বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা প্রসঙ্গ


আগের দিনে কাজীর বিচারের কথা আমরা শুনেছি। কাজী সাহেবরা ন্যায়বিচার করতে গিয়ে রাজা-বাদশাদেরও তোয়াক্কা করতেন না। ফলে শাসক রাজা-বাদশাহরাও কাজী সাহেবদের সমীহ করে চলতেন। সমাজের প্রায় সবশ্রেণির মানুষই কাজী সাহেবদের সম্মান করতেন, মর্যাদা দিতেন। এখন সেই কাজীর বিচার নেই। তবে কাজী সাহেব আছেন। এখনও মানুষকে কাজীর কাছে যেতে হয়। কিন্তু আগের দিনের মতো বিচারের জন্য নয়। অবশ্য কাজী সাহেবরাও প্রয়োজনে মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেন। কাবিননামা রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু কাবিননামার নকল সঙ্গে সঙ্গে পাত্রপাত্রী বা তাদের অভিভাবকদের দেয়া হয় না। অজ্ঞাত কারণে সেটি কাজী অফিস থেকে পরে সরবরাহ করা হয়। কাবিননামার জন্য দেনমোহরের পরিমাণ অনুসারে সরকারকে কর দিতে হয়। এ কর থেকেই কাজী সাহেবদের বেতন বা পারিশ্রমিক দেয়া হয়। কাবিননামার জন্য যে কর দেয়া হয় তা কিন্তু নেহায়েতই কম নয়। এরপর কাজী সাহেবরা যাতায়াত খরচ, বকশিশ ইত্যাদি বাবদও অর্থ আদায় করেন। বিয়ের পাত্রপাত্রী বা তাদের অভিভাবকদের এতে তেমন আপত্তিও থাকে না। কিন্তু এমন কাজীও দেখা যায়, যারা নির্ধারিত করের বাইরেও বকশিশ ইত্যাদির নামে অর্থ আদায়ে পিড়াপিড়ি করেন; যা সত্যি পীড়াদায়ক ও আপত্তিকর।
যাহোক, ঢাকা মহানগরীর মগবাজার এলাকায় কাজী অফিসে কাবিননামা নিতে গিয়ে এক তরুণী শ্লীলতা হারিয়েছেন এক সহকারী কাজীর কাছে। সত্যি এ ঘটনা খুবই লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক। কাজী সাহেব কাবিননামা দেয়ার নাম করে মেয়েটিকে কৌশলে শোবার ঘরে নিয়ে তার শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েটি। পুলিশ অভিযুক্ত কাজীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। অভিযুক্ত সহকারী কাজী নুরুল হুদা পুলিশের কাছে অপরাধ স্বীকারও করেছেন। উল্লেখ্য, সহকারী কাজী নুরুল হুদা মেয়েটির নাকি উকিলবাবাও হয়েছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। ফলে সহকারী কাজী যে আসলে পাজি এটা হয়তো মেয়েটির ধারণায়ও ছিল না। তাই তার কথায় মেইন কাজী অফিস থেকে শাখা কাজী অফিসে কাবিননামা তুলতে যান শ্লীলতাহানির শিকার হতভাগ্য মেয়েটি। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত নুরুল হুদা সেনাবাহিনীর সার্জেন্টপদ থেকে অবসর নিয়ে কাজী পেশায় যোগদান করেন। কিন্তু কিভাবে তিনি এ দায়িত্বপূর্ণ পদে যোগদান করলেন তা অবশ্য পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়নি। প্রশ্ন করা যেতে পারে, যে কেউ কি যখন তখন কাজী পেশায় নিয়োজিত হতে পারেন? নিয়োগের আগে তার বংশপরিচয়, যোগ্যতা বা চরিত্র সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার কি প্রয়োজন পড়ে না?
ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বা কাজী সাহেবরা সবাই দোষী নন। সমাজে তাদের মর্যাদা রয়েছে। প্রতিদিন তাদের দরকার হয়। ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশনের কাজটি যেমন সেবামূলক, তেমনই ধর্মীয় দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি মোটেও উপেক্ষণীয় নয়। কাজেই এ পেশায় নিয়োগের সময় ভালোভাবে যাচাই বাছাই হওয়া দরকার আছে বলে আমরা মনে করি। দেশের আইন মোতাবেক অপরাধ সংঘটক কাজীর উপযুক্ত শাস্তি হবে নিশ্চয়ই। তবে আলোচ্য হতভাগ্য তরুণীটির মতো কেউ কাজীর কাছে গিয়ে শ্লীলতা যেন না হারান, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
এই সাথে আমরা বলতে চাই, মেয়েদের এখানে-সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার। ইসলাম এ ব্যাপারে পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছে, যা অনুসৃত হলে এ ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads