‘স্বার্থ যেখানে ঐক্যের বন্ধন, সংঘাত সেখানে অনিবার্য’। কথাটি আমার নয়। আমার এবং আমাদের অনেকেরই একজন বড়ভাই ছিলেন। নাম ফারুক মাহমুদ। অনেকেই তাকে জানতেন কবি হিসেবে। তাই অন্যেরা তার নাম লিখতেন কবি ফারুক মাহমুদ। আমি ডাকতাম ফারুক ভাই। বেশ কয়েক বছর আগে ফারুক মাহমুদ আমাদেরকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য ওপারে চলে গেছেন। ফারুক ভাই সম্পর্কে আরো কিছু বলার আছে। সেটি একটু পরে বলবো। কিন্তু ফারুক ভাইকে স্মরণ করছি রাজনীতিতে সুবিধাবাদের দৌরাত্ম্য দেখে। ফারুক ভাইয়ের আমলেও রাজনীতিতে বিশেষ করে ক্ষমতার রাজনীতিতে সুবিধাবাদ এমন প্রকট হয়ে উঠেছিল। দুই বিপরীত আদর্শের এক বা একাধিক রাজনৈতিক দল এক জামাতে শামিল হয়েছিল। বলা বাহুল্য, ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ-বাটোয়ারা করার জন্যই তারা এক প্ল্যাটফর্মে মিলিত হয়েছিলেন। এরপর সেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়েই তাদের মধ্যে কামড়াকামড়ি শুরু হয়। কামড়াকামড়িটা এমন পর্যায়ে যায় যে প্রথমে বাকযুদ্ধ, পরে হাতাহাতি এবং তারপরে লাঠালাঠি। তাদের সেই লাঠালাঠি দেখে ফারুক ভাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘স্বার্থ যেখানে ঐক্যের বন্ধন, সংঘাত সেখানে অনিবার্য’।
কথাটি ফারুক ভাইয়ের নিজস্ব, নাকি কোন মনিষীর কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন সেটি আমার এখন স্পষ্ট মনে পড়ছে না। তবে কথাটি চরম সত্য। আজ আওয়ামী লীগ এবং জাসদের মাঝে দারুণ তর্কযুদ্ধ দেখে এসব কথা মনে পড়ছে। জানি না, ফারুক ভাই বেঁচে থাকলে তিনি আজ কি বলতেন। আমার আজকের লেখার উপজীব্য আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাকযুদ্ধ। এ সম্পর্কে একটু পরেই বলছি। তার আগে ফারুক ভাই সম্পর্কে আরো দু’চারটি কথা।
একাডেমিক ডিগ্রী থাকলেই কোন মানুষ যেমন বিদ্বান হয় না, তেমনি জ্ঞানীও হয় না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোন একাডেমিক ডিগ্রী ছিল না। তারপরেও আজ কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল চেয়ার স্থাপিত হয়েছে। তার অর্থ হলো, এমএ ক্লাসেও নজরুল সাহিত্য পড়ানো হচ্ছে। এখানে অবশ্য আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নাই যে, জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সেক্যুলার ঘরানা নজরুলকে চরমভাবে উপেক্ষা করছেন। অথচ একটি সময় ছিল যখন তারা সভা-সমিতিতেও নজরুলের গান গাইতেন। নজরুলের ওপর নাটক করতেন, ছায়ানাট্যও করতেন। অবশ্য নজরুলের সাহিত্য সমগ্র নিয়ে নয়। বেছে বেছে কয়েকটি গান তারা বাজাতেন এবং গাইতেন। সেই সব গান যেগুলো সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন-
কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
লাথি মার, ভাঙ্গরে তালা!
যত সব বন্দী শালায়-
আগুন-জ্বালা,
-জ্বালা, ফেল উপাড়ি।
আরো একটি গান গাওয়া হতো। সেটি ছিল -
জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত
জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত!
যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’
হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী,
নব জনম লভি’ অভিনব ধরণী
ওরে ঐ আগত।
জাগো....
আরো ছিল। যেমন-
মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ,
ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত।
আরেকজন অমর কবি হলেন, ফররুখ আহমেদ। তারও তো এমএ ডিগ্রী ছিল না। অথচ আমরা এবং আমাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক যুবক ফররুখ আহমেদকে ছোট নজরুল বলতাম। তার ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘সিন্দাবাদ’ সহ অসংখ্য কবিতা মুসলিম মানসকে উজ্জীবিত করে।
ফারুক ভাইকে আমি ঠিক ঐ দুই অমর কবির পর্যায়ে নিয়ে না গেলেও আমাকে বলতেই হবে যে, তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। দারিদ্র্য এবং কঠিন জীবন যুদ্ধ তার প্রতিভার পূর্ণ স্ফুরণ ঘটাতে পারেনি। তারপরেও যতটুকু স্ফুরিত হয়েছে সেটিও অনেকে জানেন না। যেমন- রবীন্দ্রনাথের, ‘খরো বায়ু বয় বেগে / চারিদিক ছায় মেঘে / ওগো মাঝি নাও খানি বাইও’। কবি ফারুক মাহমুদ এই গানটির যে প্যারোডি করেছিলেন তার কয়েকটি লাইন নীচে তুলে ধরছি।
জালিমের জিন্দানে ধুকে মরা জিন্দেগী
আমরা আজাদ ফের করবো
ইসলামী হুকুমতে আল কোরআনের মতে
নয়া এক খেলাফত গড়বো।
আমরা মুমীন দিল নিয়েছি শপথ
জান কোরবান দেবো ছাড়বো না পথ।
মরতে যদি বা হয় জিহাদের ময়দানে
শহীদ সেনার মতো মরবো।
জালিমের জিন্দানে —
এছাড়া ‘ধোলাই কাব্য’ নামে ফারুক মাহমুদের একটি রাজনৈতিক কবিতার বই বেরিয়েছিল। রাজনীতির কবিতার বই না বলে সেটিকে বরং পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বলা যায়। ফারুক মাহমুদ প্রসঙ্গ এখানেই শেষ। এখন যাচ্ছি মূল প্রসঙ্গে। সেটি হলো, আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাক যুদ্ধ।
॥দুই॥
কেউ যদি মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফই মহাজোটে থাকা অবস্থায় মহাজোটের শরিক জাসদের বিরুদ্ধে এই প্রথম বললেন তাহলে সত্যের অপলাপ হবে। আজ থেকে প্রায় ১০ মাস আগে জাসদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ফার্স্ট কাজিন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি মরহুম শেখ ফজলুল হক মনির আপন ছোট ভাই। শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র হলেন ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট জাতীয় সংসদে জাসদের ’৭২ থেকে ’৭৫ সালের কর্মকা-ের তদন্তের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদ দায়ী। এর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে শেখ সেলিম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণ বাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল। তার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নেতা জাসদকে তুলোধুনা করেন। যতদূর মনে পড়ে, আওয়ামী লীগের এসব প্রভাবশালী সদস্যের বিষোদ্গারের ফলে আওয়ামী লীগ হাই কমান্ডের অনেকেই বিব্রত হন। কারণ, জাসদ তখনও মহাজোটের শরিক ছিল। এর ফলে ৩/৪ দিন পরে দেখা যায়, জাসদ ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে বিতর্ক বন্ধ করার আহ্বান জানান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর সাময়িকভাবে হলেও জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতার বিষোদ্গার থেমে যায়। তারপর ১০ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। ১০ মাসের মাথায় আবার জাসদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। এবার আর যে সে ব্যক্তি নন, এবার জাসদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি স্বাধীন বাংলার প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র। তিনি বলেন, জাসদ থেকে মন্ত্রী করার জন্যে আওয়ামী লীগকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। জাসদই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, ‘হঠকারী দল’ জাসদ থেকে ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। কিন্তু জাসদের নেতা-কর্মীরা এই সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহকেরা শতভাগ ভণ্ড। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পূর্বের ইতিহাস জেনে এই হঠকারীদের (জাসদ) এড়িয়ে চলবেন। বিপ্লব বিপ্লব বললেই বিপ্লব হয় না। কাজ করতে হবে। আপনাদের শিক্ষিত হতে হবে। আপনার মেধা জাতির জন্য কাজে লাগাতে হবে। তখন সোনার বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে। জাসদের বর্তমান দৈন্যদশা উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, তাঁরা অতি বিপ্লবী ছিল। তারা অনেক প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। কিন্তু এক সময় হারিয়ে গেল। এখন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে।
॥তিন॥
সৈয়দ আশরাফের এসব বক্তব্যের প্রতিবাদে পরদিন ১৩ ই জুন মঙ্গলবার জাসদ প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানব বন্ধন করে। এই মানব বন্ধনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জাসদ নেতা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, আপনি থামান, আপনার এই মন্ত্রীকে থামান। এই সংকটে তিনি যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন, যে অনৈক্যের সৃষ্টি করছেন, অবিলম্বে তাঁর মুখ বন্ধ করুন। আর সৈয়দ আশরাফকে বলব, আপনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে মনোযোগ দিন। আপনি কীভাবে মন্ত্রিত্ব চালান আমরা জানি, দেশবাসী জানে। আমরা তা বলতে পারি। কারণ, আমরা মহাজোটের অংশ। জনপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, সেখানে মনোযোগ দিন।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলে দিতে হবে, ঐক্য চান কি চান না। ১৪ দলের ঐক্য থাকবে কি থাকবে না? একদিকে আমাদের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতার নামে বিষোদ্গার করবেন, আর অন্যদিকে জঙ্গি ঠেকাবেন, এটা হতে পারে না। আমরা মহাজোট সরকারে আছি, ১৪ দলে আছি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অবস্থান আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে, সংবিধান আছে, জাতির জনক আছেন আমাদের সামনে। সেই বিবেচনা করেই চলি। আর ভুল করবেন না।’
বিষয়টি শুধু সভা সমিতি এবং মানব বন্ধনেই সীমাবদ্ধ নাই। জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে এই জাসদ বিতর্ক। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ২০ লাখ কর্মী হত্যার অভিযোগ আনেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাসদ যদি তাদের গণবাহিনী দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করত তাহলে বঙ্গবন্ধুর মতো জাতীয় নেতাকে আমাদের হারাতে হতো না। তিনি বলেন, আমাদের বিরোধী দলের এমপিদের সংখ্যা অত্যন্ত কম, মাত্র ৪০ জন। কিন্তু টিভিতে আমাদের মুখটা দেখানো হয় না। এর কারণ হচ্ছে এই সংসদে যিনি ইনফরমেশন মিনিস্টার তিনি জাসদ করেন। প্রবলেমটা ওখানে না, প্রবলেমটা ছিল আমরা ছাত্রলীগ করেছি, উনি জাসদ করেছেন। জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, একসঙ্গে যুদ্ধ করলাম, একই বিছানা থেকে উঠে উনি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। অস্ত্র দিয়ে আমাদের গুনে গুনে ২০ লাখ লোককে হত্যা করলেন। এই যে হত্যা করল, আজকে যে দুর্দিন, দুরবস্থা সেদিন জাসদ যদি গণবাহিনী করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করত, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা না করত তাহলে দেশের ক্ষতি হতো না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল যথার্থই বলেছেন, এই বিষয়টা জাসদ করেছে।
॥চার॥
এই মুহূর্তে জাসদ কয়ভাগে বিভক্ত সেটির হিসাব আমাদের কাছে নাই। অতি সম্প্রতি ইনু পন্থি জাসদ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটির নেতৃত্বে আছেন তথ্য মন্ত্রী ইনু ও সংসদ সদস্য শিরিন। আরেকটির নেতৃত্বে আছেন সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল। এর বাইরেও রয়েছে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাসদ, যেটিকে রব সাহেবরা বলেন জেএসডি। আরেকটি অংশ আছে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে। জাসদ বিতর্কে জনাব আবদুর রবও অংশ নিয়েছেন। গত বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জনাব আবদুর রব বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য, অন্যায্য ও অনভিপ্রেত। বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের দলীয় ভুল রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে দলীয় আবর্তে বন্দী করে, ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ করে, জনগণ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। ৩২ নং ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর লাশ রেখে আওয়ামী লীগ নেতারাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এবং সেই সরকারই দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। এ সব সত্য এবং ভুল রাজনীতি আওয়ামী লীগের স্বীকার না করাই হবে অতিমাত্রায় ভণ্ডামি।
বিবৃতিতে আ স ম রব আরও বলেন, সশস্ত্র যুদ্ধের পর ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠন না করে শুধু আওয়ামী দলীয় সরকারের কারণে ৭১’-এ গড়ে ওঠা জাতির লৌহ কঠিন ঐক্যকে ভেঙে দেয়া হয়। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে রক্ষী বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে রাজনৈতিক সংকটকে তীব্র করা হয়। রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধির মত অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ ও একদলীয় বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো।
জাসদের ৪র্থ উপদল হলো শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ। গত বুধবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি যুক্ত বিবৃতিতে শরীফ পন্থী জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া এবং নজমুল হক প্রধান সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যকে অপ্রত্যাশিত আখ্যা দেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়।
জাসদ বিতর্ক শেষ হয়নি। বিতর্ক একবার ওঠে, আবার ওপরের হস্তক্ষেপে থেমে যায়। এবারও হয়তো তাই হবে। কিন্তু তাই বলে চিরদিনের জন্য শেষ হবে না।
কথাটি ফারুক ভাইয়ের নিজস্ব, নাকি কোন মনিষীর কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন সেটি আমার এখন স্পষ্ট মনে পড়ছে না। তবে কথাটি চরম সত্য। আজ আওয়ামী লীগ এবং জাসদের মাঝে দারুণ তর্কযুদ্ধ দেখে এসব কথা মনে পড়ছে। জানি না, ফারুক ভাই বেঁচে থাকলে তিনি আজ কি বলতেন। আমার আজকের লেখার উপজীব্য আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাকযুদ্ধ। এ সম্পর্কে একটু পরেই বলছি। তার আগে ফারুক ভাই সম্পর্কে আরো দু’চারটি কথা।
একাডেমিক ডিগ্রী থাকলেই কোন মানুষ যেমন বিদ্বান হয় না, তেমনি জ্ঞানীও হয় না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোন একাডেমিক ডিগ্রী ছিল না। তারপরেও আজ কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল চেয়ার স্থাপিত হয়েছে। তার অর্থ হলো, এমএ ক্লাসেও নজরুল সাহিত্য পড়ানো হচ্ছে। এখানে অবশ্য আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নাই যে, জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সেক্যুলার ঘরানা নজরুলকে চরমভাবে উপেক্ষা করছেন। অথচ একটি সময় ছিল যখন তারা সভা-সমিতিতেও নজরুলের গান গাইতেন। নজরুলের ওপর নাটক করতেন, ছায়ানাট্যও করতেন। অবশ্য নজরুলের সাহিত্য সমগ্র নিয়ে নয়। বেছে বেছে কয়েকটি গান তারা বাজাতেন এবং গাইতেন। সেই সব গান যেগুলো সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন-
কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
লাথি মার, ভাঙ্গরে তালা!
যত সব বন্দী শালায়-
আগুন-জ্বালা,
-জ্বালা, ফেল উপাড়ি।
আরো একটি গান গাওয়া হতো। সেটি ছিল -
জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত
জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত!
যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’
হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী,
নব জনম লভি’ অভিনব ধরণী
ওরে ঐ আগত।
জাগো....
আরো ছিল। যেমন-
মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ,
ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত।
আরেকজন অমর কবি হলেন, ফররুখ আহমেদ। তারও তো এমএ ডিগ্রী ছিল না। অথচ আমরা এবং আমাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক যুবক ফররুখ আহমেদকে ছোট নজরুল বলতাম। তার ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘সিন্দাবাদ’ সহ অসংখ্য কবিতা মুসলিম মানসকে উজ্জীবিত করে।
ফারুক ভাইকে আমি ঠিক ঐ দুই অমর কবির পর্যায়ে নিয়ে না গেলেও আমাকে বলতেই হবে যে, তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। দারিদ্র্য এবং কঠিন জীবন যুদ্ধ তার প্রতিভার পূর্ণ স্ফুরণ ঘটাতে পারেনি। তারপরেও যতটুকু স্ফুরিত হয়েছে সেটিও অনেকে জানেন না। যেমন- রবীন্দ্রনাথের, ‘খরো বায়ু বয় বেগে / চারিদিক ছায় মেঘে / ওগো মাঝি নাও খানি বাইও’। কবি ফারুক মাহমুদ এই গানটির যে প্যারোডি করেছিলেন তার কয়েকটি লাইন নীচে তুলে ধরছি।
জালিমের জিন্দানে ধুকে মরা জিন্দেগী
আমরা আজাদ ফের করবো
ইসলামী হুকুমতে আল কোরআনের মতে
নয়া এক খেলাফত গড়বো।
আমরা মুমীন দিল নিয়েছি শপথ
জান কোরবান দেবো ছাড়বো না পথ।
মরতে যদি বা হয় জিহাদের ময়দানে
শহীদ সেনার মতো মরবো।
জালিমের জিন্দানে —
এছাড়া ‘ধোলাই কাব্য’ নামে ফারুক মাহমুদের একটি রাজনৈতিক কবিতার বই বেরিয়েছিল। রাজনীতির কবিতার বই না বলে সেটিকে বরং পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বলা যায়। ফারুক মাহমুদ প্রসঙ্গ এখানেই শেষ। এখন যাচ্ছি মূল প্রসঙ্গে। সেটি হলো, আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাক যুদ্ধ।
॥দুই॥
কেউ যদি মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফই মহাজোটে থাকা অবস্থায় মহাজোটের শরিক জাসদের বিরুদ্ধে এই প্রথম বললেন তাহলে সত্যের অপলাপ হবে। আজ থেকে প্রায় ১০ মাস আগে জাসদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ফার্স্ট কাজিন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি মরহুম শেখ ফজলুল হক মনির আপন ছোট ভাই। শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র হলেন ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট জাতীয় সংসদে জাসদের ’৭২ থেকে ’৭৫ সালের কর্মকা-ের তদন্তের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদ দায়ী। এর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে শেখ সেলিম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণ বাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল। তার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নেতা জাসদকে তুলোধুনা করেন। যতদূর মনে পড়ে, আওয়ামী লীগের এসব প্রভাবশালী সদস্যের বিষোদ্গারের ফলে আওয়ামী লীগ হাই কমান্ডের অনেকেই বিব্রত হন। কারণ, জাসদ তখনও মহাজোটের শরিক ছিল। এর ফলে ৩/৪ দিন পরে দেখা যায়, জাসদ ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে বিতর্ক বন্ধ করার আহ্বান জানান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর সাময়িকভাবে হলেও জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতার বিষোদ্গার থেমে যায়। তারপর ১০ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। ১০ মাসের মাথায় আবার জাসদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। এবার আর যে সে ব্যক্তি নন, এবার জাসদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি স্বাধীন বাংলার প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র। তিনি বলেন, জাসদ থেকে মন্ত্রী করার জন্যে আওয়ামী লীগকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। জাসদই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, ‘হঠকারী দল’ জাসদ থেকে ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। কিন্তু জাসদের নেতা-কর্মীরা এই সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহকেরা শতভাগ ভণ্ড। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পূর্বের ইতিহাস জেনে এই হঠকারীদের (জাসদ) এড়িয়ে চলবেন। বিপ্লব বিপ্লব বললেই বিপ্লব হয় না। কাজ করতে হবে। আপনাদের শিক্ষিত হতে হবে। আপনার মেধা জাতির জন্য কাজে লাগাতে হবে। তখন সোনার বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে। জাসদের বর্তমান দৈন্যদশা উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, তাঁরা অতি বিপ্লবী ছিল। তারা অনেক প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। কিন্তু এক সময় হারিয়ে গেল। এখন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে।
॥তিন॥
সৈয়দ আশরাফের এসব বক্তব্যের প্রতিবাদে পরদিন ১৩ ই জুন মঙ্গলবার জাসদ প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানব বন্ধন করে। এই মানব বন্ধনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জাসদ নেতা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, আপনি থামান, আপনার এই মন্ত্রীকে থামান। এই সংকটে তিনি যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন, যে অনৈক্যের সৃষ্টি করছেন, অবিলম্বে তাঁর মুখ বন্ধ করুন। আর সৈয়দ আশরাফকে বলব, আপনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে মনোযোগ দিন। আপনি কীভাবে মন্ত্রিত্ব চালান আমরা জানি, দেশবাসী জানে। আমরা তা বলতে পারি। কারণ, আমরা মহাজোটের অংশ। জনপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, সেখানে মনোযোগ দিন।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলে দিতে হবে, ঐক্য চান কি চান না। ১৪ দলের ঐক্য থাকবে কি থাকবে না? একদিকে আমাদের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতার নামে বিষোদ্গার করবেন, আর অন্যদিকে জঙ্গি ঠেকাবেন, এটা হতে পারে না। আমরা মহাজোট সরকারে আছি, ১৪ দলে আছি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অবস্থান আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে, সংবিধান আছে, জাতির জনক আছেন আমাদের সামনে। সেই বিবেচনা করেই চলি। আর ভুল করবেন না।’
বিষয়টি শুধু সভা সমিতি এবং মানব বন্ধনেই সীমাবদ্ধ নাই। জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে এই জাসদ বিতর্ক। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ২০ লাখ কর্মী হত্যার অভিযোগ আনেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাসদ যদি তাদের গণবাহিনী দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করত তাহলে বঙ্গবন্ধুর মতো জাতীয় নেতাকে আমাদের হারাতে হতো না। তিনি বলেন, আমাদের বিরোধী দলের এমপিদের সংখ্যা অত্যন্ত কম, মাত্র ৪০ জন। কিন্তু টিভিতে আমাদের মুখটা দেখানো হয় না। এর কারণ হচ্ছে এই সংসদে যিনি ইনফরমেশন মিনিস্টার তিনি জাসদ করেন। প্রবলেমটা ওখানে না, প্রবলেমটা ছিল আমরা ছাত্রলীগ করেছি, উনি জাসদ করেছেন। জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, একসঙ্গে যুদ্ধ করলাম, একই বিছানা থেকে উঠে উনি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। অস্ত্র দিয়ে আমাদের গুনে গুনে ২০ লাখ লোককে হত্যা করলেন। এই যে হত্যা করল, আজকে যে দুর্দিন, দুরবস্থা সেদিন জাসদ যদি গণবাহিনী করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করত, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা না করত তাহলে দেশের ক্ষতি হতো না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল যথার্থই বলেছেন, এই বিষয়টা জাসদ করেছে।
॥চার॥
এই মুহূর্তে জাসদ কয়ভাগে বিভক্ত সেটির হিসাব আমাদের কাছে নাই। অতি সম্প্রতি ইনু পন্থি জাসদ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটির নেতৃত্বে আছেন তথ্য মন্ত্রী ইনু ও সংসদ সদস্য শিরিন। আরেকটির নেতৃত্বে আছেন সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল। এর বাইরেও রয়েছে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাসদ, যেটিকে রব সাহেবরা বলেন জেএসডি। আরেকটি অংশ আছে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে। জাসদ বিতর্কে জনাব আবদুর রবও অংশ নিয়েছেন। গত বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জনাব আবদুর রব বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য, অন্যায্য ও অনভিপ্রেত। বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের দলীয় ভুল রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে দলীয় আবর্তে বন্দী করে, ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ করে, জনগণ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। ৩২ নং ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর লাশ রেখে আওয়ামী লীগ নেতারাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এবং সেই সরকারই দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। এ সব সত্য এবং ভুল রাজনীতি আওয়ামী লীগের স্বীকার না করাই হবে অতিমাত্রায় ভণ্ডামি।
বিবৃতিতে আ স ম রব আরও বলেন, সশস্ত্র যুদ্ধের পর ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠন না করে শুধু আওয়ামী দলীয় সরকারের কারণে ৭১’-এ গড়ে ওঠা জাতির লৌহ কঠিন ঐক্যকে ভেঙে দেয়া হয়। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে রক্ষী বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে রাজনৈতিক সংকটকে তীব্র করা হয়। রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধির মত অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ ও একদলীয় বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো।
জাসদের ৪র্থ উপদল হলো শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ। গত বুধবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি যুক্ত বিবৃতিতে শরীফ পন্থী জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া এবং নজমুল হক প্রধান সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যকে অপ্রত্যাশিত আখ্যা দেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়।
জাসদ বিতর্ক শেষ হয়নি। বিতর্ক একবার ওঠে, আবার ওপরের হস্তক্ষেপে থেমে যায়। এবারও হয়তো তাই হবে। কিন্তু তাই বলে চিরদিনের জন্য শেষ হবে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন