শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬

এ কেমন ভোট হলো!


গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ইত্তেফাক একটি চমৎকার খবর ছেপেছে। সেটি হচ্ছে ৪র্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় মৃত ভোটাররা যেমন কবর থেকে উঠে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তেমনই প্রবাসীরাও সবাই বিদেশ থেকে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। উপজেলার চর আড়ালিয়া ইউপির দুটি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ সেখানকার মৃত ভোটাররা সবাই ভোট দেবার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত থেকে প্রবাস জীবনযাপন করছেন তারাও সবাই এসে ভোট প্রদান করেছেন। অন্য একটি কেন্দ্রে ৯৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আরেকটিতে পড়েছে ৯৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ভোট। সংশ্লিষ্ট ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলবার্তা শিটে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসের ৭ তারিখে আলোচ্য ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শুধু নরসিংদীর চর আড়ালিয়াতেই নয়, দেশের অন্যান্য স্থানের ইউপিগুলোতেও নির্বাচন নিয়ে প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে দেখেছেন তাদের ভোট প্রদান করা হয়ে গেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা তাদের আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোথাও কোথাও তো রাতের মধ্যেই ব্যালটপেপারে বাক্স ভর্তি করে রাখবার খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও যদি মৃতরা কবর থেকে উঠে এসে ভোট দিতে পারেন, তাহলে বিদেশে থাকা সকলের ভোট প্রদানে অসুবিধে কোথায়? তবে তারা অনলাইনে ভোট দিয়েছেন এমনও না। কোনও কোনও জায়গায়তো রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসার নিজেরাই ব্যালটপেপারে সিল মেরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভাবনীয় অপরাধে কোনও কোনও নির্বাচন অফিসারকে গ্রেফতার করে আইনের কাছে তুলে দেবার খবরও দুই-একটা রয়েছে। এমনই এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শুধু মৃত ও প্রবাসীরাই ভোটে অংশ নিতে পারেন না, তা নয়। কোনওভাবেই কোনও নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়ে না। কারণ নির্বাচনের অনেক আগে প্রস্তুত করা ভোটারতালিকায় মৃত ও প্রবাসীদের যেমন নাম থাকে, তেমনই যারা নিজস্ব ইউপি থেকে অন্যত্র সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত থাকেন তাদেরও নাম থাকে। মৃত ও প্রবাসীদের মতো এলাকার বাইরে থাকা সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীরাও ভোট দিতে পারেন না নিজেদের ব্যস্ততার জন্য। তাছাড়া যারা ভোটের দিন দূরে কোথাও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন, তাদেরও ভোট দেয়া সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় কোনও ইউপির নির্বাচনে শতভাগ ভোটপ্রদান কেবল অস্বাভাবিকই নয়, হাস্যকর বা ভৌতিকও। এমন কথা নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন। আলোচ্য ইউপির একজন পরাজিত প্রার্থী গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন। কিন্তু তিনি এর প্রতিকার পাবেন বলে মনে হয় না। শুধু চর আড়ালিয়া ইউপির পরাজিত প্রার্থী একাই নন, কেন্দ্র দখল, অবিশ্বাস্য পরিমাণ ভোট পড়া ও সহিংসতাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অসংখ্য প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে সহস্রাধিক অভিযোগ দাখিল করেছেন। কিন্তু কমিশন সেগুলো তদন্ত না করেই নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। বিধিমাফিক গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত যেকোনও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা কমিশনের নিশ্চয়ই রয়েছে। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বাতিল করতেও পারে কমিশন। কিন্তু তেমন উদ্যোগ নিতে আমরা দেখছি না। ফলে নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা বেড়েই চলেছে। আর এই আস্থাহীনতা নির্বাচনী সংঘর্ষের অন্যতম কারণ বৈকি।
আগামীতে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ করতে উদ্যোগ না নিলে এর খেসারত ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই দিতে হবে। আমরা চাই না দেশের কোনও নির্বাচন সংঘাতময় হোক। নির্বাচন করতে গিয়ে মানুষের মূল্যবান জীবনের অপমৃত্যু ঘটুক। এ ব্যাপারে ক্ষমাসীনদেরই সিংহভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আশা করি, খুব শিগগির সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় ঘটবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads