বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

একের পর এক এসব কি ঘটছে


অস্ট্রলিয়া এবং ব্রিটেনের পর জার্মানিও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করে সরাসরি কোনো বিমানই জার্মানিতে যেতে পারবে না। এমনকি জার্মানির রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা লুফথান্সার কোনো বিমানও ঢাকা থেকে ওঠানো পণ্য নিয়ে সে দেশে ঢুকতে পারবে না। লুফথান্সাকেও জার্মানির অনুমোদিত তৃতীয় কোনো দেশের বিমানবন্দরে পণ্যগুলো রি-স্ক্যানিং করাতে হবে। সেখানে অনাপত্তিপত্র পাওয়া গেলেই ঢাকা থেকে নেয়া পণ্যসহ লুফথান্সার বিমান দেশটিতে ঢুকতে ও পণ্য খালাস করতে পারবে। নিষেধাজ্ঞার কারণ জানাতে গিয়ে খবরে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের রফতানি টার্মিনালে যারা কাজ করে তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত। নামমাত্র স্ক্যানিং করেই তারা টার্মিনালে ঢুকে পড়ে এবং যখন-তখন বাইরে যাতায়াত করে। তারা যে পণ্যের সঙ্গে বোমা বা অন্য কোনো বিস্ফোরক এবং ধ্বংসাত্মক কিছু পাঠাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। একই কারণে অনেকদিন ধরে সতর্ক করার পর চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে জার্মানি বলেছিল, এর মধ্যে বহিরাগতদের বিদায় করে নিজস্ব কর্মচারী নিযুক্তি না দেয়া হলে দেশটি বাংলাদেশ বিমান এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অন্য কোনো দেশের বিমানকে কার্গো পরিবহন করতে দেবে না।
উল্লেখ্য, মূলত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা প্রথম চাপিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার পর গত মার্চে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ব্রিটেন। এজন্যও বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশের রফতানি। এ দুটি দেশের পাশাপাশি জার্মানির নিষেধাজ্ঞা ক্ষতির পরিমাণকে কেবল বাড়াবেই। তাছাড়া একযোগে বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন হবে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা। উদ্বেগের কারণ হলো, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ব্রিটেনে বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বা ৮৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করা হয়। দেশ তিনটির মধ্যে আমদানির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এতদিন শুধু লুফথান্সার মাধ্যমেই মাসে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতো বিমান। নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই নিশ্চিত আয় বন্ধ হয়ে যাবে। ওদিকে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, গার্মেন্ট পণ্যের নমুনাসহ তৈরি পোশাক খাতের বড় অংশই আকাশ পথে শুল্কমুক্ত সুবিধায় জার্মানিতে যেতো। এ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ।
এদিকে অনুসন্ধানেও কেবল অভিযোগের সত্যতাই পাওয়া যায়নি, বেরিয়ে এসেছে ভীতিকর বিভিন্ন তথ্যও। যেমন হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরো কার্গো রফতানি টার্মিনালই বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন- বাপা নামের একটি সংগঠনের দখলে রয়েছে। বাপা কর্মীদের অধিকাংশই চোরাচালানসহ বিভিন্ন মামলার আসামী, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী। তারা নামমাত্র স্ক্যানিং করিয়েই কার্গো টার্মিনালে ঢুকে পড়ে এবং সর্বত্র অবাধে তৎপরতা চালায়। যখন-তখন টার্মিনালের বাইরে যাতায়াত তো করেই, তাদের নানা ধরনের পণ্যও আনা নেয়া করতে দেখা যায়। বাপার এসব কর্মীর মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের বিমানে রফতানি পণ্য ওঠানো বা লোড করা হয়। বিমান থেকে পণ্য খালাসও তারাই করে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্যটি হলো, কার্গো টার্মিনালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রেডলাইন নামের যে ব্রিটিশ সিকিউরিটি কোম্পানিকে নিযুক্তি দিয়েছে সে কোম্পানির সঙ্গেও বাপা কর্মীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। উভয় পক্ষের মধ্যে গোপন লেনদেনের বিষয়টিও বিভিন্ন উপলক্ষে ফাঁস হয়েছে। এভাবে সব মিলিয়েই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় ও আশংকার সৃষ্টি হয়েছে এবং সে কারণেই অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের পর জার্মানি কার্গো পণ্য পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।    
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিমানের কার্গো পরিবহনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক দিক থেকেই শুধু ক্ষতিকর নয়, দেশের ভাবমর্যাদার জন্যও অত্যন্ত লজ্জাকর। অথচ বিমান কর্তৃপক্ষ যদি আপত্তি সম্পর্কে জানার পর  থেকেই বহিরাগতদের বিদায় করে কার্গো টার্মিনালে নিজস্ব জনবল বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতো তাহলে অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের পর জার্মানির জন্য এতটা কঠোর ও অসম্মানজনক পদক্ষেপ নেয়ার অজুহাত জুটতো না। কথাটা বলার কারণ, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বহিরাগতদের ব্যাপারে কোনো দেশের অভিযোগই অসত্য বা অমূলক নয়। আসলেও জনা কয়েক নিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া টার্মিনালে কর্মরতরা সবাই বহিরাগত। তারা দফায় দফায় বাইরে যাতায়াত করে। অনেকে নানা পণ্যও বহন করে। কিন্তু কোনোবারই আর স্ক্যানিং বা সার্চ করা হয় না। এর ফলে তাদের পক্ষে বিস্ফোরক বা অন্য যে কোনো ধ্বংসাত্মক বস্তু পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করেই বিভিন্ন দেশ বিমান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ বা সরকার গুরুত্ব দেয়নি। সেজন্যই পরিস্থিতি এতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আমরা মনে করি, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালকেন্দ্রিক সমস্যার অবশ্যই আশু সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কারণ, দেশের ভাবমর্যাদার প্রশ্ন তো রয়েছেই, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে এসেছে অর্থনৈতিক স্বার্থ। নিষেধাজ্ঞার ফলে রফতানি খাতে হাজার কোটি টাকার অংকে ক্ষতির শিকার হবে দেশ। বাস্তবে এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরুও করেছেন রফতানিকারকরা। এভাবে চলতে থাকলে ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলোও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে। তেমন অবস্থায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। ফলে গার্মেন্ট শিল্প শুধু নয়, কৃষি খাতও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে শাক-সবজিও কার্গোর মাধ্যমেই রফতানি করা হয়। অর্থাৎ কার্গো নিষিদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি হবে সর্বাত্মক। এজন্যই টার্মিনাল থেকে বহিরাগতদের বিদায় করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে এমনভাবে নেয়া দরকার, যাতে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো দেশগুলো তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্য কোনো দেশ যাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে। 

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ক্রসফায়ার : পরিচয় জানা নেই


আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়ার কারণে দেশে প্রতিদিন ঘটছে ক্রসফায়ারের ঘটনা। আমরা যতবার বলছি যে, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করে শাস্তির বিধান করা হোক। কিন্তু এ পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বিনাবিচারে যে কাউকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে একটা যুক্তি খাড়া করা হয় যে, তার নামে থানায় বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। থানায় মামলা থাকলেই সে অপরাধী হয়ে যায় না। আদালতে সেটা প্রমাণ করতে হয়। একথা হিসাবে ধরলে সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এক এক জনের নামে শ’য়ে শ’য়ে মামলা করেছে। তবে কি তাদের সকলকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেবে সরকার?
পুলিশ নানা উদ্দেশ্যে মানুষকে হয়রানি করার জন্য মামলা করে। অধিকাংশ সময় মামলায় নামও থাকে না। কয়েকজনের নাম দিয়ে বলা হয়, আসামী অজ্ঞাত আরও কয়েক শ’ বা কয়েক হাজার। তারপর গ্রেফতার বাণিজ্যের জন্য তাদের কোনো মামলায় আসামী দেখানো হয়। কখনও কখনও আবার ধরা হয় সন্দেহবশত, ৫৪ ধারায়। আদালত থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও এই ৫৪ ধারার মারাত্মক অপব্যবহার করছে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে কাউকে তুলে নিয়ে গিয়ে সোজা অস্বীকার করে বসছে যে, ঐ নামে কাউকে তারা আটক করেনি। পরে তার লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কখনও কখনও পুলিশ এর কোনো দায় নিচ্ছে না। আবার কখনও কখনও বলছে ক্রসফায়ারে ঐ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এখন প্রতিদিনই এ রকম নিকৃষ্ট নজির সৃষ্টি হচ্ছে।
পুলিশের কথিত এমনই এক ক্রসফায়ারে গত ১৮ তারিখে মারা গেছেন সাতক্ষীরার মুকুল রানা নামের এক যুবক। তার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশের দাবি অদ্ভূত। তাদের ভাষ্য হলো, ১৮ জুন দিবাগত রাতে তিনজন মোটর সাইকেল আরোহীকে সন্দেহ করে চ্যালেঞ্জ করলে গুলী বিনিময়ের ঘটনায় ঐ ব্যক্তি (মুকুল রানা) নিহত হন। দেখা গেছে, মুকুলের দেহে ১০টি গুলীর ছিদ্র রয়েছে। তবে মোটর সাইকেলের অন্য দুই আরোহীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এটা কি কোনো বিশ্বাসযোগ্য কথা? মোটর সাইকেলের আরোহী তিনজন। তারা পুলিশের দিকে গুলী করল। আবার পুলিশও তাদের দিকে এলামেলো গুলী চালালো। আর তাতে নিহত হলেন শুধু মুকুল রানা। শুধু তার শরীরেই পুলিশের ছোঁড়া ১০টি গুলী লাগলো। আর বাকি দু’জন নির্বিঘ্নে অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে চলে গেলেন? আবার পুলিশ যাদের লক্ষ্য করে গুলী ছঁড়লো, তাদের মধ্যে কে অপরাধী ছিল, তা পুলিশ জানতো না। তাহলে শুধু মুকুল রানার গায়েই লাগলো ১০টি গুলী? নাকি খুব কাছে থেকে মুকুল রানার গায়ে গুলী ছুঁড়ে তাকে ঝাঁজরা করে দেয়া হলো?
এখানে এর চাইতেও বড় প্রশ্ন হলো, পুলিশ কাকে ক্রসফায়ারে দিল, তার সঠিক পরিচয়ও তারা জানতো না। ব্লগার অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের তারা একটি কিনারা করতে পেরেছে, এমন বাহাদুরি নেয়ার জন্যই কি মুকুল রানাকে খুন করা হলো? ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে ঐ ব্যক্তির নাম যে মুকুল রানা, তা তারা জানতেন না। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা নিশ্চিত যে, মুকুল রানা আনসারউল্লাহ বাংলা টীমের (এবিটি) সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা ছিলেন। পুলিশ বলেছে, তার অনেকগুলো নাম ছিল। আর সেগুলো হলো, সাকিব ওরফে শরীফ, ওরফে সালেহ, ওরফে আরিফ, ওরফে হাদি-১। কিন্তু তার প্রকৃত নাম যে মুকুল রানা সেটাই পুলিশ জানতো না। আর তাকে হত্যার পর যে গল্প ফাঁদা হলো, সেটারও কোনো বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই। পুলিশ বললো, তাদের ভাষায় এই শরীফুল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে টিএসসি এলাকায় নিহত অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অতএব বিচারের দরকার নেই। তাকে গুলী করে মেরে ফেলা যায়। এই ভাবনাটা একেবারেই আদিম সমাজের। কোনোভাবেই সভ্য সমাজের নয়।
কিন্তু প্রকৃত সত্য ভিন্ন। মুকুল রানার বাড়ি সাতক্ষীরার ধূলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়ি যশোরের বসুন্দিয়ার জগন্নাথপুরে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি স্ত্রী মহুয়া আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি থেকে বসুন্দিয়া বাজারে আসছিলেন। বসুন্দিয়া মোড়ে পৌঁছলে ১০-১২ জন লোক হঠাৎ করে রিকাশা ভ্যানের সামনে এস মুকুলকে জাপটে ধরে। এ সময় তার স্ত্রী মহুয়া দৌড়ে পাশের দোকানে গিয়ে বাড়িতে ফোন করেন। ভ্যানচালক জানান, ঐ লোকগুলো মুকুলের দুই হাতে হাতকড়া পড়ায়। কোনো কথা বলার আগেই তারা মুকুলকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়। মুকুল এই ঘটনার মাত্র তিন দিন আগে মহুয়াকে বিয়ে করেন। ঘটনার দুদিন পর মুকুল রানার শ্যালক আমীর হোসেন যশোরে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকে মুকুল কোথায় কীভাবে আছেন, তারা তা জানতে পারেননি।
মুকুলের বাবা জানান, ১৯ তারিখে ছেলের বিয়ে হয়। ২০ তারিখ বৌভাতের পর ছেলে ও ছেলের বৌয়ের সঙ্গে তিনি জগন্নাথপুর যান। ঘটনার দিন ছেলে তাকে আগেই রওয়ানা হতে বলেন। তিনি যশোরের কেশবপুরে পৌঁছনোর পর তাকে জানানো হয়, তার ছেলেকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে। তিনি মুকুলের শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে মামলা করার পরামর্শ দেন। তিনি জানতে পারেন, মুকুলের খোঁজে তার শ্যালক মুজিবুর রহমান বিশ্বাস ঢাকায় গেছেন। পরে শোনেন, মুজিবুরকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, গত ১৯ মে ‘জননিরাপত্তার স্বার্থে এদের ধরিয়ে দিন’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তি সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারের পরও কেন তার পরিবারের তরফ থেকে কোনো খোঁজখবর করা হয়নি? সেখানেও তো শরীফুলের (মুকুল রানা) ছবি ছিল। তার অর্থ কি এই নয় যে, প্রকৃত পরিচয়হীন মুকুল আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিল? তার পরিবার যোগাযোগ করলে হয়তো তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হতো না। কেন মুকুলের পিতা আবুল কালাম আজাদ ছবি প্রকাশের পরও খোঁজ-খবর করেননি, সে সম্পর্কে আজাদ বলেন, তার ছেলের নাম তো শরীফুল নয়। আর আমি জানি, তাকে ডিবি তুলে নিয়ে গেছে। তাহলে আবার কেন তাকে ধরিয়ে দিতে ছবি ছাপা হবে, সেটা নিয়ে আমি দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। আর মুকুলকে ডিবি তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি সাতক্ষীরার প্রভাবশালী লোকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সাতক্ষীরার অবস্থা এখন এমনই দাঁড়িয়েছে যে, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিরীহ মানুষ ভয় পায়।
জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে যুক্ত ডিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার এক পত্রিকাকে বলেছেন, নিহত শরীফুল (মুকুল রানা) যে অভিজিৎ হত্যায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে আছে।
তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজের অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার অংশগুলো ‘তদন্তের স্বার্থে’ প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরও যে খুনিরা আছেন, তারাও পালিয়ে যেতে পারেন। তিনি বলেন, শরীফুলের (মুকুল রানা) সঙ্গে মহুয়ার বিয়ের সম্বন্ধ করেন মহুয়ার ভাই মুজিবুর। তাকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তিনি কারাগারে আছেন। মুজিবুর আনসারউল্লাহ বাংলা টীমের দাওয়াতি শাখার সদস্য। তিনি পেশায় একজন ইউনানি চিকিৎসক। যেসব রাসায়নিক সবাই কিনতে পারেন না, সরকারি নিবন্ধনভুক্ত ইউনানি চিকিৎসকেরা সেগুলো কিনতে পারেন। এসব রাসায়নিক দিয়ে বিষ্ফোরক বানানো সম্ভব। ঐ কর্মকর্তা সম্ভবত এই সুযোগে বাঙ্গালকে হাইকোর্ট দেখিয়ে দিলেন। কারণ ইউনানি চিকিৎসা গাছগাছড়া-নির্ভর
তবে এখানে ঘটলো আরও একটি গোঁজামিলের ঘটনা। নিহত ব্লগার অভিজিতের বাবা ড. অজয় রায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতিক্রিয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, এখানেও পুলিশ এক ধরনের নাটকের আয়োজন করলো। কারণ এর আগে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে, অভিজিতের হত্যাকারীদের সবাই বিদেশে চলে গেছেন। এখন আবার কোথা থেকে তার একজনের সন্ধান মিললো। সে কি পুলিশের ক্রসফায়ারের শিকার হওয়ার জন্যই বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছিল? আবার পুলিশ এটা পর্যন্ত জানতে পারলো যে, শরীফুলের (মুকুল রানা) সঙ্গে মহুয়ার বিয়ে ঠিক করে দিয়েছে মহুয়ার ভাই মুজিবুর। এত কিছু জানার পরও তার প্রকৃত নাম যে মুকুল রানা এই কথাটিই জানতে পারেনি আমাদের অতি দক্ষ পুলিশ বাহিনী। অথচ পরিবারের পক্ষ থেকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসে লাশ নিয়ে গেছে। তার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর পুলিশের এখন আবার একটি বাক্যবিন্যাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর তা হলো, ‘তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না।’ এরা এসব কথা সকল ক্ষেত্রেই বলতে শুরু করেছেন। বলতে বলতে মনে হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে তারা শুধু বাগাড়ম্বরই করছেন, কাজের কাজ কিছুই করতে পারছেন না। কিংবা তারা আদপেই কিছু জানেন না।
এতে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই যে, মুকুল রানা পুলিশের হেফাজতেই ছিলেন। ইচ্ছা করেই বা ভুল করে তাকে শরীফুল বলে আটক রেখেছিল পুলিশ। আর ‘মোটরসাইকেলে করে পালানোর সময়’ পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে যে তিনি মারা গেলেন, সেটাও শেষ পর্যন্ত কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবে না পুলিশ। এভাবে তার ক’দিন আগে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে কলেজ ছাত্র দক্ষিণখানের ফাহিম। এটাও কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউই বিশ্বাসও করেননি।
তবে পুলিশের ভাষায়ও চমৎকার পরিবর্তন এসেছে। যেমন গতকাল পুলিশের এক কর্মকর্তা উপকমিশনার আবদুল বাতেন বলেছেন, জঙ্গিচক্র হাঁড়ি নয় যে ভেঙে ফেলা যাবে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ঈদে বাড়িতে যেতে নিজ নিজ ঘর নিরাপদ রেখে যাবেন। পুলিশ ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
খুলনার ডিআইজি মনির-উজ জামান বলেছেন, আমরা জানি কীভাবে দেশ শাসন করতে হয়। অর্থাৎ পুলিশ সেবকের নয়, একেবারে শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গেছে। এটা কোনো অবস্থাতেই শুভ লক্ষণ নয়। এই পরিস্থিতি সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় নেবে বলে মনে হয় না।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রানা দাস ও পীযূষ বাবুদের নালিশ ভারতে কেন?


পত্রিকার পাতায় প্রতিনিয়ত হত্যা, ধর্ষণ, খুনের বিভৎসতার ছবি মুদ্রিত হচ্ছে। কিছু দিন আগে চলছিল ধর্ষণ আর শিশু নিধনের মহোৎসব। আর এখন চলছে ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, গণপিটুনির সিরিজ। মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, পুলিশ অফিসারের স্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ খুনের শিকার হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশের কোথাও যেন এতটুকু জায়গা নেই যেখানে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়া যায়। দেশের সর্বত্র বিরাজ করছে হাহাকার আর খুনাখুনির লোমহর্ষক বিভৎসতার চিত্র। একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশের মানুষ আজ অসহায় দুর্বৃত্তায়নের কাছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশ যেন আজ বিরান বাড়িতে পরিণত হয়েছে। অস্থির এই সময়ে প্রত্যাশা ছিল সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই একই ছাতার নিচে অবস্থান করবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য রাজনীতির বেড়াজালে ঐক্যের পথ রুদ্র হয়ে গেছে। যে কারণে আমরা লক্ষ্য করছি প্রত্যেকটা খুনের ঘটনার সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ বলে দেয় খুন বা গুপ্তহত্যার জন্য বিএনপি জামায়াত দায়ী। আর একইভাবে বিএনপি বলে দেয় খুন বা গুপ্তহত্যার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। এই ব্লেমগেমের কারণে অনেক সময় প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নাগরিকদের স্বাভাবিক মৃত্যু যেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ফ্রেমে আটকে যাচ্ছে। একদিকে চলছে টার্গেট কিলিং অন্যদিকে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। যে সময়ে এই লেখাটি লিখছি সেসময় পর্যন্ত পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ১৩ হাজারের মতো আটক করা হয়ছে। এদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী বহুলাংশে বেশি রয়েছে। এই সাঁড়াশি অভিযান শুধুমাত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হলে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ যেমন ছিল না, তেমনিভাবে সাধারণ নাগরিকদেরও জেলবাস খাটতে হতো না। সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে লেখা এই নিবন্ধের বিবেচ্য বিষয় নয়। সম্প্রতি দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা অনেকাংশে বেড়ে গেছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের বিষয় ও রানা দাস বাবুদের মন্তব্যের বিশ্লেষণ করাই মূলত এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চললেও তাদের নিরাপত্তায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় হিন্দু মহাজোট। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে হিন্দু সম্প্রদায়ের খুন, জখম, শ্লীলতাহানি, অত্যাচার, সম্পত্তি দখল, মন্দির প্রতিমা ভাংচুর’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এ অভিযোগ করে সংগঠনটি। হিন্দু মহাজোটের আন্তর্জাতিক সম্পাদক রিপদ দে বলেন, আমাদের উৎখাতে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে। সরকার সব বিষয় জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মনে রাখতে হবে হিন্দু না থাকলে বাংলাদেশও থাকবে না, আমাদের দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। একই সুরের আওয়াজ শোনা গেছে রানা দাস ও পীযূয বাবুদের কণ্ঠে। তারা দুজনই আওয়ামী ঘরানার লোক। তারপরেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ এর প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে। এখানকার নাগরিকরা যদি অন্য দেশের সহযোগিতা চায় নৈরাজ্য দূর করার জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পুনরায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। অধিবেশনে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুর বিষয়টিকে ঘিরে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে কেন বাবুরা এত উৎসাহিত হয়েছেন?
পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মুসলমান সর্বাধিক ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে চেষ্টা করেছে। সংখ্যালঘুদের অধিকারের ব্যাপারে মুসলমানের চেয়ে বেশি সচেতন আর কোন জাতি পৃথিবীতে আছে আমার জানা নেই। ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় বাংলাদেশের মুসলমানেরা যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তারপরেও বলব সংখ্যালঘুদের উপর যারাই নির্যাতনের স্টিম রোলার প্রয়োগ করুক তাদেরকে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। যাতে করে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ না পায়। কি বলেছিলেন রানা দাস গুপ্ত ও পীযূয বাবু তা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা প্রয়োজন। ‘‘রানা দাসগুপ্ত বলেছেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হলো হিন্দুরা। এ সম্প্রদায়টি বাংলাদেশের ঝুঁকির মুখে। মৌলবাদী ও জামায়াতিরা বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের মূলোৎপাটনের চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ভারত এক্ষেত্রে কিছু করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আমাদের বড় আশা রয়েছে। তার উচিত এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভারতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় পিটিআই সূত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।” রানা দাসগুপ্তের একই সূরে অভিনেতা পিযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘যতক্ষণ না ভারত বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মৌলবাদীরা থামবে না।’ তিনি বলেন, ‘ভারত এ অঞ্চলের একটি প্রধান শক্তি, একটি প্রতিবেশী দেশে যখন হিন্দুদের নির্মমভাবে জবাই করা হচ্ছে তখন সে অলস বসে থাকতে পারে না’। দাসগুপ্তের পাশাপাশি মিঃ বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনারের অতি দ্রুত সাড়া কামনা করেন- (সূত্র পিটিআই)।
ভারতে কতবার যে হিন্দু মুসলমানদের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়েছে, কতবার যে হিন্দু মুসলমানদের তাজা রক্তে ভারতের বুক রক্তাক্ত হয়েছে, কত মা সন্তান হারা হয়ে চোখের পানিতে পৃথিবীতে ঝাপসা দেখেছে, কত স্ত্রী স্বামী হারা, কত শিশু পিতা-মাতা হারা হয়ে এতিম হয়েছে সে ইতিহাস কি তারা ভুলে গেছেন। ভারতের হিন্দু মুসলমানের মধ্যে এই ব্যাধি অত্যন্ত ব্যাপক ছিল বা আজও আছে। ফলে আজও ভয় হয় আবার হয়ত কখন ভারতের হিন্দু মুসলমান অবতীর্ণ হবে এই নিষ্ঠুর পৈশাচিক ভূমিকায়। ১৯৬৪ তে কি ভয়ানক রক্তাক্ত দাঙ্গা কলকাতায় হয়েছিল তা কি মিঃ রানাদাস বাবুরা ভুলে গেছেন। রানা দাস বাবুরা শুধু হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলেন অথচ মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের কথা একটু ভাবলেন না কেন? স্বাধীনতার আগের কথা না হয় বাদই দিলাম স্বাধীনতার পরে কার দ্বারা এদেশের হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছে সে ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরার অনুরোধ করছি। সাম্প্রতিক ৪৮ ব্যক্তিকে হত্যা করার খবর পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হয়েছে। এই ৪৮ জনের মধ্যে কতজন হিন্দু আর কতজন অন্য ধর্মের লোক? সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। গত বছরে রাজধানীর গুলশানে এক ইটালিয়ান নাগরিক ও উত্তরবঙ্গে এক জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হয়। তারা তো আর হিন্দু ছিলেন না। ঢাকার হোসনী দালান রোডে বোমা হামলা করে ৪-৫ জনকে হত্যা করা হয় তারা তো সবাই মুসলমান ছিলেন। এরা কি মানুষ নন? রানা বাবুদের মন ওদের জন্য কাঁদতে দেখিনি ? কেমন অসাম্প্রদায়িক তারা?
পূর্ব রাজাবাজারের মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে যখন হত্যা করা হয় তখন  ভারতকে ডাকা হয়নি কেন? সকল হত্যাকা-কে বাদ দিয়ে শুধু হিন্দুদের ব্যাপারে এত সোচ্চার কেন? পীযূয বাবু ও রানা দাসগুপ্তকে অনুরোধ করব‘ আপনারা ওই ৪৮ জনের তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ করুন। আর দেখুন ওর মধ্যে কতজন মুসলমান, কতজন হিন্দু, কতজন খ্রিস্টান,  কতজন বৌদ্ধ এবং কতজন বিদেশী রয়েছেন। ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করার আগে তাদের উচিত ছিল আয়না দিয়ে সঠিক তথ্যটা এক পলকে দেখা। সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে নিরাপদে নেই ইহা যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে শুধু মুসলমানদের সর্বনাশ হবে বিষয়টি এমন নয়, হুমকিতে পড়বে বাংলাদেশ। যার পরিণাম কখনো কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
আমরা আশা করবো রাষ্ট্র বিষয়টিকে গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি রানা দাস ও পীযূয বাবুদের ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করাটা কি দেশদ্রোহীর শামিল কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

চুদরামের গণপিটুিন যোগা কাকার আষাঢ়ে গল্প ও মুনতাসির মামুনের উপলব্ধি


এক অশীতিপর প্রতিবেশী নাজিম উদ্দিন (মরহুম) আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। এই বয়োবৃদ্ধ আমাকে কেন অপার স্নেহে সিক্ত করতেন তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। এজমার জটিল রোগী লাঠির উপর ভর দিয়ে প্রায়ই আমার কাছে আসতেন। বাড়ির দরজায় ডাক দিয়ে বলতেন, ‘মাচু’ বাড়ি আছ ? থাকলে সাড়া দিতে মোটেই বিলম্ব করতাম না। না থাকলে ‘মাচুকে কখন পাওয়া যাবে’ তা নিয়ে মা ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখীন হতেন। একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষের কিশোর প্রীতি বেশ উপভোগই করতাম আমি।
তখন আমার  কৈশোর চললেও এই বর্ষীয়ান হয়তো মনে করতেন এই বিশ্বচরাচরে যা ঘটে তার সবই আমার নখদর্পণে। আর জ্ঞান-গরিমায় আমার জুরি মেলা ভার। ভাবটা সেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ট্রেনের সহযাত্রীর মত। আলাপচারিতায় কবির মনে হয়েছিল যে, হয়তো স্রষ্টা সেই সহযাত্রীর সাথে পরামর্শ করেই সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন। বৃদ্ধের ভাবসাব দেখে মনে হয় তিনিও হয়তো মনে করতেন দুনিয়াতে আমার অজানা বলতে কিছু নেই। আমি মনে হয় একেবারে ‘সবজান্তা সমশের’।
তিনি প্রায় প্রতিদিনই এসে নামাযের সুরা-কেরাত, তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দরুদগুলোর সঠিকতা ও বিশুদ্ধতা যাচাই করার চেষ্টা করতেন আমার কাছে। একমাত্র বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়ায় স্মৃতিশক্তির সমস্যা ছাড়া আমার জানামতে তার এসবে তেমন বড় ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বার্ধক্যের কারণে উচ্চারণ বিভ্রাটটা ছিল কিছুটা। আমি একথা উপলব্ধি করতে পারতাম যে, তার সমস্যাগুলো শুধুই বার্ধক্যজনিত। তাই তাকে প্রবোধ দিয়ে বলতাম, ‘সব ঠিক আছে’। অন্যরা হয়তো বিভিন্ন ছুতা-নাতায় শুধুই তার ভুল তালাশ করতেন। এটাই বৃদ্ধের কিশোরে তুষ্টির কারণ হতে পারে।
একদিন অতিপ্রত্যুষেই এই বয়োবৃদ্ধ লাঠির উপর ভর দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ‘মাচু!’ বলে দরজায় হাঁক দিলেন। বাড়িতে থাকায় আমি সাড়া দিতে মোটেই বিলম্ব করিনি। দরজায় বের হয়ে দেখি বৃদ্ধ ততক্ষণে বসে পড়েছেন। লাঠির উপর ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছেন। অন্যদিনের তুলনায় সেদিন তার শ্বাসকষ্টটা আমার কাছে প্রকটই মনে হয়েছিল। তার এ দুরবস্থা দেখে আমি দু’হাত দিয়ে তাকে ধরলাম। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধুই বললেন, ‘চুদরাম, চুদরাম!!!’ তার কথার কোন মাথা-মুন্ডু না পেলেও বুঝলাম যে, কথিত এই ‘চুদরাম’ সম্পর্কে তিনি আমার কাছে কিছু জানতে চাইছেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তার কাছ থেকে ‘চুদরাম’এর পরিচয় আবিষ্কার করতে পারলাম না। একটু পরেই বৃদ্ধের ছেলেরা এসে তাকে নিয়ে গেলেন।
পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারলাম স্থানীয় একটি বাজারে গতরাতে বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ডাকাত দলকে ব্যাপক গণপিটুনি দিয়ে কয়েকজনকে মারাত্মকভাবে যখম করেছে। পাঁচ-সাত জনের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। সেই দলেরই একজন আমাদেরই হিন্দু প্রতিবেশী শ্রী সুদাম চন্দ্র মহন্তও (প্রয়াত) ব্যাপকভাবে প্রহৃত হয়েছে। প্রতিবেশী হওয়ায় বৃদ্ধের উদ্বেগটা বোধহয় সেখানেই। তিনি এ বিষয়েই সর্বশেষ খবরটা আমার কাছে জানতে চাচ্ছিলেন বলেই আমার মনে হয়েছিল।
 সেদিনের গণপিটুিনতে ডাকাত দলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এমনকি ডাকাত দলের তিন সহোদরও মারাত্মকভাবে জখমের ঘটনাও ঘটেছে। পরবর্তীতে ২ ভাইয়ের মৃত্যুর কারণও ছিল এই গণপিটুনি। কিন্তু এই ডাকাত দলের নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচারে মানুষ এত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন যে এ ঘটনাকে সকল শ্রেণির মানুষই স্বাগত জানিয়েছিল। গণপিটুনির ঘটনা হওয়ায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন মামলাও হয়নি। ফলে একথা ধরে নেয়া যায় যে, স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবেই নিয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছিল অন্যখানে।
গণপিটুিন নিয়ে সেদিন কারো কোন প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু শ্রী সুদাম চন্দ্র মহন্তের গণপিটুিনটা সাম্প্রদায়িক রূপ নিয়েছিল বেশ জোরেশোরেই। ডাকাত দলের একমাত্র হিন্দু সদস্য ছিল সে সুদাম চন্দ্র তথা বৃদ্ধ কথিত ‘চুদরাম’। একশ্রেণির মতলববাজদের প্রচারণায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সংখ্যালঘু জন্যই সুদামকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি এ বিচার দেয়া হয়েছিল প্রতিবেশী দেশেও। কিন্তু ঘটনাটা মোটেই সাম্প্রদায়িক বা সংখ্যালঘু বিষয়ক ছিল না বরং ডাকাতি সংক্রান্ত ছিল না। কিন্তু এদেশের একশ্রেণির মওকাবাজ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে মোটেই কুণ্ঠাবোধ করেনি। আর বৃদ্ধ নাজিম উদ্দীন তো প্রতিবেশী হওয়ার কারণে সুদাম চন্দ্রের উপর সহানুভূতিশীল ছিলেন।
২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরের কথা। সে নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল। এসবের মধ্যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। গণমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করলো যে, ৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক সহিংসতা চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এমনকি নারীরাও পাশবিক ও আদিম লালসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একটা ঘটনা আমার মনে বেশ জোরেশোরে নাড়া দিয়েছিল তা হলো ৪ দলীয় নেতাকর্মীরা একজন হিন্দু হোটেল কর্মচারীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা। এই ঘটনায় আমি যারপর নাই ব্যথিত হয়েছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই যখন জানতে পারলাম ঘটনাটা কোন হত্যাকা- ছিল না বরং ছিল একটি নিছক দুর্ঘটনা। হোটেলের কেরোসিনের চুলা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন সেই হোটেল কর্মচারী। তখন এই রটনার ঘটক-অনুঘটকদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করা ছাড়া উপায় ছিল না। আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে, এরা আর কেউ ছিল না বরং ঘরের শত্রু বিভীষণরাই এই কল্পকাহিনী প্রচার করেছিল।
এঘটনার পর কৌতূহল বশতই ছুটে গিয়েছিলাম আমার এক বর্ষীয়ান হিন্দু প্রতিবেশী জগবন্ধুর কাছে। তিনি নবীনদের কাছে ‘যোগা কাকা’ নামে পরিচিত। আমিও তার নাম না নিয়ে ‘কাকা’ বলেই সম্বোধন করে থাকি। আমি তাকে সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে বেশ সম্মানের চোখেই দেখতাম। তিনিও আমাকে স্নেহবশত ‘বাবু’ বলে ডাকতেন।
একদিন খুব সকালেই যোগা কাকার দরজায় কড়া নাড়লাম। সাড়াও পাওয়া গেল দ্রুতই। তিনি আমাকে ঘরের মধ্যে বসালেন। আমি তার কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলাম। তিনি একগাদা নতুন-পুরাতন পত্রিকা আমার সামনে হাজির করে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ক সংবাদ একটা একটা করে আমাকে দেখাতে লাগলেন। আমি অবাক বিস্ময়ে একটার পর একটা দেখতে লাগলাম। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্রটা আমার সামনে ভেসে উঠলো। তিনি হিন্দু হোটেল কর্মচারীকে পুড়িয়ে হত্যার সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরটা বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখালেন। তিনি সার্বিকভাবে আমার কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন যে, বাংলাদেশে কোন হিন্দু যুবতীর সম্ভ্রম এখন আর অবশিষ্ট নেই বরং সব লুটিয়ে নিয়েছে ৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা।
তার সব কথায় মনোযোগ দিয়ে শুনলাম আমি। সবকিছুই বোঝার চেষ্টাও করলাম। তার কথা বলার সময় কোন বাধা দিলাম না। তার কথা শেষ হলে বললাম, ‘কাকা, দীর্ঘদিন এক সাথেই বসবাস করি। আমরা মুসলমানরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করলেও আপনাদের সাথে তো কখনো জোরে কথাও বলেছি বলে তো স্মরণ হয় না। আমাদের এলাকায় তো সংখ্যালঘু নিগ্রহের ঘটনা তো চোখে পড়ে না। তাহলে কী পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্রগুলো কী বাস্তব ? শুনেছি হোটেল কর্মচারী কেরোসিনের চুলা বিস্ফোরণে মারা গেছেন। আমাদের এলাকায় কোন সংখ্যালঘু নারীর সম্ভ্রম হারানোর কোন রেকর্ড আছে?
মুখে খই ফোটানো যোগা কাকা এবার কিছুটা থেমে গেলেন। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর যা বললেন, তার নির্যাসটা হলো, গণমাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্বাচনের যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তার সবই সত্য। কেরোসিনের চুলা দুর্ঘটনায় হোটেল কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনাও তিনি গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। তার বক্তব্যের উপসংহার হলো শুধুমাত্র আমাদের এলাকার সংখ্যালঘুরা মোটামোটি ভাল আছেন। তা ছাড়া গোটা দেশের চিত্র খুবই ভয়াবহ। কোন উঠতি বয়সের সংখ্যালঘু তরুণীর সম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে আছেন বলে তিনি মনে করেন না।
আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তার বক্তব্য শুনছিলাম। আশাহত হয়েছি এই জন্য যে, যোগা কাকার মত সজ্জন মানুষের কাছে আরও দায়িত্বশীল বক্তব্য আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি সে আশায় গুড়ে বালি দিয়েছেন। বক্তব্য রেখেছেন সম্পূর্ণ একপেশে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। যা তার ব্যক্তিত্বের সাথে সঙ্গতিহীনই মনে হয়েছে আমার কাছে। হয়তো অতিমূল্যায়নের কারণেই আমার এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল।
আমাদের দেশের একশ্রেণির বিভীষণ রয়েছেন যারা বিভিন্ন ছুতা-নাতায় দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের জিগির তোলেন। সামাজিক কিছু অপরাধকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসাবে চালিয়ে দেয়া হয়। মুসলামানের ছেলে মুসলমানের ছেলের সাথে মারামারি করে মারা গেলে তা পত্রিকার কোন খবর হয় না। কিন্তু মুসলিম-হিন্দু ‘বচসা’ হলেই সেখানে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খোঁজা হয়। মুসলমান চোর মুসলমানের ঘরে চুরি করলে সমস্যা হয় না। কিন্তু হিন্দু চোরও যদি হিন্দুর বাড়িতে চুরি করে তখন সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন ওঠে। আমার জীবদ্দশায় আমাদের গোয়াল থেকে তিনবার হালের গরু চুরি হয়েছে। এটাকে আমরা চুরি হিসাবেই দেখেছি। বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনা দুর্বৃত্তায়ন হিসাবেই চিহ্নিত করেছি। কিন্তু হিন্দুর পুকুরে কেউ জাল ফেললে বা বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটলেও সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। প্রতিনিয়তই তো সংখ্যাগুরু মহিলারা ধর্ষণ ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু কোথাও যদি একজন সংখ্যালঘু মহিলা নিগ্রহের শিকার হন, সেটাকে নিয়েই তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক সামাজিক অপরাধ মনে করা হচ্ছে না।
মূলত প্রতিটি সমাজেই কিছু অপরাধ প্রবণ লোক থাকে। এদের কাজই হলো অপরাধ করা। এদের কোন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নেই। যেখানেই সুযোগ পায় সেখানেই তারা অপকর্ম করে বসে। আর দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার তো সবসময়ই হয়ে এসেছে। যেহেতু সংখ্যালঘুরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল তাই এসব অপরাধীরা অপরাধ প্রবণতা তাদের উপর বেশী। তাই এসব ঘটনার সাথে দেশের কোন ধর্মের বা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন সম্পর্ক নেই বরং অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা। কিন্তু আমাদের দেশেরই একশ্রেণির মওকাবাজ এসব ঘটনার দায়দায়িত্ব দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর চাপিয়ে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। যা আমাদের জাতীয় অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী আছেন যাদের অসাম্প্রদায়িকা ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার কথিত অবস্থান জীবন-জীবিকার প্রধান মূলধন। এরা দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের লীলাভূমি প্রমাণ করতেই বেশ পুলকবোধ করেন। কল্পকাহিনী রচনা করে ও তুচ্ছ ঘটনাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে রং চড়িয়ে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আত্মস্বার্থ ও হীনস্বার্থ চরিতার্থ করেন। আর এধরনের গুরুতর অভিযোগে বিগত ৪দলীয় জোট সরকারের সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের আপত্তিকর ভিডিওসহ বিমানবন্দরে আটক হয়েছিলেন ঘাদানিক সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তার এসব ডকুমেন্টারি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এসবের সাথে সত্যতার দূরতম সম্পর্ক নেই বরং তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও বিশেষ উদ্দেশ্যে চিত্রায়ন করা হয়েছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতার অন্যতম দিকপাল হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। তিনি চুন থেকে পান খসলেই দেশে সাম্প্রাদায়িক শক্তির উত্থান ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে পুলকবোধ করেন। কিন্তু হালে তার বোধোদয় হয়েছে বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু উপলব্ধিটা বিলম্বিত হলেও তাকে সাধুবাদ জানাতে কার্পণ্য করা মোটেই উচিত নয়। যাহোক ‘সংখ্যালঘু’, ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এসব বিষয়ে সোচ্চার ও এই ইস্যুর জনক অধ্যাপক মুনতাসির মামুনও তার সম্প্রতি তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বোধহয় উপলব্ধি করতে পেরেছেন হিন্দু জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ২০ জুন ২০১৬, তারিখে বাংলাদেশে উগ্রহিন্দুত্ববাদের উত্থানের বিরুদ্ধে কলাম লিখেছে ‘দৈনিক জনকণ্ঠে’ । কলামের অংশ বিশেষ পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করছি-
তিনি তার নিবন্ধে লিখেছেন,
১) “এ প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছে আমার ছিল না, কিন্তু বাধ্য হয়ে লিখতে হচেছ। বিশেষ করে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক যখন প্ররোচনামূলক মিথ্যা বক্তব্য রাখেন তখন কিছু বলতেই হয়।”
২) “হিন্দু মহাজোট, হিন্দু সমাজ সংস্কারক সমিতি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের অনেক নেতাই বিভিন্নভাবে কথাবার্তা বলছেন। রানা দাশগুপ্ত নতুনভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার কথা বলেছি, রাস্তায় থেকেছি, তাদের অনেকের কাছে এ ঘটনাগুলো শুভবুদ্ধির পরিচায়ক বলে মনে হচ্ছে না। অন্তিমে তা হিন্দু সম্প্রদায়ের তো বটেই দেশেরও ক্ষতি হবে।”
৩) “হিন্দু মহিলারা বোরকা পরে চলাফেরা করেন, শাখা সিঁদুর মুছে ফেলা হয়েছে, পুজো হয় না। এগুলো সর্বৈব মিথ্যা কথা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা যদি এর জোরালো প্রতিবাদ না করেন তা’হলে বুঝতে হবে এই মিথ্যাচারের সঙ্গে তারাও যুক্ত। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের অবিলম্বে এর প্রতিবাদ জানান উচিত। না হলে, বুঝতে হবে নিজেদের উচ্চাকাক্সক্ষা মেটানোর জন্য তারা পরিকল্পনা করছেন। যদি সেটি করে থাকেন তবে নিশ্চিত তা বাস্তবায়িত হবে না। মুরুব্বি ধরে কোন লাভ হবে না। তিনি কিছুই করতে পারবেন না।”
৪) “ভারতের বিজেপি ঘোষণা করেছে, নির্যাতিত হয়ে ভারতে হিন্দুরা এলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এর পরপরই বাংলদেশ থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা দিল্লি যান এবং নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন গণ্যমান্য আমাকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছেন, পরিষদের দু’একজন নেতা তাকে সফরসঙ্গী হতে বলেছিলেন। তিনি যাননি। যারা গিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবাই আমাদের পরিচিত, ব্যক্তিগত বন্ধু, যদিও সফরটি একান্ত গোপনীয়তায় হয়েছে। আমাদের ঐ বন্ধু বললেন, ‘মোদির আমন্ত্রণে তাদের উল্লাস যদি দেখতেন! ব্যাপারটা আমার কাছে ভাল ঠেকেনি। মোদির কাছে আমরা কেন নালিশ করতে যাব?’ তাকে বলা হয়েছিল, মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে তিনি ভুল করেছেন। গোবিন্দ প্রামাণিকের প্রেস কনফারেন্সের পর, তিনি আমাকে জানালেন, না গিয়ে তিনি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে টার্গেট কিলিং শুরু হয়। ‘হিন্দুরা ভয়ে দেশত্যাগ করছে’ এ রকম হিড়িক তোলা হয়, রানা দাশগুপ্তের বক্তব্য প্রকাশিত হয়।
৫) “পশ্চিমবঙ্গে গত নির্বাচনে বিজেপির ভোট বেড়েছে। এটি আরও বৃদ্ধি পাবে যদি এখান থেকে বড় সংখ্যক হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। এখন যেহেতু ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রশ্ন আসছে, অনেকেই তাতে সাড়া দেবেন। পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ আসা হিন্দু নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিজিপি লাভবান হবে। অসমে বাংলাদেশী [মুসলমান] খেদাও আন্দোলন করে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে যেটি কেউ সম্ভব বলে মনে করেননি।”
৬) “আমরা কে হিন্দু বা মুসলমান ধর্মাবলম্বী সেটি কখনও মনে করিনি, অন্তত আমার মনে কখনও আসেনি। আজ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে দেখছি, এখন আমরা প্রত্যেকে একে অপরকে চিহ্নিত করছি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ হিসেবে। বাঙালি পরিচয়টি এখন গৌণ। আমার মনে হয়েছে, আমাদের অধিকাংশ একটি পর্যায় পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক। একটা পর্যায়ের পর ধর্ম বিষয়টি চলেই আসে। এটি অস্বীকার করতে পারেন গায়ের জোরে, কিন্তু এটিই বাস্তব।”
আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানুষে মানুষে কোন বিভাজন সৃষ্টি করা হয়নি। সংবিধানে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলেও কোন কথা নেই। বরং সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (All citizens are equal before law and are entitled equal protection of law) অর্থাৎ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। সংবিধানে দেশের সকল নাগরিকের সমাজ অধিকার নিশ্চিত করা হলেও মহল বিশেষ সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু প্রশ্ন তুলে জাতিকে বহুধাবিভক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ষড়যন্ত্রের সাথে যেমন যুক্ত আছেন একশ্রেণির বিভিষণ ও বিশেষ শ্রেণির মওকাবাজ সংখ্যালঘুও। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই অশুভ শক্তিকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের মত আমাদের সকলেরই শুভবুদ্ধির উদয় হোক এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা 

মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অবশেষে তিন নিখোঁজের খোঁজ মিলেছে


অবশেষে খুলনা মহানগরীর তিন নিখোঁজ যুবকের খোঁজ পাওয়া গেছে। তারা এখন ঢাকা কারাগারে আছেন।
সংবাদপত্রের সাথে জড়িত নন, এমন ছাপোষা মানুষদের পক্ষে নিজের পয়সায় রোজ একাধিক খবরের কাগজ কিনে পড়া কষ্টসাধ্যই বটে। সরকারের দাবি অনুযায়ী আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। আমরা নিম্নমধ্যবিত্তের পর্যায়ে পৌঁছে গেছি এবং ২০১৮ সালের মধ্যে মধ্যবিত্তের পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছি।  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মোতাবেক  বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলার। জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থাও  আমাদের অর্থনৈতিক  উন্নতিকে সমর্থন করছে। সুতরাং আমারও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার কথা স্বীকার করছি। কিন্তু দু:খের বিষয়, এ রকম কোনো  আর্থিক উন্নতি আমার ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি না। শুধু একটি উদাহরণ দেই। ২০১৫ সালের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতেও  আমার সামর্থ্য অনুযায়ী মাসে ৩ কেজি গরুর গোশত (তখন ২৮০-৩০০টাকা কেজি ছিল) কিনতাম। বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় মার্চ মাস থেকে দাম বেড়ে যখন ৪শ’ ছুঁতে চলল তখন গরুর গোশত কেনার পরিমাণ মাসে ৩ কেজি থেকে কমে ১ কেজিতে ঠেকল। কারণ গরুর গোশতের দাম বাড়লেও আমার পয়সার যোগান বাড়েনি। এখন এত আর্থিক উন্নতি দেশের, অনেক মানুষের, কিন্তু আমার গরুর গোশত কেনার সামর্থ্য ঐ ১ কেজি ছাড়ায়নি। তাহলে আয়টা বাড়ল কাদের, আর আয় বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে কারা? এর জবাব আমি জানি না, সরকারের সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা জানেন।  দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে না তা নয়, তবে সত্য হচ্ছে যে হারে ঢাক-ঢোল পেটানো হচ্ছে সে হারে হচ্ছে না। আর যা হচ্ছে তার সুফলটুকু ভোগ করছে বিশেষ একটি শ্রেণি।
যে কারণে এত কথা বলা তা হলো, সব সংবাদপত্রই সব খবর ছাপে না। তা বলে কারো পক্ষে সকল সংবাদ জানার জন্য রোজ একাধিক পত্রিকা কেনাও সম্ভব নয়। যাহোক, গত ১৭ জুন  দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় একটি খবর চোখে পড়ল। তাহলো- ‘এক মাস পর ঢাকা কারাগারে খোঁজ মিলল খুলনার গুম হওয়া তিন যুবকের।’ আর কারা এ খবরটি ছেপেছে জানি না। তবে ইন্টারনেটে প্রধান ২-৩টি পত্রিকায় সন্ধান করে দেখা গেল তারা এ খবরটি ছাপেনি। কেন, তা তাদের ব্যাপার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, খুলনা মহানগরীতে একই দিনে  তিন জায়গা থেকে তিন যুবককে তুলে নেয়া হয় গত ১২ মে। তারা হচ্ছেন : হরিণটানা থানার বিসমিল্লাহ নগর কওমি মাদরাসা ও এতিমখানার  দু’শিক্ষক শোয়াইব বিশ্বাস ও আবদুল্লাহ  সাইম তূর্য এবং ইলেকট্রিক মিস্ত্রি  মনিরুল ইসলাম।  সবাইকে তুলে নেয় ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন। বহু চেষ্টা করেও খুলনার থানা পুলিশ ও ডিবির কাছ থেকে তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।  ঘটনার পর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি) মো. কামরুল ইসলাম ডিবি পরিচয়ে কাউকে তুলে নেয়ার ঘটনা তাদের জানা নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারেও কাজ করছে ডিবি।’ ভীষণ উদ্বিগ্ন তাদের পিতারা অপহৃত পুত্রদের ব্যাপারে সবাই থানায় মামলা ও জিডি করেন। তাতে কোনো ফল না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে তিন জনের অসহায় পিতা ২৬ মে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তারা ‘আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দাও’ বলে প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানান। কিন্তু অসহায় পিতাদের সে আহাজারি কারো কানে পৌঁছেনি। সে সংবাদ সম্মেলনের খবরটি দৈনিক সংগ্রামসহ কয়েকটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। সেই পিতাদের মর্মস্পর্শী আহাজারি নিয়ে ১১ জুন দৈনিক সংগ্রামে উপসম্পাদকীয় কলামে ‘আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দাও’ নামে একটি নিবন্ধও প্রকাশিত হয়। 
গত ১৭ জুন সংগ্রামে “এক মাস পর ঢাকা কারাগারে খোঁজ মিলল খুলনার গুম হওয়া তিন যুবকের” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এ খবরে বলা হয়, তিন যুবক নিখোঁজ হওয়ার একমাস পর তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ১২ জুন  তাদের যাত্রাবাড়ি থানায় দায়েরকৃত সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে ঢাকার  গোয়েন্দা  পুলিশ। এ মামলায় তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়।  তারা সবাই ডিএমপির ডিবির হেফাজতে ছিল। ১৬ জুন ঐ রিপোর্ট লেখার দিনটিতে  তারা সবাই ঢাকার কারাগারে ছিল বলে  বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে এ দেশে প্রবাদ প্রচলিত হয়েছিলঃ বাঘে ছুঁলে এক ঘা, আর পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা।
পরবর্তীতে পুলিশের নিগ্রহ সম্পর্কে আরেকটি প্রবাদ জনগণের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ঃ আকাশের যত তারা, পুলিশের তত ধারা। একজন সম্পূর্ণ নিরপরাধ মানুষকেও তারা অপরাধ আইনের কোনো এক ধারায় আটকে তার জীবনকে দোযখ বানিয়ে দিতে পারে। বস্তুত পুলিশ যে কি করে আর কি করে না, কি পারে আর কি পারে না, তার কোনো সীমা-সরহদ নেই। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুলিশের ভালো কাজের অনেক দৃষ্টান্ত আছে। নানা অভিযোগ-অসন্তোষের মাঝেও পুলিশই আমাদের ভরসা যদিও সে ভরসা পরে  কোনো কোনো সময় হতাশায় পরিণত হয়।  মাঝে-মধ্যেই তাদের কোনো খারাপ কাজ সকল ভালো কাজের ঔজ্জ্বল্যকে ম্লান করে দেয়। তবুও পুলিশ ছাড়া আমাদের চলে না।  তো, খুলনার দু’ মাদরাসা শিক্ষক এবং একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি খুলনাতে অবস্থান করে কীভাবে যাত্রাবাড়ি থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার হতে পারেন, তা শুধু পুলিশের পক্ষেই বোধ হয় বলা সম্ভব। কিন্তু তিনজন মানুষকে ১২মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত দীর্ঘ এক মাস গুম করে রাখা তথা তাদের পরিবারকে কিছু না জানানো, তাও তাদের পক্ষেই সম্ভব। কথা হচ্ছে, এটা কোন আইনে পড়ে?  আইনের প্রয়োগকারী পুলিশই যদি আইনের লংঘন করে তাহলে তার বিচার কি? উদ্বেগের কথা, তাদের যখন আটক করা হয় তখন পুলিশ কোনো নিয়ম মানেনি। তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে অন্ধকারে রেখেছে। দেশের আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে এ বেআইনি কাজের জন্য কোনো ব্যবস্থা  গ্রহণ করা যায় কিনা আমাদের জানা নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনকে আইন কঠোরভাবে মেনে চলতে বাধ্য করতে আদালত অবশ্যই বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্বের প্রতিটি সভ্য দেশেই বিচারককে পৃথিবীতে স্রষ্টার প্রতিনিধি বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মানুষের মনে সে ধারণা অনেক দুর্বল।
নিখোঁজ তিন যুবকের পিতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, তাদের পুত্ররা কোনো অন্যায় কাজের সাথে জড়িত বলে তাদের জানা নেই।  তারপরও তারা যা কিছুই করে থাক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক, বিচার করা হোক। ধরে নেয়া যাক যে পুলিশ তাদের সম্পর্কে অনেক বেশি জানে ও নিশ্চিত যে তারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত। তাই তাদের আটক করা হয়েছে।  আটক যদি করাই হয় তবে তা স্বীকার করায় অসুবিধা কি? আটকও করবে আবার তা অস্বীকারও করবে, তা কি হয়? এতে পরিবারকে অযথা হয়রানি করা হয়। আটকের পর আটক ব্যক্তিদের আইনি সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে। তার সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করে, তাদের নিখোঁজ রেখে পরিবারকে দুঃসহ উদ্বেগ-দুশ্চিন্তায় ফেলে ডিবি পুলিশের লাভ কি? কেন তারা এটা করে? তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি এসব অনিয়ম, অমানবিক কার্যকলাপ দেখে না? এর কি অবসান করা যায় না?
দেখা যাচ্ছে যে এ ধরনের আটক নিয়ে বহু লেখালেখি, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং এভাবে আটক নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও ডিবি পুলিশের এ আটক অভিযান বন্ধ হয়নি। যেমন ১৭ জুন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা  হয়, ১৪ জুন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটের সামনে থেকে শাহাজান আলী নামের এক ব্যক্তিকে  তুলে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশ। জানা গেছে, তিনি একজন জামায়াত কর্মী। তিনি পুলিশের মামলায় জেলে আটক ছিলেন। জামিন পেয়ে ঐদিন তিনি জেল থেকে বের হলে এ ঘটনা ঘটে। ১৬ জুন পর্যন্ত তিন দিনেও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। তার স্বজনেরা থানায় তাকে পাননি।
গত ২৪ মে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে,  বিনা পরোয়ানায় ও সাদা পোশাকে কাউকে আটক করা যাবে না। গ্রেফতার করতে হলে নিয়ম মানতে হবে। গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। কিন্তু শাহাজান আলীর ক্ষেত্রে এসবের কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে মুক্ত আলো আলো-হাওয়ায় একটুক্ষণ নিঃশ্বাস নেয়ারও সুযোগ পাননি।  ডিবি পুলিশ তাকে নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি নিখোঁজ। 
এ নিখোঁজ হওয়া যে কোনো সময় তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে যার পরিণতি হতে পারে শাহাজান আলীর লাশ।  উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের  রায় প্রকাশের পর আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর সকল নির্দেশনা মেনে চলা হবে। এই যদি তার নমুনা হয় তাহলে উদ্বেগের ব্যাপার।
জানা যায়, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সারা দেশে সাদা পোশাকে গ্রেফতারের ঘটনা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এটা আশার কথা। কেউ অপরাধ করে থাকলে গ্রেফতার হবে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপারে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করার দাবি দীর্ঘদিনের। ক’দিন আগে প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করার জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সরকার সে আহ্বানে সাড়া দেবে, থানা পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব প্রমাণ ছাড়া কাউকে আর গ্রেফতার করবে না, কাউকে গ্রেফতার করা হলে নিয়ম মেনেই করা হবে, এ আশা আমরা নিশ্চয়ই করতে পারি।
হোসেন মাহমুদ 

শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আবার জাসদ বিতর্ক : আবার মহাজোটে গৃহদাহ


‘স্বার্থ যেখানে ঐক্যের বন্ধন, সংঘাত সেখানে অনিবার্য’। কথাটি আমার নয়। আমার এবং আমাদের অনেকেরই একজন বড়ভাই ছিলেন। নাম ফারুক মাহমুদ। অনেকেই তাকে জানতেন কবি হিসেবে। তাই অন্যেরা তার নাম লিখতেন কবি ফারুক মাহমুদ। আমি ডাকতাম ফারুক ভাই। বেশ কয়েক বছর আগে ফারুক মাহমুদ আমাদেরকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য ওপারে চলে গেছেন। ফারুক ভাই সম্পর্কে আরো কিছু বলার আছে। সেটি একটু পরে বলবো। কিন্তু ফারুক ভাইকে স্মরণ করছি রাজনীতিতে সুবিধাবাদের দৌরাত্ম্য দেখে। ফারুক ভাইয়ের আমলেও রাজনীতিতে বিশেষ করে ক্ষমতার রাজনীতিতে সুবিধাবাদ এমন প্রকট হয়ে উঠেছিল। দুই বিপরীত আদর্শের এক বা একাধিক রাজনৈতিক দল এক জামাতে শামিল হয়েছিল। বলা বাহুল্য, ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ-বাটোয়ারা করার জন্যই তারা এক প্ল্যাটফর্মে মিলিত হয়েছিলেন। এরপর সেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়েই তাদের মধ্যে কামড়াকামড়ি শুরু হয়। কামড়াকামড়িটা এমন পর্যায়ে যায় যে প্রথমে বাকযুদ্ধ, পরে হাতাহাতি এবং তারপরে লাঠালাঠি। তাদের সেই লাঠালাঠি দেখে ফারুক ভাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘স্বার্থ যেখানে ঐক্যের বন্ধন, সংঘাত সেখানে অনিবার্য’।
কথাটি ফারুক ভাইয়ের নিজস্ব, নাকি কোন মনিষীর কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন সেটি আমার এখন স্পষ্ট মনে পড়ছে না। তবে কথাটি চরম সত্য। আজ আওয়ামী লীগ এবং জাসদের মাঝে দারুণ তর্কযুদ্ধ দেখে এসব কথা মনে পড়ছে। জানি না, ফারুক ভাই বেঁচে থাকলে তিনি আজ কি বলতেন। আমার আজকের লেখার উপজীব্য আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাকযুদ্ধ। এ সম্পর্কে একটু পরেই বলছি। তার আগে ফারুক ভাই সম্পর্কে আরো দু’চারটি কথা।
একাডেমিক ডিগ্রী থাকলেই কোন মানুষ যেমন বিদ্বান হয় না, তেমনি জ্ঞানীও হয় না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোন একাডেমিক ডিগ্রী ছিল না। তারপরেও আজ কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল চেয়ার স্থাপিত হয়েছে। তার অর্থ হলো, এমএ ক্লাসেও নজরুল সাহিত্য পড়ানো হচ্ছে। এখানে অবশ্য আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নাই যে, জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সেক্যুলার ঘরানা নজরুলকে চরমভাবে উপেক্ষা করছেন। অথচ একটি সময় ছিল যখন তারা সভা-সমিতিতেও নজরুলের গান গাইতেন। নজরুলের ওপর নাটক করতেন, ছায়ানাট্যও করতেন। অবশ্য নজরুলের সাহিত্য সমগ্র নিয়ে নয়। বেছে বেছে কয়েকটি গান তারা বাজাতেন এবং গাইতেন। সেই সব গান যেগুলো সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন-
কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
লাথি মার, ভাঙ্গরে তালা!
যত সব বন্দী শালায়-
আগুন-জ্বালা,
-জ্বালা, ফেল উপাড়ি।
আরো একটি গান গাওয়া হতো। সেটি ছিল -
জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত
জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত!
যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’
হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী,
নব জনম লভি’ অভিনব ধরণী
ওরে ঐ আগত।
জাগো....
আরো ছিল। যেমন-
মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ,
ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত।
আরেকজন অমর কবি হলেন, ফররুখ আহমেদ। তারও তো এমএ ডিগ্রী ছিল না। অথচ আমরা এবং আমাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক যুবক ফররুখ আহমেদকে ছোট নজরুল বলতাম। তার ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘সিন্দাবাদ’ সহ অসংখ্য কবিতা মুসলিম মানসকে উজ্জীবিত করে।
ফারুক ভাইকে আমি ঠিক ঐ দুই অমর কবির পর্যায়ে নিয়ে না গেলেও আমাকে বলতেই হবে যে, তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। দারিদ্র্য  এবং কঠিন জীবন যুদ্ধ তার প্রতিভার পূর্ণ স্ফুরণ ঘটাতে পারেনি। তারপরেও যতটুকু স্ফুরিত হয়েছে সেটিও অনেকে জানেন না। যেমন- রবীন্দ্রনাথের, ‘খরো বায়ু বয় বেগে / চারিদিক ছায় মেঘে / ওগো মাঝি নাও খানি বাইও’। কবি ফারুক মাহমুদ এই গানটির যে প্যারোডি করেছিলেন তার কয়েকটি লাইন নীচে তুলে ধরছি।
জালিমের জিন্দানে ধুকে মরা জিন্দেগী
আমরা আজাদ ফের করবো
ইসলামী হুকুমতে আল কোরআনের মতে
নয়া এক খেলাফত গড়বো।
আমরা মুমীন দিল নিয়েছি শপথ
জান কোরবান দেবো ছাড়বো না পথ।
মরতে যদি বা হয় জিহাদের ময়দানে
শহীদ সেনার মতো মরবো।
জালিমের জিন্দানে —
এছাড়া ‘ধোলাই কাব্য’ নামে ফারুক মাহমুদের একটি রাজনৈতিক কবিতার বই বেরিয়েছিল। রাজনীতির কবিতার বই না বলে সেটিকে বরং পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বলা যায়। ফারুক মাহমুদ প্রসঙ্গ এখানেই শেষ। এখন যাচ্ছি মূল প্রসঙ্গে। সেটি হলো, আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাক যুদ্ধ।
॥দুই॥
কেউ যদি মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফই মহাজোটে থাকা অবস্থায় মহাজোটের শরিক জাসদের বিরুদ্ধে এই প্রথম বললেন তাহলে সত্যের অপলাপ হবে। আজ থেকে প্রায় ১০ মাস আগে জাসদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ফার্স্ট কাজিন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি মরহুম শেখ ফজলুল হক মনির আপন ছোট ভাই। শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র হলেন ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট জাতীয় সংসদে জাসদের ’৭২ থেকে ’৭৫ সালের কর্মকা-ের তদন্তের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদ দায়ী। এর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে শেখ সেলিম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণ বাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল। তার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নেতা জাসদকে তুলোধুনা করেন। যতদূর মনে পড়ে, আওয়ামী লীগের এসব প্রভাবশালী সদস্যের বিষোদ্গারের ফলে আওয়ামী লীগ হাই কমান্ডের অনেকেই বিব্রত হন। কারণ, জাসদ তখনও মহাজোটের শরিক ছিল। এর ফলে ৩/৪ দিন পরে দেখা যায়, জাসদ ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে বিতর্ক বন্ধ করার আহ্বান জানান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর সাময়িকভাবে হলেও জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতার বিষোদ্গার থেমে যায়। তারপর ১০ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। ১০ মাসের মাথায় আবার জাসদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। এবার আর যে সে ব্যক্তি নন, এবার জাসদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ধরেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি স্বাধীন বাংলার প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র। তিনি বলেন, জাসদ থেকে মন্ত্রী করার জন্যে আওয়ামী লীগকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। জাসদই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, ‘হঠকারী দল’ জাসদ থেকে ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। কিন্তু জাসদের নেতা-কর্মীরা এই সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহকেরা শতভাগ ভণ্ড। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পূর্বের ইতিহাস জেনে এই হঠকারীদের (জাসদ) এড়িয়ে চলবেন। বিপ্লব বিপ্লব বললেই বিপ্লব হয় না। কাজ করতে হবে। আপনাদের শিক্ষিত হতে হবে। আপনার মেধা জাতির জন্য কাজে লাগাতে হবে। তখন সোনার বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে। জাসদের বর্তমান দৈন্যদশা উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, তাঁরা অতি বিপ্লবী ছিল। তারা অনেক প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। কিন্তু এক সময় হারিয়ে গেল। এখন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে।
॥তিন॥
সৈয়দ আশরাফের এসব বক্তব্যের প্রতিবাদে পরদিন ১৩ ই জুন মঙ্গলবার জাসদ প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানব বন্ধন করে। এই মানব বন্ধনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জাসদ নেতা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, আপনি থামান, আপনার এই মন্ত্রীকে থামান। এই সংকটে তিনি যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন, যে অনৈক্যের সৃষ্টি করছেন, অবিলম্বে তাঁর মুখ বন্ধ করুন। আর সৈয়দ আশরাফকে বলব, আপনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে মনোযোগ দিন। আপনি কীভাবে মন্ত্রিত্ব চালান আমরা জানি, দেশবাসী জানে। আমরা তা বলতে পারি। কারণ, আমরা মহাজোটের অংশ। জনপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, সেখানে মনোযোগ দিন।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলে দিতে হবে, ঐক্য চান কি চান না। ১৪ দলের ঐক্য থাকবে কি থাকবে না? একদিকে আমাদের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতার নামে বিষোদ্গার করবেন, আর অন্যদিকে জঙ্গি ঠেকাবেন, এটা হতে পারে না। আমরা মহাজোট সরকারে আছি, ১৪ দলে আছি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অবস্থান আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে, সংবিধান আছে, জাতির জনক আছেন আমাদের সামনে। সেই বিবেচনা করেই চলি। আর ভুল করবেন না।’
বিষয়টি শুধু সভা সমিতি এবং মানব বন্ধনেই সীমাবদ্ধ নাই। জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে এই জাসদ বিতর্ক। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ২০ লাখ কর্মী হত্যার অভিযোগ আনেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাসদ যদি তাদের গণবাহিনী দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করত তাহলে বঙ্গবন্ধুর মতো জাতীয় নেতাকে আমাদের হারাতে হতো না। তিনি বলেন, আমাদের বিরোধী দলের এমপিদের সংখ্যা অত্যন্ত কম, মাত্র ৪০ জন। কিন্তু টিভিতে আমাদের মুখটা দেখানো হয় না। এর কারণ হচ্ছে এই সংসদে যিনি ইনফরমেশন মিনিস্টার তিনি জাসদ করেন। প্রবলেমটা ওখানে না, প্রবলেমটা ছিল আমরা ছাত্রলীগ করেছি, উনি জাসদ করেছেন। জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, একসঙ্গে যুদ্ধ করলাম, একই বিছানা থেকে উঠে উনি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। অস্ত্র দিয়ে আমাদের গুনে গুনে ২০ লাখ লোককে হত্যা করলেন। এই যে হত্যা করল, আজকে যে দুর্দিন, দুরবস্থা সেদিন জাসদ যদি গণবাহিনী করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা না করত, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা না করত তাহলে দেশের ক্ষতি হতো না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল যথার্থই বলেছেন, এই বিষয়টা জাসদ করেছে।
॥চার॥
এই মুহূর্তে জাসদ কয়ভাগে বিভক্ত সেটির হিসাব আমাদের কাছে নাই। অতি সম্প্রতি ইনু পন্থি জাসদ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটির নেতৃত্বে আছেন তথ্য মন্ত্রী ইনু ও সংসদ সদস্য শিরিন। আরেকটির নেতৃত্বে আছেন সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল। এর বাইরেও রয়েছে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাসদ, যেটিকে রব সাহেবরা বলেন জেএসডি। আরেকটি অংশ আছে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে। জাসদ বিতর্কে জনাব আবদুর রবও অংশ নিয়েছেন। গত বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জনাব আবদুর রব বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য, অন্যায্য ও অনভিপ্রেত। বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের দলীয় ভুল রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে দলীয় আবর্তে বন্দী করে, ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ করে, জনগণ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। ৩২ নং ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর লাশ রেখে আওয়ামী লীগ নেতারাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এবং সেই সরকারই দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। এ সব সত্য এবং ভুল রাজনীতি আওয়ামী লীগের স্বীকার না করাই হবে অতিমাত্রায় ভণ্ডামি।
বিবৃতিতে আ স ম রব আরও বলেন, সশস্ত্র যুদ্ধের পর ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠন না করে শুধু আওয়ামী দলীয় সরকারের কারণে ৭১’-এ গড়ে ওঠা জাতির লৌহ কঠিন ঐক্যকে ভেঙে দেয়া হয়। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে রক্ষী বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে রাজনৈতিক সংকটকে তীব্র করা হয়। রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধির মত অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ ও একদলীয় বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো।
জাসদের ৪র্থ উপদল হলো শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ। গত বুধবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি যুক্ত বিবৃতিতে শরীফ পন্থী জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া এবং নজমুল হক প্রধান সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যকে অপ্রত্যাশিত আখ্যা দেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়।
জাসদ বিতর্ক শেষ হয়নি। বিতর্ক একবার ওঠে, আবার ওপরের হস্তক্ষেপে থেমে যায়। এবারও হয়তো তাই হবে। কিন্তু তাই বলে চিরদিনের জন্য শেষ হবে না। 

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কারাগারে ঠাঁই নেই


দেশের কারাগারগুলোতে ‘ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার তিন-চার গুণেরও বেশি হয়ে যাওয়ায় পালা বা শিফ্ট করে ঘুমাতে তো হচ্ছেই, অনেককে এমনকি বাথরুমেও রাত কাটাতে হচ্ছে। গত সোমবার দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সারাদেশের বিভিন্ন কারাগারে যেখানে বড় জোর ৩৪ হাজার ৭৯৬ জন থাকতে পারে, সেখানে বর্তমানে ৭৫ হাজারের বেশি বন্দীকে কোনোভাবে থাকতে হচ্ছে। এটা অবশ্য চূড়ান্ত হিসাব নয়। কারণ, মাস তিনেক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, কারাগারগুলোতে ৩৪ হাজার ৭৯৬ জনের স্থলে রয়েছে ৬৯ হাজার ৭৭৪ জন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাব দেয়ার পর একদিকে তিন মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, অন্যদিকে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা। বিশেষ করে বিগত কিছুদিন ধরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনের নামে পুলিশ গণহারে গ্রেফতারের অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানে প্রকৃত বা প্রমাণিত জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা আদৌ গ্রেফতার হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে সঙ্গত কারণে। কেননা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, পুলিশ প্রধানত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে। ধরেই সোজা চালান করে দিচ্ছে সাজানো মামলায়। এর ফলে গণতান্ত্রিক তৎপরতায় জড়িত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা রাতারাতি জঙ্গি-সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন।
ওদিকে কারাগারগুলো ঠাঁই দিতে পারছে না এত বেশি বন্দীকে। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিসংখ্যানই দেয়া হোক না কেন, বন্দীদের সংখ্যা এরই মধ্যে এক লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার চার গুণের বেশি বন্দী রয়েছে কারাগারগুলোতে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানামুখী সমস্যায় পড়েছে বন্দীরা। আরামে ঘুমানোর মতো জায়গা পাওয়া দূরে থাকুক, অধিকাংশ বন্দীকে বরং পালা করে ঘুমাতে হচ্ছে। একজনের জায়গায় পাঁচ থেকে সাতজনকে শুতে হচ্ছে। একদল বন্দী যখন কোনোভাবে শোয়ার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদলকে তখন বসে কাটাতে হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অসংখ্য বন্দী বাধ্য হয়ে বাথরুমে পর্যন্ত গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই। কারণ, কারো না কারো বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে যখন-তখন। শোয়ার ও ঘুমানোর সুযোগ পাওয়াটাই কারাগারের ভেতরের একমাত্র সমস্যা নয়। মশার উপদ্রব তো রয়েছেই, সেই সাথে আছে ছারপোকা ও তেলাপোকার মতো আরো কিছু যন্ত্রণা। তাছাড়া সাধারণভাবেও কারা অভ্যন্তরের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এমন অবস্থায় বন্দী মাত্রের জীবনই প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে পড়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে কারাগারগুলোর অভ্যন্তরে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে।
আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমন অবস্থা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আপত্তির কারণ শুধু ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দীকে জোর করে আটক রাখা নয়, ঘটনাপ্রবাহে প্রাধান্যে এসেছে সরকারের উদ্দেশ্যের দিকটি। এই উদ্দেশ্য যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও শায়েস্তা করা সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে ২০০৮ সালের ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয়ার পর বিরোধী দলকে দমনের ব্যাপারে সরকার উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এই পর্যায়ে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসী তো দেয়া হয়েছেই, একযোগে সীমা ছাড়িয়ে গেছে দমন-নির্যাতনও। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে দেশের কোথাও সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেয়া হয়নি। মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে পর্যন্ত ভণ্ডুল করে দিয়েছে পুলিশ। এসব অভিযানে পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব’র পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও  আওয়ামী লীগের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীরাও রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে অংশ নিয়েছে। ফলে বিরোধী দলের শত শত নেতা-কর্মীর মৃত্যু ঘটেছে। আহত ও পঙ্গু  হয়েছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। তেমন অবস্থাই এখনো চলছে।
অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ও সরকারকে একই ধরনের মারমুখী  ভূমিকায় দেখা গেছে। বিএনপি ও জামায়াতের কারো পক্ষেই নির্বিঘেœ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বা প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে ‘নির্বাচিত’ হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ‘জনপ্রিয়’ লোকজন। ইউপি নির্বাচনের  বিষয়টি সারা বিশ্বেই জানাজানি হয়েছে। নিন্দিত হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু এতেও সরকারের নীতি-উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। সরকার বরং এমন নিষ্ঠুরতার সঙ্গেই দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে দেশে কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্ব না থাকে। কোনোভাবে টিকে থাকলেও কোনোদলের পক্ষেই যাতে সরকারের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন বা আন্দোলন করা সম্ভব না হয়। এটাই আসলে কারাগারগুলোতে ‘ঠাঁই’ না থাকার প্রধান কারণ। আমরা এমন অবস্থার বিরোধিতা করি এবং অনতিবিলম্বে কারাগারের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানাই। সরকারকে এজন্য ঢালাও গ্রেফতার অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং সাজানো মামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কারাগারে পাঠানো চলবে না। একই সঙ্গে এমন ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দেশের কোনো কারাগারেই ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দী না রাখতে হয়।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কামদা প্রসাদের তেলেসমাতি


কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ভিক্টোরিয়া কলেজের নিহত ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত টীমের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা দ্বিতীয়বার আর একটা ভেলকিবাজি দেখিয়ে দিলেন। তনু খুন হয়েছে গত ২০ মার্চ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের সুরক্ষিত এলাকার ভেতরে। রাত সাড়ে দশটায় তনুর বাবা তাদের সেনানিবাসস্থ বাসার কাছে একটা ঝোপের মধ্যে দেখতে পান মেয়ের লাশ। মাথার পেছন দিকটা থেতলানো। নাকে-কানে আঘাত ও রক্তের দাগ। সালোয়ার-কামিজ ছেঁড়া। সারা শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন। তার লম্বা চুলের গোছা ছিল কাটা। লাশ পড়ে ছিল রক্তাক্ত অবস্থায়। প্রথমে তনুকে নেওয়া হয় সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। তারপর রাত আড়াইটার দিকে তাকে নেওয়া হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে, ময়না তদন্তের জন্য।
কামদার অচিকিৎসকসুলভ তৎপরতা শুরু হয় তখন থেকেই। তনুর প্রথম দফা ময়না তদন্ত হয়েছিল গত ২১ মার্চ। সে রিপোর্ট তৈরি করার জন্য এই কামদা দায়িত্ব দিয়েছিলেন কলেজের অনভিজ্ঞ তরুণ লেকচারার ডা. শারমিন সুলতানাকে। কিন্তু রিপোর্ট দাখিল করতে তিনি দীর্ঘসূত্রিতার আশ্রয় নেন। এবং দু’ সপ্তাহ পরে ৪ এপিল তিনি একটি দায়সারা রিপোর্ট দেন। তাতে এই তনু হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ নির্ণয় করতে পারেননি শারমিন। তিনি হত্যাকাণ্ড না বলে মৃত্যু বলেছেন।  একেবারে পরিষ্কার রিপোর্ট। তার ‘মৃত্যু’র কারণ নির্ণয় করা যায়নি। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাননি শারমিন। যেটুকু পাওয়া গিয়েছিল, তা নাকি মৃত্যু ঘটার জন্য যথেষ্ট নয়। তনু মত্যুর আগে ধর্ষিত হয়েছিল-এমন কোনো আলামতও পাওয়া যায়নি। তাছাড়া শরীরে কোনো বিষক্রিয়ারও সন্ধান পাননি শারমিন সুলতানা। এ ধরনের একটি দায়সারা রিপোর্ট লেখার জন্য ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল না। সে রিপোর্ট দেখে মনে হবে, কোনো চিকিৎসক নয়, ময়না তদন্ত রিপোর্টটি যেন লিখেছে ঘাতক নিজেই।
এ বিষয়ে কামদা সাহাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। কামদা বলেছিলেন, শারমিন সুলতানার ‘অনভিজ্ঞতা’র কারণে এটা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয় যে, কামদা প্রসাদ কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন। সেনানিবাসের ভেতরে একজন অনার্স পড়ুয়া তরুণী খুন হলো, তার তদন্তভার কামদা দিলেন এক অনভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। কেন? আবার এই রিপোর্ট জমা দিতেইবা শারমিন বা কামদা কেন দু’সপ্তাহ লাগালেন। অর্থাৎ প্রথম থেকেই কামদা বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ডা.(?) শারমিনের রিপোর্ট মানলে এই দাঁড়ায় যে, তনুকে কোনো মানুষ বা ভূতে মারেনি। তনু এমনি এমনি খারাপ ‘বাতাস লেগে’ মরে গেছে। অথচ ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের দায়িত্বই হলো হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন করা।
এভাবেই দায় সেরে পার পেয়ে যেতে চেয়েছিলেন কামদা প্রসাদ সাহা। কিন্তু আদালত তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন। কামদার কেরামতিতে তখনও তনুর প্রথম ময়না তদন্ত রিপোর্টই প্রকাশিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৩০ মার্চ আবারও ময়না তদন্তের জন্য তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। আর আশ্চর্যের ঘটনা এই যে, এবারও ময়না তদন্তের দায়িত্ব গিয়ে পড়ল ঐ কামদা প্রসাদ সাহার ওপরই। কর্তৃপক্ষ কোন্্ বিবেচনায় ধরে নিলেন, যে কামদার তত্ত্বাবধানে কোনো আলামত পাওয়া গেল না বলে শারমিন রিপোর্ট দিলেন আর কামদা তা অনুমোদন করলেন, তাদের দিয়ে তদন্ত করালে নতুন বা বিপরীত কিছু বেরিয়ে আসবে বা আলামত পাওয়া যাবে? প্রশ্ন তখনই উঠেছিল। সংশয় ছিল, এই কামদা গং-এর কাছ থেকে কোনো সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে না।
সংবাদপত্রে লেখালেখি হয়েছিল যে, তনুর দ্বিতীয় ময়না তদন্ত করা উচিত অধিকতর দক্ষ চিকিৎসক ও সাজসরঞ্জামসম্পন্ন কোনো হাসপাতালে। আর তার জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই ঢাকা মেডিক্যালে প্রায় তিন মাস পর লাশ তুলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ ও ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় তনুর দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বও দেওয়া হলো ঐ কামদা প্রসাদের হাতেই। এবার ময়না তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করার কমিটিতে থাকলেন কামদা প্রসাদ সাহা, গাইনি বিভাগের প্রধান করুণা রানী কর্মকার ও ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
আর এর প্রথম দিন থেকেই কামদা নানা নাটক শুরু করলেন। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, কামদা আর দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্টটি জমা দেন না। কী পাওয়া গেল তাতে, তা নিয়ে নানা বাহানা ও ভড়ং তৈরি করতে থাকেন। এর মধ্যে তনুর পরনের কাপড় ও দাঁত-নখের ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায় হত্যার আগে অন্তত তিন ব্যক্তি তনুকে ধর্ষণ করেছে। এবার কামদা প্রসাদ বলতে শুরু করেন যে, ডিএনএ রিপোর্ট তার কাছে জমা না দিলে তিনিও ময়না তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন না। অথচ ডিএনএ রিপোর্টের সঙ্গে ময়না তদন্ত রিপোর্টের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্তকারীরা নিয়মানুযায়ী ডিএনএ রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। তদন্তকারীরা বললেন, আদালত চাইলে তনুর ডিএনএ রিপোর্ট কামদা প্রসাদকে দেয়া যেতে পারে। পরে আদালত ডিএনএ রিপোর্ট কামদাকে দিতে তদন্তকারীদের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী কামদা বেশ সময় নিয়ে দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্টটি প্রকাশ করেন।
এর জন্য কামদা প্রসাদ সাহা সময় নেন প্রায় আড়াই মাস। এটি গাফিলতি ও দায়িত্বে চরম অবহেলা। এবারও মেডিক্যাল বোর্ড তনুর মৃত্যুর কোনো কারণ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ যে হবেই, তা যেদিন এই লোকগুলোকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেদিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।  গত ১২ জুন কামদা সিআইডির কাছে রিপোর্ট জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১০ দিন পর কবর থেকে তোলা লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। পারিপার্শ্বিক নানা অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশকে আরও অধিক তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এর আগে ডিএনএ পরীক্ষার বরাত দিয়ে সিআইডি বলেছিল, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু কামদার জমা-দেওয়া ময়না তদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণের উল্লেখ নেই। এতে বলা হয়েছে মত্যুর আগে তনুর সঙ্গে যৌন সংসর্গ হয়েছিল। এ নিয়ে এক ধরনের মশকরা করেন কামদা প্রসাদ ও ওমর ফারুক। যৌন সংসর্গটা ধর্ষণ কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে রহস্যজনক জবাব দেন কামদা। বলেন, ‘সেটা আপনারা বুঝে নেন।’ এখানে ওমর ফারুক আবার ব্যাখ্যা করে বোঝাবার চেষ্টা করেন যে, ‘ইন্টারকোর্স আর রেপ এক জিনিস নয়। স্যার ইন্টারকোর্স বলেছেন। ব্যাস।’
তারপরও সাংবাদিকরা জানতে চান, তনুর সম্মতিতেই যদি সংসর্গ হয়ে থাকে, তবে তাকে খুন করা হলো কেন। কামদা গং এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। একইভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যৌন সংসর্গের আলামত পাওয়া গেল দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্টে, তাহলে মৃত্যুর কারণ পাওয়া গেল না কেন? এরও কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি কামদা সাহা। তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট দেখে তিনি এটা নিশ্চিত হয়েছেন। এখানে আরও একবার চিকিৎসক হিসেবে তার অযোগ্যতাই প্রমাণিত হয়। তিনি নিজের অযোগ্যতা ঢাকা দিতে অপরের মুখে ঝাল খাওয়ার চেষ্টা করলেন। তিনি আরও বলেন, ‘মেডিক্যাল টার্মে ধর্ষণ বলে কিছু নেই। ডাক্তারেরা ধর্ষণ বলে না। ডাক্তারেররা বলে ইন্টারকোর্স। আমরা কখনও ধর্ষণ বলি না।’ এ সম্পর্কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক প্রধান হাবিবুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ধর্ষণের ঘটনা হলে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে ‘জোরপূর্বক যৌন সংসর্গ’ লেখা হয়ে থাকে। এখানেও মিথ্যার আশ্রয় নিলেন কামদা।
কামদার এই রিপোর্টের পর জনমনের ক্ষোভ প্রশমিত হবে না। দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটা একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক পরামর্শক ও বর্তমানে ভারত, নেপাল ও সুদানের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডাক্তার মোজাহেরুল হক বলেছেন, যদি শরীরের কোনো অংশে বিশেষ করে হাড়ে কোনো ইনজুরি থাকে, তা হলে তৃতীয় দফা ময়না তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। তবে অন্য কোনো ইনজুরির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।
এই রিপোর্ট প্রকাশের পর তনুর মা আনোয়ারা বেগম ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন ‘ডাক্তাররা মিথ্যা কথা বলেছে। তনুর পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথার পেছন দিক ও নাক থেতলানো ছিল। কবর থেকে যখন ওর লাশ তোলা হয়, তখন সেটি ফোলা ছিল। তেমন কোনো বিকৃতি হয়নি।’ আনোয়ারা বেগমের প্রশ্ন, ‘সুস্থ সুন্দর মেয়েটি কি কোনো কারণ ছাড়াই মারা গেল? ওরে কি জিনে মেরেছে?’ এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘দীর্ঘসূত্রিতা ও কালক্ষেপণ করে ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। তনু হত্যা ও প্রথম ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে জনমনে নানা সন্দেহ ছিল। দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্টেও সেই সন্দেহ দূর হয়নি। মনে হচ্ছে স্বেচ্ছায় হোক কিংবা হুমকি বা চাপের মুখে আমরা সত্য প্রকাশে কুিণ্ঠত হচ্ছি। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’ এ প্রসঙ্গে নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, ‘দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্তে এই অস্পষ্টতা খুবই হতাশাজনক। এতে চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘যৌন সংসর্গ আর ধর্ষণ বা বলাৎকার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধর্ষণ অপরাধ। ডাক্তারি ভাষা আর আইনি ভাষার বিতর্কে আমরা যেতে চাই না। আমরা চাই সত্য উদ্ঘাটন ও ন্যায়বিচার। ডাক্তারদের প্রতি অনুরোধ নিজ পেশার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সত্য উদ্ঘাটন করুন।’
কামদা প্রসাদ সাহার দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই সিআইডি অবশ্য বলেছিল যে, তারা অপরাধীদের চিহ্নিত করে ফেলেছে। এখন ওপরের মহলের সহযোগিতা পেলেই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। সেই সহযোগিতা কি কোনো দিন পাওয়া যাবে?
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান


‘অভিযানের রাজনীতি, রাজনীতির অভিযান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। ১৩ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, রাজধানীসহ সারা দেশে জঙ্গি দমনে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলেও এরই মধ্যে গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। চলমান অভিযান কোনভাবেই শুধু জঙ্গি আটকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করছে, তাদের নেতা-কর্মীদের আটক করা হচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে। অনেককে আটকের পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, টাকা না পেয়ে পেন্ডিং মামলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অনেককেই। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গি বিরোধী অভিযানের প্রথম ২ দিনে জঙ্গিসহ মোট ৫ হাজার ৩২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারের সংখ্যা ৮৫। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, অভিযানকে কোনভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা ঠিক নয়। অভিযান সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের মধ্যেই সীমিত রাখা উচিত। বিশেষ করে জঙ্গিদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। আবার অকারণে কোনো নিরীহ মানুষ যাতে গ্রেফতার না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে কোনভাবেই যাতে গ্রেফতার বাণিজ্য না হয়।
সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও এ প্রসঙ্গে কথা বলছেন। মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। কিন্তু অভিযান যেন কোনভাবেই রাজনৈতিক প্রতিশোধের জন্য না হয়। স্পর্শকাতর এসব অভিযানে পুলিশ সদর দফতরের কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। নইলে অপারেশনকে কেন্দ্র করে অসৎ সদস্যদের নানা ধরনের অনিয়ম এবং অন্যায় কর্মকাণ্ডের দায়ভার নিতে হবে পুলিশ বাহিনীকে। বর্তমান অভিযানে নিরাপত্তা বিশ্লেষকের এমন পরামর্শকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। তবে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন এসব পরামর্শকে কতটা গুরুত্ব দেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অভিযোগ ওঠেছে, রমযানের শুরুতে বিশেষ করে ঈদের আগে শুরু হওয়া এই অভিযান অসৎ প্রকৃতির ও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। নিরীহ এবং সহজ-সরল মানুষকে ধরে নিয়ে এসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ছেড়ে দেয়া ব্যক্তিদের বলা হচ্ছে কোনভাবে এই বিষয়টি লিকড হয়ে গেলে তাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। ঝিনাইদহ সদর থানা এবং যশোরে এমন কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ভুক্তভোগীদের কেউই তাদের নাম প্রকাশে রাজি নন। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তৃতীয় দিন পর্যন্ত পুলিশী অভিযানে বিএনপিরই মাঠ পর্যায়ের অন্তত ২ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। পরে পেন্ডিং মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এটা আদালত অবমাননার শামিল। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ঈদ বখশিশের জন্যই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ধরনের অভিযান আগেও হয়েছে। কিন্তু কতটুকু সফল হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আগাম ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালানো হলে জঙ্গিরা আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ আগেও ছিল, এখনও আছে। বিনা বিচারে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এ অভিযান চালাতে হবে। এ ধরনের পর্যবেক্ষণে যথেষ্ট বাস্তবতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। জঙ্গি দমন অভিযানের নামে কোনভাবেই যেন সাধারণ মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নিপীড়ন ও ভোগান্তির শিকার না হন এ ব্যাপারে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের ন্যায়নিষ্ঠ ও সচেতন ভূমিকা পালন প্রয়োজন। এর অন্যথা হলে আইনের শাসন সমুন্নত হবে না। আর রমযানের এই পবিত্র মাসে অন্যায়ভাবে একজন নাগরিকও জুলুম-নির্যাতনের শিকার হলে স্রষ্টার আদালতে এর দায়ভার বেশ বড় হয়েই দেখা দেবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাই উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ইইউ পার্লামেন্টের শুনানি


ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের পর এবার বাংলাদেশ সম্পর্কে বিতর্কের পাশাপাশি দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা ইইউ পার্লামেন্টে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় বিরামহীনভাবে চলতে থাকা গুপ্তহত্যা এবং মতপ্রকাশের ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ বর্তমান বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ পার্লামেন্ট। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সশস্ত্র হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার এবং রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়নের জন্যও তাগিদ দিয়েছেন পার্লামেন্টের সদস্যরা। কয়েকজন সদস্য এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বানও জানিয়েছেন। 
শুনানিতে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইইউ পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক সাব কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বার্ট কোয়েল্ডার্স। তিনি বলেছেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ-এর ভালো সম্পর্ক থাকলেও দেশটির উদ্বেগজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাখ্যাদানকালে মিস্টার বার্ট কোয়েল্ডার্স বলেছেন, পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে। তিনি আরো বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। এ উদ্দেশ্যে বাছবিচারহীন গ্রেফতার বন্ধ করার পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা ও সব নাগরিকের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।  দেশটিতে চলতে থাকা সকল নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হতে হবে। দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, উদ্বেগজনক মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরায় সংলাপে বসার সময় এসেছে। এসব বিষয়ে ইইউ যে অব্যাহতভাবে পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে যাবে সে কথাও জানিয়েছেন বার্ট কোয়েল্ডার্স। 
গত কয়েক সপ্তাহের সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক সাব কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেদা বলেছেন, এসব হামলায় আক্রান্ত হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের পক্ষের লোকেরা। এ ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ইইউ পার্লামেন্টকে আহ্বান জানাতে বলেছেন তিনি। ওদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিনিধি দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিলা গিল বলেছেন, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের পর আল কায়েদা ও আইএসসহ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সেগুলোর দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার এসব আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব অস্বীকার করে চলেছে। শুধু তাই নয়, সরকার নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলোকে নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছে।   
বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা বলেছেন, আমরা দেশটিকে সহিংসতায় নিমজ্জিত হতে দিতে পারি না। তারা আরো বলেছেন, প্রধান বিরোধী দলগুলো ২০১৪ সালের  নির্বাচন বর্জন করায় দেশটিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় ইইউ-এর উচিত, ঢাকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসা এবং সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সংলাপে বসার তাগিদ দেয়া। সরকারকে বলতে হবে দেশটিতে যেন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বাছবিচারহীন গ্রেফতার বন্ধ করা হয়। না হলে বাংলাদেশ যে উগ্রপন্থার আঞ্চলিক শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হতে পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা। 
বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকদিনের ব্যবধানে ইইউ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সম্পর্কিত আলোচনা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ করে বক্তব্যের বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে। কারণ, ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও গুপ্তহত্যা ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতা থেকে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার সম্ভাব্য পন্থা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি পরামর্শও দেয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করে সরকার যে সব দোষ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা বিরোধী দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং এর ফলে বাংলাদেশে যে উগ্রপন্থার চরম বিকাশ ঘটার আশংকা দেখা দিচ্ছে সে সম্পর্কেও বলেছেন ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা, যাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডেসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করা দরকার, ক’দিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক রিপোর্টেও একই ধরনের বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। সুতরাং সব মিলিয়েই ধরে নেয়া যায়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যার পেছনে সরকারের দায়দায়িত্ব এবং ভূমিকাই প্রধান। উল্লেখযোগ্য অন্য একটি বিষয় হলো,  সর্বশেষ উপলক্ষে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বক্তব্য রাখলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ বিশ্বের কোনো দেশই এ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। প্রতিটি রাষ্ট্র বরং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে- যাতে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। মঙ্গলবারের অধিবেশনে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরাও একই আহ্বান জানিয়েছেন। তারা সেই সাথে ইইউকেও তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য। 
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পরপর ইইউ পার্লামেন্ট বলেছে এবং আমরাও মনে করি, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলে গুপ্তহত্যা ও সহিংসতাসহ বাংলাদেশের সকল সংকট স্বল্প সময়ের মধ্যে কেটে যাবে এবং দেশ গণতান্ত্রিক, নিরপেক্ষ ও উদার দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারবে। অমন আশার ভিত্তিতেই আমরা ইইউ পার্লামেন্টের পরামর্শে সাড়া দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

পুকুর নয় সাগর!


আবারও আলোড়ন তুলেছেন অর্থমন্ত্রী। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, শেয়ার বাজারের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীকে ‘ধান্দাবাজ’ ও ‘কিছু লোক’ বলে তামাশা করার মাধ্যমে হৈচৈ তো তুলেছিলেনই, ঝামেলাও কম পাকাননি জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত। কেলেঙ্কারির খলনায়কদের নামগুলো ‘ডিলিট’ করতে চাওয়ার মধ্য দিয়েও নজীর ভালোই তৈরি করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বলেছিলেন, জড়িতদের নাম প্রকাশ করা হলে সরকার ‘বেকায়দায়’ পড়তে পারে। এ থেকে তখন বুঝতে বাকি থাকেনি যে, শেয়ারবাজার আসলে কারা লুণ্ঠন করেছিল। আঙুল শুধু সরকারের দিকে ওঠেনি, ক্ষমতাসীনদের অনেকের নামও মুখে মুখে আলোচিত হয়েছিল। বলা হয়, মূলত অর্থমন্ত্রীর কথা ও কাজের কারণেই দেশের শেয়ারবাজারের সর্বনাশ ঘটেছিল, রাস্তায় পড়েছিল বিনিয়োগকারীরা।
সেবারের দুর্নাম ঘুঁচতে না ঘুঁচতেই এবার একই অর্থমন্ত্রী হঠাৎ বিচিত্র কিছু কথা শুনিয়েছেন জাতীয় সংসদের অভ্যন্তরে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো অভিযোগও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। গত ৭ জুন মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে একজন এমপির উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি যথারীতি নাটকীয়তারও আশ্রয়  নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ওই এমপির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ‘কিছু ক্ষেত্রে’ যে লুটপাট হয়েছে তা কেবল ‘পুকুর চুরি’ নয়, ‘সাগর চুরি’। উল্লেখ্য, সম্পূরক বাজেটে ব্যাংকিং খাতের জন্য ২৩৮ কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি বরাদ্দের বিরোধিতা করে ওই এমপি বলেছিলেন, ডেসটিনি ও হল-মার্ক কেলেংকারির পরপর সম্প্রতি ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ফাঁস হয়েছে, প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রকৃতপক্ষে পচন ধরেছে। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ হাজার কোটি টাকা। চুরি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঘটনাকে ‘পুকুর চুরি’ না বলে ‘সাগর চুরি’ বলা যায়। শুনে অর্থমন্ত্রী মুহিতও দেরি করেননি, একাত্মতা ঘোষণা করেছেন ওই এমপির বক্তব্যের সঙ্গে। বলেছেন, আসলেও একে শুধু ‘পুকুর চুরি’ বলা যায় না, বলতে হয় ‘সাগর চুরি’। অর্থমন্ত্রী চাতুরিও কম করেননি। কথার মারপ্যাঁচে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সব কিছুর দায়দায়িত্ব সরকার বা তিনি নিজে নিতে রাজি নন। কারণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে’ লুটপাট হয়েছে, সব ক্ষেত্রে হয়নি!
লক্ষণীয় যে, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে’ লুটপাট হয়েছে কথাটা বলার মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে নিজের এবং সরকারের দায়দায়িত্ব এবং অপরাধ আড়াল ও অস্বীকার করারই চেষ্টা করেছেন। অথচ সত্য হলো, ডেসটিনি ও হল-মার্ক থেকে সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি পর্যন্ত অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হলেও এসবের কোনো একটির বিষয়েই সরকারকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দেশের ভেতরে প্রবল জনমতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার বড়জোর লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলোর কোনো কোনোটি কিছুটা তদন্ত করলেও তাদের মাঝপথে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যাকালে সাবেক অর্থ উপদেষ্টাসহ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি এবং শেয়ার বাজারসহ আর্থিক খাত থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। অপরাধ অনেক বড় ও ভয়ংকর হলেও এসব ঘটনায় দু’-চারজন মাত্র অফিসার বা কর্মচারীকে অপসারণসহ কিছু বিভাগীয় ব্যবস্থার বাইরে শাস্তিমূলক এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি যার ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ চেষ্টাকে প্রতিরোধ ও প্রাতিহত করা সম্ভব হতে পারে। প্রভাবশালী হিসেবে বর্ণিতজনদেরও কোনো একজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালীদের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা পর্যন্ত দায়ের করেনি সরকার।
এজন্যই একের পর এক শুধু নতুন নতুন কেলেংকারি ঘটেছে, যার সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে প্রাধান্যে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি। কিন্তু এ ব্যাপারেও সরকারকে তথা অর্থমন্ত্রীকে কোনো ব্যবস্থাই নিতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, আওয়ামী ঘরানার লোক হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেই পার পেয়ে গেছেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত ইশারা-ইঙ্গিতে ব্যঙ্গ করা ছাড়া কিছুই করেননি তার ব্যাপারে। অথচ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সবই জানা ছিল ওই গবর্নরের। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীও জেনেছিলেন যথাসময়েই। কিন্তু তারপরও অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছিলেন দুই দুটি সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর। এই বিলম্বের সুযোগ নিয়েই সরে পড়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আওয়ামী গবর্নর। তাকেও আজ পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি।
জনমনে ভীতি ও উদ্বেগ বাড়ার কারণ হলো, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অযোগ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতি বেড়ে চলেছে বলেই দেশকে ক্রমাগত বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে। এখনো বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকার। একই কারণে বৈদেশিক সহায়তাও কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। কোনো দেশের সঙ্গেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নীত হয়নি বলে লাফিয়ে কমে যাচ্ছে রফতানি আয়। এসবের সরাসরি প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতির ওপর। আমরা উদ্বিগ্ন এজন্য যে, সর্বাত্মক ব্যর্থতা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে পরিবর্তিত হওয়ার কিংবা বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মানতেই হবে, এভাবে কেবলই ‘সাগর চুরি’ ধরনের নাটকীয় সংলাপ উচ্চারণের আড়ালে দায়দায়িত্ব এড়িয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সংকট কাটিয়ে ওঠা বা সমৃদ্ধি অর্জন করা যাবে না। এজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সকলের আস্থা ফিরিয়ে আনা। বিশেষ করে ঘুষ-দুর্নীতির অবসান ঘটানো ছাড়া যে এই আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় সে কথাটা অর্থমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল। আমরা আশা করতে চাই, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সরকার এসব বিষয়ে সততার সঙ্গে উদ্যোগী হয়ে উঠবে।

রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এর চাইতে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে?


বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে বেশি। মানুষ তো শান্তি চায়, সম্প্রীতি চায়। তাই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদকে মানুষ সমর্থন করে না। ফলে প্রশ্ন জাগে, এরপরও সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ পৃথিবীতে এমন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কেমন করে? পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানরা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আর পরাশক্তির মহান নেতারা তো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে লড়াই-সংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এরপরও আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীতে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মানব জাতির জন্য এতটা আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠলো কেমন করে? সবাই তো সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে, তাহলে কেমন করে পৃথিবীতে সন্ত্রাসের মাত্রা বেড়েই চলেছে? রহস্যটা কোথায়? এখানে শুভংকরের কোনো ফাঁকি আছে কি?
বিবিসি পরিবেশিত একটি খবরের দিকে মনোযোগ দিলে উগ্রবাদ বিকাশের রহস্য কিছুটা উপলব্ধি করা যেতে পারে। খবরটিতে বলা হয়, ইসরাইলের নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যাভিডগর লিয়েবারম্যান বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। উল্লেখ্য যে, কট্টর জাতীয়তাবাদী বলে পরিচিত এই ব্যক্তিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইলের পার্লামেন্টই। ফলে ইসরাইলের পার্লামেন্টের চিন্তাধারা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। ইসরাইলের ডানপন্থী বেইতেনু পার্টির নেতা মি. লিয়েবারম্যান দেশটির সরকারি দল লিকুদ পার্টির সঙ্গে গত শুক্রবার একটি জোট করেন। এই জোটের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোশে ইয়ালন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিপদজনক উগ্রবাদীদের হাতে যাচ্ছে ইসরাইল। তার পদত্যাগের পরই নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হলেন কট্টরপন্থী লিয়েবারম্যান। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী নেতাদের সংখ্যাই এখন বেশি।
ইসরাইলের আগ্রাসন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর বিশ্ববাসী জানে। তারপরও কাদের প্রশ্রয়ে ইসরাইলের দাপট দিন দিন বেড়েই চলছে? আর এখন তো সদ্য পদত্যাগকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলছেন, বিপদজনক উগ্রবাদীদের হাতে চলে যাচ্ছে ইসরাইল। আর তার এই বক্তব্যের প্রকৃষ্ট প্রমাণ নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মি. লিয়েবারম্যানের বক্তব্য। বিবেকহীন ব্যক্তির মতো তিনি বলে ফেললেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। এমন উগ্র বক্তব্য পৃথিবীতে কাঙ্খিত শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খাকেই কি ক্ষতিগ্রস্ত করবে না? অথচ বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আহ্বানকারী চ্যাম্পিয়নরাই ইসরাইলকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে, ফিলিস্তিন তো ফিলিস্তিনীদেরই ছিল। অথচ উড়ে এসে জুড়ে বসা ইসরাইলের উগ্রপন্থীরা আজ বলছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনীরা আজ রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ পাচ্ছে না, অথচ উদ্বাস্তু ইহুদিরা ওদের জায়গায় রাষ্ট্র গঠন করে আজ ভূমিপুত্রদের উৎখাত করে চলেছে। এরপরও কি আমাদের বলতে হবে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব মোড়লরা প্রকৃত অর্থে শান্তির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন? এ প্রশ্নের কোনো জবাব কি তাদের কাছে আছে?

শনিবার, ৪ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বেপরোয়া সন্ত্রাস


বিশ্বের স্বৈরতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসকবলিত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মতোই গত আট-দশ বছরে আমাদের রাজধানী ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রায় সব শহর-বন্দর, অলি-গলি, গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায় পর্যন্ত কিশোর-তরুণ উঠতি সন্ত্রাসীদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বলতে গেলে, দেশব্যাপী এই সন্ত্রাসীদের দাপট ও আধিপত্য ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। এই সন্ত্রাসীদের গড় বয়স ১৬ থেকে ১৮-১৯ বছরের মধ্যে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ, নারী ধর্ষণ ও সর্বনাশা মাদক ব্যবসার মতো ভয়ংকর অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়েছে এবং পড়ছে। তাদের গডফাদার-মাফিয়া ডনরা হয়ে আছে নেপথ্যে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী, দাগী অপরাধী ও সমাজের একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মহল। এই সন্ত্রাসী-লুটেরা চক্রই এ তরুণদের বিপথগামী করে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলছে এবং এদের দিয়েই এলাকার আধিপত্য বিস্তারসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। উঠতি বয়সী এসব সন্ত্রাসী যে কোন অপরাধমূলক কাজ করতে কিছুতেই ভয় করে না। বিগত বছরগুলোতে দৈনিক সংগ্রামসহ সবগুলো জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদনে এমন উঠতি সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর সন্ত্রাসী ঘটনার খবর উঠে এসেছে। দেশব্যাপী এই উঠতি সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কাছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশে প্রভাবশালী সন্ত্রাসীরা নতুন নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলায় এবং তালিকাভুক্ত না হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও তাদের সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য নেই। এর ফলে দেশের যে কোন থানা এলাকায় যে কোন সন্ত্রাসী ঘটনা কিংবা যে কোন অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ কার্যকরভাবে কোন ব্যবস্থাই নিতে পরছে না। তাদের পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের তালিকায় খুঁজতে হয়। মাঝে মাঝে এসব উঠতি সন্ত্রাসী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বের হয়ে আসে তাদের সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়ার নানা কাহিনী। কেউ বস্তির, কেউ টোকাই থেকে পেটের ক্ষুধা নিবারণে, কেউ পাড়া-মহল্লার বখাটেদের পাল্লায় পড়ে, কেউ কেউ চোর-ডাকাত, ছিনাতাইবাজ, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী কথিত বড় ভাইদের খপ্পরে পড়ে, আবার কেউ কেউ নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়েছে এবং এখনো পড়ছে।
এ দেশের কোন বিবেকবান নাগরিকই অস্বীকার করতে পারবেন না যে, গত আট-দশ বছর ধরে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যেমন অগণতান্ত্রিক স্বৈরতান্ত্রিক সন্ত্রাসী লুটেরা কার্যক্রমের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে, ঠিক তেমনি সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হতাশাও লাখ লাখ তরুণকে বিপথগামী করে তুলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি এমনকি জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ তরুণদের এ অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহার করছে। এ কথাটাও কেউ অস্বীকার করেন না যে কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের পেছনে প্রভাবশালী কোন না কোন মহলের যোগসূত্র থাকে। নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও সেই সাথে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজি, কমিশনবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং অবৈধ মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক ঘৃণ্য কর্মকা- নির্বিঘেœ পরিচালনা করতে তারা নানা ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। কক্সবাজার, ফেনী ও ময়মনসিংহের জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলার খবরও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সবাই জেনে গেছে। আবার এ অভিযোগও চলে আসছে, কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর বিশেষ দলবাজ অসৎ সদস্য এসব সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। সমাজের এক বিশেষ শ্রেণীর প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দলবাজ অতি উৎসাহী সদস্যদের মদদ ছাড়া দাগি হোক আর উঠতিই হোক কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ বা বাহিনী গড়ে ওঠা আদৌ সম্ভব নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে উঠতি সন্ত্রাসীদের নানা বাহিনী গড়ে ওঠার পেছনে এটিই প্রধান কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা বিশাল তরুণ সমাজের একটি অংশকে সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এই ভারসাম্যহীনতা এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, একটি বিশেষ ক্ষমতাশালী দুর্নীতিবাজ লুটেরা শ্রেণী অগাধ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে গেছে, অপরদিকে দেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী সর্বহারা শ্রেণীতে পৌঁছে গেছে। দেখা গেছে, দারিদ্র্য, লাঞ্ছিত এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কিশোর-তরুণরাই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের সীমাহীন দারিদ্র্য, অভাব-অনটন ও বেকারত্ব এবং তারুণ্যের নানা কৌশলে কাজে লাগাচ্ছে, দেশ্রপ্রমিক নামধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী লুটেরা চক্র। দেশে যদি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা কায়েম থাকে, যদি সুষমভাবে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য বজায় থাকে, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, রাজনীতির নামে অপরাজনীতি, দলবাজি, দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ হয়, তাহলে যেসব তরুণকে সন্ত্রাসীরা এতোদিন তাদের দলে ভেড়াচ্ছিল, তরুণরাই তাদের ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করতো। এখন যেসব তরুণ সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, দেখা যাবে, এক সময় এরাই শীর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হচ্ছে। সচেতন মহল এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেখেছেন, গ্রামে কুঁড়েঘর বা শহরের বস্তির ঘরে জন্ম নেয়া টোকাই, হোটেল বয়, বাসা-বাড়ির চাকর ও কুলি থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ের উঠতি বা দাগি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পেছনের শক্তির কথা যদি বিবেচনা করা হয়, তবে শাসক দলের সাথে সম্পৃক্ত কোনো না কোনো প্রভাবশালী নেতার এবং নেতা নামধারী সন্ত্রাসীদের মদদের বিষয়টি উঠে আসা অস্বাভাবিক নয়। নিজ নিজ এলাকার চুরি-ডাকাতি, লুটপাট, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা, দখলবাজি, কমিশনবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ আধিপত্য বিস্তারে উঠতি সন্ত্রাসীদের তারা ব্যবহার করে। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে এই সন্ত্রাসীরাই হয়তো নতুন শাসক দলের কর্মী-ক্যাডারদের হয়ে কাজ করবে। সন্ত্রাসীদের ধর্মই এমন, তাদের নির্দিষ্ট কোনো দল নেই। তারা সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লালিত হয়।
সারা দেশে উঠতি সন্ত্রাসীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কেন বেড়ে চলেছে, এ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা বড় বেশি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই আইনানুগ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাস দমনের নামে যাকে তাকে সন্ত্রাসী সাজিয়ে গ্রেফতার বাণিজ্য করা উচিত হবে না। শুধু সন্ত্রাসীকে ধরলে হবে না, তাদের কথিত বড় ভাই নামের প্রকৃত সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদারদেরও ধরতে হবে, তারা যাতে ছাড়া না পায় এবং শাস্তির মুখোমুখি হয়, এমন ব্যবস্থাই করতে হবে। দেশের তরুণ শ্রেণী কেন এবং কারা কারা সন্ত্রাসের সাথে জড়াচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এর মূলে যেতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের কল্যাণে সচেতনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। পুুলিশের খাতায় নাম নেই বলে উঠতি সন্ত্রাসীসহ শাসক দলের কথিত নেতা-কর্মী-ক্যাডার নামধারী সন্ত্রাসীদের দমনে হিমশিম খেতে হচ্ছে, খোদ পুলিশের এমন কথা আদৌ গ্রহণযোগ্য হয় কি? পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে তরুণ শ্রেণীর ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করে সে অনুযায়ী শৃঙ্খলাবৃত্ত গড়ে তুলতে হবে। শুধু শাসক দলের এক শ্রেণীর তথাকথিত নেতা-কর্মী-ক্যাডার নামধারী  চোর-ডাকাত, ছিনতাইবাজ, চাঁদাবাজ, জালিয়াত, দখলবাজ, কমিশনবাজ, প্রতারক, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করে এলাকার খবর নেয়া উচিত হবে না, সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলাই হবে উত্তম কাজ। এলাকায় কারা প্রভাবশালী, জালিয়াত, দখলবাজ, ছিনতাইবাজ, চাঁদাবাজ, মাদক চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসের গডফাদার, এ বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একান্ত কর্তব্য কাজ বলেই আমরা মনে করি।

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

‘হাইব্রিড’ বাজেটে ‘হাওয়াই চপ্পল’ সমাচার


রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট এটি। মূলত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটের প্রায় ২৯ শতাংশই ঘাটতি বা ঋণনির্ভর। বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী ২ মে জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এ প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। একই সঙ্গে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও অর্থবিল ২০১৬ সংসদে উপস্থাপন করেন তিনি।
প্রস্তাবিত এ বাজেটকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলেই মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। নতুন বাজেট ঘোষিত হওয়ার পর বাজেট পর্যালোচনায় পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করতে শোনা যায়। সরকার পক্ষ তো ঘোষিত বাজেটকে জনবান্ধব হিসাবে আখ্যা দিতেই পুলকবোধ করেন। বিরোধীদের পক্ষে বলা হয় গণবিরোধী বাজেট। আর এবারও তার কোন অন্যথা হয়নি। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়েছে গতানুগতিক পন্থায়। কিন্তু ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার এই ঘাটতির বাজেটে কিভাবে ঘাটতি পূরণ করা হবে তার কোন যুৎসই ও গ্রহণযোগ্য দিক নির্দেশনা নেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় ঘোষিত বাজেটকে গণমুখী বলার তো সুযোগ নেই-ই বরং অর্থমন্ত্রীর কথামালার মারপ্যাচে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থই উপেক্ষিত হয়েছে। সংরক্ষিত হয়েছে শ্রেণি স্বার্থ। ঘোষিত বাজেটে দেশের নেতিবাচক রাজনীতির কুপ্রভাব মুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট তো গণমুখী হয়নি বরং নিম্নবিত্তের মানুষের জন্য অনেকটা দুঃস্বপ্ন হিসেবেই আবির্ভূত হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে দেশীয় তৈরি বিস্কুট, কেক, বিভিন্ন ধরনের পেপার, পেপার প্রোডাক্ট, জিপি শিট, সিআই শিট, রঙিন শিটসহ বিভিন্ন ধরনের এমএস প্রোডাক্টের নির্ধারিত ট্যারিফ মূল্য ২০ শতাংশ আছে। নতুন বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বর্ধিত হার কার্যকর হলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে অনেকটাই। সবচেয়ে বেশি ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে সিগারেট, জর্দা ও গুলে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে বিড়ির। এতে করে ওই সব পণ্য আগের চেয়ে আরও বেশি দামে কিনতে হবে। গরিবের ব্যবহৃত হাওয়াই চপ্পলের ভ্যাট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। তাই অনেকেই ঘোষিত বাজেটকে ‘হাওয়াই চপ্পল সমাচার’এর বাজেট হিসাবেই আখ্যা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হার্ডবোর্ড, বৈদ্যুতিক জেনারেটর, সাধারণ জনগণের খাবার পাউরুটি, বনরুটি ইত্যাদি পণ্যের জন্য ভ্যাটে যে বিশেষ ছাড় আছে তা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে গরিবের ব্যবহৃত ওই সব পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে প্রস্তাবিত নতুন বাজেট বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লেও মূল্যস্ফীর্তি ঘটবে ব্যাপকভাবে। যা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অসহনীয় হয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি পণ্যের স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানিতে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে শুল্ক-কর কমানোর প্রেক্ষিতে কিছু পণ্যের দাম কমবে।এর মধ্যে হাইপ্রিড গাড়ি, মোটরসাইকেল, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অন্যতম। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে দাম কমবে সিমেন্ট, পাথর, ওয়াইফাই, পেট্রোলিয়াম জেলি ও কয়লার। এসবের সাথে সাধারণ মানুষের তেমন কোন সম্পর্ক নেই।ফলে ঘোষিত বাজেটে শ্রেণি বিশেষের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। তাই অনেকেই ঘোষিত বাজেটকে ‘হাইব্রিড বাজেট’ হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছেন।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় তা বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞমহল। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে যে কৌশল ধরা হয়েছে তা সংশয়পূর্ণ বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গত ২ জুন রাজধানীতে সিপিডির পক্ষে সংস্থাটির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এমন হতাশাব্যঞ্জক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, দুই শতাংশ বাড়তি আয় ও বাড়তি ব্যয় কোথায় হবে তা স্পষ্ট নয়।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে কৌশলে এটি বাস্তবায়িত হবে এবং সেই কৌশলকে কার্যকর করার জন্য, দক্ষতার সাথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার দরকার পড়ে, সেগুলোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর চিন্তা-ভাবনার যেটুকু দরকার সেখানে আমরা সংশয় প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে দুরবস্থা চলছে, যারা টাকা নিয়ে আমাদের টাকা শোধ দিল না তাদের সেই লাভের টাকা পূরণ করার জন্য এখন ট্যাক্সের টাকা লোকসানে যেতে হবে এবং তারপর আমাকে বলা হচ্ছে আরো ট্যাক্স দেয়ার জন্য। আমরা কেন সেই ট্যাক্স দেব? যারা টাকা দেয়া হয়েছে এবং টাকা ফেরত দিল না ব্যাংকের। তার টাকা পূরণ করার জন্য কেন আমরা বাড়তি ট্যাক্স দেব? এটাতেই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে।’ এদিকে, অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান বলেছেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে বড় বাজেট সমর্থনযোগ্য। কিন্তু বাস্তবায়ন করাটাই হবে বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাজেটে টেকসই উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, মধ্য আয়ের দেশে চূড়ান্ত পদার্পণের লক্ষ্যে সরকারের সাফল্য ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কথা বলা হলেও চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। প্রস্তাবিত বাজেটে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে অসহনীয়ভাবে। ফলে জনদুর্ভোগ বাড়বে ব্যাপক হারে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ নমনীয়তা দেখানো হয়েছে বাজেটে। মূলত ঘোষিত বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব বললেও অত্যুক্তি হবার কথা নয়।
বাজেটে অভ্যন্তরীণ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭১ শতাংশেরও বেশি আসবে ভ্যাট ও আয়কর খাত থেকে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোয় জনগণের ওপর করের বোঝা ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য বাড়বে। যা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়ন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ও কাক্সিক্ষত বৈদেশিক সহায়তা অর্জন বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার বা ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে এটা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এটা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৩৪ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের বাইরে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে পরবর্তীতে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি ৫০৮ কোটি টাকা বেড়েছে।
বাজেট ঘাটতি মূলত পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৩২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা), বৈদেশিক অনুদান বাবদ ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা), ব্যাংকিং খাত থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা) ও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা) নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা) ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা) নেয়া হবে। সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা অধিক ঋণ নেয়া হয়েছে। আর খুচরা ও পাইকারি দোকানদারদের করহার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর প্রদানে আগ্রহী নন, তাদের জন্য এলাকাভিত্তিক করহার ধার্য করার প্রস্তাব করছি। বর্তমানে যে হারে কর দেন সেটা বৃদ্ধি করে এলাকাভিত্তিক যথাক্রমে সাত হাজার টাকা, ১৪ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা ও ২৮ হাজার টাকার ভ্যাট কার্যকর করার প্রস্তাব করছি।’
এ ছাড়া পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার অন্যান্য সব পর্যায়ে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের বিদ্যমান ব্যবস্থা বহাল থাকবে। তবে, যেসব ব্যবসায়ী প্রকৃত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে কর দিতে আগ্রহী হবেন তাঁদের জন্য উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের সুযোগসহ প্রমিত হারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।
ঘোষিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এবারের বাজেটে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি ও হার অনেক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। মোবাইল ফোন সেবার ওপর করহার বাড়ানো হয়েছে। প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখা হলেও পরিমাণ বিদ্যমানের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে কর আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য কেক, বিস্কুট, সিআর কয়েলসহ বিভিন্ন পণ্যের নির্ধারিত ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ‘বাড়তি’ কর আরোপ প্রস্তাব কার্যকর হলে পণ্য ও সেবার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ভোক্তাকে তখন বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে, সেবা পেতে হবে। এতে করে তাদের ওপর ব্যাপক চাপ আসবে।
বর্তমানে ২২টি খাত সংকুচিত মূল্যভিত্তিতে বিশেষভাবে ভ্যাটে ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে আটটি খাতের বিশেষ কর সুবিধা উঠিয়ে বিদ্যমানের চেয়ে বর্ধিত হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মোটরগাড়ির গ্যারেজের ভ্যাটহার সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। বর্ধিত হার কার্যকর হলে গাড়ির মালিককে মেরামতের পেছনে আরও বেশি বিল দিতে হবে। জাহাজ নির্মাণে ডকইয়ার্ডে ভ্যাটহার সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
এতে করে জাহাজ নির্মাণের ব্যয় আরও বাড়বে। কনস্ট্রাকশন ফার্মের ভ্যাটহার সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। বর্ধিত ভ্যাটহার কার্যকর হলে নির্মাণ খাতের ব্যয় বাড়বে। বর্তমানে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহনে আড়াই শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ আছে। নতুন বাজেটে তা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। এতে করে পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে। ইমিগ্রেশন উপদেষ্টা সেবার ওপর বর্তমানে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে। এই হার দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে ইমিগ্রেশনের সেবার জন্য ভোক্তাকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে। কোনো অনুষ্ঠানে সম্পরশিপ সেবার জন্য এখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হয়। এ সেবার ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করায় স্পনরশিপ সেবার খরচ আরও বাড়বে।
সারাদেশের ছোট ব্যবসায়ীরা বর্তমানে বছরে নির্ধারিত পরিমাণ ভ্যাট পরিশোধ করেন। নতুন বাজেটে এটি শতভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছোট ব্যবসায়ীরা বছরে ১৪ হাজার টাকা এককালীন ভ্যাট দেন। নতুন বাজেটে এটি বাড়িয়ে ২৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ব্যবসায়ীরা বর্তমানে বছরে ১০ হাজার টাকা ভ্যাট দেন। তাদের দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। জেলা শহরের জন্য এখন আছে ৭ হাজার ২০০ টাকা। তাদের দিতে হবে ১৪ হাজার টাকা। তৃণমূল পর্যায়ে দেশের অন্যান্য এলাকায় ভ্যাট আছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। তাদের দিতে হবে ৭ হাজার টাকা।
মূলত ঘোষিত নতুন অর্থবছরের বাজেটকে অতি উচ্চাভিলাষী বাজেট বলতে কেউই কসুর করছেন না। অর্থমন্ত্রী বাজেট বাস্তবায়নের কর্মকৌশল সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন তা মোটেই বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না বরং দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা এসবকে সংশয়পূর্ণ বলেই মনে করছেন। আর বাজেট বাস্তবায়নে যেসব কর্মকৌশলের কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতারও অভাব রয়েছে। আসলে প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ অনেকাংশেই উপেক্ষিত হয়েছে। বাজেটে কর ও মূসকের আওতা বাড়ানো হয়েছে। যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নি¤œবিত্তের ও মধ্যবিত্তের মানুষের উপর। যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে সেসবের অধিকাংশের ভোক্তা হচ্ছেন দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী।
পক্ষান্তরে যেসব পণ্যের দাম কমানো হয়েছে সেসবের দ্বারা উপকৃত হবেন দেশের বিশেষ শ্রেণির মানুষ। তাই প্রস্তাবিত বাজেট গণমুখী হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। আর সরকারের উচিত বাজেট নিয়ে সংশয় ও প্রশ্নের যৌক্তিক নিরসন করা।
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা 

Ads