ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের পছন্দ হোক বা না হোক অথবা মজলুমরা বিচার পাক বা না পাক, গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কঠোর কিছু সত্য কথা বলে যাচ্ছেন, এই কথাগুলো একদিকে যেমন রূঢ় বাস্তবতা অন্যদিকে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক সংকেতও। তিনি তার কথায় রাখঢাক রাখেননি এবং পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, বিচার বিভাগ সরকারের অংশ নয় বরং রাষ্ট্রের অংশ। আবার রাষ্ট্র এবং সরকার এক ও অভিন্নও নয়। তিনি সরকারি আইনজীবী ও প্রসিকিউটর আইন জ্ঞান, মামলা তৈরির পদ্ধতি এবং সাক্ষ্য- প্রমাণের নির্ভরযোগ্যতা ও পরস্পর বিরোধী প্রকৃতির সমালোচনা করে তাদের দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার সমালোচনাও করেছেন। বিচারক হিসেবে তার উপলব্ধি উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। দু’জন মন্ত্রী তার এই সত্য কথাগুলো সহ্য করতে পারেননি এবং অমন্ত্রী সুলভ মন্তব্য করে অবমাননার দায়ে দণ্ডিত হয়ে জরিমানার ৫০,০০০ ঢাকা জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। উচিত ছিল তাদের পদত্যাগ করার কিন্তু তারা করেননি এবং সরকার প্রধান দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পদত্যাগে বাধ্য করে মন্ত্রী পরিষদের পবিত্রতা রক্ষা করার এখনো চেষ্টা করেছেন বলে শোনা যায়নি।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ঢাকায় দু’টি পুস্তকের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করতে গিয়ে আরো কয়েকটি কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে, আমাদের দেশের আইন প্রণেতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞ, তারা আইন জানেন না। সংসদে উত্থাপিত আইন বা আইনের সংশোধন চুল-চেরা বিশ্লেষণ করে প্রণীত না হওয়ায় আইন সময়োপযোগী ও ত্রুটিপূর্ণ হয় না এবং এর চাপ পড়ে বিচার বিভাগের উপর। ফলে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হন। আমি মনে করি দেশবাসী তার কথার সাথে একমত এবং তার এই কথাগুলোর মধ্যে মানুষের দুয়ারে ন্যায়বিচার বা ইনসাফ পৌঁছে দেয়ার একটা উদগ্র কামনার প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায়।
আইন ও বিধি-বিধান এবং তার প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে যদি আইন প্রণেতারা অজ্ঞ থাকেন তা হলে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বাংলাদেশে আইনের শাসন না থাকার এটি একটি অন্যতম কারণ। এমপি বা পার্লামেন্ট সদস্যরা আইন প্রণয়ন, আইন সংশোধন, বিধি-বিধান তৈরি প্রভৃতির সাথে জড়িত। নিঃসন্দেহে এটি একটি কঠিন কাজ এর জন্য প্রচুর লেখাপড়া করতে হয়, দেশ-বিদেশের তুলনামূলক আইনের উপর গবেষণা করতে হয়। এজন্য ভাষাও জানতে হয়। আমাদের পার্লামেন্টের কতজন সদস্য আইন জানেন ও মানেন? তারা কি পড়ালেখা করেন? আমরা যদি ধরে ধরে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী অথবা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলোয়াড়দের এনে এমপি বানাই, তারা আইন প্রণয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন? যার যে বিষয়ে পারদর্শিতা আছে তার কাছ থেকে অন্য বিষয়ে সফল কিছু প্রত্যাশা করা তো ঠিক নয়। অসুস্থ রোগীর অপারেশনের দায়িত্ব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পালন করতে পারেন না। আবার আরো কথা আছে। আবার আমাদের পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্য বিনাভোটে নির্বাচিত; তারা লাখ লাখ বা কোটি কোটি টাকা দিয়ে পার্টি বা পার্টি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নমিনেশন কিনে পার্লামেন্টের মেম্বারশীপ কেনেন। এমপি হয়ে তাদের কাজ হয় মুনাফাসহ বিনিয়োগের টাকার কয়েকগুণ বেশি তুলে আনা। এই কাজটি তারা সাফল্যের সাথে করতে পারেন। আইন প্রণেতা তথা সংসদ সদস্যদের কাজ আগে আইন প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন ছিল স্থানীয় সরকার এবং সরকারি বিভাগ এজেন্সিগুলোর হাতে। এখন সব জায়গাতেই এমপিদের নাক গলাতে হবে; পয়সার কাজে তাদের সম্পৃক্ত করতেই হবে। শিক্ষক নিয়োগ, এমনকি মসিজদের ইমাম নিয়োগ করতে হলেও এমপি’র অনুমোদন লাগে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সরকারের উন্নয়ন বিভাগ ও এজেন্সিসমূহকে তাদের তাঁবেদার হয়ে থাকতে হয়। নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি এমন কোনও কাজ নেই যাতে তাদের সালামও সালামী দিতে হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যের সম্পত্তি জবর দখল, আধিপত্যবাদ ও গণতন্ত্র হত্যায় যারা পারঙ্গম ও শিষ্টাচারে অক্ষম ও আইনজ্ঞানে ক অক্ষর গোমাংস তারাই বেশির ভাগ আইনপ্রণেতা হয়ে পার্লামেন্টে আসেন, তারা বিশ্লেষণ করে আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখবেন কিভাবে? কাজেই যা হবার তাই হচ্ছে। আগের দিনে শালীন রাজনীতিবিদ ও আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাই পার্লামেন্টে আসতেন। এখন তাদের আকাল পড়েছে। এখন প্রাধান্য সন্ত্রাসী ব্যবসায়ীদের, আইন বা আইনের শাসন তাদের লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য অর্থবিত্ত, আধিপত্য। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। কিন্তু পরিবর্তন কিভাবে হবে? পুলিশের আইজি শহিদুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই আইন লঙ্ঘন করছেন। পুলিশ এখানে অসহায়। আদালত অসহায় কেননা স্বাধীন বিচার বিভাগের নামে আদালতকে প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ অসহায় কেননা অপরাধী ধরা পড়লে সে যদি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি অথবা ব্যক্তিদের আশ্রয় বা প্রশ্রয়পুষ্ট হয় তাহলে সে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন না; অপরাধীদের শাস্তির পরিবর্তে উল্টা তাদেরই শাস্তি পেতে হয়। তাহলে দেশ যাচ্ছে কোথায়? আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভবিষ্যৎ কী? একটা কথা আছে, Things must get worse before they get better. অর্থাৎ অবস্থার উন্নতির আগে তার অবনতি অপরিহার্য। সম্ভবত এটা এ কারণে যে, অবনতি হলে তা উত্তরণের জন্য মানুষের মধ্যে একটা ব্যাকুলতার সৃষ্টি হয় এবং তারা পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য উঠে-পড়ে লেগে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের অবস্থার আর কত অবনতি হলে মানুষের মধ্যে এই অবস্থার সৃষ্টি হবে? এই জন্য যে, বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে মানুষের ঐক্য ও সংহতি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা, বিভক্তি নয়। স্বৈরাচার ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছি, জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছি এবং ক্ষমতা ও দলীয় স্বার্থে বৈধ-অবৈধ সুবিধা দিয়ে প্রতিবেশী একটি দেশের তাঁবেদার হবার চেষ্টা করছি এবং সম্ভাব্য প্রতিবাদী সকল কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিচ্ছি। তাহলে জাতির জন্য আর অবশিষ্ট কী থাকছে?
গত রোববারের পত্রিকায় দেখলাম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতা অলোরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, এবারের বিদ্রোহী প্রার্থী জনাব রহিজ উদ্দিন আকন্দ ঘোষণা করেছেন যে, দুধ দিয়ে গোসল করে পবিত্র হয়েছেন এবং আর রাজনীতি না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। পত্রিকায় তার দুধ দিয়ে গোসল করার একটি ছবিও ছাপা হয়েছে। ঘোষণায় তিনি বলেছেন, এখন থেকে নিয়মিত তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন এবং সাধ্য অনুযায়ী মানুষের সেবা করবেন।
বিষয়টি অভিনব। পবিত্র হবার জন্য অজু-গোসল করতে হয়। মনের পবিত্রতা তো আছেই। দুধ দিয়ে গোসল করলে পবিত্র হওয়া যায় কিনা, আমার ধারণা নেই। দুধ এখন বেশ দামী একটি আদর্শ পানীয়। আমার আশপাশে প্রতি লিটার ৮০.০০ টাকা বিক্রি হয়। আমি মিল্কভিটা থেকে কিনি ৬২.০০ টাকায়। একজন লোকের গোসল করতে কমপক্ষে ২০/২৫ লিটার দুধের প্রয়োজন হয়। এটা অপচয়, আর অপচয়কারী শয়তানের ভাই। জনাব রহিজ উদ্দিন আহমদ সম্ভবত না জেনেই কাজটা করে ফেলেছেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ্ তাকে মাফ করুন। তাকে ক্ষমতাসীন দল অর্থাৎ তার দল আওয়ামী লীগ নমিনেশন দেয়নি এবং কারসাজি করে ১৪৯ ভোটে হারিয়ে দিয়েছে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ এবং পাক-পবিত্র হয়ে রাজনীতি ছেড়ে নামাজ কালেমা পড়ে জনসেবায় ব্রতী হবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। তিনি সত্যিই যদি উপলব্ধি করে থাকেন, এতদিনের রাজনীতি তার অপবিত্র ছিল (যার জন্য দুধ দিয়ে গোসল করে তাকে পবিত্র হতে হয়েছে) তাহলে রাজনীতিকে পবিত্র করার জন্য তার এগিয়ে আসা দরকার। রাজনীতিকে পবিত্র করার জন্য দুধের দরকার হবে না; সৎ, যোগ্য, ঈমানদার এবং দেশপ্রেমিক হলেই চলবে। আওয়ামী লীগ তো করলেন, এখন জামায়াতের সংবিধান ও সাহিত্য, বিশেষ করে বেশি বেশি করে কুরআন, হাদিস, ফিকাহ্্ উসুলসহ একজন খাঁটি মুসলমান হবার উপকরণগুলো অধ্যয়ন করুন, রাজনীতির ধোঁকা থেকে অবশ্যই রক্ষা পাবেন এবং মানুষেরও খেদমত করতে পারবেন। আল্লাহ্ আপনার সহায় হবেন। জাতিকে বর্তমান অবস্থা থেকে উদ্ধার করা আমার-আপনার সকলেরই দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা কখনো আমাদের ক্ষমা করবে না।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ঢাকায় দু’টি পুস্তকের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করতে গিয়ে আরো কয়েকটি কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে, আমাদের দেশের আইন প্রণেতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞ, তারা আইন জানেন না। সংসদে উত্থাপিত আইন বা আইনের সংশোধন চুল-চেরা বিশ্লেষণ করে প্রণীত না হওয়ায় আইন সময়োপযোগী ও ত্রুটিপূর্ণ হয় না এবং এর চাপ পড়ে বিচার বিভাগের উপর। ফলে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হন। আমি মনে করি দেশবাসী তার কথার সাথে একমত এবং তার এই কথাগুলোর মধ্যে মানুষের দুয়ারে ন্যায়বিচার বা ইনসাফ পৌঁছে দেয়ার একটা উদগ্র কামনার প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায়।
আইন ও বিধি-বিধান এবং তার প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে যদি আইন প্রণেতারা অজ্ঞ থাকেন তা হলে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বাংলাদেশে আইনের শাসন না থাকার এটি একটি অন্যতম কারণ। এমপি বা পার্লামেন্ট সদস্যরা আইন প্রণয়ন, আইন সংশোধন, বিধি-বিধান তৈরি প্রভৃতির সাথে জড়িত। নিঃসন্দেহে এটি একটি কঠিন কাজ এর জন্য প্রচুর লেখাপড়া করতে হয়, দেশ-বিদেশের তুলনামূলক আইনের উপর গবেষণা করতে হয়। এজন্য ভাষাও জানতে হয়। আমাদের পার্লামেন্টের কতজন সদস্য আইন জানেন ও মানেন? তারা কি পড়ালেখা করেন? আমরা যদি ধরে ধরে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী অথবা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলোয়াড়দের এনে এমপি বানাই, তারা আইন প্রণয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন? যার যে বিষয়ে পারদর্শিতা আছে তার কাছ থেকে অন্য বিষয়ে সফল কিছু প্রত্যাশা করা তো ঠিক নয়। অসুস্থ রোগীর অপারেশনের দায়িত্ব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পালন করতে পারেন না। আবার আরো কথা আছে। আবার আমাদের পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্য বিনাভোটে নির্বাচিত; তারা লাখ লাখ বা কোটি কোটি টাকা দিয়ে পার্টি বা পার্টি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নমিনেশন কিনে পার্লামেন্টের মেম্বারশীপ কেনেন। এমপি হয়ে তাদের কাজ হয় মুনাফাসহ বিনিয়োগের টাকার কয়েকগুণ বেশি তুলে আনা। এই কাজটি তারা সাফল্যের সাথে করতে পারেন। আইন প্রণেতা তথা সংসদ সদস্যদের কাজ আগে আইন প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন ছিল স্থানীয় সরকার এবং সরকারি বিভাগ এজেন্সিগুলোর হাতে। এখন সব জায়গাতেই এমপিদের নাক গলাতে হবে; পয়সার কাজে তাদের সম্পৃক্ত করতেই হবে। শিক্ষক নিয়োগ, এমনকি মসিজদের ইমাম নিয়োগ করতে হলেও এমপি’র অনুমোদন লাগে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সরকারের উন্নয়ন বিভাগ ও এজেন্সিসমূহকে তাদের তাঁবেদার হয়ে থাকতে হয়। নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি এমন কোনও কাজ নেই যাতে তাদের সালামও সালামী দিতে হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যের সম্পত্তি জবর দখল, আধিপত্যবাদ ও গণতন্ত্র হত্যায় যারা পারঙ্গম ও শিষ্টাচারে অক্ষম ও আইনজ্ঞানে ক অক্ষর গোমাংস তারাই বেশির ভাগ আইনপ্রণেতা হয়ে পার্লামেন্টে আসেন, তারা বিশ্লেষণ করে আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখবেন কিভাবে? কাজেই যা হবার তাই হচ্ছে। আগের দিনে শালীন রাজনীতিবিদ ও আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাই পার্লামেন্টে আসতেন। এখন তাদের আকাল পড়েছে। এখন প্রাধান্য সন্ত্রাসী ব্যবসায়ীদের, আইন বা আইনের শাসন তাদের লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য অর্থবিত্ত, আধিপত্য। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। কিন্তু পরিবর্তন কিভাবে হবে? পুলিশের আইজি শহিদুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই আইন লঙ্ঘন করছেন। পুলিশ এখানে অসহায়। আদালত অসহায় কেননা স্বাধীন বিচার বিভাগের নামে আদালতকে প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ অসহায় কেননা অপরাধী ধরা পড়লে সে যদি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি অথবা ব্যক্তিদের আশ্রয় বা প্রশ্রয়পুষ্ট হয় তাহলে সে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন না; অপরাধীদের শাস্তির পরিবর্তে উল্টা তাদেরই শাস্তি পেতে হয়। তাহলে দেশ যাচ্ছে কোথায়? আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভবিষ্যৎ কী? একটা কথা আছে, Things must get worse before they get better. অর্থাৎ অবস্থার উন্নতির আগে তার অবনতি অপরিহার্য। সম্ভবত এটা এ কারণে যে, অবনতি হলে তা উত্তরণের জন্য মানুষের মধ্যে একটা ব্যাকুলতার সৃষ্টি হয় এবং তারা পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য উঠে-পড়ে লেগে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের অবস্থার আর কত অবনতি হলে মানুষের মধ্যে এই অবস্থার সৃষ্টি হবে? এই জন্য যে, বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে মানুষের ঐক্য ও সংহতি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা, বিভক্তি নয়। স্বৈরাচার ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছি, জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছি এবং ক্ষমতা ও দলীয় স্বার্থে বৈধ-অবৈধ সুবিধা দিয়ে প্রতিবেশী একটি দেশের তাঁবেদার হবার চেষ্টা করছি এবং সম্ভাব্য প্রতিবাদী সকল কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিচ্ছি। তাহলে জাতির জন্য আর অবশিষ্ট কী থাকছে?
গত রোববারের পত্রিকায় দেখলাম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতা অলোরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, এবারের বিদ্রোহী প্রার্থী জনাব রহিজ উদ্দিন আকন্দ ঘোষণা করেছেন যে, দুধ দিয়ে গোসল করে পবিত্র হয়েছেন এবং আর রাজনীতি না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। পত্রিকায় তার দুধ দিয়ে গোসল করার একটি ছবিও ছাপা হয়েছে। ঘোষণায় তিনি বলেছেন, এখন থেকে নিয়মিত তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন এবং সাধ্য অনুযায়ী মানুষের সেবা করবেন।
বিষয়টি অভিনব। পবিত্র হবার জন্য অজু-গোসল করতে হয়। মনের পবিত্রতা তো আছেই। দুধ দিয়ে গোসল করলে পবিত্র হওয়া যায় কিনা, আমার ধারণা নেই। দুধ এখন বেশ দামী একটি আদর্শ পানীয়। আমার আশপাশে প্রতি লিটার ৮০.০০ টাকা বিক্রি হয়। আমি মিল্কভিটা থেকে কিনি ৬২.০০ টাকায়। একজন লোকের গোসল করতে কমপক্ষে ২০/২৫ লিটার দুধের প্রয়োজন হয়। এটা অপচয়, আর অপচয়কারী শয়তানের ভাই। জনাব রহিজ উদ্দিন আহমদ সম্ভবত না জেনেই কাজটা করে ফেলেছেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ্ তাকে মাফ করুন। তাকে ক্ষমতাসীন দল অর্থাৎ তার দল আওয়ামী লীগ নমিনেশন দেয়নি এবং কারসাজি করে ১৪৯ ভোটে হারিয়ে দিয়েছে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ এবং পাক-পবিত্র হয়ে রাজনীতি ছেড়ে নামাজ কালেমা পড়ে জনসেবায় ব্রতী হবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। তিনি সত্যিই যদি উপলব্ধি করে থাকেন, এতদিনের রাজনীতি তার অপবিত্র ছিল (যার জন্য দুধ দিয়ে গোসল করে তাকে পবিত্র হতে হয়েছে) তাহলে রাজনীতিকে পবিত্র করার জন্য তার এগিয়ে আসা দরকার। রাজনীতিকে পবিত্র করার জন্য দুধের দরকার হবে না; সৎ, যোগ্য, ঈমানদার এবং দেশপ্রেমিক হলেই চলবে। আওয়ামী লীগ তো করলেন, এখন জামায়াতের সংবিধান ও সাহিত্য, বিশেষ করে বেশি বেশি করে কুরআন, হাদিস, ফিকাহ্্ উসুলসহ একজন খাঁটি মুসলমান হবার উপকরণগুলো অধ্যয়ন করুন, রাজনীতির ধোঁকা থেকে অবশ্যই রক্ষা পাবেন এবং মানুষেরও খেদমত করতে পারবেন। আল্লাহ্ আপনার সহায় হবেন। জাতিকে বর্তমান অবস্থা থেকে উদ্ধার করা আমার-আপনার সকলেরই দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা কখনো আমাদের ক্ষমা করবে না।
ড. মোঃ নূরুল আমিন
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন