রবিবার, ১৮ মে, ২০১৪

মোদির ভারত কি পৌঁছুবে নতুন উচ্চতায়?


সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটিয়ে দিল্লির মসনদে এখন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে পেয়েছে ৩৩৯টি আসন, যার মধ্যে বিজেপির আসন ২৮৪টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭২টি আসন। অপর দিকে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পেয়েছে মাত্র ৫৮টি আসন, যার মধ্যে কংগ্রেসের নিজস্ব আসন ৪৪টি। বাদবাকি ১৪৬টি আসন পেয়েছে অন্যান্য দল, যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসে ৩৪ ও এআইএডিএমকে দলের ৩৬টি আসন। এমন বিজয় বিজেপি আর কখনোই দেখেনি। উল্টো দিকে এমন পরাজয় কংগ্রেসও আর কখনো দেখেনি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নেহরু-গান্ধী পরিবার কংগ্রেসের মাধ্যমে দেশটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অবশ্য কয়েকবার দলটির নির্বাচনী পরাজয়ও ঘটেছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনের মতো চরম পরাজয়ের মুখে কংগ্রেসকে কখনোই পড়তে হয়নি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের মাত্রাটা এতই চরমে পৌঁছেছে যে, কংগ্রেসের বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। লোকসভা নির্বাচনে ১০ শতাংশ অর্থাৎ অন্তত ৫৪টি আসন পেতে হয় বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে। সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৪৪টি। বিজেপি ছাড়া আর একটি দলও এই ৫৪ আসনের সীমা পার হতে পারেনি। ফলে বলা হচ্ছে, এবারের লোকসভায় ভিন্ন ধরনের এক বিরোধী দল দেখা যেতে পারে। প্রতিটি দলের নিজস্ব নেতা থাকবেন। যদিও ভারতের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কর্তাব্যক্তির নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় নেতার মতামত জরুরি। তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এর ফলে এবার বিরোধী দলের নেতা বানানোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন করা হতে পারে।

ঘটনা যাই হোক, ভারতের শাসন ক্ষমতায় এখন নরেন্দ্র মোদি ও তার উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। বৃহত্তর পরিসরে বলা যায়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ তথা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স এখন ক্ষমতায়। এ জোটের নামের দিকে নজর দিলে এটি বলা ভুল হবে না এটি একটি গণতান্ত্রিকজোট। কারণ জোটের নাম ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স। অতএব আশা করা যায়, নরেন্দ্র মোদি এনডিএ নামে এই গণতান্ত্রিক জোটের নেতা হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনেই ভারতকে পরিচালনা করবেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারতকে চ্যাম্পিয়নের আসনে বসাবেন নরেন্দ্র মোদি এটাই তো সে দেশের বিবেকবান সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। ভারতের বাইরে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের চাওয়া তো এ থেকে ভিন্ন কিছু নয়। ভারতের কাছে প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষের চাওয়াও তাই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দিল্লির মসনদে আসীন নরেন্দ্র মোদি কি পারবেন দেশের ভেতরের ও বাইরের মানুষের এই নির্দোষ চাহিদা পূরণ করতে? পারবেন কি তাদের আশা-আকাক্সার প্রতিফল ঘটাতে? পারবেন কি ভারতের অতীত সরকারগুলোর গণতান্ত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে? পারবেন কি ভারতের সরকারগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সূত্রে সৃষ্ট ক্ষতগুলো সারাতে? পারবেন কি মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার অতিশয় কঠোর ও নির্মম ড্রাকোনিয়ান আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টবাতিল করতে? মোদি কি পারবেন ইতিবাচকতাকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে পৌঁছাতে? পারবেন কি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করাকে প্রধান বিবেচ্য করে তুলতে?

মোদি যদি সত্যি সত্যি ভারতের জনগণের এই নির্বাচনী রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে আন্তরিক হন, এবং সেই আন্তরিকতা সূত্রে এক নতুন ভারত গড়তে চান, ভারতকে বিশ্ব সমাজে মর্যাদার আসন দাঁড় করাতে চান, সমৃদ্ধ ভারত গড়া নিশ্চিত করতে চান, ভারত সব ভারতীয়ের জন্য বলে প্রমাণ করতে চান তবে তার আশু করণীয় মাত্র দুটি : তার নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নামের প্রতি সম্মান দেখিয়ে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে যেমনি কোনো আপস করবেন না, তেমনি মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারেও কোনো আপস করবেন না। অর্থাৎ তার সামনে বিবেচ্য মাত্র দুটি : গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। দেশ চালাতে হবে শুধু এ দুটি বিষয় মাথায় রেখে। যেকোনো মূল্যে এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করা চাই। কারণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার যে দেশে নিশ্চিত, সে দেশে অন্য কোনো সমস্যাই বাধা হয়ে আসতে পারে না। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি গণতান্ত্রিক তথা জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের অনুষ্ঠিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে সে দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। আর এই স্থিতিশীলতাই একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগমনসহ সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। তখন মানুষ দেশের উন্নয়নে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পায়।

বিজেপি যখন ক্ষমতায় আসীন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় এসেছে হিন্দুত্ববাদের প্রসঙ্গটি। কারণ বিজেপি একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বলেই সাধারণ্যে পরিচিত। কী আছে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদে? বলা হয় এই হিন্দুত্ববাদীদের বিশ্বাস : পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ (যার মধ্যে ভারত ছাড়া অন্যান্য প্রতিবেশী দেশও আছে) হিন্দুদের হোমল্যান্ড; হিন্দু তারাই যারা ভারতকে তাদের পিতৃভূমি ও পুণ্যভূমি বলে বিশ্বাস করে; এরা ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী, বিরোধী কমিউনিজমের। এরা চায় একটি হিন্দু জাতিরাষ্ট্র গঠন করতে। এদের দাবি ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ করতে হবে। এরা প্রতিষ্ঠা করতে চায় হিন্দু জাতীয়তাবাদ। হিন্দুস্থানে কেবল হিন্দুদের নিয়েই জাতি গঠন হবে। হিন্দুদের নিয়ে তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণা আর আশা-আকাক্সা হবে জাতি গঠনের ভিত্তি। এরা হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ভারতে গড়ে ওঠা ধর্মনিরপেক্ষ জাতি বা জাতীয়তাবাদ হিন্দুত্ববাদীরা প্রত্যাখ্যান করে। তাদের দাবি ভারতের বিদ্যমান সংবিধানকে প্রত্যাখ্যান করে আইন হিসেবে (প্রাচীন হিন্দু ধর্মের) মনুর বিধান চালু করতে হবে। এরা ভারতের ফেডারেল কাঠামোকে ঘৃণার চোখে দেখে। ভারতের মূল সংবিধানে আছে, ফেডারেল কাঠামো ভারত রাষ্ট্রের এক মৌল বৈশিষ্ট্য। এরা বিরোধিতা করে হিন্দুত্ববাদীদের বিশ্বাস, ফেডারেল ধরনের সরকার বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিই শুধু জন্ম দিচ্ছে না, এটাকে লালনও করছে। ভারতের একক জাতিত্বকে তথা হিন্দুত্বকে এটি ধ্বংস করছে। অতএব ফেডারেল ব্যবস্থা উপড়ে ফেলে এর জায়গায় ইউনিটারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি ও বিশ্বাস সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধানের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদিকে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স নামের ডেমোক্র্যাটিকশব্দটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ডেমোক্র্যাটিকহতে হবে। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদীদের দাবি গণতন্ত্রের সাথে যতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ, ঠিক ততটুকু মানা যেতে পারে। গণতন্ত্রের একটা সীমা-পরিসীমা আছে। এর বাইরে গেলে মোদির নেতৃত্বাধীন দল জোটকে ও নিজে মোদিকে গণতান্ত্রিক মর্যাদা হারাতে হবে। ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সহারাবে এর নামের সার্থকতা। অতএব হিন্দুত্ববাদের সমস্যা মোকাবেলায় গণতন্ত্রকেসবার ওপরে স্থান দিতে হবে। আর গণতন্ত্রে মানবাধিকারপ্রসঙ্গটি আসে অবধারিতভাবে। সে জন্যই বলছি নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে পৌঁছাতে চান, তবে তার আশু করণীয় হবে ভারতে গণতন্ত্রমানবাধিকারনিশ্চিত করা। লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থনের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে মোদির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। মোদিকে ভুললে চলবে নাÑভারতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের গায়ে অতীতে পড়া ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলতে পারলে এবং আগামী দিনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করায় সতর্ক থাকলেই কেবল এ কাজটি সম্পন্ন হবে না।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট (এএফএসপিএ)। এ আইনটি প্রণীত হয় ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট। নাগা হিলসের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে সেনা মোতায়েনের লক্ষ্যে এ আইনটি চালু করা হয়েছিল। এখনো এই আইন ভারতের পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যে কার্যকর। এ আইনের একই ধরনের সংস্করণ ব্যবহার হচ্ছে পাঞ্জাব ও জম্মু কাশ্মিরে। এএফএসপিএ ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীকে টুনকো অজুহাতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নামে গুলি করে মানুষ হত্যা, গ্রেফতার, পরোয়ানা ছাড়া যেখানে-সেখানে সার্চ করা এবং বাড়িঘর ও অন্যান্য অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়ার অবাধ ক্ষমতা দিয়েছে। ক্ষমতা দিয়েছে যাকে-তাকে নির্যাতনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের। এ নির্যাতনের ধরন-ধারণ থেকে অনুমান করা যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মনিপুরে ভারতীয় সৈনিকদের হাতে নির্যাতিত ১৪ বছরের এক বালকের ভাষ্যে : এরা আমার নাক দিয়ে পানি ঢুকাতে থাকল, যতক্ষণ না কান দিয়ে পানি বের হলো। এর ফলে কানের ভেতর গরম অনুভব করি। এরপর আমার দুই ঊরুতে সজোরে পদাঘাত করতে লাগল। দুইজন ধরে রাখল আমার পা। আরেকজন বসল আমার মাথায়!... এরা আমার বুকের শেষ দিকটায় বিদ্যুতের তার ছোঁয়ালো। এভাবে শক দেয়া হলো তিনবার। প্রতিবারই মনে হয়েছে, আমার সারা শরীর যেন সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আমার মনে আছে, এরা কিভাবে আমাকে পেটাত। আমার ওপর কী করা হয়েছে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

এই আইনটি চালু হওয়ার পর থেকে সাড়ে পাঁচ দশক ধরে আইনটির দেয়া বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে ভারতীয় সৈনিকেরা ভারতীয় নাগরিকদের ওপর ধর্ষণ, হত্যা, গুম ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে কোনো শঙ্কা ও জবাবদিহিতা ছাড়াই। এই আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই আইন ভারতীয় নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার; যখন-তখন গ্রেফতার-আটক থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার; নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক কিংবা অপমানিত হওয়ার হাত থেকে মুক্ত থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ আইনের সুযোগে ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মিরের গ্রামে সারা রাত ধরে মুসলমান মেয়েদের ওপর গণহারে ধর্ষণের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এসবের প্রতিকার পাওয়ার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে এই আইন। প্রতিকারহীন এসব ধর্ষিতা মায়ের কান্না আজো থামছে না।

এই আইনের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ সৃষ্টি করা। আইনটির ভিত্তি ১৯৪২ সালে জারি করা একটি ব্রিটিশ অধ্যাদেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের লক্ষ্য নিয়ে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। এরই আদলে ভারত সরকার একটি নতুন অর্ডিন্যান্স জারি করে ১৯৫৮ সালের মে মাসে। এটি পার্লামেন্টে গৃহীত হয় এ বছরের ১৮ আগস্ট। প্রেসিডেন্ট এতে সম্মতি দেন ১১ সেপ্টেম্বর। তখন এ আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া উদ্বিগ্ন আইনপ্রণেতারা ভারত সরকারকে সতর্ক করেছিলেন, এই আইনের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন আসন্ন। তখন মনিপুরের পার্লামেন্ট সদস্য লেইশরাম অ্যাচো সিং এই আইনকে ল লেস লনামে অভিহিত করে বলেছিলেন ‘এ আইন শুধু নির্দোষ লোককে হয়রানি করবে এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাবে।

প্রথম দিকে এই বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা হয় শুধু উত্তর-পূর্বের আসাম ও মনিপুরে। উদ্দেশ্য সশস্ত্র নাগা বিদ্রোহী দমন। ১৯৭২ সালে এই আইন সংশোধন করে এর প্রয়োগ ক্ষেত্র এ অঞ্চলের সাতটি নতুন রাজ্যের সব কটিতে সম্প্রসারিত করা হয়! এগুলো সাত বোন বা সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত। এগুলো হচ্ছে আসাম, মনিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও অরুনাচল প্রদেশ। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবে বিদ্রোহ দমনে এই আইন প্রয়োগ করা হয়। এ আইনের একটি সংস্করণ ১৯৯০ সাল থেকে কার্যকর আছে জম্মু ও কাশ্মিরে। কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার যে রাজ্যকে ডিস্টারবডবলে ঘোষণা করবে, সেখানেই এই আইন কার্যকর করা যাবে। এ ঘোষণার বিচারিক পর্যালোচনার কোনো সুযোগ নেই। 

আইনটি উল্লিখিত রাজ্যগুলোতে কী ধরনের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে, কী ধরনের অমানবিক হত্যা, নির্যাতন, গুম চলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী সে লম্বা কাহিনীতে যাওয়ার অবকাশ এ লেখায় নেই। শুধু এটুকু বলতে চাই, এই আইন রেখে নরেন্দ্র মোদি ভারতে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন না। সেই সাথে পারবেন না গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেও। অতএব, ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে পৌঁছাতে হলে তার জন্য প্রেসক্রাইব করছি অপরিহার্য দুটো বড়ি : গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। এ দুই বড়ি খাওয়া নিশ্চিত করলেই কেবল মোদি আজকের জনরায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে পারবেন। তা করতে ব্যর্থ হলে নিশ্চিত হবে ভারতের পিছিয়ে পড়া।

নরেন্দ্র মোদিকে মনে রাখতে হবে ভারতীয় জনগণ চায় ভারত হোক এ অঞ্চলের মর্যাদাশীল এক গণতান্ত্রিক শক্তি, এর বিকাশ ঘটুক একটি পরাশক্তি হিসেবে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাড়ক এর ভূমিকা। BRICS, CHOGM, ASEAN, IBSA, SAARC, NAM, IOCARC-সহ এমনি আরো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারত পালন করুক আরো জোরালো ভূমিকা। ভারতের লোকজন ভারতকে দেখতে চায় জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি স্থায়ী সদস্য দেশ হিসেবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই শুধু ভারতকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে মর্যাদার সেই উচ্চ আসনে। নইলে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) একটি সন্ত্রাসী বাহিনী আখ্যায়িত এর এক সদস্যকে কানাডা ভিসা দিতে অস্বীকার করার মতো আরো অনেক লজ্জাকর ঘটনা ঘটতে পারে ভারতের কপালে।

গোলাপ মুনীর


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads