সোমবার, ২৬ মে, ২০১৪

গণ-আন্দোলনের আওয়ামী ভাষ্য


আওয়ামী বন্ধুরা হামেশা নসিহত করছেন বিএনপি আন্দোলনে ফেল মেরেছে, খালেদা জিয়া ব্যর্থ হয়েছেন, সহিংস আন্দোলন করে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আরো বাতলানো হচ্ছে, আন্দোলন করতে হলে আওয়ামী লীগের কাছে তালিম নিতে হবে। এসব মহাজনবাক্য শুনতে শুনতে মানুষ পেরেশানিতে পড়েছে। বিগত শতকের পঞ্চাশ দশক থেকে ছাত্র আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলন করা ও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। হাইস্কুলের ছাত্র হিসেবে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। মিছিল করেছি। রক্তের বদলে রক্ত চাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লেøাগান দিয়েছি। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের একটি অঙ্গসংগঠনের সভাপতি হিসেবে ছাত্র আন্দোলনের স্বর্ণালি যুগে সম্মুখভাগে থেকে ছাত্র আন্দোলন করার সুযোগ হয়েছে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি হতে সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছি। এরপর রাজনীতিতে নেমে অনেক আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপি তথা আঠারো দলের চলতি আন্দোলন নিয়ে দু-একটি কথা বলার হক আছে বলে মনে করি। আলোচনার শুরুতেই আঠারো দলের আন্দোলনের ক্রিটিকদের কাছে আরজ রাখতে চাই এই আন্দোলনের নেত্রীর নাম বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে তাদের এ কথা কবুল করতেই হবে তিনি ভাঙেন, মচকান না। বিধবা গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া মিষ্টিমণ্ডাই হাতে রাজনীতিতে আসেননি। এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাণ্ডা হাতে রাজনীতির ময়দানে হাজির হয়েছেন। দেশবাসী সেদিন এই বিধবার মধ্যে ঝাঁশির রানীর তেজ ও চাঁদ সুলতানার রণরঙ্গিনীর বেশ নিশ্চয় লক্ষ করেছেন। ২৮ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে সচিবালয় ঘেরাও আন্দোলনে নেতৃত্বদানকালে পল্টনের মোড়ে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে তিনি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। আবার উঠে দাঁড়িয়ে পরের দিন ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। পুলিশি হামলায় জখম হয়ে তৎক্ষণাৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার হিম্মত এ দেশের কোনো নেতা দেখিয়েছেন কি না আমাদের জানা নেই। জননেত্রীকে সেদিন সচিবালয়ের আশপাশে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়তা ও সাহসিকতা দেখে ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনায় খালেদা জিয়াকে অনুসরণ করার জন্য বেনজির ভুট্টোকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর সেদিন জননেত্রীজাতীয় বেঈমানের নিজের  করা অভিযোগ মাথায় করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে এরশাদের স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন থেকে সামরিক স্বৈরশাসনকে মোকাবেলা করেছিলেন। বিএনপির তখন অনেক বেশি একাট্টা ছিল না। কোনো কিছুকে পরোয়া না করে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যিনি লড়াই জারি রেখেছিলেন তার নাম বেগম খালেদা জিয়া। সে লড়াইয়ে তিনি কামিয়াবি হাসিল করেছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর খেতাব অর্জন করেছেন। সেই খালেদা জিয়া ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে কলিজার টুকরা সন্তানদের থেকে বছরের পর বছর বিচ্ছিন্ন থেকে ডজনখানেক মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে কারাগারের দোরগোরায় পা রেখে সামরিক স্বৈরশাসকের চেয়েও ভয়ঙ্কর এক ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে গণতন্ত্রের দাবিদার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের নামাবলি এঁটে গণতন্ত্রের নামনিশানা মুছে দিচ্ছে তার নিন্দা প্রতিবাদ না করে বিএনপি আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে সে কথা বলতে মুখে সবাই ফেনা তুলছেন। যারা অপরাধ করছে তাদের ধিক্কার না দিয়ে যারা অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারছে না তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। এ কোন দেশে আমরা বাস করছি। যারা বলেন, আওয়ামী লীগ এক ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দল তারা ইতিহাস পাঠ না করেই সে কথা বলেন অথবা ইতিহাস নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করেন। আওয়ামী লীগের কুষ্টিনামায় গণতন্ত্রের নামগন্ধ নেই। ইতিহাসের একটি একটি করে পাতা উল্টিয়ে আমরা দেখাতে পারব গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। ১৯৭২ সাল থেকে যারা আওয়ামী লীগের শাসন প্রত্যক্ষ করেছেন তারা সে ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের তরিকা নিয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা না বলে আওয়ামী ইতিহাসের পাতাগুলো উল্টেপাল্টে দেখুন। খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে পরাজয় বলে কোনো শব্দ নেই। যেসব স্বঘোষিত সমঝদার তার দিকে আঙুল তুলছেন তাদের স্মরণ করতে বলব আজ পর্যন্ত খালেদা জিয়া কোনো আন্দোলনে বা নির্বাচনে ফেল করেননি। জাতীয় নির্বাচনে যতগুলো আসনে যতবার নির্বাচন করেছেন সব কটি আসনেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

চলতি আন্দোলনের কথায় আসি। কানাগলির ওয়াকিব হাল ও দলান্ধ মিডিয়ার বয়ান শুনে মনে হচ্ছে এরা চৌথা আসমান থেকে নাজিল হয়েছেন এবং এইবারই প্রথম তারা আন্দোলনে সহিংসতা দেখছেন? ইতঃপূর্বেকার কোনো আন্দোলনে জনদুর্ভোগ ছিল না। জনগণ সুখেস্বাচ্ছন্দ্যে ছিল, কোনো হুড়হাঙ্গামা হয়নি। বোমাবাজি হয়নি, জোরজবরদস্তি হয়নি। চলতি আন্দোলনেই শুধু এসব হয়েছে। মহাশয়েরা বার্ন ইউনিটের কান্নাই শুনেছেন, হাজার হাজার বুলেটের আওয়াজ তারা শুনতে পাননি, তরতাজা প্রাণগুলোর বুক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে তারা দেখেননি। রাস্তার ধারে, গলির মুখে, বাড়ির উঠানে বুলেটবিদ্ধ প্রাণগুলোর মৃত্যু যন্ত্রণার আওয়াজ তারা শোনেননি। এই দলান্ধ মিডিয়াকর্মী এবং কানাগলির ওয়াকিব হাল একটু পেছনে তাকালে দেখতে পাবেন হামলা, হাঙ্গামা, গুলি, বোমা, আগুন জ্বালানোর রাজনীতির উদ্ভাবক ধারক ও বাহক কারা? ভারতবান্ধব বুদ্ধিজীবীকুলের জ্ঞানীজনেরা যদি ুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, মাস্টারদা,  সূর্যসেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দার প্রমুখকে শহীদ বলতে গর্ববোধ করেন তা হলে চলতি আন্দোলন কর্মীকে সন্ত্রাসী বলছেন কোন বিবেচনায়? ছাপোষা পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে যদি শহীদ হওয়ার মর্যাদা লাভ করা যায় তাহলে মারমুখী পুলিশকে আঘাত করা হলে এত হইচই কেন? পূর্ব পাকিস্তান অ্যাসেম্বলির অধিবেশন চলাকালে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে চেয়ারের আঘাতে কি হত্যা করা হয়নি? ১৯৫৭ সালে ন্যাপ প্রতিষ্ঠাকালে ঢাকার সদরঘাটে রূপমহল সিনেমা হলের কাউন্সিল অধিবেশন ও পল্টনের জনসভা কাদের হামলায় পণ্ড হয়েছিল? ষাট দশকের অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী ১৯৬৪ সালে ২৩ ডিসেম্বরের একটি ঘটনা কি আপনার মনে পড়ে? আমার কিন্তু মনে আছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহ। ভোটার ছিলেন বিডি সদস্যরা। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগের প্রজেকশন মিটিংয়ে রেলে আগত বিডি সদস্যদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্য ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে একটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। আপনি এবং আমি সেই ক্যাম্পের চার্জে ছিলাম। তাহেরবাগের একদল অবাঙালি হামলা করে ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছিল। সন্ধ্যার পর বায়তুল মোকারমের দিক থেকে একটি জঙ্গি মিছিল নবাবপুর রোডের দিকে আসতে দেখে আমরা বুঝেছিলাম মিছিলটি তাহেরবাগে হামলা চালাবে। আমি এবং আপনি নবাবপুর রেল ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে মিছিলটির গতি ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের দিকে ফেরাতে চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি মিছিলটি নবাবপুর রোডে তাহেরবাগে ঢুকে পড়ে। তারপর যা হওয়ার তা-ই হয়। সেই হামলায় ছামাদ নামে একজন অবাঙালির মৃত্যু হয়। আপনি নিশ্চয় জানেন নাজিরাবাজারের এই যুবকেরা কার নির্দেশে তাহেরবাগে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল? মিছিলে থাকা কাজী আলাউদ্দিন  রোডের রব্বানী হোটেলের মালিকের ছেলে কিন্তু আমাকে বলেছিল কে তাদের মিছিলে পাঠিয়েছে। ছামাদ হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ছাত্র ইউনিয়ন  নেতা কামরুল ও আমাকে হাজতবাস করতে হয়েছিল। বন্ধুবর আবদুর রাজ্জাক আজকে মরহুম। বেঁচে থাকলে তাকে সাক্ষী মেনে বলতাম ১৯৬৬ সালে ৭ জুন ছয়দফার দাবিতে ধর্মঘট চলাকালে কার্জন হলের সামনে আমার পকেট থেকে দিয়াশলাই নিয়ে তিনি ইপিআর টিসির (বর্তমানে বিআরটিসির) একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছিলেন কি না? ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে কাজী ফিরোজ রশিদ একজন জবরদস্ত ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনি নিশ্চয় দেখেছেন সে সময় জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ও বাহাদুর শাহ পার্কের চার দিকে ভাঙচুর ও বহৃুৎসব কেমন হয়েছিল? দৈনিক পাকিস্তানের মোড়ে (বর্তমানে দৈনিক বাংলার মোড়) প্রেস ট্রাস্টের সুবিশাল প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকের বাসভবন (বর্ধমান হাউস) এম এন লস্কর, নবাব হাসান আসকারী মংশু প্রু চৌধুরী প্রমুখদের বাসভবনে কি আগুন দেয়া হয়নি? এগুলো তো পাকিস্তান আমলের কথা। বাংলাদেশ আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের নামে মতিঝিলের ব্যাংক, অফিস, চট্টগ্রামের বিলাসবহুল নবনির্মিত রেলস্টেশন ভেয়ে চুরমার করা হয়েছিল। দিনের পর দিন চিটাগাং পোর্ট অচল করে রাখা হয়েছিল। সরকারি কর্মকর্তাকে রাস্তায় দিগম্বর করা হয়েছিল, শেরাটন হোটেলের সামনে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে গানপাউডার ঢেলে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে তার ওপর নৃত্য করা হয়েছিল। এই কর্মকাণ্ডলো কি ছিল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নমুনা। এই আন্দোলনের ফলে কি কোনো জনদুর্ভোগ হয়নি! তাহলে আজকে এত চেঁচামেচি কেন? আমরা মনে করি আন্দোলনে গুলি, বোবামাজি, হত্যা, জ্বালাও পোড়াও ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে কথা বলার আওয়ামী লীগ ভক্তদের কোনো অধিকার নেই। কর্মগুলো তারা করলে জায়েজ হবে অন্যরা করলে না জায়েজ হবে এই থিয়োরি যারা ধারণ করেন তারা আর যা-ই হন না কেন গণতন্ত্রের কথা তাদের মুখে মানায় না। গণতন্ত্রের জন্য বুক চাপড়াবেন আর গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারীকে নির্বিচারে গুলি করে মারবেন এই সওদাগরি আর বেশি দিন করতে পারবেন না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার ৪২ দিনের মধ্যে ১২২ জন বনি আদমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করব ৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে পাঁচজন শহীদের (রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিক) বিনিময়ে ভাষার দাবি কায়েম হয়েছে। ৬২ সালে দুজন শহীদের বিনিময়ে (গোলাম মোস্তফা, অজিউল্লাহ) শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল হয়েছে। ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খানের ঘোষণা ছিল তার প্রবর্তিত শাসনতন্ত্র বাতিল হতে পারে কিন্তু শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হবে না। সে রিপোর্ট ও মাত্র দুজন শহীদের বিনিময়ে বাতিল করেছিলেন। তিনজন শহীদের রক্তে (সার্জেন্ট জহুরুল হক, আসাদ, ডা: জোহা) লিখিত হয়েছে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস। আর আজকে ৪২ দিনে ১২২ জনকে গুলি করে হত্যা করেও শাসককুল নির্বিকার। দুই মাস সারা দেশ থেকে ঢাকা শহর বিচ্ছিন্ন থাকলো (মরহুম মূসা ভাইয়ের ভাষায় শেখ হাসিনা ঢাকার প্রধানমন্ত্রী) হাজার হাজার কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট হলো, ১২২ জনের প্রাণ গেল কিন্তু শাসকেরা অনড় থাকলেন। দাবি আদায় হলো না। এখন কি দয়া করে বলা হবে আর কত প্রাণ দিলে দাবি আদায় হতো? বলা হয় যে বিএনপর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামেনি। রাস্তায় যদি না নামবে তাহলে গুলি করে কাদেরকে হত্যা করা হলো? আন্দোলনের নিন্দুকেরা কি লক্ষ করেননি রাস্তায় নামলেই গুলি করা হয়েছে, পায়ে না বুকে ও মাথায়। জেলজুলুমের কথা বলা হয়। গণতান্ত্রিক শাসনামলে গুলি করা হবে কেন? জেলজুলুম করা হবে কেন? মতিয়া আপা, তোফায়েল ভাই, আমু ভাই আপনারা বহুবার জেলে গিয়েছেন। এই অদমকেও দু-চারবার যেতে হয়েছে। বলুন তো কতবার আপনাদের ডাণ্ডাবেড়ি লাগিয়ে আদালতে নেয়া হয়েছে? কতবার আপনাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে? ডাণ্ডাবেড়ির মোজেজা আপনারা কী বুঝবেন? বুঝেছিলেন মরহুম জলিল ভাই আর শেখ সেলিম। আইয়ুবী আমলে কত নবাবী হালে আপনারা জেলে ছিলেন। ছয় মাস পরপর এক জোড়া লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, গামছা, সেন্ডেল পাওয়া যেত। লেপ তোষক বালিশের আনজাম ছিল। বছরে একটি গরম চাদর। পৃথক মেসে পছন্দমতো মেনুতে পাকের ব্যবস্থা। রাজনৈতিক নেতাদের এই মর্যাদা ও সুবিধাগুলো কারা বাতিল করল এর জওয়াব তো আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে? যারা বলেন  বেগম জিয়া আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন তারা তার আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুধাবনে ব্যর্থ। তার আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে দেয়া। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলেও আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে পড়েছে। দেশে-বিদেশে এটিও প্রমাণিত হয়েছে এই আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। এটিও প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দলকানা প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা হাসিলের জন্য সরকারকে দুয়ারে দুয়ারে ধরণা দিতে হচ্ছে কতই না নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে। যারা মনে করেন খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছেন তাদের শুধু একটি কথাই বলতে চাই On election is not the life of a nation.

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads