বিএনপি অভিযোগ করেছে, সুনির্দিষ্ট অপরাধের দায়ে আদালতে দণ্ডিত হলেও মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। অনেকের দণ্ড মওকুফ করা হচ্ছে। দণ্ডিত মন্ত্রীরা এমনকি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। এভাবে মন্ত্রিপরিষদে দণ্ডিত মন্ত্রীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সাজানো মামলায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সরকারবিরোধী হওয়ার কারণে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরসহ বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত তো করা হচ্ছেই, গ্রেফতার করে তাদের কারাগারেও ঢোকানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিতে গিয়ে রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং কারাগারে তাদের বর্তমান দুরবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। বলেছেন, একই অবস্থা চলছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও। এসব নির্বাচনে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। ভোট হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা অনুসারে। জিতিয়েও আনা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদেরকেই।
সব মিলিয়ে দেশে ক্ষমতাসীনদের জন্য চলছে পৃথক আইনের প্রয়োগ। উদাহরণ হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েকজন মন্ত্রীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনজনের মধ্যে প্রথম দু’জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে নগদ অর্থে জরিমানা এবং অনাদায়ে কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। জরিমানার টাকা জমা দেয়ার মাধ্যমে দণ্ড স্বীকার করে নিলেও দু’জনই এখনো বহাল তবিয়তে মন্ত্রিসভায় রয়ে গেছেন। অন্যদিকে ২০০৭ সালে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে ত্রাণমন্ত্রী মায়ার ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছিল। এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করলে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে খালাস দিলেও দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালাসের আদেশ বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে মায়ার লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে ঘোষিত দণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। সে কারণে আইনের চোখে তিনি এখন একজন দণ্ডিত অপরাধী। কিন্তু তা সত্ত্বেও মায়া শুধু নন, অন্য দু’জন মন্ত্রীও নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন। এজন্যই বিএনপি বলেছে, মন্ত্রিসভায় দণ্ডিতদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একই অবস্থা চলছে সারা দেশেও। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে দূরবর্তী কোনো সম্পর্ক থাকলেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। মাত্র ক’দিন আগে ফরিদপুরে দণ্ডিত এক ফাঁসির আসামীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। কারণ, এই দণ্ডিতজন ছাত্রলীগের নেতা!
বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০০৮ সালের ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আইন প্রয়োগ ও বিচারের ক্ষেত্রে সরকার একই দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে এসেছে। উদারহরণ দেয়ার জন্য সরকারের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করলে দেখা যাবে, ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাই শুধু প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছে, কিন্তু শত শত নামের দীর্ঘ তালিকায় বিরোধী দলীয় নেতাদের নাম থাকেনি। এখনো থাকছে না। এই প্রক্রিয়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলের সকল দণ্ডও মওকুফ করেছিলেন- যার বিরুদ্ধে ১৮ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ ছিল। ওই দণ্ডিত পুত্র পলাতক ছিলেন এবং পলাতক অবস্থাতেই রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন এক ব্যাখ্যায় বলেছিল, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সাজেদা চৌধুরীর ছেলের দন্ড মওকুফ করেছেন। অন্যদিকে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং নিরপেক্ষ ও আইনসম্মত অবস্থান থেকে দণ্ডিতজনের ব্যাপারে মওকুফ, হ্রাস বা স্থগিত করার মতো ব্যবস্থা নেবেন- এমন চিন্তা ও আশার ভিত্তিতেই সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দিয়েছে। তাছাড়া আইনের বিধান হলো, দণ্ডিত ব্যক্তিকে প্রথমে আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং দণ্ড মওকুফ করার আবেদন তাকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু সাজেদা চৌধুরীর পুত্রের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দেশের রাষ্ট্রপতি একজন পলাতক ও দণ্ডিত অপরাধীর গোপনে পাঠানো আবেদনের ভিত্তিতে দণ্ড মওকুফ করেছিলেন। অর্থাৎ নিজে আইনজীবী হয়েও রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান দলবাজির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি।
একই অবস্থা এখনো চলছে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পর থেকে সরকার অনেক বেশি মারমুখী হয়ে উঠেছে। কোনো মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও দেশের বহু এলাকায় বিরোধী দলের নির্বাচিত মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মতো পদ থেকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় কারাগারেও ঢুকিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুই রকমের আইন চলতে পারে না। আইন সকলের জন্যই সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। আর এ ব্যাপারে সরকারের কর্তব্য আইন ও সংবিধানসম্মত অবস্থানে ফিরে আসা, যাতে অপরাধী হলে তাকে শাস্তি পেতে হয়- তা সে ব্যক্তি যে দলেরই হোক না কেন।
সব মিলিয়ে দেশে ক্ষমতাসীনদের জন্য চলছে পৃথক আইনের প্রয়োগ। উদাহরণ হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েকজন মন্ত্রীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনজনের মধ্যে প্রথম দু’জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে নগদ অর্থে জরিমানা এবং অনাদায়ে কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। জরিমানার টাকা জমা দেয়ার মাধ্যমে দণ্ড স্বীকার করে নিলেও দু’জনই এখনো বহাল তবিয়তে মন্ত্রিসভায় রয়ে গেছেন। অন্যদিকে ২০০৭ সালে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে ত্রাণমন্ত্রী মায়ার ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছিল। এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করলে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে খালাস দিলেও দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালাসের আদেশ বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে মায়ার লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে ঘোষিত দণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। সে কারণে আইনের চোখে তিনি এখন একজন দণ্ডিত অপরাধী। কিন্তু তা সত্ত্বেও মায়া শুধু নন, অন্য দু’জন মন্ত্রীও নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন। এজন্যই বিএনপি বলেছে, মন্ত্রিসভায় দণ্ডিতদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একই অবস্থা চলছে সারা দেশেও। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে দূরবর্তী কোনো সম্পর্ক থাকলেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। মাত্র ক’দিন আগে ফরিদপুরে দণ্ডিত এক ফাঁসির আসামীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। কারণ, এই দণ্ডিতজন ছাত্রলীগের নেতা!
বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০০৮ সালের ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আইন প্রয়োগ ও বিচারের ক্ষেত্রে সরকার একই দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে এসেছে। উদারহরণ দেয়ার জন্য সরকারের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করলে দেখা যাবে, ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাই শুধু প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছে, কিন্তু শত শত নামের দীর্ঘ তালিকায় বিরোধী দলীয় নেতাদের নাম থাকেনি। এখনো থাকছে না। এই প্রক্রিয়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলের সকল দণ্ডও মওকুফ করেছিলেন- যার বিরুদ্ধে ১৮ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ ছিল। ওই দণ্ডিত পুত্র পলাতক ছিলেন এবং পলাতক অবস্থাতেই রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন এক ব্যাখ্যায় বলেছিল, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সাজেদা চৌধুরীর ছেলের দন্ড মওকুফ করেছেন। অন্যদিকে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং নিরপেক্ষ ও আইনসম্মত অবস্থান থেকে দণ্ডিতজনের ব্যাপারে মওকুফ, হ্রাস বা স্থগিত করার মতো ব্যবস্থা নেবেন- এমন চিন্তা ও আশার ভিত্তিতেই সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দিয়েছে। তাছাড়া আইনের বিধান হলো, দণ্ডিত ব্যক্তিকে প্রথমে আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং দণ্ড মওকুফ করার আবেদন তাকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু সাজেদা চৌধুরীর পুত্রের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দেশের রাষ্ট্রপতি একজন পলাতক ও দণ্ডিত অপরাধীর গোপনে পাঠানো আবেদনের ভিত্তিতে দণ্ড মওকুফ করেছিলেন। অর্থাৎ নিজে আইনজীবী হয়েও রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান দলবাজির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি।
একই অবস্থা এখনো চলছে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পর থেকে সরকার অনেক বেশি মারমুখী হয়ে উঠেছে। কোনো মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও দেশের বহু এলাকায় বিরোধী দলের নির্বাচিত মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মতো পদ থেকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় কারাগারেও ঢুকিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুই রকমের আইন চলতে পারে না। আইন সকলের জন্যই সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। আর এ ব্যাপারে সরকারের কর্তব্য আইন ও সংবিধানসম্মত অবস্থানে ফিরে আসা, যাতে অপরাধী হলে তাকে শাস্তি পেতে হয়- তা সে ব্যক্তি যে দলেরই হোক না কেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন