বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬

রিজার্ভ চুরির দায়মুক্তি?


ল্যাটিন চার্চের পুরোধা সেন্ট অগাস্টিন ( St. Augustine ) (৩৫৪-৪৩০ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্ব ইতিহাসের এক সংকটময় মুহূর্তে জীবনের পথ-পরিক্রমা শুরু করেন। তিনি ছিলেন সেন্ট আ শিষ্য কিন্তু ভাবীকালের চিন্তাক্ষেত্রে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা তার মহান গুরুও কল্পনা করতে পারেননি। সেন্ট অগাস্টিনের ভাষায়, ‘রাষ্ট্র হলো মানুষের আদি পাপের ফলশ্রুতি। রাষ্ট্রীয় জীবনের মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্য সম্পন্ন হলে মানুষ আবার স্বর্গরাজ্যের যোগ্য হয়ে ওঠে’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা বোধ হয় রাষ্ট্রাচারের মাধ্যমে সেই আদি পাপেরই প্রায়শ্চিত্য করছি। সেন্ট অগাস্টিনের মতে, প্রায়শ্চিত্যের পরিসমাপ্তি থাকলেও আমাদের ক্ষেত্রটা বোধহয় তা থেকে আলাদা। আমাদের আদি পাপটা এতো বেশি হয়েছে যে, তার প্রায়াশ্চিত্যের কোন শেষ আছে বলে মনে হয় না। তাই আমাদের পক্ষে স্বর্গরাজ্যের যোগ্য হয়ে ওঠাটা সুদূর পরাহত; অনেকটা অবাস্তবই বলতে হবে।
যদিও আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তকদের সংজ্ঞায় রাষ্ট্রের ভিন্নচিত্র পাওয়া পায়। আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার (Maciver) বলেন, (The state is an association which acting through law as promulgated by a government endowed to this end with coercive power, maintaining within a community territorially demarcated, the universal external condition of social order.)
অর্থাৎ রাষ্ট্র এমন একটি সংঘ, যা সরকারের ঘোষিত আইন অনুসারে কার্য করে। সরকার আইন ঘোষণা করার এবং তা পালন করার শক্তির অধিকারী। ঐ শক্তির সাহায্যে সরকার নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে সামাজিক শৃঙ্খলার বাহ্যিক ও সর্বজনীন অবস্থা বজায় রাখে।
মূলত আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় ভূখণ্ডের নিরাপত্তা, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি, রাষ্ট্র শৃঙ্খলা ও সর্বজনিনতা স্বীকৃত হলেও আমাদের দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর পৌণপৌণিক ব্যর্থতার কারণে মানুষ রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ রাষ্ট্রে মূল দায়িত্ব হলেও আমরা সে লক্ষ্যে এখনো পৌঁছতে পারিনি। আসলে রাষ্ট্র যেমন গণমানুষের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ, ঠিক তেমনিভাবে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তাও আজ হুমকির মুখোমুখি। ফলে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই অনাকাক্সিক্ষত নৈরাজ্য ও অনিয়ম সহজেই দৃশ্যমান।
নিয়ম মাফিক চলছে না কোন কিছুই। চারদিকে শুধুই চলছে লুটপাট আর অনিয়মের মহোৎসব। দেশের শেয়ারমার্কেট থেকে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেল। লুটেরাদের কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করা গেল না।  হলমার্ক, ডেসটিনি, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও বিসমিল্লাহ হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হলো। কিন্তু এসবেরও কোন কুল-কিনারা হলো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করেছে সংঘবদ্ধ দেশি-বিদেশি একটি চক্র। এ নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও হালে যা শুরু হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, কথিত তদন্তের নামে এসব জাতীয় খাদকদের দায়মুক্তির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর ক্ষমতাসীনদের এমন নেতিবাচক মানসিকতার কারণে এসব রাজলুটেরা এখন অনেকটাই বেপরোয়া। তারা  একটার পর একটা সফলতা পাচ্ছে এবং নতুন নতুন প্রকল্পও গ্রহণ করছে। বিচারহীনতার কারণেই তারা এখন অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য। হালে শনির আছর লেগেছে রাষ্ট্রায়াত্ত অগ্রণী ব্যাংকের উপরও। এদের দৌরাত্মের কোন সীমা-পরিসীমা নেই।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ভুয়া কোম্পানি ও ব্যাংক হিসাব খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়াত্ত অগ্রণী ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে এসব সর্বভূকের দল। ইউরোপা গ্রুপের নয়টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল অংকের এ টাকা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা রিপোর্টে আর্থিক এ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হয় কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের তেজগাঁও শিল্প এলাকা শাখায় ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য নিয়মবহির্ভূত কাজগপত্র দিয়ে খোলা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৭৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে ইউরোপা গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী। এর মধ্যে পটেটো ফ্ল্যাক্স বিডি লিমিটেডের অনুকূলে ৬৯ কোটি ৬২ লাখ, ইউরোপো কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ১৭ কোটি ৫৪ লাখ, মাহিন নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজের ২৭ কোটি ১ লাখ, সাথী অ্যাপারেলস ৬ কোটি ৮৬ লাখ, তিষাম অ্যাপারেলস ৩২ কোটি ২৩ লাখ ও শিহাব গার্মেন্টের ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্ত ও দায়ি ব্যক্তিদের শনাক্তকরণের বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা নিয়ে বেশ প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষরা বলছেন, রিজার্ভের বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটের ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত নয় বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পনুরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ নিয়েই কাজ করছে তদন্ত কমিটি। ফলে দোষীদের শনাক্ত করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছিল তাতে ভাটা পড়েছে। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রভাবশালী একটি চক্র কাজ করছে। ফলে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে তদন্তের বিষয়টি রীতিমত ভানুমতির খেলায় পরিণত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও এখন বলা হচ্ছে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কাজ করা হচ্ছে কিন্তু অভিজ্ঞমহল মনে করছেন সবই শুধুই আই-ওয়াস। বাস্তবতার সাথে এর কোন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চলমান সকল প্রক্রিয়ায় দায়িদের দায়মুক্তির দেয়ার অপকৌশল ছাড়া অন্যকিছু নয়।
এদিকে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই দাবি করেছে, অর্থ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত একজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক দোষ চাপাচ্ছে সুইফট ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের ওপর। এর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। মূলত রাষ্ট্রীয় অর্থের তদারকি প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই অর্থ চুরির সঙ্গে যদি ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর তা করতে ব্যর্থ হলে আগামী দিনে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না।
মূলত ফিলিপাইনের প্রচেষ্টায় ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কাছ থেকে কিছু ডলার উদ্ধারের দাবি করা হয়েছে। ফিলিপাইনের এএমএলসি    (১-এর কলামে দেখুন)
চুরির দায়মুক্তি 
(৮-এর কলামের পর)
(অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল) অর্থ পাচারের জন্য কয়েকজনকে শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত দোষীদের শনাক্ত করতে পারেনি বা এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। আসলে রিজার্ভ লুটের ৩ মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্টে সিস্টেমে আরটিজিএস স্থাপনে নিরাপত্তা ফায়ারওয়াল ফেলে দেওয়া ও ১০ মাস পূর্বে ২০১৫ সালের মে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা একইসূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থের সিংহভাগ যারা ফিলিপাইনের একটি ব্যাংক হয়ে ক্যাসিনোয় পাচার করেছিলেন, তাদের সবাই এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তদন্তে দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনকেও ( এনবিআই) যুক্ত করা হয়নি পুরো মাত্রায়। সিনেটে যে শুনানী শুরু হয়েছিল, গত সপ্তাহে তাও শেষ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। জানা গেছে, ফিলিপাইনের ক্যাসিনোগুলো অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় পড়ে না। ফলে খেলোয়ারদের অর্থের উৎসের ব্যাপারে সরকারকে তথ্য দিতে বাধ্য নয় তারা। এই কারণটিকেই তদন্ত ঝিমিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জুয়ার ব্যবসাকে জমিয়ে তুলতে ২০১৩ সালে ফিলিপাইনের কংগ্রেস ক্যাসিনোগুলোকে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
রিজার্ভ চুরির তদন্তেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্বাবিরোধিতা স্পষ্ট। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. ফরাসউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ঘটনায় সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত নয় বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। তবে এক্ষেত্রে তাদের চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ এই ফরাসউদ্দিনই ঘটনার শুরুর দিকে, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অর্থচুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যুক্ততা অবশ্যই আছে। এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারের কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে গেলেন। মূলত তদন্ত চলছে সরকার নির্ধারিত ছকে এবং ফরমায়েসী স্টাইলে। ফলে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী শনাক্ত করার পরিবর্তে সময় ক্ষেপন এবং এক সময় পুরো ঘটনাটায় ধামাচাপার দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেই মনে হয়।
এদিকে বৃটেনের ডেইলি মেইল রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নতুন বোমা ফাটিয়েছেন। দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পেছনে মূল হোতারা রয়েছে ভারতে। এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা হ্যাকিংয়ের পরিকল্পনা করে। আর এটা একজনের নয়, কয়েকজনের কাজ। এতে আরো বলা হয়, এসব হ্যাকারের হদিস পাওয়া সম্ভব নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে হ্যাকাররা। এর মধ্য থেকে তারা মাত্র ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নিতে সমর্থ হয়। এই অর্থ লোপাটের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা। তবে এখনও পর্যন্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি। মেইল অনলাইনকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই রাজকোষ কেলেঙ্কারি কোনো একজন ‘হোতা’র কাজ নয়। এই কাজে একাধিক ব্যক্তি জড়িত এবং তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঘটনার পরিকল্পনা করেছে। 
সূত্রটি বলেছে, ‘এতে সংশ্লিষষ্টরা ভারতে রয়েছে এবং তারা সম্ভবত প্রক্সি (ইন্টারনেটে নিজের প্রকৃত অবস্থান গোপন করে ভার্চুয়াল অবস্থান দেখানোর পদ্ধতি) ব্যবহার করছে। সে কারণেই তাদের ধরা যাচ্ছে না। তারা ভারতের কেন্দ্রেই অবস্থান করছে এবং কয়েকজন রয়েছে বাইরে। কারিগরি দিক থেকে তারা এতটাই শক্তিশালী যে তাদের সন্ধান পাওয়াই সম্ভব নয়।’ ওই সূত্রটি আরও বলেছে, ‘এসব ব্যক্তি খুব সহজেই নিজেদের লুকাতে পারে এবং ২/৩ মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যেতে পারে।’ সূত্রটি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ লোপাট হওয়া অর্থের কিছুটা উদ্ধার করতে পারলেও পুরোটা পারেনি এবং এর হোতাদের সারাজীবন নিশ্চিন্তে পার করে দেয়ার জন্য দেড় কোটি ডলারই যথেষ্ট।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে অনাকাঙ্খিত বিতর্ক। ম্যানিলার একজন বেসরকারি গোয়েন্দা অগাস্টাস এসমেরাল্ডা রয়টার্সকে বলেছেন, এই ঘটনাকে ব্যাংকের হ্যাকিং হিসেবে দেখা উচিত হবে না। তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা হ্যাকারদের নিযুক্ত করে অর্থ চুরির ঘটনার মতো। এর পিছনে রয়েছেন এমন ব্যক্তি যিনি ব্যাংক, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং সিস্টেম ও ক্যাসিনো সম্পর্কে জানেন। আমার কাছে এটাকে মনে হয়েছে আধুনিক সময়ের ওশান’স ১১। একে বলা যেতে পারে ম্যানিলা ১২।’ উল্লেখ্য, ওশান’স ১১ একটি হলিউড সিনেমা যাতে লাস ভেগাসের একটি ক্যাসিনো থেকে অর্থ চুরি করে ১১ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল।
রিজার্ভ চুরির ঘটনার মূল হোতাদের আড়াল করতে নানা বিভ্রান্তিমূলত ও  কৌশলী প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে একটি জাতীয় দৈনিক দাবি করেছে। এই প্রচারণার অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংক শিল্পভবন শাখা থেকে আড়াই লাখ ডলার চুরির ঘটনাকে সুইফট সিস্টেম হ্যাকিংয়ের ফল বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ মাধ্যমে এ ঘটনায় বরাবরই সুইফটের দোষ খোঁজার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে সুইফটের দুর্বলতা খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যম সুইফট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করা হচ্ছে ১৫ বছর ধরে। ১৫ বছরের এ নিরাপত্তা বলয় ভাঙার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকে কেউ দায়ী কি না সে বিষয়টি উঠে আসছে না ওই সংস্থার প্রতিবেদনে। ফলে বিষয়টি অনেকটা একপেশে হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে কি না সে বিষয়টিও ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে ওই সূত্রটি মনে করছে।
মূলত রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে একেবারে লেজে-গোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এখন চোর ধরার পরিবর্তে কিছু চটকদার কথা বলে পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও একটি সংকীর্ণ বৃত্তের মধ্যে আটকা পড়েছেন। সঙ্গত কারণেই হয়তো তাদের পক্ষে সে বৃত্ত অতিক্রম করা সম্ভব নয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য সে কথারও প্রমাণ বহন করে। আসলে ঘটনার তদন্ত চলছে রীতিমত ফরমায়েসী ষ্টাইলে। আর তদন্ত সংশ্লিষ্টদের এই দাসপ্রবণ মনেবৃত্তি আর যাইহোক ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়ক হবে না বরং তা এক অনাকাঙ্খিত জটিলতার সৃষ্টি করবে।
ঘটনার ভয়াবহতায় আমাদেরকে আবার ফিরে আসতে হয় সেন্ট অগাস্টিনের কথায়। তাই তার কথায় সুর মিলিয়ে বলতে হয় আমরা বোধহয় সেই আদিকালের পাপের প্রায়শ্চিত্যই করছি। আর পাপের পরিধিটা অনেক বেশি হওয়ার কারণেই আমাদের প্রায়শ্চিত্তের পরিসমাপ্তি ঘটছে না। আর সে প্রায়শ্চিত্তের অংশ হিসাবেই বোধহয় হয় এসব রাজকীয় চোরদের দায়মুক্তি দিতে হচ্ছে। আসলে পাপ আর প্রায়াশ্চিত্য বলে কথা। অন্যথা হওয়ার সুযোগ আছে? আর স্বর্গসুখটা তো আমাদের জন্য রীতিমত অধরাই থেকে যাচ্ছে।
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads