বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

স্বার্থবাদী প্রচারণা ও ইতিহাসের তিক্ত সত্য


আশি, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কিছু লিখতে চাই। এ ব্যাপারে তোমার মতামত কী? আমি মনে করি বাংলাদেশে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নেই। তবুও এখানে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি বারবার সামনে আসছে কেন? ওটা আসলে রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে গেছে। এতে ফায়দা লুটা যায়। পাকিস্তান আমল থেকেই রাজনীতির এ খেলা দেখে এসেছি। দাঙ্গা বা মারামারি শুধু হিন্দু মুসলমানে হয়নি, বাঙালি অবাঙালিতেও হয়েছে। বিভিন্ন জেলার শ্রমিকের মধ্যেও দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গা হয় স্বার্থের কারণে। সাধারণ মানুষ কখনোই দাঙ্গা করে না রাজনীতিক ও মতাবানদের উসকানি ছাড়া। আমেরিকা যখন ভিনদেশে গিয়ে মানুষ হত্যা করে তাকে কী নামে অভিহিত করবে? আমেরিকায় কালো ধলোর মারামারি বা খুনাখুনিকে তুমি কী বলবে। শুধু ধর্মীয় কারণে সাধারণ মানুষ খুন করে না। ক্রুসেডকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে? শাসক আর মতাবানেরা সাধারণ মানুষকে লেলিয়ে দিয়েছে। শিয়া-সুন্নির দাঙ্গা কারা বাধায়? ইসলামে এত ফেরকা কারা সৃষ্টি করেছে? এসব ফেরকায় মৌলিক তফাতটা কী? আমি তো মনে করি মুসলমানদের সহনশীলতা জগতে সবারচেয়ে বেশি হওয়া দরকার বা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে মুসলমানেরা নামাজ-রোজা করে, হজ পালন করে। শুক্রবারে মসজিদে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। কিন্তু কোনোটাই শুদ্ধ বা পূর্ণাঙ্গ বলে মনে হয় না। আল্লাহ পাক আমাদের মা করুন। বাংলাদেশে হক্কুল এবাদ বা সৃষ্টির অধিকার একেবারেই পালন হয় না। অন্য দিকে শাসক সমাজ নামে মুসলমান হলেও কাজে ইসলামবিদ্বেষী। ইসলামে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নেই। যারা দাঙ্গা লাগায় তারা প্রকৃত মুসলমান নয়।
মক্কা বিজয়ের দিন বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর ভূমিকা কী ছিল, তা শোনো। বিজয়ের জন্য তিনি আল্লাহ পাকের শোকর আদায় করলেন। তারপর কোরেশদের প্রশ্ন করলেন, আজ তোমরা আমার কাছে কিরূপ ব্যবহার আশা করো? তারা বলেছিল, মহান ভ্রাতা যেমন ভ্রাতার সাথে ব্যবহার করে তেমন ব্যবহার। এই কোরেশরা রাসূল সা: এবং তাঁর সাহাবিদের সাথে কী জঘন্য ব্যবহার করেছে তা পাঠকসমাজ জানেন। মক্কা বিজয়ের দিন নবী সা: অতীতের সব দুঃখ-বেদনা, অত্যাচারের কথা ভুলে গেলেন। তিনি বললেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। করুণাময় তোমাদের মা করুন। আজ তোমরা সবাই মুক্ত, যার ইচ্ছা ইসলাম কবুল করতে পারো, যার ইচ্ছা নিজেদের পূর্ব ধর্ম পালন করতে পারো।তখনই হাজার হাজার মানুষ গগনবিদারী আওয়াজ তুলে বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এই রাসূল সা:-ই বলেছেন, প্রতিবেশীকে অভুক্ত বা ুধার্ত রেখে তোমরা খাদ্য গ্রহণ করো না। প্রতিবেশীবলতে বিশেষ কোনো ধর্মের লোক বুঝানো হয়নি। আমি বলি, অমুসলিমদের জাকাত দিতে না পারলে সাদকা দিন।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, ভেবে দেখুন আমরা কী ধরনের মুসলমান। আমাদের চরিত্র থেকে মা আর দয়া যেন প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। মুসলমান আর ইসলাম মানে, যথাক্রমে সত্যের অনুসারী ও সত্যপথ। নিজের বুকে হাত দিয়ে একবার নিজেকেই প্রশ্ন করুন, আমরা কি সত্য পথ অনুসরণ করি?
আমাদের বাংলাদেশ আজ সুস্পষ্টভাবেই দ্বিধা বিভক্ত। কিন্তু কেন? এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে। যদি তা-ই হয়, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বা রাজনীতি নিয়ে ধর্ম, রাজনীতিকে ধর্ম থেকে আলাদা করা, আল্লাহ বা ঈশ্বরকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য কারা উঠেপড়ে লেগেছে? রাজনীতি আর ধর্মের বিরোধ কোথায়? কোনটা ভালো? যেটা মন্দ সেটা ত্যাগ করুন। ভণ্ডামির কোনো প্রয়োজন নেই। এক শ্রেণীর লোক বাংলাদেশে এ ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে নাকি খোদা, ভগবান, গড বা আল্লাহকে সার্বভৌম বলা যাবে না। কেউ কেউ বলে, মানুষ সার্বভৌম (নাউজুবিল্লাহ)। নামাজে, মসজিদে, কুরআন, বেদ, উপনিষদ, বাইবেল, তৌরাতে বলবÑ আল্লাহ সার্বভৌম, রাষ্ট্রের আইন বলবে মানুষ সার্বভৌম। আপনারা ভাবুন এমন কুতর্ক কোন দেশে আছে? এ জগতে এমন একটি ধর্ম নেই যা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানে না।
যেমন ধরুন, ঋগে¦দ বলছে, বিশ্ববিধাতার আইন পরিবর্তন হয় না। আল কুরআন বলছে আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন নেই (সূরা ইউনুস-৬৪)। অন্তর্যামী বিধাতার আইনকে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না (ঋগে¦দ ৫-১-১৮)। তুমি আল্লাহর এই বিধানে কোনো পরিবর্তন পাবে না। (সূরাআল ফাতাহ-২৩)। হে পরম করুণাময়, অজান্তে যদি আমাদের কোনো পাপ হয়ে যায়, তার জন্য আমাদের ত্যাগ করো না (ঋগে¦দ ৫-৮৯-৭)। হে আমাদের প্রতিপালক, যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদের পাকড়াও করো না’ (সূরা আল বাকারা-২৮৬)। ঐ পরমেশ্বরের কোনো মূর্তি হতে পারে না, তাঁর কোনো মূর্তি বানানো যায় না’(অথর্ব বেদ ৩-৩২)। কোনো জিনিসই এমন নেই যা তাঁর মতো’ (সূরা আশ শূরা-১১)। আমার দৃষ্টিতে সব ধর্মের মূলমন্ত্র বা রূপ একই। রাজা-পুরোহিত, খলিফা/শাসক/নেতা আর তথাকথিত আলেম, রাজা/মন্ত্রী সান্ত্রী আর পাদ্রি বা পোপ মিলে ষড়যন্ত্র করে ধর্মের রূপ ও কর্ম বদলে দিয়েছে নিজেদের স্বার্থে। বাংলাদেশেও তেমন ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ দেশে ইসলাম না জেনেও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি, প্রধান বিচারপতি হওয়া যায়। কিছু না জেনেও ধর্মের ওপর ভাষণ কিংবা ধর্মের বিরুদ্ধে রায়ও দেয়া যায়।
বাংলাদেশে সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীভিত্তিক চেতনা আছে কি না। আমি মনে করি, সম্প্রদায়ভিত্তিক চেতনা সারা বিশ্বেই আছে। থাকাটাকে অপরাধ মনে করি না। যারা মেজরিটি তারা রাষ্ট্র, রাজ্য ও সাম্রাজ্যে বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়। প্রশ্ন হলো, সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক মনোভাব কোনটি? রাষ্ট্র বা সরকার কি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করতে পারে? আমি মনে করি, পারে না বা পারা উচিত নয়। কোনো বিচারেই সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন করা যায় না। এখন প্রশ্ন হলো, সম্প্রদায় বা সাম্প্রদায়িকতা কী?
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ কখনোই সাম্প্রদায়িক ছিল না এবং এখনো নেই। বাংলাদেশের তরুণসমাজ একেবারেই অসাম্প্রদায়িক। ভাবাই যায় না, এখানে কখনো সাম্প্রদায়িক কারণে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম হবে। ড. আহমদ শরীফও বলেছিলেন, বাংলাদেশে তিন-চারটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু ভারতে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা লেগেই আছে। বাংলাদেশে মাঝে মধ্যে পত্রিকায় খবর আসে, ধর্মীয় মাইনরিটির ওপর হামলা হচ্ছে। আমি বলব, এসব রাজনৈতিক খেলা। তবে পাকিস্তান আমল থেকেই সাম্প্রদায়িক অপচেতনাকে সরকার বা সরকারি দল উসকিয়ে দেয়। এখনো সেই খেলা অব্যাহত আছে। তবে যা ঘটে তার চেয়ে বেশি হইচই হয় বেশি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য। তথাকথিত প্রগতিশীলতার লেবাসধারী কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন যারা মনোজগতে ধর্মহীন, কিন্তু ধর্মীয় নাম নিয়ে সমাজে চলেন। তারা নিজ ধর্ম বা সমাজকে হেয় করার জন্য সব সময় সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তোলেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা নাকি ইসলাম ও মুসলমানিত্ব। পশ্চিমা জগৎ ও ভারত বাংলাদেশকে ধর্মমুক্ত দেশে পরিণত করতে চায়। এরা নিজেদের তথাকথিত সেকুলার বলে দাবি করে এ দেশে ধর্ম জ্ঞানের পণ্ডিত বা আলেমের চেয়ে অর্ধশিতি ধর্মহীন বা ধর্মবিরোধী লোকের সম্মান অনেক বেশি। অথচ এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। অন্য প,ে অন্য ধর্মের লোকদের এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় না।
কিছু হিন্দু বা অন্য ধর্মীয় বন্ধুর সাথে বিষয়টা নিয়ে খোলা মনে আলাপ করেছি। তারা বলেন, দেখুন এরশাদ ভাই, মাইনরিটিরা সব দেশেই একাট্টা থাকে। বললাম, তোমরা তো ভারতীয় বা পশ্চিম বাংলার মাইনরিটিদের তুলনায় অনেক বেশি সুখে আছো। তাদের জবাব, সেটি আপনার দৃষ্টিতে। আমরা তো বলব, আমরা অবহেলিত, মুসলমানেরা আমাদের বাড়ি আক্রমণ করছে, মন্দির ভেঙে ফেলছে। এটি বাংলাদেশের মাইনরিটি বা হিন্দুদের কৌশল। অবিরাম সোচ্চার থাকাটাই আমাদের আন্দোলন। বাংলাদেশের মিডিয়ার ৯০ শতাংশই আমাদের প।ে চিৎকার না করলে আমরা ৩০-৪০ শতাংশ সুবিধা কেমন করে পাবো। অঙ্কের হিসাবে তো আমরা ১০ শতাংশও পাই না। সে জন্যই আমরা মাইনরিটি মানসিকতার সরকার চাই। যারা বাঙালি বাঙালি চিৎকার করে পাকিস্তান ভেঙেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বাঙালি বাঙালি করছে। আমরাও চাই তারা বেশি বেশি করে বাঙালি বাঙালি বলে চিৎকার করুক। এখন তাদের লাগিয়ে দিয়েছি মৌলবাদ, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, পাকিস্তানি বলে চিৎকার করার জন্য। কিছুুতেই যেন ইসলাম আর মুসলমান বিষয়টা সামনে আসতে না পারে। আর নানাভাবে সাহায্য করার জন্য কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন ও ভারত সাথেই আছে।
এক হিন্দু সাংবাদিক বন্ধু বলল, আমি জানি, আপনি একজন ভালো মানুষ। আপনি মুসলমান আর ইসলামের স্বার্থে কথা বলেন ও লেখেন। এটি আপনার ন্যায্য অধিকার। কিন্তু আমরা আপনাকে মৌলবাদী, জঙ্গি বলে গালাগাল করব। ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামকে দেখতে পারে না। ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলেছে। আপনি মেজরিটি হলে কী হবে? এ রাষ্ট্রটা তো মেজরিটি মানুষের চিন্তাচেতনার পে নয়।
ঠিক বলেছ ভাই, ইসলাম ধর্মে বাদশাহী নেই। তবুও কোনো কোনো দেশে বাদশাহী আছে। এটি ইসলাম ও মুসলমানদের দুর্ভাগ্য। বাদশাহ আওরঙ্গজেবকে লেখকেরা সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আহমদ শরীফ বলছেন, বাদশাহ আওরঙ্গজেবের ছয়জন সেনাপতির মধ্যে চারজনই ছিলেন হিন্দু। তার দরবারের উচ্চপদে ৩০-৪০ শতাংশ হিন্দু কর্মচারী ছিলেন। তা সত্ত্বেও এখনো ভারতের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে তার নিন্দা করে গল্প ছাপা হয়। সরকারি নির্দেশেই এসব কাজ হচ্ছে।
বাংলা কেন ভাগ হয়েছে তার ওপর গবেষণা করে বই লিখেছেন জয়া চাটার্জি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, সাধারণের ধারণা বা বিশ্বাস হচ্ছে, বাংলাকে ভাগ করেছে মুসলমানেরা। জয়া চাটার্জি প্রমাণ করেছেন ওই ধারণা বা বিশ্বাস একেবারেই মিথ্যা। এ জন্য তিনি দলিল দস্তাবেজ পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যে কারণে ভারত ভাগ হয়েছে ঠিক একই কারণে বাংলা ভাগ হয়েছে। বাংলা বা পাঞ্জাবে মুসলিম মেজরিটি ছিল। স্বাভাবিকভাবেই পুরো পাঞ্জাব ও বাংলা পাকিস্তানের সাথে যাওয়ার কথা। দুটো রাজ্যকে ভাগ করা হলো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে মুসলিম মেজরিটির থিওরি কাজে লাগেনি। কংগ্রেসই এ দুটো রাজ্য বা প্রদেশকে ভাগ করেছে। অখণ্ড বাংলাদেশ স্বাধীন হতে চেয়েছিল একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে। কিন্তু নেতারা রাজি হননি। হিন্দু নেতারা রাজি হলে ৪৭ সালে বাংলাকে ভাগ করে দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের কাছে বিতরণ করা হতো না। জয়া চাটার্জি তার গবেষণায় বলেছেন, মুসলিম লীগ নেতারা পাকিস্তান প্রস্তাব তুলত না যদি কংগ্রেস নেতারা সাম্প্রদায়িকতার পথ অবলম্বন না করতেন। কংগ্রেস নেতারা যদি ভারতকে কনফেডারেশন করতে রাজি হতেন, তা হলে পাকিস্তান হতো না। জয়ার মতে, পাকিস্তান প্রস্তাব ছিল শক্ত দরকষাকষির একটি হাতিয়ার। গান্ধীজী আর নেহরু যদি মুসলমানদের ন্যায্য দাবি মানতেন তা হলে ভারত আজ অখণ্ড থাকত। অথচ মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা এতই শক্তিশালী যে, ভারত বিভাগের সব অপরাধ বা দোষ চাপানো হয়েছে মুসলমানদের ওপর।
কিছু হিন্দু নেতা আজো মনে করেন, ভারত শুধু হিন্দুদের। তা-ও আবার উচ্চবর্ণ হিন্দুদের। ভারতে ৩০ কোটি অচ্ছুত/হরিজন/শূদ্র রয়েছে। ধর্মীয়ভাবেই তারা অর্ধমানব। তাদের কাজ হচ্ছে উচ্চবর্ণের হিন্দু ও তাদের সহযোগীদের সেবা করা। ভারতে রয়েছে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। তাদের ভারত ছাড়া করেছে হিন্দু রাজারা। আরো আছে শিখ, জৈন ও বিভিন্ন ধরনের অবহেলিত জাতি। সোয়া শকোটি ভারতবাসীর মধ্যে ৩০ কোটি বর্ণ হিন্দু, ৩০ কোটি মুসলমান। তবুও ভারতের পরিসংখ্যান বলে, ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটির বেশি নয়। ভারতের জাতীয় সম্পদের শতকরা এক ভাগের মালিকও মুসলমানেরা নয়। ভারতীয় জীবনে মুসলমানদের উপস্থিতি এক ভাগও নেই।
ভারতীয় জীবনে বা শাসনে ধর্মের প্রভাব খুব গভীর। বর্তমান হিন্দু ধর্ম একটি বর্ণবাদী ধর্ম। এতে মানুষ হলো রাজা আর যাজক। এ অবস্থা এক সময় ব্রিটেন ও ইউরোপেও ছিল। এটি ছিল যাজক আর রাজা বা রাজন্যবর্গের একটা মোর্চা। এর ল্য ছিল, গণমানুষকে শোষণ করা। ভারতে এ শোষণ এখনো খুবই শক্তিশালীভাবে অব্যাহত আছে। ভারতের বাহ্যিক রূপ হলো তথাকথিত ধর্মনিরপেতা, প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা। এর অন্তরের রূপ হলো হিংস্র বর্ণবাদ। এই বর্ণবাদে প্রকাশ্যে মানুষকে দাস বানানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলই কথা বলে না। যেমন হিন্দু কমিউনিস্টরা বর্ণবাদে বিশ্বাস করেন,পূজা করেন, মন্দিরে যান। আবার গণমানুষের কথাও বলেন। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পিতা মুজাফফর আহমদের স্মৃতিকথা পড়ার জন্য অনুরোধ করব। ভারতের নেতাদের কাছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানবতা ইত্যাদি শুধু বুজরুকি। ধর্মীয়ভাবেই তারা সাম্পদায়িক ও মৌলবাদী। তারা ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র মনে করে। এ ব্যাপারে আপনাদের পণ্ডিত অম্বেদকারের জীবনী পড়ার অনুরোধ জানাব। তবে ভারতের মৌলিক ধর্মগ্রন্থ একেশ্বরবাদ ও এক অবতার /নবী /রাসূলে বিশ্বাস করে। পরে রাজা আর সুবিধাভোগী যাজকেরা কিতাবগুলোতে নিজেদের সুবিধামতো শ্লোক সংযোজন করেছে, যা আল কুরআনের পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে সংযোজিত হয়েছে। ওই সব অনাচারের কারণেই আল্লাহ পাক শেষ নবী মুহাম্মদ সা: ও শেষ কিতাব প্রেরণ করেছেন।
পণ্ডিত িিতমোহন সেন তার হিন্দুইজমবইতে বলেছেন, হিন্দুইজম কোনো ধর্ম নয়। এটি ভারতবাসীর জীবনধারা ও সংস্কৃতি। এখানে এক কিতাব বা এক নবী/দূত নেই। ফলে পাঁচ হাজার বছর ধরে বহু মুনি ঋষি অবতার নানা গ্রন্থে নানা নিয়ম রেখে গেছেন। প্রাচীন কাব্যগুলোও এখানে ধর্মগ্রন্থ বা অনুকরণীয় পুস্তকে পরিণত হয়েছে। সুপ্রাচীনকালে ভারত কখনো একটি দেশ বা রাজ্য ছিল না। ভারত প্রধান দুটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, যা এখনো অদৃশ্যভাবে আছে। উত্তরে আর্যাবর্ত ও দেিণ দাণিাত্য। উত্তরে ছিল আর্য ধর্ম বা সংস্কৃতি আর দেিণ ছিল দ্রাবিড় ধর্ম বা সংস্কৃতি, যা আজো পুরোপুরি মিশে যেতে পারেনি। তাই হাজার হাজার বছর ধরে এখানে বহু রাজ্য আর বহু ধর্ম চলে আসছে। সব রাজ্যকে এক করে একটি কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন মুসলমান শাসকেরাই। হিন্দু বা হিন্দুস্থান নামটিও দিয়েছে বিদেশীরা। আজ যে ভারত/ইন্ডিয়া/হিন্দুস্থান আমরা দেখছি, তা মুসলমানদের তৈরী। জাতপাতের কারণে এ দেশের লোকেরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।
ভারত বিষয়ে ভারততত্ত্বনামে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেছেন মহাজ্ঞানী আলবিরুনি আরবি ভাষায় ১০৩১ সালে। এখন এই বই পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন প্রফেসর আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ। বাংলা একাডেমি প্রথম প্রকাশ করেছে ১৯৭৪ সালে। আলবিরুনি বলেছেন, শিতি হিন্দুরা একেশ্বরবাদী। ব্রাহ্মণরা নিজেদের প্রভুত্ব বজায় রাখার জন্য শাস্ত্রবিধান তৈরি করে জনসাধারণকে বিদ্যা ও ধর্মজ্ঞান লাভে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভারতে মূর্তিহীন একেশ্বরবাদ ছিল। কালক্রমে তা বিলীন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক জোট বা মোর্চা গঠন করেছেন ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। এদের কাছে ইসলামের নানা রূপ। ইদানীং শুনি পলিটিক্যাল ইসলামের কথা। আরেক গ্রুপ বলেন শরিয়তি ইসলাম, আবার কেউ বলেন মারফতি ইসলাম। ইসলামের কিছুই জানেন না, এমন লোকও ইসলাম নিয়ে কথা বলেন। আসলে এরা জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভারত ও ইসলামবিরোধীদের সমর্থন নিয়ে মতায় থাকতে চান।


 এরশাদ মজুমদার

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads