শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

ভারতের প্রতিবেশীরা কেউ সুখে নেই


এরশাদ, তুমি কি ল করেছ কত মৌলিক বিষয়ে বাংলাদেশে দ্বিমত বা ত্রিমত কেমন শক্তিশালী খরস্রোতা নদীর মতো বয়ে চলেছে। কেন এমন হচ্ছে ভেবে আমি দুঃখ ও বেদনায় কাতর হয়ে যাই। যেমন ধরো, বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না? ২৫ মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছেন। তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতেই ছিলেন। হয়তো তার কাছে খবর ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করবে। অথবা তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে লিখিতভাবেই অনেকের মতামত জারি রয়েছে।
আমি এর আগে বহুবার বলেছি, বঙ্গবন্ধু আমাদের অবিসংবাদিত নেতা। তার ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে বারবার বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। তারা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিপ বা প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলছে। এটা এখন আওয়ামী লীগের মজ্জাগত হয়ে গেছে। কিন্তু কারা এসব করাচ্ছে? শেখ হাসিনা কি ব্যাপারটা বুঝতে পারেন? না, আমার মনে হয় না। জিয়া ৪০০ টাকার মেজর ছিলেন। সবাইকে স্যালুট দিতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন পাকিস্তানি দালাল হিসেবে। এসব আজেবাজে কথা আওয়ামী লীগ নেতারা কেন বলেন, কে তাদের দিয়ে এসব কথা বলায়? বললে কী লাভ হয়?
ফলে ভিন্নমতের লোকেরা বলছে বঙ্গবন্ধু কখনোই স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেকোনোভাবেই হোক পাকিস্তান টিকে থাকুক। তিনি কনফেডারেশন চেয়েছিলেন। তিনি যে অখণ্ড পাকিস্তান চেয়েছিলেন তার ভূরি ভূরি প্রমাণ এখন চার দিক থেকে আসতে শুরু করেছে। দেশে ফিরে ১০ জানিয়ারি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে, এখন আর কিছু করার সুযোগ নেই। ভুট্টো সাহেব আপনারা সুখে থাকুন। পাকিস্তান থেকে লন্ডনে পৌঁছে তিনি কী বলেছিলেন তা সিরাজুর রহমানের লেখায় বারবার প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতে এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি, কোনো ধরনের বিতর্কও সৃষ্টি করেননি। তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ এই বিতর্ক তুলেছে একেবারেই মিথ্যার ওপর ভর করে।
বুঝলে আশি, এর আগে আমি বহুবার লিখেছি, বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি তো ৭০-৭১-এ এ দেশের একমাত্র নেতা। তার কথায় সব চলত। কারণ তখন তিনিই একমাত্র জনপ্রতিনিধি। নেতৃত্ব দেয়ার একমাত্র বৈধ ব্যক্তিত্ব। সে নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র না হলে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন। সে জন্য তিনি এবং তার দলের নেতারা ২৪ মার্চ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে গেছেন। কী আলোচলা করেছেন তা কিন্তু আওয়ামী নেতারা আজো প্রকাশ করেননি। শেষ পর্যন্ত কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল? এসব কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখনো জানে না। অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধু কনফেডারেশন করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কোনো কথাই শুনতে রাজি নয়। বঙ্গবন্ধু জীবিত নেই, তাই তারা তার নামে যা ইচ্ছে তাই চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চলমান আওয়ামী নেতৃত্বের ব্যক্তিত্ব না থাকার ফলে তারা সব কিছুতেই দিল্লি নির্ভর হয়ে থাকেন। তারা মনে করেন এবং বিশ্বাসও করেন যে, ভারত বিশেষ করে কংগ্রেসের অন্ধ সমর্থন না থাকলে মতায় আসা যাবে না বা থাকা যাবে না। হয়তো দিল্লির কোনো শক্তি তাদের ভয় দেখায় বাব্ল্যাকমেইল করে। দিল্লির সাথে থেকে বা অনুগত হয়েও নেপালের রাজপরিবার বাঁচতে পারেনি। সিকিম তার স্বাধীনতা রা করতে পারেনি। লেনদুপ দর্জি আজ একজন বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত। শ্রীলঙ্কা বহু বছর ভারতের সাথে সমঝোতা করে চলতে চেয়েছিল। পারেনি, শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে কোমর শক্ত করে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হয়েছে। মালদ্বীপকে ভারত সব সময় নানা রকম ভীতির ভেতর রেখেছে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তান আমল থেকে অশান্ত করে রেখেছে ভারত। এই হলো আমাদের প্রতিবেশী ভারতের চেহারা। তেমনি একটি দেশের সাথে চলমান সরকার গাঁটছড়া বেঁধেছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু জোর করে মতায় থাকার জন্য।
তুমি কি শুনেছ আশি, তাজউদ্দীনের আমেরিকার বাসিন্দা বড় মেয়ে  শারমিন আহমদ তাজউদ্দীনকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যাতে অনেক না জানা ও অজানা কথা প্রকাশ করেছেন। এই বইতেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। বরং ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাবকে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এই ঘোষণা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগকে শক্তিশালী করবে। ওই বইতেই বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনীর লোকেরা তাজউদ্দীনকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শেখ মনির নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়নি। ওটা ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী র-এর একটি কৌশল। এর আগে দৈনিক প্রথম আলোর বাণিজ্যিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথমা থেকে প্রকাশিত বইতেও বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এ বিষয়ে শারমিন আহমদের ভাষণের একটি ভিডিও এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
যেভাবেই হোক, বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন দেশ। এটাই বাস্তব এবং সত্য। ৪৩ বছর পরেও ঘোষণা নিয়ে তর্কবিতর্ক করে আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের স্বাধীনতাকেই বিতর্কিত করে তুলেছেন। তবে স্বাধীনতার পর তাজউদ্দীনের এমন অবস্থা হলো কেন? কেন বঙ্গবন্ধুর সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হলো? যে মানুষটির নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হলো, সে মানুষটি কী কারণে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেল। এ ব্যাপারে অবশ্য শারমিন আহমদের নিজস্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে। সেসব ব্যাখ্যা তিনি তার বইতে দিয়েছেন। এর আগে তাজউদ্দীনের ছেলে সোহেল তাজকে নিয়ে সরকার অনেক নাটক করেছে। সোহেলের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সরকার বহু লুকোচুরি করেছে। শেষ পর্যন্ত সোহেল জাতীয় সংসদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। তাজউদ্দীন একজন মেধাবী ছাত্র ও বিদ্বান মানুষ ছিলেন। তারই বুদ্ধি পরামর্শকে বঙ্গবন্ধু খুবই গুরুত্ব দিতেন। বড়ই বেদনার বিষয়, এমন মানুষটি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারলেন না। শারমিন আহমদ অতি বেদনা ও ােভ থেকেই বইটি রচনা করেছেন। তার বাবা একজন রাজনীতিক ছিলেন। ফলে রাজনীতির অন্দর মহলের অনেক কথা এসেছে। অনেক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ও এসেছে। যে মানুষটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে ও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সে মানুষটা এখন পর্দার অন্তরালে। শারমিন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কখনোই নয় মাসের কথা বা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে চাননি। এতে তাজউদ্দীন অবাক হয়েছেন। হয়তো বঙ্গবন্ধু শেখ মনির কাছ থেকে সব জানতে পেরেছিলেন।
তবে গবেষকেরা বলেন, কেউ চাক বা না চাক ভারত একদিন পাকিস্তানকে ভাঙতই। ৪৭ সালেই ভারতের নেতারা পরিকল্পনা নিয়েছেন পাকিস্তান ভাঙার । ভারতের নেতারা এখনো পাকিস্তানের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। মোম সময় ছিল ১৯৭১ সাল। শেখ সাহেব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এমন কী তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরও পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কী হবে তা বলে যাননি। তাজউদ্দীন অনুরোধ করেছিলেন ঘোষণা দিতে, দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে তার অনুপস্থিতিতে, যিনি দলকে বা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী আওয়ামী লীগ একটি মিথ্যা ইতিহাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমার এক গবেষক বন্ধু বললেন, বাংলাদেশ এখন যারা চালাচ্ছেন তাদের আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, দেখতে পাচ্ছেন তাদের ছায়া। ছায়ার তো কোনো স্বাধীনতা থাকে না। কায়া যা চাইবে তাই হবে। অখণ্ড বঙ্গদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০ ভাগ। মুসলমান ছিল ৫৫ ভাগ। বাকি ১৫ ভাগ ছিল বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শিখ ও হরিজন। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৮০ ভাগ ছিল মুসলমান। এখন ৯০ ভাগ মুসলমান। শিতি হিন্দুদের বেশির ভাগ দেশত্যাগ করে ভারত চলে গেছেন। মুসলমানেরা অখণ্ড বঙ্গদেশ চেয়েছিলেন, কিন্তু হিন্দু নেতারা রাজি হননি ধর্মীয় কারণে। অখণ্ড বঙ্গদেশে মুসলমানেরা ছিলেন মেজরিটি। পরপর তিনজন প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন মুসলমান। দিল্লি বা কলকাতার বাবুরা মুসলমান শাসিত অখণ্ড বাংলাদেশ চাননি। ফলে ভারত বিভক্তির সাথে বঙ্গদেশও ভাগ হয়ে গেল। ঢাকায় বসে যারা দিল্লির পদ্মভূষণ গ্রহণ করছেন তারাও ৪৭ সালে দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসে এখানে সম্মানিত হয়েছেন, নিজেদের প্রাণ রা করেছেন। এরাই বলে থাকেন ৪৭ সালের দেশ বিভাগ ভুল ছিল। কেন তারা এ তত্ত্ব পেশ করছেন তা তারা ভালো জানেন। ৪৭-এর পর থেকে দিল্লি সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি জানি না। মুসলমানদের প্রতি তাদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বেনিয়া ব্রিটিশদের আগমনের আগে শত শত বছর ধরে ভারতে হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি অবস্থান করেছে। কোথাও সমস্যা হয়নি। ব্রিটিশ আমলেই সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পায়। এখনো ভারতে প্রতি বছর কয়েক শদাঙ্গা হয়। এ ব্যাপারে শৈলেশ ব্যানার্জির দাঙ্গার ইতিহাস বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ জানাব। যদিও লেখক নিজেও ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কিছুটা পপাত দোষে দুষ্ট ছিলেন। তবুও বইটাতে অনেক তথ্য আছে। হিন্দু মুসলমান ছাড়াও দাঙ্গা হয়। তথাকথিত ভারত সেকুলার ভারত দাঙ্গা কখনোই বন্ধ করতে পারেনি। ৪৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোনো দাঙ্গা হয়নি। যা হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে। প্রায়ই দেখবেন, হিন্দু মন্দির বা বৌদ্ধদের টেম্পল আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু ফেসবুকের গুজব নিয়েও নাকি হিন্দু বা বৌদ্ধদের আক্রমণ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই অসাম্প্রদায়িক। মুসলমানদের ভেতর অছ্যুত বিষয়টি নেই। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লেই বুঝতে পারবেন তার বাল্যকালে গোপালগঞ্জের হিন্দুরা কেন সাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনি তো প্রথমবার জেলে গিয়েছেন হিন্দু বন্ধুর গায়ে হাত তুলে।
৪৯ সালের জুন মাসে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারি মুসলিম লীগের গণবিরোধী ভূমিকার কারণে। ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হলে পরবর্তীপর্যায়ে মুসলিম শব্দ বাদ দিলে কংগ্রেস ও বামপন্থী বেশ কিছু নেতা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ল। ৭০ সাল পর্যন্ত আমরা এ দলটিকে আমেরিকার দালাল বলতাম। সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দলটি আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতি সমর্থন করতে থাকে। সেটা ৭০ সাল নাগাদ জারি থাকে। ৭২ সালে হঠাৎ আওয়ামী লীগ মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। কালক্রমে আওয়ামী লীগ একটি পুরো ভারতপন্থী দল হয়ে ভারতীয় কংগ্রেসের ছায়াতে পরিণত হয়।
৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পতনের পর থেকেই দলটি দিল্লির খপ্পরে পড়ে গেছে। বিশেষ করে ৭৫ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত দলটির নেতৃত্ব দিল্লিতে অবস্থান করে মহাভারতের আদর্শে দীা লাভ করেছেন বলে অনেকেই অনুমান করেন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের মিলিটারি সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকারের মতা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের উপস্থিতি প্রকাশ্য হয়ে গেছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রমাণ করেছে ভারত এখন বাংলাদেশের টুঁটি চেপে ধরেছে। ২০০৭ সালে কাঁধে দাঁত বসিয়েছিল, এখন গলায় । যেমন করে বাঘ বা সিংহ হরিণকে কাবু করে।
শারমিন আহমদের পুরো বই-ই একটা অভিযোগের বই। এতে আক্রমণের প্রধান শিকার বঙ্গবন্ধু। বইতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কখনোই আগ্রহ দেখাননি।
আশি, যে বিষয় নিয়ে তুমি কথা শুরু করেছিলে তা হলো বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও নেতাদের কে বা কারা অবিরামভাবে বিতর্কিত করে তুলছে। আওয়ামী লীগের চাটুকারেরা শেখ হাসিনাকে চার দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। দেশবাসী জানে  শেখ হাসিনার মতা একজন সম্রাটের মতা। তিনিই সংবিধান, তিনিই সংসদ, তিনি একাই ১৬ কোটি মানুষ। এ মতা তাকে দিয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান।  বাকশালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে যে মতা দেয়া হয়েছিল, তা পরে সব প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ব্যবহার করে চলেছেন। এ দেশে গণতন্ত্র আর সংসদ মানে একজন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান। একটি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের সংশোধন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জাতীয় ঐকমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বেই একটি জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সংসদে এক সিট বা আসন বেশি পেলে সেই দলের নেতাই রাজা এ ব্যবস্থাকে রহিত করতে হবে। জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ মেজোরিটি থাকলেই মৌলিক বিষয়ে সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা রহিত করতে হবে।
২০০৮ সালে একটি অবৈধ সরকার একটি ফালতু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে মতায় বসিয়ে গেছে। মইনউদ্দিন আর ফখরুদ্দীনের সরকার ছিল একটি অবৈধ সরকার, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। কেন তারা মতা দখল করেছিল তা এখন দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। একটি বিষয় আমি বহুবার বলেছি যে, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ টিকে থাকার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ইসলাম। কারণ, এ দেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগ মুসলমান। এই ৯০ ভাগের কথামতোই দেশ চলবে। ৯০ ভাগের আশা-আকাক্সাই প্রতিফলিত হবে দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও দর্শনে। কিন্তু তা হচ্ছে না। আগেই বলেছি, সংসদে একটি বেশি পেলেই চলমান ব্যবস্থা অনুযায়ী ৫১ই ১০০। ৪৯-এর দাম শূন্য। এটাই হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নমুনা।
চলমান সরকার সব দিক থেকেই মাইনরিটি মানসিকতার সরকার। তাদের আদর্শ হচ্ছে ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার স্লোগান দিয়ে দেশের মেজোরিটি মানুষকে মতাচ্যুত করা বা রাখা। ভারত সেকুলারিজমের নামাবলি পরে মুসলমান ও হরিজনদের শোষণ করে, অত্যাচার করে। বাংলাদেশের সরকারও একই নীতি অবলম্বন করে চলেছে। তবে বাংলাদেশে তথাকথিত ধর্মনিরপেতার নামে মুসলমানদের শোষণ করা হচ্ছে। মুসলমানদের মতা থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। ধর্মের কথা বললেই মৌলবাদী বলা হচ্ছে।
মিসরে আলসিসি মতা দখল করেছে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য। জন্মগতভাবে সে একজন ইহুদি। ইহুদি মায়ের সন্তান। তাকে সমর্থন করছে সৌদি বাদশাহ, আমেরিকা ও পশ্চিমা জগত। আর সিসি মোবারক ও জেনারেল এরশাদের মতো জোর করে গণতন্ত্র চালু করবে।
আমাদের ইতিহাস, বায়াদলিল পাল্টে যাবে যদি ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী শক্তি বেশি সময় ধরে মতায় থাকে।

এরশাদ মজুমদার 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads