শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬

সেই পচা গমের আটা


ব্রাজিল থেকে আনা পচা ও পোকায় খাওয়া গম নিয়ে বেশ হৈ চৈ হয়েছিল। জনগণের দাবির মুখে কর্তৃপক্ষ সে গম ফেরত দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেই গম কি আদৌ ফেরত গেছে? নাকি নানা ফাঁকফোকর গলিয়ে তা এদেশে থেকেই গেছে কে জানে। সম্প্রতি বাজার থেকে কেনা আটা খসখসে, আঠাহীন, স্বাদহীন, রুটি পাকানো যায় না। খাওয়া তো দূরে থাক। শুধু খোলা আটাই না, অনেক কোম্পানির প্যাকেটজাত আটারও একই অবস্থা। খাওয়া যাচ্ছে না। আটার রং বিবর্ণ, খসখসে, ঝুরঝুরে। আটার যে একটা আঠালো ভাব থাকে, যার জন্য রুটি বেলতে বা পাকাতে সুবিধে হয়। সেটা এখনকার আটায় নেই। একটি দৈনিকের রিপোর্ট অনুসারে ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে কেনা আটার রুটি বানাতে গিয়ে গৃহিণীরা এমনটি অভিযোগ করছেন প্রায় প্রতিদিনই। বাজার থেকে কেনা আটা চালুনে চালতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ভুষি, আবর্জনা, এমনকি পোকাও। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমন আটার রুটি খেলে মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্রাজিলের পচা ও পোকায় খাওয়া গম ভালো গমের সঙ্গে মিশিয়ে তাদের কাছে সরবরাহ করে তা বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমন দুঃখজনক রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার দৈনিকটিতে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী দাবি করেছেন, ব্রাজিলের পচা গম এক ছটাকও দেশে নেই। সব ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ব্রাজিল থেকে আনা পচা ও পোকায় খাওয়া গম শুধু খাওয়ার অনুপযোগীই নয়, মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকিও। অথচ মন্ত্রীরা দাবি করেছিলেন সে গমের কিছু অংশে পচা ও পোকা থাকলেও তা ব্যবহারে কোনও অসুবিধা নেই। অনেকে ধারণা করছেন, সেই গম ফেরত না দিয়ে রাতের অন্ধকারে আবার দেশের বিভিন্ন গোডাউনে চলে গেছে। লোক দেখানো কিছু ফেরত পাঠালেও তার অনেকটাই থেকে গেছে। সেগুলোই এখন ভালো গমের সঙ্গে মিশিয়ে আটা বানিয়ে বাজারজাত করে মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে। সরকারি তরফ থেকে বাজারের খোলা আটার সমস্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে প্রতি বছর ৯ থেকে ১০ লাখ টন গম আমদানি করা হয়। অথচ বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা ৪০ লাখ টন গম আমদানি করেন। এ গমের মধ্যে ভেজাল বা পচা ও পোকালাগা গম নেই তাইবা কে বলবে? কিন্তু গম বা চাল আমদানিকরণের নিশ্চয়ই নিয়ম-কানুন রয়েছে। সে নিয়ম মানলে তো পচা বা পোকালাগা গমের চালান দেশে ঢুকতে পারার কথা না। কিন্তু আমাদের দেশে তো সবই সম্ভব। ওষুধ, প্রসাধনী, শিশুখাদ্য সবই ভেজাল হয়। নকল হয়। এসবের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চলে। আবার ক’দিন পরে তা থেমেও যায়। ভেজাল আর নকল দিব্যি বাজার দখল করে বসে থাকে। সাধারণ মানুষ সেই ভেজাল ও নকল পণ্য কষ্টার্জিত অর্থে কিনে নানাবিধ অসুখ-বিসুখকে স্বাগত জানাতে বাধ্য হয় নিজেদের অলক্ষ্যেই।
যাই হোক, বাজারের গমের আটা সম্পর্কে গৃহিণীদের অভিযোগের ভিত্তিতে যে রিপোর্ট বেরিয়েছে তার তদন্ত হওয়া দরকার। ব্রাজিল থেকে সেই পচা ও পোকালাগা গম কি সত্যি সত্যি ফেরত পাঠানো হয়েছে? নাকি তা ফাঁক-ফোকর গলিয়ে থেকে গিয়ে আটা হয়ে বাজারে দিব্যি বিক্রি হচ্ছে? অভিযোগ যদি সত্যি হয়,তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। কারণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। তাই এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ভোক্তা তথা দেশবাসীকে অবিলম্বে নিশ্চিত করা হোক।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads