কোথায় পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই, তবে কথাটি মনে আছে। ‘মানুষ প্রকৃতিরই অংশ এবং শ্রেষ্ঠ অংশ’ এমন কথায় ভাববার মতো অনেক বিষয় আছে। শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টা শুধু অহংকারের বিষয় নয়, গুণাবলীর বিষয়ও বটে। প্রকৃতির গুণের কথাতো আমরা জানি তবে মানুষের গুণের কথা কি প্রকৃতি জানে? প্রশ্নটা বেশ রহস্যঘন, তবে বোধের বাইরে নয়। আমরা মানুষরা জীবনে কোনো বস্তুর ভালোমন্দ প্রভাব বিবেচনা করে বস্তুর গুণাগুণ বিচার করে থাকি। ঠিক তেমনি মানুষের আচরণ প্রকৃতির ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে, তা বিবেচনায় এনে তো মানুষের গুণাগুণও বিচার করা যায়। আসলে প্রকৃতি বলি, মানুষ বলি সবইতো সৃষ্টি। স্রষ্টার সৃষ্টি বৈচিত্র্যের মধ্যেও রয়েছে নানা রহস্য। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বিষয় বেশ স্পষ্ট করেই বলা যায়, মানববান্ধব করেই প্রকৃতিকে সৃষ্টি করেছেন স্রষ্টা। তাহলে মানবের কর্মকাণ্ডও তো প্রকৃতিবান্ধব হওয়া চাই। বিশেষ কারণে স্রষ্টা মানুষকে বিশেষ কিছু সক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এই শ্রেষ্ঠত্ব কর্মে ও দায়িত্ববোধে প্রকাশ প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে মানুষ যদি অহংকারী হয়ে ওঠে, দায়িত্বে গাফেল থাকে এবং প্রকৃতির সাথে সৃষ্টিতাত্ত্বিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়, তখন তো এই পৃথিবী আর সুন্দর থাকে না, মানুষের বসবাসও হয়ে ওঠে কষ্টকর। মানুষ যদি প্রকৃতিপরিচয় ভুলে গিয়ে প্রকৃতির প্রভু হতে চায়, তখন প্রকৃতি বিদ্রোহ করে। আসল প্রভুর দয়া ও অনুগ্রহ থেকেও বঞ্চিত হয় মানুষ। তখন লক্ষ্য করা যায় ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। মহান স্রষ্টাও আমাদের জানান দিয়েছেন, জলে-স্থলে যে বিপর্যয় লক্ষ্য করা যায় তা মানুষেরই অর্জন। অর্জন তো মানুষকে ভোগ করতেই হবে- ভালো হলে ভালো, মন্দ হলে মন্দ ভোগ অর্থাৎ দুর্ভোগ-এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
কাগজের সফেদ পৃষ্ঠায় দর্শনভাবনার কিছু ছায়া পড়ে গেল। এর বাস্তব কারণ আছে। আমরা রাজধানী ঢাকার রমনা-উদ্যানকে ‘নগরীর ফুসফুস’ বলে থাকি। ফুসফুস ভরে শ্বাস নেয়ার মতো বিশাল সবুজ রয়েছে রমনায়। কিন্তু এই সবুজের রক্ষণাবেক্ষণ কেমন হচ্ছে? প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অংশ মানুষ রমনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে। মানুষ যে তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, এর বড় প্রমাণ শতবর্ষী মহুয়া গাছটি। প্রাচীন এই বৃক্ষটি এভাবে মূলশুদ্ধ উপড়ে পড়ে গেল কেমন করে? শুধু কি বয়সের ভারেই গাছটির মৃত্যু হলো, নাকি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তথা পরিচর্যার অভাব ছিল এখানে? এমন প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, “শতবর্ষী একটি প্রাচীন গাছ উপড়ে পড়েছে এটুকুই খবর নয়, মহুয়ার অভিমানী প্রস্থান আসলে প্রশ্ন তুলেছে রমনার ব্যবস্থাপনা নিয়েই। যে কেউ গিয়ে দেখবেন উপড়ে পড়া মহুয়া গাছটির ভেতর জুড়ে খোঁড়ল এবং উইপোকার বাসা। রমনা পার্কটি গণপূর্ত অধিদফতরের; এই দফতরটি গোটা পার্কে ইট-পাথর-লোহার কাজ করে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে। তারা মহুয়া গাছটির গোড়াও বেশ পোক্তভাবেই বাঁধাই করেছে। বেঁধে দেয়া চত্বরের পাথরে লাল-নীল-সবুজ রঙের প্রলেপও দিয়েছে। কিন্তু গাছটির গোড়ায় যে উইপোকা বাসা বেঁধেছে, তার খোঁজ কে রাখে? গণপূর্তের প্রকৌশলীর তো একাজ নয়। রমনায় সাম্প্রতিককালে কোনো উদ্যানবিদের দেখা মিলেছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। রমনায় গাছ বড় হচ্ছে, বুড়ো হচ্ছে, সামান্য ঝড়েই ভেঙে পড়ছে, সেগুলোর ডালপালা কেটে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কোনো নতুন গাছ লাগানোর উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি সার-মাটি দিয়ে পুরোনো গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো আয়োজন দৃশ্যমান নয়। সামনে বর্ষা আসছে, এই বর্ষায় পার্কজুড়ে গাছ রোপণের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা সেটাও জানা যায় না।”
রমনা পার্কের ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্য করা গেল, বাহ্যিক পারিপাট্যের কাজটি ঠিকভাবে হলেও ভেতরের কাজে মনোযোগ নেই। গাছের বাঁধাই কাজ হয়, লাল-নীল-সবুজ রঙের প্রলেপও দেয়া হয় সাজানো পাথরে। কিন্তু গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া হয় না, দেয়া হয় না সারও। আর গাছের ভেতরে উইপোকা বাসা বেঁধে যে ফোঁকলা করে দিচ্ছে, সেই খবর রাখার মতো ব্যবস্থাপনা নেই। এর ফলাফল যা হবার তা-ই হলো, বৃক্ষের পতন, আমাদের সমাজও যেন বৃক্ষসদৃশ। বাহ্যিক কাঠামো নির্মাণ ও পারিপাট্যের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ কিন্তু ভেতরের কাজ তেমন হচ্ছে না। ভেতরে যে, ঘুণে ধরেছে সেই খবর কেউ বলতেও চায় না। ফলে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সমাজের ভিত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। মহুয়া গাছটির মতো আমাদের সমাজও যে ভেঙে পড়বে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? সমাজ ও রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার তারা বিষয়টি কতটা উপলব্ধি করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কাগজের সফেদ পৃষ্ঠায় দর্শনভাবনার কিছু ছায়া পড়ে গেল। এর বাস্তব কারণ আছে। আমরা রাজধানী ঢাকার রমনা-উদ্যানকে ‘নগরীর ফুসফুস’ বলে থাকি। ফুসফুস ভরে শ্বাস নেয়ার মতো বিশাল সবুজ রয়েছে রমনায়। কিন্তু এই সবুজের রক্ষণাবেক্ষণ কেমন হচ্ছে? প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অংশ মানুষ রমনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে। মানুষ যে তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, এর বড় প্রমাণ শতবর্ষী মহুয়া গাছটি। প্রাচীন এই বৃক্ষটি এভাবে মূলশুদ্ধ উপড়ে পড়ে গেল কেমন করে? শুধু কি বয়সের ভারেই গাছটির মৃত্যু হলো, নাকি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তথা পরিচর্যার অভাব ছিল এখানে? এমন প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, “শতবর্ষী একটি প্রাচীন গাছ উপড়ে পড়েছে এটুকুই খবর নয়, মহুয়ার অভিমানী প্রস্থান আসলে প্রশ্ন তুলেছে রমনার ব্যবস্থাপনা নিয়েই। যে কেউ গিয়ে দেখবেন উপড়ে পড়া মহুয়া গাছটির ভেতর জুড়ে খোঁড়ল এবং উইপোকার বাসা। রমনা পার্কটি গণপূর্ত অধিদফতরের; এই দফতরটি গোটা পার্কে ইট-পাথর-লোহার কাজ করে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে। তারা মহুয়া গাছটির গোড়াও বেশ পোক্তভাবেই বাঁধাই করেছে। বেঁধে দেয়া চত্বরের পাথরে লাল-নীল-সবুজ রঙের প্রলেপও দিয়েছে। কিন্তু গাছটির গোড়ায় যে উইপোকা বাসা বেঁধেছে, তার খোঁজ কে রাখে? গণপূর্তের প্রকৌশলীর তো একাজ নয়। রমনায় সাম্প্রতিককালে কোনো উদ্যানবিদের দেখা মিলেছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। রমনায় গাছ বড় হচ্ছে, বুড়ো হচ্ছে, সামান্য ঝড়েই ভেঙে পড়ছে, সেগুলোর ডালপালা কেটে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কোনো নতুন গাছ লাগানোর উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি সার-মাটি দিয়ে পুরোনো গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো আয়োজন দৃশ্যমান নয়। সামনে বর্ষা আসছে, এই বর্ষায় পার্কজুড়ে গাছ রোপণের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা সেটাও জানা যায় না।”
রমনা পার্কের ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্য করা গেল, বাহ্যিক পারিপাট্যের কাজটি ঠিকভাবে হলেও ভেতরের কাজে মনোযোগ নেই। গাছের বাঁধাই কাজ হয়, লাল-নীল-সবুজ রঙের প্রলেপও দেয়া হয় সাজানো পাথরে। কিন্তু গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া হয় না, দেয়া হয় না সারও। আর গাছের ভেতরে উইপোকা বাসা বেঁধে যে ফোঁকলা করে দিচ্ছে, সেই খবর রাখার মতো ব্যবস্থাপনা নেই। এর ফলাফল যা হবার তা-ই হলো, বৃক্ষের পতন, আমাদের সমাজও যেন বৃক্ষসদৃশ। বাহ্যিক কাঠামো নির্মাণ ও পারিপাট্যের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ কিন্তু ভেতরের কাজ তেমন হচ্ছে না। ভেতরে যে, ঘুণে ধরেছে সেই খবর কেউ বলতেও চায় না। ফলে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সমাজের ভিত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। মহুয়া গাছটির মতো আমাদের সমাজও যে ভেঙে পড়বে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? সমাজ ও রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার তারা বিষয়টি কতটা উপলব্ধি করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন