রবিবার, ২৫ মে, ২০১৪

মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়া



আজকের বিষয় চলমান বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যদি বলি তাহলে বলতে হবে, ‘রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই কি শুধু ক্ষমতায়ন? দেশের গণতন্ত্র চর্চা ও স্বাধীনতা কি রাজনীতির ভিতরে পড়ে না?’ যদি তা হয় তাহলে কেন বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে, যার ভয়াবহতা ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদারদেরও হার মানিয়েছে। যদিও তারা বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল কিন্তু তারা সব বাদ দিয়ে ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এই সরকারের কারণে এতই নিচে নেমে এসেছে যে প্রবাসীদের পথে পথে চলতে-ফিরতে অপমানিত হতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনগুলোতে যেভাবে নির্লজ্জের মতো বর্তমান সরকার সহিংসতা চালিয়ে জোর করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করে ক্ষতবিক্ষত করে দিল তা হলুদ মিডিয়া প্রকাশ না করলেও সত্য কখনও চাপা থাকে না। তাই এই নমুনাগুলো প্রমাণস্বরূপ সবার চোখের সামনে চলে এসেছে। আজ জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রবাসী হয়ে বসবাস করছি। কিন্তু আমি ভীত নই। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমি আমার সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। 
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিবাঁচিত হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। 
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেয়ার পর থেকে মোট চারবার তিনি গ্রেফতার হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ত্যাগের একটি বিরল ঘটনা এবং তিনি এখনও বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার তাগিদে আপসহীন অটল রয়েছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। সর্বশেষ তিনি ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন এবং এই মামলায় চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।
২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন। আগস্টে তিনি রাজপরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। এই সফরে তিনি সৌদি রাজপুত্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সালমান আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তাদের বৈঠকে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সঙ্কট উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। অক্টোবরে খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফরকালে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভবিষ্যত্ একচ্ছত্র নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করেন। বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিষয়াবলীও তাদের আলোচনায় উঠে আসে। জিনপিং ছাড়াও খালেদা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন।
এ বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্য মূল অর্থদাতা বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলে বিশ্ব ব্যাংককে অনুসরণ করে একাধিক দাতা সংস্থা ঋণদান থেকে সরে দাঁড়ায় ও প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। বেগম জিয়ার চীন সফর সম্পন্ন হওয়ার একদিন পর তার রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষণা দেয় যে চীনা নেতারা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন সরকারের বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছেন। একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান। সফরের শুরুতে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় বিরোধীদলীয় প্রধান ও বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরকালে তার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল দ্বিবার্ষিক সম্পর্ক, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, তিস্তা পানি চুক্তি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতার যোদ্ধা বেগম খালেদা জিয়া ২৪ মে ২০১১ তারিখে, নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে একটি ডেমোক্রেসি ফাইটারহিসেবে বেগম খালেদা জিয়া সম্মানিত হন। এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার সব নেতা- নেত্রীর মধ্য থেকে বাংলাদেশের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সিনেট কর্তৃক সম্মানিত পদবি দেয়া হয়। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের প্রধান।
বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া ঠিক ১৯৮৬ সালের মতো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচন বয়কট করে ১৯ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এই বিরামহীন, আপসহীন নেত্রীকে আমি বাংলাদেশের কোটি কোটি জনতার পক্ষ থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাদার অব ডেমোক্রেসিঘোষণা দিলাম। 

 রাকেশ রহমান

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads