বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

নেতাদের অনেককে নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিকল্পনা


সরকার মামলার পর মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-নেত্রীদের ব্যতিব্যস্ত রাখার এবং সাজা বা দন্ড দেয়ার অপকৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বলে নতুন পর্যায়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সরকারের আসল লক্ষ্য যে কোনোভাবে তাদের সাজা দেয়া বা দন্ডিত করা, যাতে তারা পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষিত হন। এই অভিযোগের পক্ষে তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিগত কয়েকদিনে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে অন্তত ২৯টি মামলা দায়ের করেছে সরকার। এসবের মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আর্থিক দুর্নীতিকেন্দ্রিক দুটি মামলা শেষ করার জন্য সরকারের তড়িঘড়ি এমনকি সাধারণ মানুষকেও বিস্মিত করেছে। বিচারক বদল এবং সময় চেয়ে করা বেগম জিয়ার প্রতিটি আপিলই খারিজ করা হয়েছে। বিচারিক আদালতও স্থাপিত হয়েছে সিএমএম কোর্ট এলাকার বাইরে পৃথক একটি স্থানে, যেখানে বিএনপি নেত্রীর জন্য নিরাপত্তার প্রচন্ড ঝুঁকি রয়েছে। সব মিলিয়েই বোঝা যাচ্ছে, সরকার অতি দ্রুত বিচার কাজ শেষ করতে চায়। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মামলার রায়ও সরকার সম্ভবত ঠিক করে রেখেছে। সে রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো না কোনো ধরনের দন্ড দেয়া হবে, যাতে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন। একইভাবে তার বড় ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও সরকার অন্তত ২২টি মামলা ঠুকে রেখেছে। লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানকে মামলায় হাজির হওয়ার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা পর্যন্ত জারি করিয়েছে সরকার। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, হাজির হোন আর নাই হোন, তারেক রহমানকেও দন্ডিত করা হবে এবং তিনিও পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। উল্লেখ্য, বেগম জিয়ার অপর ছেলে আরাফাত রহমানকে একটি মামলায় ইতিমধ্যেই ছয় বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, তারেক রহমানের স্ত্রী ডাক্তার জোবাইদা রহমানকেও সরকার মামলায় জড়িয়েছে। অথচ তিনি কখনো দল বা রাজনীতি করেননি। বিএনপির অন্য সকল শীর্ষ নেতাকেও মামলায় জড়িয়ে ধাওয়ার মুখে রেখেছে সরকার। মওদুদ আহমেদ ও মির্জা আব্বাসসহ ৪১ জন বিশিষ্ট নেতার বিচারও শুরু হয়েছে সম্প্রতি। বলা হচ্ছে, সরকারের উদ্দেশ্য এসব নেতাকে দন্ডিত করা, যাতে তাদের পক্ষে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সম্ভব না হয়। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যে দন্ডিত করা হবেই- এ বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কোনো সন্দেহ নেই। ওদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় ২৬ হাজার মামলায় পাঁচ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। জামায়াতের ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের একার বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে দুইশ’র বেশি মামলা। এখানেও সরকারের উদ্দেশ্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই। সরকার জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকেও দন্ড দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে চায়, যাতে সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন না হতে হয়। তাছাড়া বিরোধী দল যাতে আন্দোলন করতে না পারে। 
আমরা সাজানো মামলা ও দন্ডের মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে চলমান কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে এই মামলাবাজি বন্ধ করা। সরকারকে বুঝতে হবে, মিথ্যা মামলার ভিত্তিতে দন্ড বা সাজা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করা যায় না। দলগুলোকে সাময়িককালের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে না দেয়া গেলেও জনগণের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া ঘটবে তার ফল ক্ষমতাসীনদের জন্য অশুভ হয়ে উঠতে বাধ্য। ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন যে বারবার অনুষ্ঠান করা যাবে না এবং কোনোভাবে করা গেলেও তেমন নির্বাচন যে ক্ষমতাসীনদের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাবে সে কথাটাও সময় থাকতে অনুধাবন করা দরকার। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা এগিয়েছেন  উল্টো পথে। তারা বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে বাইরে রেখে নতুন একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগোতে শুরু করেছেন। তাদের ধারণা, কোনোভাবে ৫ জানুয়ারির তুলনায় কিছুটা ভালো নির্বাচন করা গেলেই নতুন সরকারকে এখনকার মতো বৈধতার সংকটে পড়তে হবে না। অন্যদিকে আমরা কিন্তু মনেই করি না যে, এভাবে যেনতেন ধরনের কোনো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এজন্যই সরকারের উচিত মিথ্যা মামলায় দন্ড দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার চিন্তা ছেড়ে গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসা এবং বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার পথে পা বাড়ানো। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কেও ২০ দলীয় জোটের দাবি মেনে নিতে হবে। তাহলেই সংকট যেমন সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তেমনি সরকারকেও আর ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে হবে না। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads