মত অ্যাকোমডেট করে দেশ পরিচালনা করতে চরমভাবে অনীহ। সে প্রবণতা থেকেই  হেফাজতে ইসলামের মতো একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের ওপর এ ধরনের অনাকাক্সিত একটি অভিযান চালাতে গেল। পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর মিটিং, মিছিল, সমাবেশের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ ও নেতাকর্মীদের ওপর মামলা হামলার পথটিই বেছে নিয়েছে এ সরকার।
 
হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৫ মে শাপলা চত্বরে সমবেত হয়েছিল। কী ছিল তাদের ১৩ দফা দাবিতে? মোটামুটি তাদের ১৩ দফা দাবিতে ছিল : সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার কথাটি পুনঃসংযোজন; আল্লাহ, আল্লাহর  রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন; শাহবাগের যেসব নাস্তিক মোহাম্মদ সা: সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছে, তাদের শাস্তি বিধান; ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, আলেম-ওলামা ও মাদরাসাছাত্রদের হত্যা বন্ধ করতে হবে; আটক আলেম-ওলামা ও মাদরাসাছাত্রদের মুক্তি দিতে হবে; মসজিদ ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে; কাদিয়ানি (আহমদিয়াদের) অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচার ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; বিদেশী সংস্কৃতি, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো বন্ধ করতে হবে; দেশজুড়ে মোড়ে মোড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি তৈরি বন্ধ করতে হবে; নারীনীতি সংশোধন করে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে; কওমি মাদরাসার শিক্ষক, আলেম-ওলামা, ইমাম ও খতিবদের হুমকি দেয়া বন্ধ করতে হবে; ইসলামিক সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমের ভুল উপস্থাপনার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে মুসলমানদের সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টি বন্ধ করতে হবে; ইসলামবিরোধী এনজিও তৎপরতা, কাদিয়ানিদের অসৎ তৎপরতা এবং পাবর্ত্য চট্টগ্রামে ও দেশের অন্যত্র খ্রিষ্টান মিশনারিদের দিয়ে ধর্মান্তর বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছেÑ শুধু সরকার নয়, যেকেউ এই ১৩ দফা দাবির সাথে সহমত কিংবা ভিন্ন মত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু এসব দাবির সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে নামতে হবে, শাপলা চত্বর-উত্তর পরিবেশে তাদের ওপর মামলা হামলা চালাতে হবে, তাদের সম্পর্কে উদ্দেশ্যপূর্ণ মিথ্যা অপবাদ দিতে হবে এমনটি গণতন্ত্রের কথা নয়। হেফাজতের ওপর কারণে-অকারণে নানা অপবাদ দিয়ে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থাকামী এই সংগঠন ও অন্যান্য ইসলামি সংগঠন ও দলকে গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান দাঁড় করানো ও এগুলোর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার অপরিণামদর্শী  ভূমিকা দেশকে ভালো কিছু দিতে পারে না। সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে চাইলে এ সত্যকে মেনেই আমাদের আগামী দিনের পথ চলতে হবে। দেশ সে পথে চলছে না বলেই শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে ক্র্যাকডাউনের বিষয়টি এখনো প্রশ্নবোধক হয়েই থেকেছে।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads