একটি জনপ্রিয় গানের প্রথম একটি কলি এ রকম- ‘ইশকুল খুইলাছে রে মওলা, ইশকুল খুইলাছে/গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি ইশকুল খুইলাছে’। গত ২৮ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্য শুনে মনে হলো তিনি বোধ করি সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের একটি স্কুল খুলে বসেছেন। সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির আকস্মিক বৈঠক নিয়ে সরকার ও এক শ্রেণীর পত্রপত্রিকা তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়েছে। আসলাম চৌধুরীকে প্রথমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র মামলায় ৫৪ ধারায় আটক করা হয়। বলা হয়, তিনি ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাত করতে চেষ্টা করেছিলেন। আর মেন্দি এন সাফাদি ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং মোসাদের একজন এজেন্ট। ফলে দুইয়ে দুইয়ে চারের হিসেবে আসলাম চৌধুরী মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন।
আসলাম চৌধুরীকে ভারতের একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির যুব সংগঠন। ঐ অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসরাইলের নাগরিক আন্তর্জাতিক কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক সাফাদিকে। সেখানে আকস্মিকভাবেই দু’জনের দেখা হয়। আয়োজকরা দু’জনকেই ভারতীয় প্রথা অনুযায়ী ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এই সেমিনারের কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা আগ্রার মেয়রের আমন্ত্রণে আগ্রাও সফর করেন। সেখানকার ছবিও আছে। মেন্দি এন সাফাদি এসব ছবি তার ফেসবুক পেজে অবিরাম আপলোড করেন। এই ছবি ঢাকার একাধিক সংবাদপত্র প্রকাশ করে একে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে। আওয়ামী নেতারা এই ঘটনার সূত্র ধরে একেবারে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেন। তারা শত মুখে বলতে শুরু করেন যে, বিএনপি মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে। অতএব গোটা মুসলিম বিশ্বের উচিত বিএনপিকে বর্জন করা। তারা বলতে থাকেন, বিএনপি মুখে ইসলামের কথা বললেও আসলে এই দলটি ঘোর ইসলাম বিরোধী ও ইসরাইইলপন্থী। আর আওয়ামী লীগ হলো সাচ্চা ইসলাম-পছন্দ দল।
এ বিষয়ে আসলাম চৌধুরী তার বক্তব্য পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, মেন্দি এন সাফাদিকে তিনি আগে কখনও চিনতেনই না বা তার সঙ্গে সাফাদির কোনো রকম যোগাযোগ ছিল না। অনুষ্ঠানে সাফাদি যেমন একজন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, তিনিও তেমনি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। এতে তারা দু’জনই শুধু ছিলেন না, আরও অনেক অংশগ্রহণকারী ছিলেন। আর সাফাদির বাড়ি যে ইসরাইল তাও তিনি শুরুতে জানতেন না। আবার তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য কিনা সে বিষয়েও তার (আসলাম চৌধুরী) কোনো ধারণা ছিল না। সাফাদি নিজেও তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার আগে কখনও পরিচয় ছিল না এবং দেখাও হয়নি। ওই সেমিনারে গিয়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তিনি নিজে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক। আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে কাজ করেন। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ঢাকা থেকে আমাদের অর্থনীতি ডট কম মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ‘ষড়যন্ত্র’ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে সাফাদি ওই পত্রিকাকে একই কথা বলেন।
এদিকে ঢাকার ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানমূলক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়-সাফাদির এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই এবং তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত নন। তবে এক সময় তিনি একজন উপ-মন্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। একথা সকলেই জানেন যে, ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ও ‘র’কে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রে রেজিস্ট্রিকৃত একটি ইসরাইলি কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় দুই শ’ কোটি ডলার মূল্যের আড়িপাতার যন্ত্রপাতি ক্রয় করছে। তাতে উভয় দেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি বসে কাজ করতে হবে এবং এই প্রযুক্তি ইসরাইল এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মেক্সিকোর কাছে বিক্রি করেছে। সেরকম একটি সময়ে আসলাম চৌধুরী তথা বিএনপিকে মোসাদের এজেন্ট সাজানো ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার বিষয়টি একটি হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়। তারপরও সরকার আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে এবং তাকে ৩০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে।
ঘটনার এ পর্যন্ত সরকার বেশ আমোদের ভেতরেই ছিল। কিন্তু তারপর একটি বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেন্দি এন সাফাদির একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো। তাতে সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সাফাদিকে জিজ্ঞেস করেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাস্তবিক পক্ষে তার কি ঘটেছিল? জবাবে সাফাদি তার আগের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন। তাতে সাফাদি বলেন যে, তিনি আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার বেশ আগেই ওয়াশিংটনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ইউটিউবে আপলোড করা ওই ভিডিওর সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান যে, সজীব ওয়াজেদ জয় নামে বাংলাদেশে একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু সাক্ষাৎকালে তিনি জানতেন না যে, জনাব জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তিনি বলেন, আমি জানতাম যে, তিনি বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তা আমি জানতাম না। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী টেলিভিশন পর্দায় জয়ের ছবি দেখিয়ে জানতে চান, ইনিই কি সেই ব্যক্তি? উত্তরে মেন্দি সাফাদি বলেন, হ্যাঁ ইনিই সেই ব্যক্তি যার সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ হয়েছিল। সাফাদি আরো বলেছেন, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে তার দেখা হয় ঘটনাক্রমে। তিনবার কথাও হয়। বাংলাদেশের আরো অনেকের সাথেই ফেসবুকে যোগাযোগ আছে তার। ভারতে আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে কথা হয়।
সচিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জয় তার কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন যে, বাংলাদেশ সরকার কতো ভাল করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক কতো ভালো। মি. সাফাদি দাবি করেন যে, সারা বিশ্বে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবহার করে মি. ওয়াজেদ সরকারের পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন সাফাদি বলেন, তিনি মি. ওয়াজেদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। সাফাদি তাকে বলেন, বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের হত্যার খবর দেখতে পাচ্ছেন। মি. ওয়াজেদ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, খবরগুলো ভুল। সব মিলিয়ে বৈঠকের স্থায়িত্ব ১৫ থেকে ১৬ মিনিটের বেশি ছিল না বলে সাফাদি বিবিসিকে জানান।
এই ভিডিওটি প্রচারিত হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বলা হতে থাকে যে, আসলাম চৌধুরী যদি সাফাদির সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করে থাকেন, তাহলে জনাব জয়ের বেলায় কি হবে? আমাদের অর্থনীতি এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি মোসাদ কানেকশনে ফেঁসে যাচ্ছে এ জন্য তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এগুলো করছে। তার ধারণা এই ভিডিওটি ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার। তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় কি কারণে মেন্দির সঙ্গে বৈঠক করবেন তা তার জানা নেই। আর বৈঠক করার কোনো কারণও নেই। যে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে তা বানানো হয়েছে কিনা কিংবা উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি কর্মকর্তা হিসাবে জয়ের নাম সেখানে লাগানো হয়েছে কিনা সেটা দেখা হতে পারে। তিনি বলেন, এমনও হতে পারে, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর নামে যখন মামলা হয়েছে ঠিক ওই সময়ে এই ভিডিও প্রকাশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বটে।
আমাদের অর্থনীতির পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে আসলাম চৌধুীর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, জয়ের বিরুদ্ধেও কি একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বৈঠকের বিষয়ে আমি কিছুই তো জানি না, তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।
এভাবেই পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে আসে। এর পর ২৮ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক একই দাবি করে বলেন, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বৈঠকের সংবাদটি বিএনপির সাজানো নাটক। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার বদৌলতে খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিএনপির নেতারা লন্ডনে বসে সাফাদির সঙ্গে জয়ের বৈঠক হয়েছে বলে নাটক সাজাচ্ছে? আসলাম চৌধুরী আটক হওয়ার পর তারা যে সরকার উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র করছিল তার বিভিন্ন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে নাটক সাজানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি ইসরাইলকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
রিপোর্টটি আরো বেশি গুরুত্ব পায় বিবিসি বাংলা মেন্দি এন সাফাদির সাক্ষাৎকার প্রচার করার পর। সাফাদির ঘটনা নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন বিবিসি সাফদির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেই সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান, রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে দিল্লীতে তার দেখা হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মি. ওয়াজেদের দফতরে দুজনের কথাবার্তা হয়। বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত রিপোর্ট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বিবিসি বাংলার কোনো সাংবাদিক সাফাদির সাক্ষাৎকার নেননি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যাকব মিল্টন। সে কে? তারা নাটকটি বানিয়ে বিবিসি বাংলাকে দিয়েছে এবং তাদের ফিচার করতে বলেছে। আর বিবিসি যদি সাক্ষাৎকার নিত সেটা সাংবাদিকদের নিয়েই নিত। আর নিঃসন্দেহ তার গুরুত্ব থাকত। বিবিসির মতো একটা প্রতিষ্ঠান একজনের ধার করা ইন্টারভিউ নিয়ে প্রচার করেছে, যা কারো জন্যেই কাম্য নয়। যা সংবাদ জগতের জন্য কাম্য নয়। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমরা এমন সংবাদের নিশ্চয়ই প্রতিবাদ জানাব।
এখানে ঘটনা দুটো। ভিডিওটি প্রচারিত হয়েছে তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, খুব সঙ্গত কারণেই। বিবিসি এ বিষয়ে সাফাদির মন্তব্য জানার জন্য সাফাদির সঙ্গে যোগাযোগ করে। সাফাদি বলেন, চার পাঁচ মাস আগে তিনি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে যান সে সময় তার একজন আমেরিকান বন্ধু দু’জনের মধ্যে এই বৈঠকটির আয়োজন করেন। ওই বন্ধু তাকে জানান, যার সঙ্গে তার দেখা হবে তিনি বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এর পর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে সজীব ওয়াজেদের অফিসে যান।
এর প্রেক্ষিতে সজীব ওয়াজেদ জয় গত ২৯ মে তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেছেন, সাফাদির সঙ্গে তার এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। তিনি বিএনপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা বলেছেন। জয় লিখেছেন, ‘বিএনপি এমনই এক বোকার দল, এমনকি তারা যখন মিথ্যা বলে তখনও বোকামিপূর্ণ ভুল করে। আমি চাই, বিএনপি ও সাফাদি একটা প্রশ্নের জবাব দিক। ওয়াশিংটনে ঠিক কোথায় সে আমার সাক্ষাৎ পেয়েছে? কোন অনুষ্ঠানে? অন্য কার অফিসে? প্রথম বোকামিপূর্ণ ভুল তারা করেছে কারণ আমি গত ৩-৪ বছরে ওয়াশিংটনে কোনো অনুষ্ঠান বা কারও অফিসে যাইনি। যে মিটিংগুলো আমার হয়েছে, সেগুলো সবই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং একান্ত ব্যক্তিগত।
‘তাহলে কোথায় তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হতে পারে? আমার সঙ্গে সাফাদির কোনো সময়ই সাক্ষাৎ হয়নি। এটা ওয়াশিংটনেও না কিংবা অন্য কোনো জায়গায়ও না। সে মিথ্যা বলেছে। সে যে বিএনপির জন্য মিথ্যা বলতে সম্মত হয়েছে, সেটা দিয়ে এও প্রমাণিত হচ্ছে, সে বিএনপির সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত। না হলে আর কী কারণে সে বিএনপির হয়ে মিথ্যা বলবে? এটাও খুব লজ্জাজনক যে, বিবিসি বাংলা আসলেই সেই ভুয়া ইন্টারভিউটি ঘটনার সত্যতা যাচাই ছাড়াই প্রচার করেছে। এ ঘটনা সংবাদের উৎস হিসেবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ উল্লেখ্য, সাফাদি জানিয়েছেন যে, তার সঙ্গে জয়ের সাক্ষাৎ হয়েছে জয়ের অফিসেই। অন্য কোথায়ও নয়।
এদিকে গত ২৯ মে আওয়ামী লীগ এক প্রতিবাদপত্রে সাফাদির সঙ্গে জয়ের বৈঠকের খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে খবরটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা দ্ব্যর্থহনি ভাষায় বলতে চাই, প্রকাশিত এই সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। সত্যের লেশমাত্র এই সংবাদে নেই। এই সংবাদটি বাংলাদেশের জনগণ, সরকার, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের চলমান গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।’
এ সম্পর্কে বিবিসি বাংলা তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, আওয়ামী লীগ তার প্রতিবাদপত্রে যে সাক্ষাৎকারের কথা বলেছে, বিবিসি বাংলা সে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কোনো সংবাদ প্রচার করেনি। লন্ডন থেকে আমেরিকায় টেলিফোন করে মি. সাফাদির সাথে কথা বলে তার দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে খবরটি অনলাইনে ও রেডিওতে প্রচার করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদে বলা হয়, ‘এই সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিবিসি সজীব ওয়াজেদের সাথে যোগাযোগ করার সাংবাদিকতার নীতিমালার ন্যূনতম সৌজন্যতাবোধেরও পরিচয় দেয়নি।’ এ সম্পর্কে বিবিসি বলেছে, খবরটি প্রচারের আগে এর সত্যতা যাচাই করার জন্য টেলিফোনে ও ফেসবুকে মি. ওয়াজেদের সাথে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। খবরটি প্রচারের পর গত দু’দিন ধরেও তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
এর পর বোধ করি আর কথা থাকে না। হানিফের সাংবাদিকতা শেখানোর ইশকুলের দরজা এখানেই বন্ধ হবে কি?
আসলাম চৌধুরীকে ভারতের একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির যুব সংগঠন। ঐ অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসরাইলের নাগরিক আন্তর্জাতিক কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক সাফাদিকে। সেখানে আকস্মিকভাবেই দু’জনের দেখা হয়। আয়োজকরা দু’জনকেই ভারতীয় প্রথা অনুযায়ী ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এই সেমিনারের কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা আগ্রার মেয়রের আমন্ত্রণে আগ্রাও সফর করেন। সেখানকার ছবিও আছে। মেন্দি এন সাফাদি এসব ছবি তার ফেসবুক পেজে অবিরাম আপলোড করেন। এই ছবি ঢাকার একাধিক সংবাদপত্র প্রকাশ করে একে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে। আওয়ামী নেতারা এই ঘটনার সূত্র ধরে একেবারে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেন। তারা শত মুখে বলতে শুরু করেন যে, বিএনপি মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে। অতএব গোটা মুসলিম বিশ্বের উচিত বিএনপিকে বর্জন করা। তারা বলতে থাকেন, বিএনপি মুখে ইসলামের কথা বললেও আসলে এই দলটি ঘোর ইসলাম বিরোধী ও ইসরাইইলপন্থী। আর আওয়ামী লীগ হলো সাচ্চা ইসলাম-পছন্দ দল।
এ বিষয়ে আসলাম চৌধুরী তার বক্তব্য পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, মেন্দি এন সাফাদিকে তিনি আগে কখনও চিনতেনই না বা তার সঙ্গে সাফাদির কোনো রকম যোগাযোগ ছিল না। অনুষ্ঠানে সাফাদি যেমন একজন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, তিনিও তেমনি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। এতে তারা দু’জনই শুধু ছিলেন না, আরও অনেক অংশগ্রহণকারী ছিলেন। আর সাফাদির বাড়ি যে ইসরাইল তাও তিনি শুরুতে জানতেন না। আবার তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য কিনা সে বিষয়েও তার (আসলাম চৌধুরী) কোনো ধারণা ছিল না। সাফাদি নিজেও তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার আগে কখনও পরিচয় ছিল না এবং দেখাও হয়নি। ওই সেমিনারে গিয়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তিনি নিজে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক। আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে কাজ করেন। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ঢাকা থেকে আমাদের অর্থনীতি ডট কম মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ‘ষড়যন্ত্র’ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে সাফাদি ওই পত্রিকাকে একই কথা বলেন।
এদিকে ঢাকার ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানমূলক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়-সাফাদির এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই এবং তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত নন। তবে এক সময় তিনি একজন উপ-মন্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। একথা সকলেই জানেন যে, ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ও ‘র’কে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রে রেজিস্ট্রিকৃত একটি ইসরাইলি কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় দুই শ’ কোটি ডলার মূল্যের আড়িপাতার যন্ত্রপাতি ক্রয় করছে। তাতে উভয় দেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি বসে কাজ করতে হবে এবং এই প্রযুক্তি ইসরাইল এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মেক্সিকোর কাছে বিক্রি করেছে। সেরকম একটি সময়ে আসলাম চৌধুরী তথা বিএনপিকে মোসাদের এজেন্ট সাজানো ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার বিষয়টি একটি হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়। তারপরও সরকার আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে এবং তাকে ৩০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে।
ঘটনার এ পর্যন্ত সরকার বেশ আমোদের ভেতরেই ছিল। কিন্তু তারপর একটি বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেন্দি এন সাফাদির একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো। তাতে সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সাফাদিকে জিজ্ঞেস করেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাস্তবিক পক্ষে তার কি ঘটেছিল? জবাবে সাফাদি তার আগের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন। তাতে সাফাদি বলেন যে, তিনি আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার বেশ আগেই ওয়াশিংটনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ইউটিউবে আপলোড করা ওই ভিডিওর সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান যে, সজীব ওয়াজেদ জয় নামে বাংলাদেশে একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু সাক্ষাৎকালে তিনি জানতেন না যে, জনাব জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তিনি বলেন, আমি জানতাম যে, তিনি বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তা আমি জানতাম না। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী টেলিভিশন পর্দায় জয়ের ছবি দেখিয়ে জানতে চান, ইনিই কি সেই ব্যক্তি? উত্তরে মেন্দি সাফাদি বলেন, হ্যাঁ ইনিই সেই ব্যক্তি যার সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ হয়েছিল। সাফাদি আরো বলেছেন, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে তার দেখা হয় ঘটনাক্রমে। তিনবার কথাও হয়। বাংলাদেশের আরো অনেকের সাথেই ফেসবুকে যোগাযোগ আছে তার। ভারতে আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে কথা হয়।
সচিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জয় তার কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন যে, বাংলাদেশ সরকার কতো ভাল করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক কতো ভালো। মি. সাফাদি দাবি করেন যে, সারা বিশ্বে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবহার করে মি. ওয়াজেদ সরকারের পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন সাফাদি বলেন, তিনি মি. ওয়াজেদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। সাফাদি তাকে বলেন, বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের হত্যার খবর দেখতে পাচ্ছেন। মি. ওয়াজেদ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, খবরগুলো ভুল। সব মিলিয়ে বৈঠকের স্থায়িত্ব ১৫ থেকে ১৬ মিনিটের বেশি ছিল না বলে সাফাদি বিবিসিকে জানান।
এই ভিডিওটি প্রচারিত হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বলা হতে থাকে যে, আসলাম চৌধুরী যদি সাফাদির সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করে থাকেন, তাহলে জনাব জয়ের বেলায় কি হবে? আমাদের অর্থনীতি এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি মোসাদ কানেকশনে ফেঁসে যাচ্ছে এ জন্য তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এগুলো করছে। তার ধারণা এই ভিডিওটি ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার। তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় কি কারণে মেন্দির সঙ্গে বৈঠক করবেন তা তার জানা নেই। আর বৈঠক করার কোনো কারণও নেই। যে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে তা বানানো হয়েছে কিনা কিংবা উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি কর্মকর্তা হিসাবে জয়ের নাম সেখানে লাগানো হয়েছে কিনা সেটা দেখা হতে পারে। তিনি বলেন, এমনও হতে পারে, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর নামে যখন মামলা হয়েছে ঠিক ওই সময়ে এই ভিডিও প্রকাশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বটে।
আমাদের অর্থনীতির পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে আসলাম চৌধুীর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, জয়ের বিরুদ্ধেও কি একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বৈঠকের বিষয়ে আমি কিছুই তো জানি না, তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।
এভাবেই পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে আসে। এর পর ২৮ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক একই দাবি করে বলেন, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বৈঠকের সংবাদটি বিএনপির সাজানো নাটক। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার বদৌলতে খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিএনপির নেতারা লন্ডনে বসে সাফাদির সঙ্গে জয়ের বৈঠক হয়েছে বলে নাটক সাজাচ্ছে? আসলাম চৌধুরী আটক হওয়ার পর তারা যে সরকার উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র করছিল তার বিভিন্ন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে নাটক সাজানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি ইসরাইলকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
রিপোর্টটি আরো বেশি গুরুত্ব পায় বিবিসি বাংলা মেন্দি এন সাফাদির সাক্ষাৎকার প্রচার করার পর। সাফাদির ঘটনা নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন বিবিসি সাফদির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেই সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান, রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে দিল্লীতে তার দেখা হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মি. ওয়াজেদের দফতরে দুজনের কথাবার্তা হয়। বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত রিপোর্ট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বিবিসি বাংলার কোনো সাংবাদিক সাফাদির সাক্ষাৎকার নেননি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যাকব মিল্টন। সে কে? তারা নাটকটি বানিয়ে বিবিসি বাংলাকে দিয়েছে এবং তাদের ফিচার করতে বলেছে। আর বিবিসি যদি সাক্ষাৎকার নিত সেটা সাংবাদিকদের নিয়েই নিত। আর নিঃসন্দেহ তার গুরুত্ব থাকত। বিবিসির মতো একটা প্রতিষ্ঠান একজনের ধার করা ইন্টারভিউ নিয়ে প্রচার করেছে, যা কারো জন্যেই কাম্য নয়। যা সংবাদ জগতের জন্য কাম্য নয়। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমরা এমন সংবাদের নিশ্চয়ই প্রতিবাদ জানাব।
এখানে ঘটনা দুটো। ভিডিওটি প্রচারিত হয়েছে তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, খুব সঙ্গত কারণেই। বিবিসি এ বিষয়ে সাফাদির মন্তব্য জানার জন্য সাফাদির সঙ্গে যোগাযোগ করে। সাফাদি বলেন, চার পাঁচ মাস আগে তিনি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে যান সে সময় তার একজন আমেরিকান বন্ধু দু’জনের মধ্যে এই বৈঠকটির আয়োজন করেন। ওই বন্ধু তাকে জানান, যার সঙ্গে তার দেখা হবে তিনি বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এর পর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে সজীব ওয়াজেদের অফিসে যান।
এর প্রেক্ষিতে সজীব ওয়াজেদ জয় গত ২৯ মে তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেছেন, সাফাদির সঙ্গে তার এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। তিনি বিএনপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা বলেছেন। জয় লিখেছেন, ‘বিএনপি এমনই এক বোকার দল, এমনকি তারা যখন মিথ্যা বলে তখনও বোকামিপূর্ণ ভুল করে। আমি চাই, বিএনপি ও সাফাদি একটা প্রশ্নের জবাব দিক। ওয়াশিংটনে ঠিক কোথায় সে আমার সাক্ষাৎ পেয়েছে? কোন অনুষ্ঠানে? অন্য কার অফিসে? প্রথম বোকামিপূর্ণ ভুল তারা করেছে কারণ আমি গত ৩-৪ বছরে ওয়াশিংটনে কোনো অনুষ্ঠান বা কারও অফিসে যাইনি। যে মিটিংগুলো আমার হয়েছে, সেগুলো সবই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং একান্ত ব্যক্তিগত।
‘তাহলে কোথায় তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হতে পারে? আমার সঙ্গে সাফাদির কোনো সময়ই সাক্ষাৎ হয়নি। এটা ওয়াশিংটনেও না কিংবা অন্য কোনো জায়গায়ও না। সে মিথ্যা বলেছে। সে যে বিএনপির জন্য মিথ্যা বলতে সম্মত হয়েছে, সেটা দিয়ে এও প্রমাণিত হচ্ছে, সে বিএনপির সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত। না হলে আর কী কারণে সে বিএনপির হয়ে মিথ্যা বলবে? এটাও খুব লজ্জাজনক যে, বিবিসি বাংলা আসলেই সেই ভুয়া ইন্টারভিউটি ঘটনার সত্যতা যাচাই ছাড়াই প্রচার করেছে। এ ঘটনা সংবাদের উৎস হিসেবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ উল্লেখ্য, সাফাদি জানিয়েছেন যে, তার সঙ্গে জয়ের সাক্ষাৎ হয়েছে জয়ের অফিসেই। অন্য কোথায়ও নয়।
এদিকে গত ২৯ মে আওয়ামী লীগ এক প্রতিবাদপত্রে সাফাদির সঙ্গে জয়ের বৈঠকের খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে খবরটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা দ্ব্যর্থহনি ভাষায় বলতে চাই, প্রকাশিত এই সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। সত্যের লেশমাত্র এই সংবাদে নেই। এই সংবাদটি বাংলাদেশের জনগণ, সরকার, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের চলমান গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।’
এ সম্পর্কে বিবিসি বাংলা তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, আওয়ামী লীগ তার প্রতিবাদপত্রে যে সাক্ষাৎকারের কথা বলেছে, বিবিসি বাংলা সে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কোনো সংবাদ প্রচার করেনি। লন্ডন থেকে আমেরিকায় টেলিফোন করে মি. সাফাদির সাথে কথা বলে তার দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে খবরটি অনলাইনে ও রেডিওতে প্রচার করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদে বলা হয়, ‘এই সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিবিসি সজীব ওয়াজেদের সাথে যোগাযোগ করার সাংবাদিকতার নীতিমালার ন্যূনতম সৌজন্যতাবোধেরও পরিচয় দেয়নি।’ এ সম্পর্কে বিবিসি বলেছে, খবরটি প্রচারের আগে এর সত্যতা যাচাই করার জন্য টেলিফোনে ও ফেসবুকে মি. ওয়াজেদের সাথে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। খবরটি প্রচারের পর গত দু’দিন ধরেও তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
এর পর বোধ করি আর কথা থাকে না। হানিফের সাংবাদিকতা শেখানোর ইশকুলের দরজা এখানেই বন্ধ হবে কি?
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী