মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বনাম কবি রফিক আজাদ


বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি রফিক আজাদ ৭৫ বছর বয়সে গত ১২ মার্চ ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছেন। বাংলাদেশে তিনি প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবে সমধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কবি হিসেবে তাকে চিনতাম ষাটের দশকের শেষ দিক থেকেই। তার সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭২ সাল থেকে, লেখালেখি সূত্রেই। তখন থেকেই আমি দেশের সকল সংবাদপত্রে প্রবন্ধ, উপসম্পাদকীয়, ছোটগল্প, সাহিত্য সমালোচনা, বুক রিভিউ, শিল্প সমালোচনা, ফিচার প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত লিখতে শুরু করেছি। সেই সুবাদে সমসাময়িক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার পরিচয় হতে শুরু করে তাদের মধ্যে অনেক সিনিয়র শিক্ষকরাও ছিলেন। কবি রফিক আজাদ রসিক মানুষ ছিলেন। ফলে তাকে ঘিরে সরস আড্ডা জমতো। আমিও ছিলাম তার সদস্য। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি এসে রফিক ভাই আমার নাম দিলেন ‘রোবোট সিদ্দিকী’। এত বিষয়ে এত কীভাবে লেখ? আমি হাসতাম। রফিক ভাইয়ের দেখাদেখি আরও অনেকেই তখন আমাকে ‘রোবোট সিদ্দিকী’ বলে ডাকতেন। শেষের প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রফিক ভাই কোনোদিন আমার নাম ধরে ডেকেছেন বলে মনে করতে পারছি না। তখন তিনি আমাকে ডাকতেন ‘সহোদর’। এমন কি অন্যের কাছে আমার কুশলাদি জানতেও বলতেন, ‘আমার সহোদর কেমন আছে?’ এই রফিক আজাদ ১৯৭৩ সালে ‘ভাত দে হারামজাদা’ কবিতা লিখে শেখ মুজিব সরকারের কঠোর নিগ্রহের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
রফিক ভাই যখন হাসপাতালের আইসিইউতে, তখন তাকে দেখতে যেতাম। দেখতাম দূর থেকে। কাচের দরোজার বাইরে দাঁড়িয়ে। কিন্তু একদিন দেখলাম রফিক ভাই বিছানায় বসা। আমি কাচের দরোজার বাইরে। আমাকে দেখে চিনতে পারলেন। একটি হাত তুলে আকুল হয়ে ইশারায় ডাকতে থাকলেন, ডাক্তার ভেতরে যেতে দিলেন না। আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে চোখ মুছতে মুছতে ফিরে এলাম। তারপর আর তাকে চোখ খোলা দেখিনি। চলে গেছেন রফিক ভাই। আল্লাহ তার সকল অপরাধ ক্ষমা করে তাকে বেহেশত নসিব করুন।
রফিক ভাই কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এক হাতে কলম। আর এক হাতে রাইফেল। এই ছিল রণাঙ্গনে রফিক আজাদ। আমি কাদের সিদ্দিকীর একজন নিয়মিত পাঠক। তার নিয়মিত দর্শকও ছিলাম। যদিও তার রাজনীতির সঙ্গে আমি বহু ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করি। তবে কবি রফিক আজাদ  সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম লিখেছেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা কবি হিসেবে, প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনের কবি হিসেবে তার যতটুকু স্বাধীন দেশে জায়গা পাওয়ার কথা ছিল তা তিনি পাননি। বঞ্চনা আর অবহেলা ছাড়া মনে হয় স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধার পাওয়ার মতো আর কিছু নেই। তিনি গত শনিবার ইহজগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে এক শনিবারে সখিপুরের মহানন্দপুরে কবির সঙ্গে আমার দেখা। টাঙ্গাইলের মানুষ হিসেবে অনেক আগে থেকেই তাকে জানতাম চিনতাম। কবি রফিক আজাদ, সাযযাদ কাদির, মাহবুব সাদিক, বুলবুল খান মাহবুব, কবি আবু কায়সার এরা সবাই আমার পরিচিত এবং রণাঙ্গনের সাথী। মুক্তিযুদ্ধে অনেক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক জড়িত ছিলেন। কিন্তু কবি রফিক আজাদের মতো প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনে কামানের গর্জন শুনে এক হাতে রাইফেল নিয়ে অন্য হাতে কলম কেউ চালাননি।...অনেক কবি-সাহিত্যিকের অগ্নিঝরা লিখনী মুক্তিযুদ্ধে অভাবনীয় অবদান রেখেছে। কিন্তু কবি রফিক আজাদ, বুলবুল খান মাহবুব, সাযযাদ কাদির, মাহবুব সাদিক এরা ছিলেন একেবারেই ভিন্ন। এদের এক হাতে ছিল কলম, অন্য হাতে রাইফেল, স্টেনগান, মেশিনগান।’
কাদের সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘একদিন এক রাজনৈতিক সভা করে দুপুরে কাঞ্চনপুর হয়ে ফিরছিলাম। সঙ্গে ৩-৪টা গাড়ি। কোথাও গেলে এখনো রাস্তার দুই পাশে কখনো বেশি কখনো কম লোকজন দাঁড়ায়। সেদিন এক বাড়ির দেউড়ি বেড়ায় কয়েকজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। একটা ছোট্ট উদাম বেশ নাদুসনুদুস বাচ্চা তার মাকে ঠেলা দিচ্ছিল, ‘ওই মা, মা, ভাত দিলি না? পেটে যে আগুন ধরছে। পুইড়া গেল। মা ভাত দে।’ বাচ্চার আপন মনে মায়ের কাপড় টেনে বারবার বলা কথা আমার কানে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ছিল ’৭৩ এ কবি রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ কবিতার কথা। তখন সারা দেশে এক অস্থিতিশীল অবস্থা। পাকিস্তানি হানাদাররা আমাদের কাছে নিদারুণভাবে হেরেছিল। ... যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে অভাব তো ছিলই, পাটের গুদামে আগুন, কলকারখানা ধ্বংস, আওয়ামী লীগ নেতাদের গুপ্তহত্যা- এর মধ্যে কবি রফিক আজাদ একদিন লিখে বসলেন ‘ভাত দে হারামজাদা’। তখন বাংলাদেশ বেতার আর বিটিভি ছাড়া তেমন প্রচার মাধ্যম ছিল না। পত্রিকা ছিল বেশ কয়েকটি। পত্রিকাতে ফলাও করে ছাপা হয়, বিবিসি প্রচার করে এসব দেখেশুনে আমিও কিছুটা কষ্ট পাচ্ছিলাম। স্বাধীনতার পর কবি রফিক আজাদ আমার প্রাণ ছুঁয়ে ছিলেন। রফিক আজাদ মুক্তিযুদ্ধের কবি, স্বাধীনতার কবি, খেটে খাওয়া মানুষের ভালোবাসার কবি। তিনি রণাঙ্গনে যেমন কলম ধরেছেন, তেমনি রাইফেলও ধরেছেন। আমি তাকে অস্ত্র ধরা শিখিয়েছি। তাই বুকের মধ্যে তার জায়গা ছিল অনেক। ‘ভাত দে হারামজাদা’ লেখার জন্য কবি রফিক আজাদের জেল হয়েছে, হুলিয়া জারি হয়েছে। এক সকালে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এসে দু’পা জড়িয়ে ধরে আকুল হয়ে বলেন, ‘স্যার আমারে বাঁচান। আমার যে জেল হয়ে গেছে। জেলখানা আমার ভালো লাগবে না। আমি কবি মানুষ জেলখানায় বসে বসে কী করব?’
কাদের সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘রফিক আজাদ কখনো আস্তে কথা বলতে পারত না। তার কথা দূর থেকে শোনা যেত। মা রফিক আজাদকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। বাবর রোডের ছোট্ট বাড়ি, কবি রফিক আজাদের কণ্ঠস্বর তার কানে যেতে সময় লাগেনি। বৈঠকখানায় এসে রফিক আজাদকে আমার পা ধরে থাকতে দেখে নিজ হাতে কবিকে টেনে তুলে শোফায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে? তোমার মুক্তিযুদ্ধের গুরু, তার কাছে কোনো কিছু বলতে হলে পা ধরতে হবে কেন? তুমি তার যোদ্ধা। তোমায় ছায়া দেওয়া তার দায়িত্ব। কোনো চিন্তা করো না। যে জন্য এসেছ শান্তভাবে বল। বজ্রের যা করার অবশ্যই করবে। কিন্তু তুমি বাবা বঙ্গবন্ধুকে এভাবে হারামজাদা বলতে গেলে কেন? এটা কিন্তু বাবা ভালো করোনি।’ মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নাস্তা খেয়েছো?’ না সূচক উত্তর পেয়ে বললেন, হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে নাও। যতক্ষণ এখানে আছো চিন্তার কিছু নেই। ঝাড়া দিয়ে কবি উঠলেন অনেকটা বিপ্লবী কবি কাজী নজরুলের মতো বাবরি দুলিয়ে। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেলেন। মনে হলো বেশ কিছুদিন শান্তি মতো খাবার খাননি... কবির নাস্তা খাওয়া শেষ হলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সত্যিই আপনি বঙ্গবন্ধুকে এত বড় গালি দিলেন? আমাকেও কি দিতে পারবেন?’ মনে হয় কবি যেন জ্বলে উঠলেন। জ্বলবারই কথা, পেটে দানা-পানি পড়লে, নিজেকে নিরাপদ বোধ করলে তখন আর কবিদের হীনম্মন্যতা থাকে না। স্বরূপে তারা বেরিয়ে আসে। কবি বললেন, কোথায় বঙ্গবন্ধুকে গালি দিলাম? আমি শুধু আমার ক্ষুধার জ্বালার কথা বলেছি, মানুষের কথা বলেছি। গ্রামগঞ্জের বাচ্চারা মায়ের কাছে কীভাবে খাবার চায়। খুব ক্ষুধা লাগলে বলে না, মাগো ভাত দে, ভাত দিলি না, ভাত না দিলে তোরে খামু কিন্তু, বলে না?’ আঁতকে উঠে সম্বিত ফিরে পেলাম। সত্যিই তো কত জায়গায় কত বাচ্চার অমন কথা শুনেছি। আইয়ুব-মোনায়েমের আমলে বাবা-বড় ভাই যখন জেলে আমাদের পরিবার ভেঙে গুঁড়িয়ে তছনছ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় আমি আমার ছোট ভাই বোনেরা কতবার মার কাছে অমন করে কান্নাকাটি করেছি, চিৎকার করেছি।’
কাদের সিদ্দিকীর ভাষায়, ‘কবি ৩-৪ বার ‘ভাত দে হারামজাদা’ পড়ে শুনালেন। ...কবি রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ শুনে আমি উত্তর পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল কবি তো মোটেই সরকারকে গালি দেয়নি, বঙ্গবন্ধুকে তো নয়ই। বরং বঙ্গবন্ধুকে কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে যাওয়া থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। উত্তেজনায় ঘেমে যাচ্ছিলাম। আমি সাধারণত অমন উত্তেজনাবোধ করি না। হানাদারদের মুখোমুখি হয়েও করিনি। সময় কাটতে চাচ্ছিল না। কবিকে বাড়িতে রেখে বিকালে গণভবন সুগন্ধায় গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখেই বলছিলেন, ‘কি রে কাদের! তোর কবি রফিক আজাদ আমাকে অমন গালাগাল করছে কেন? সত্যিই কি আমি অমন কাজ করছি?’ বঙ্গবন্ধুর কথায় আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল। কতটা আঘাত পেলে কেউ অমন বলে। আমি বললাম, না। কবি আপনাকে গালাগাল করেনি। আপনাকে যথার্থ পিতার জায়গা দিয়ে বিপদ থেকে সতর্ক করতে চেয়েছে। ‘কী বলিস? অমনভাবে এই দুঃসময়ে আমাকে উদ্দেশ করে ভাত দে হারামজাদা বললো। তারপরও তুই বলছিস ও খারাপ বলেনি। কী বলিস?’
‘কবি আমায় যেভাবে যা বুঝিয়েছিলেন আমিও নেতাকে সেভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। এখন খেয়াল নেই হয় মোহাম্মদ আলী, না হয় ফরাসউদ্দিন কেউ একজন ছিলেন। কবিতাটি আনতে বললেন। আমি ২-৩টি জায়গা কয়েকবার পড়ে শুনালাম। পিতা তার আসন থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘ঠিকই তো, তোর কবি ঠিক বলেছে, ঠিক লিখেছে। ওকে এখনই নিয়ে আয়।’ কবি আমার বাসাতেই ছিল। তাকে বঙ্গবন্ধুর কাছে নেওয়া কোনো কঠিন ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই তাকে নিয়ে গেলাম পিতার কাছে। গিয়ে সালাম করার সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুল ধরে টেনে তুলতে গিয়ে পিতা বললেন, ‘এই হারামজাদা, কবি হলেই এমন লেখে?’ কবি রফিক আজাদ বেশ মুখোর ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘এই যে আমার মাথার চুল ধরে টেনে তুলতে হারামজাদা বললেন, এটা কী? এটা কি ক্ষুুব্ধ হয়ে, নাকি ভালোবেসে বলেছেন?’ বঙ্গবন্ধু তব্দা ধরে বসে পড়লেন। কবি তার ‘ভাত দে হারামজাদা’ শুনালো ৪-৫ বার। পিতা অভিভূত হলেন। বুকে নিয়ে বারবার আদর করে বললেন, ‘তুই আরও লিখবি। এটাই তো কবিতা। মানুষের কথা তোরা না বললে কে বলবে?’ আমাকে বললেন, ‘কাদের, ওকে মাঝে মাঝে নিয়ে আসবি। ও আমাকে কবিতা শুনাবে। কবিতা শুনলে মন পরিষ্কার হয়।’ সঙ্গে সঙ্গে মনসুর ভাই, না মালেক ভাই কে যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, বললেন ‘ওর মামলা আমি তুলে নিলাম। আমি বেঁচে থাকতে ওর নামে যেন কোনো মামলা না হয়।’ এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু।’  বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর এই লেখাটি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৭ এপ্রিল, ২০১৬-তে।
কিন্তু বঙ্গবীর যা বললেন, তেমন কথা আমরা কখনও শুনিনি। কবি রফিক আজাদও বলেছেন ভিন্ন কথা। ২০১২ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জাল পড়ার বিষয়টা সঠিক ছিল না। সঠিক ছিল না বমি খাওয়ার ছবিটাও। তবে সেটা দেখে তিনি কবিতাটা লিখেছিলেন। এই কবিতা নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এতটাই রুষ্ট হযেছিলেন যে, তার জেলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভেতরে বাইরে তার বিরোধী লোকে ভর্তি ছিল। আর দেশে পাকিস্তান তো পাগল হইয়া গিয়া তার যত লোক খুঁইজ্যা বাইর করছে টাকা পয়সা দিয়া। আর বঙ্গবন্ধুর মতো লোক বলে আমিও বাঁচ্চি। ওরা তো নিজেরা স্বপ্রণোদিত হইয়া অ্যারেস্ট অর্ডার বের কইরা ফেলছিল। কিন্তু আমার কমান্ডার আর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আনোয়ার হোসেন/ আনোয়ারুল হক শহীদ এই দুই জনে মিল্যা আমারে বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়া গেছে (কাদের সিদ্দিকী নিয়ে গেছেন, এমন কথা তিনি বলেননি।) যে এর কথা শোনেন। তখন রক্ষী বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিল আনোয়ারুল শহীদ। পরে আমি বলছি যে এই ঘটনা। তখন উনি টেলিফোন করে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর কাছে আমারে পাঠাইলো যে, উহাকে পাঠাইলাম, যে গাড়িতে যাচ্ছে ওই গাড়িতে ফেরত দিবা। তো গাড়িতে গেলাম। উনি আমারে দেইখ্যা বললেন যে, বয়স কম, এখন তো এসবি করবি। এগুলা করলে সোজা আমার বাসায় চইলা আসবি। তখন ডিআইজিকে টেলিফোন কইরা দিল। এসবির যে অফিস। ঐখানে গেলাম। ওই তো আমারে আটকাইয়া রাইখ্যা বলল যে, কেন লিখছেন, কী, হেইডার ব্যাখ্যা লেখেন। এক দিস্তা কাগজ দিল আর দুই কাপ চা। বলল, চা খান আর লেখেন। ৬১ পৃষ্ঠা লিখছি। সারা পৃথিবীর যে খাদ্যাভাব, কোথায় কোথায় খাদ্যাভাব নাই, আছে, কোথায় কোথায় মানুষ মারা যাচ্ছে না খাইয়া, এগুলা তো কিছুই না। বললাম, আমি যা লিখছি ঠিক লিখছি। এইসব ইতিহাস পড়ার পরে যা দাঁড়ায়, এইটাও তাই। একটা মানুষও মারা যেতে পারে না। দেশ স্বাধীন হইছে, বঙ্গবন্ধুর উচিত ছিল এইডা দেখা। পরে আমারে কয় যে, যাও যাও।’
তাকে আটক রাখা হয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। আমরা অনেক তরুণ-প্রবীণ লেখক গেটের সামনে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে ছিলাম। রফিক আজাদ বেরিয়ে এসেছিলেন এলোমেলো চুলে উদ্ভ্রান্তের মতো। আমরা আপাতত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। তাই স্মৃতিচারণের ক্ষেত্রে আমাদের বোধকরি আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads