শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন আর বিলাসী জীবনযাপনের কারণে পৃথিবীর জলবায়ুতে যে পরিবর্তন ঘটছে, তাতে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দুর্যোগ হয় তা প্রতিরোধ করতে পারলে হাজারো জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
গবেষকরা মনে করেন, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অন্যতম দায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের হার কমাতে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিশ্বের ওইসব দেশের কাছ থেকে যাতে ক্ষতিপূরণ পায়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘকে ভূমিকা নেওয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
১৯৯২ সালে জাতিসংঘ একটি কনভেনশন গ্রহণ করে। এতে প্রতিটি শিল্পোন্নত দেশ স্বাক্ষর করে অঙ্গীকার করে যে ২০০০ সালের মধ্যে নিজ নিজ দেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন শতকরা পাঁচ ভাগ কমিয়ে আনবে। কিন্তু একটি দেশও ওই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি, বরং তা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাপলক্রফট’ বিশ্বের ১৭০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৬টি দেশকে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর অক্টোবরে ম্যাপলক্রফট এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৬টি দেশের মধ্যে পাঁচটিই দক্ষিণ এশিয়ার। তালিকায় বাংলাদেশের পরেই আছে ভারত। ক্ষতির দিক থেকে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে দুটি কারণে। এক. সর্বোচ্চ মাত্রায় অনাবৃষ্টি। দুই. চরম জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিপদ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে।
বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে: বিপদ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আইন প্রণয়ন করে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট’ গঠন করেছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর কাজ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষযটিতে উন্নত-অনুন্নত সব দেশের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
১৪ নবেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বান কি মুন এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বান কি মুন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সব দেশই হুমকির মুখে রয়েছে। কোনো দেশই হুমকির বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তন দেশই হুমকির বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিশ্বের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
৭০০ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বকে নিরাপদ ও উন্নত হিসেবে গড়তে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। তবে সবার সমস্যা এক ও অভিন্ন। আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। ইতিহাসের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ গত বছর হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, এখানে আমি তিন বছর আগে এসেছিলাম। ১৯৭৩ সালেও কয়েকবার এসেছি। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ১৯৯১ ও ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ দেশের অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠনেরও প্রশংসা করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দুর্যোগ হয় তা প্রতিরোধ করতে পারলে হাজারো জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বান কি মুন। তিনি বলেন, কিরিবাতির সর্বোচ্চ জমিটি সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৩ মিটার উঁচু। কিরিবাতির ওই এলাকায় আমাকে লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছিল। গত মাসে ৭০০ কোটি জনসংখ্যা অতিক্রম করা এ বিশ্বকে নিরাপদ ও উন্নত হিসেবে গড়তে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্য রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়।’ বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিভিএফ সম্মেলনে আসা মতামতগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ইউএনএফসিসিসির সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব। বান কি মুন বলেন, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের তহবিল বণ্টন এবং নতুন তহবিল গঠনে স্বচ্ছতা আসবে- ডারবান সম্মেলনে, এমন ঘোষণা আসবে বলে আমি মনে করি না।’ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ডারবানেই গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের তহবিল সংগ্রহ শুরু করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। দরিদ্রদের দুঃখ-দুর্দশা দিন দিন বাড়ছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত ও শর্তহীন সহায়তা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু সহায়তায় শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়। সক্ষম দেশগুলোর কাছ থেকে সহজে ও সরাসরি অর্থ এবং প্রযুক্তি সহায়তা পাওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় তহবিল ছাড়ের ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ২০১১- এর দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে ঝুঁকি এবং সামর্থ্যরে ঘাটতিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি মানদণ্ড তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এছাড়া যেসব শর্ত দেওয়া হচ্ছে তা স্বল্পোন্ত অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতেও ব্যর্থ হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রেও সহায়তার সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া ‘দ্রুত অর্থায়ন’ কর্মসূচির কর্মপদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা হচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন এখনও বেড়েই চলেছে। এ ধারা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে বাংলাদেশসহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে এমন দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো কোনো দেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। অথচ এ জন্য আমরা মোটেই দায়ী নই। চরম অবিচারের শিকার আমরা। বিশ্বকে এটি স্বীকার করতে হবে। এর সংশোধন ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’
দ্বিতীয় সিভিএফ বৈঠকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ফোরামের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস স্বাগত বক্তব্য এবং পরিবেশ সচিব মেসবাহ-উল আলম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিএআরএ ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তায় পররাষ্ট্র এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সিভিএফ ফোরামের সদস্য দেশগুলো হলো-আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, কেনিয়া, কিরিবাতি, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, নেপাল, ফিলিপাইন, সেইন্ট লুসিয়া, তাঞ্জানিয়া, তিমুর লেসতি, তুভালু, ভানুয়াতু এবং ভিয়েতনাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দরিদ্রদের দুঃখ-দুর্দশা দিন দিন বাড়ছে। শুধু এর প্রভাবে গত বছর অতিরিক্ত তিন লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে এবং ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ বিনষ্ট হয়। সময়মতো পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলে ক্ষতি আরও বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডারবানে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈঠকের আগে ঢাকায় সিভিএফের দ্বিতীয় বৈঠকের ফলে দুর্গত দেশগুলোর সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে করণীয় নির্ধারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই সিভিএফ বৈঠকের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান হুমকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা ও একটি কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়তে আমাদের অঙ্গীকারেরও প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু তহবিল ও প্রযুক্তির ব্যাপারে ‘যেসব শর্ত ও মানদণ্ড দেওয়া হয়েছে তা সক্ষম দেশগুলোর পক্ষে গেছে বলে মনে করেন।’
জলবায়ু পরিবর্তনের সহায়তার সঙ্গে উন্নয়ন সাহায্যকে মিলিয়ে ফেলার প্রবণতার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন সহায়তা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে আমাদের নতুন ও অতিরিক্ত সাহায্য দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘কানকুনে গৃহীত ২০১১-১২ সালের জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি সুদূরপরাহত। একইভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ চালুর মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহের বিষয়টিও বিশ্ব সম্প্রদায় স্পষ্ট করছে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে চরম অনীহা দেখাচ্ছে। বাধ্যতামূলক ও স্বতঃপ্রণোদিত প্রতিকারের ব্যবস্থা না নেওয়ায় কিয়োটো প্রটোকলের আশানুরূপ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ উদাসীনতা বিশ্ব জলবায়ুকে তছনছ এবং বিভিন্ন দেশকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলে দেবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক দায়-দায়িত্ব পালন ও সহনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একইভাবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোরও নৈতিক দায়িত্ব আছে এবং সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে ভিত্তিতে তাদেরও স্বপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি বহুল স্বীকৃত যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রতিঘাতে মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। বৈশ্বিক আলোচনায় সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি ও মরুকরণ প্রক্রিয়া কম গুরুত্ব পাচ্ছে। বাস্তুচ্যুতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পুনর্বাসন ও চাহিদা পূরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তার জন্য একটি যথোপযুক্ত রূপরেখা প্রণয়নে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জট্রাস্ট ফান্ড অ্যাক্ট ২০১০ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব কী করবে, সে আশায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বসে থাকার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা বলেন, ডারবানে সিওপি ১৭ সম্মেলনের আগে আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সমন্বিত উদ্বেগের বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে সবুজ উন্নয়নের দিশারিতে পরিণত করার আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘উন্নয়ন সহাযোগীরা জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে, যাতে বিশেষ করে জি-৮, জি-২০, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা এবং চ্যালেঞ্জগুলো সার্বিকভাবে অনুধাবন করতে পারে। নারীর ওপরই প্রভাব বেশি: ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের দ্বিতীয় দিনের সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন দেশগুলোর নেতৃত্বে ২০০৯ সালে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম গঠিত হয়। মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে এর সর্বপ্রথম সম্মেলন হয়। এবার হচ্ছে সিভিএফের তৃতীয় সম্মেলনে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া পরিবর্তিত হচ্ছে। ঋতুগুলো স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত ‘দুর্যোগকোষ’- এ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে কম সম্পদ আছে যার, সেই ভুক্তভোগী হবে সবচেয়ে বেশি; বিশেষ করে নারীর ওপরই এর প্রভাব বেশি পড়বে। দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের মতে, বিশ্বের ১.৫ বিলিয়ন দরিদ্র নারী জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের তালিকার সামনের সারিতে রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যন্ত এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। বিপর্যয়-পরবর্তী অবস্থায় ঘরে ও শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতেও নারীরা সহিংসতার শিকার হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আন্ত:সরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, সুপেয় পানি পাওয়া যাবে না এবং জমি অনুর্বর হবে। এছাড়া দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে, কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসবে, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে সমুদ্র তীর রক্ষায় নির্মিত বাঁধগুলো ধ্বংস হচ্ছে। উপকূলীয় ভূমি ক্ষয়ের পরিমাণ ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে। সমুদ্র বেশি উত্তাল হচ্ছে। জেলেদের জীবন হুমকিগ্রস্ত হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ থেকে সরকারের যে আয়, তাও হুমকির সম্মুখীন। দেশে বন্যার পরিমাণ বাড়ছে। উত্তরাঞ্চলে খরা বাড়ছে। ভূমির উর্বরতা কমছে। অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির হারও বেড়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বিঘ্নিত হওয়ায় দেশটিকে ঘন ঘন বন্যা ও খরার সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৭১ সালে বন্যা, ১৯৭২ সালে খরা আবার ১৯৭৪ সালে বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশ। ১৯৭৭ ও ১৯৭৯ সালে খরার পর ১৯৮০ ও ১৯৮৪ সালে বন্যা হয়। মাঝখানে আবারও ১৯৮২ সালে খরা দেখা দেয়। এভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন বাংলাদেশের কৃষির জন্য অবধারিত নিয়তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময় এ দেশে কয়েক হাজার প্রজাতির ধান চাষ হতো। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১০০ তে দাঁড়িয়েছে। বন্যার কারণে আউস ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষক সেচনির্ভর বোরো ধানের দিকে ঝুঁকেছে। অন্যদিকে ডাল চাষের জমি কমে গেছে। পাট, গম ও আখের চাষও কমেছে। দক্ষিণাঞ্চলের আমতলীতে পাট, তামাক, গম ও তিল একেবারেই হারিয়ে গেছে। মনোহরপুরে তিসি, তরমুজ, তিল ও খেসারির স্থান দখল করেছে বোরো ধান। জলাবদ্ধতার কারণে আউস ও আমন ধান ওই অঞ্চল থেকে একেবারেই হারিয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের উলিপুর থেকে হারিয়ে গেছে কাউন, গম ও পাট।
বিপর্যস্ত বাংলাদেশের কৃষি: গত কয়েক বছরে উপর্যুপরি বৈরী জলবায়ুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের কৃষি যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তাতে এ আশঙ্কা দৃঢ়মূল হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে দেশের কৃষি বৈরী জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছে। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিশ্বখাদ্য সংস্থা আয়োজিত যৌথ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের কৃষি ও মৎস্য খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ হ্রাস পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বরেন্দ্র এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত কম হয়। ফলে নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিও উত্তোলন করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। এভাবে এখানে মরুভূমির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। রাজশাহীর আশপাশে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন প্রায় ৮ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন প্রায় ৩২ শতাংশ কমবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি নতুন ধরনের জলবায়ু পরিস্থিতিতে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানিতে মাছ ও অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। বন উজাড় হওয়ার কারণে ৩০টি প্রজাতির বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে বলে জাতিসংঘ তথ্য প্রকাশ করেছে। বিপন্ন প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি। বিগত শতাব্দীতে বাংলাদেশে ১৯টি প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গণ্ডার, বুনো মহিষ, কালো হাঁস, নীলগাই, রাজশকুন ইত্যাদি।
মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে মিঠাপানিতে ২৬০ প্রজাতির স্থানীয় মাছ, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৩১ প্রজাতির বিদেশী মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। চিংড়ির মধ্যে ১৬ প্রজাতির রয়েছে সামুদ্রিক। এছাড়া ৪৫০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ প্রাজাতিই উপকূলবর্তী এলাকার। তথ্য মতে, ১৫, ২০ কিংবা ৩০ বছর আগে বাংলাদেশে যে ধরনের মাছ পাওয়া যেত, বর্তমানে তার বেশির ভাগই বিলুপ্ত অথবা হুমকির মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে না পারলে আগামী কয়েক বছরে অন্যগুলোও বিলুপ্ত হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক হিসাবে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি খাতের অবদান প্রায় ৫৫ শতাংশ এবং গ্রামীণ জনপদের প্রায় ৫৪ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশের কৃষি বৈরী জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি জলবায়ু ও আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম একটি নিদর্শন বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাওয়া। এখন আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টি হয় না। আশ্বিন মাসে চার-পাঁচ দিন এমন পরিমাণে বৃষ্টি হয়, তাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালের চেয়ে ২০০৯ সালে ৩২ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের ২৭-২৮ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ বছর আবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হয়েছে। ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৯, ২০০৯ সালে দেশ খরার কবলে পতিত হয়। খরাসহ বিভিন্ন কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে নিম্নমুখী হয়ে সেচকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে বন্যা হয়। স্বাভাবিক বন্যায় দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু জলবায়ু বৈরী হয়ে ওঠায় সাম্প্রতিক দশকগুলোতে শুধু বন্যার সংখ্যাই বৃদ্ধি পায়নি, এর তীব্রতাও বেড়ে গেছে। ১৯৭০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অন্তত ১২ বছর দেশ অস্বাভাবিক বন্যার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যা ছিল প্রলয়ঙ্করী।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। দেশের মোট আয়তনের ৩২ ভাগই উপকূলীয় এলাকা (১৯টি জেলা), যেখানে প্রায় চার কোটি লোক বসবাস করে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কুতুবদিয়ার ২৫০ বর্গকিলোমিটার, ভোলার ২২৭ বর্গকিলোমিটার ও সন্দ্বীপের ১৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬৫ শতাংশ ইতোমধ্যে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে। ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ এক মিটার উঁচু হতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। এর ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮.৩ শতাংশ নিমজ্জিত হতে পারে। কেউ কেউ অবশ্য এক-পঞ্চমাংশ পানিতে ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ তালপট্টি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নোনা পানি ঢুকছে। শুষ্ক মওসুমেও বিভিন্ন নদীপথ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পর্যন্ত নোনা পানি ঢুকে পড়ছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ওই সব জেলায়। উপকূলীয় জেলাগুলো ছাড়াও বাগেরহাটের উত্তরাঞ্চলে, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ অন্য জেলাগুলোতেও নোনা পানি ঢুকে পড়েছে। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় আট লাখ ৩০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ২০১১-এর দুই দিনের এ সম্মেলনে কোস্টারিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া ফিগারস ওলসেনও যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ কার্বন নিঃসরণ। আমরা যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই, তারাই কথা বলছি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। শক্তিশালী দেশ এ বিষয়ে কোনো কথাই শুনতে চায় না।’ তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় ‘লো-কার্বন ইকোনমি’ গড়ে তুলতে আরও বহু পথ হাঁটতে হবে। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ নাসিম বলেন, ‘এবারের সম্মেলন ডারবানের জন্য বার্তা পাঠানো, কার্বন নিঃসরণ কমানো, অনুন্নত দেশগুলোকে সহায়তা করার বিষয়ে ফসল হবে।’ সিভিএফের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, ভুটান, কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, কেনিয়া, কিরিবাতি, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, নেপাল, ফিলিপাইন, সেন্ট লুসিয়া, তানজানিয়া, তিমুললেসথে, তুভালু, ভানুয়াতু, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে।
গবেষকরা মনে করেন, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অন্যতম দায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের হার কমাতে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিশ্বের ওইসব দেশের কাছ থেকে যাতে ক্ষতিপূরণ পায়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘকে ভূমিকা নেওয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
১৯৯২ সালে জাতিসংঘ একটি কনভেনশন গ্রহণ করে। এতে প্রতিটি শিল্পোন্নত দেশ স্বাক্ষর করে অঙ্গীকার করে যে ২০০০ সালের মধ্যে নিজ নিজ দেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন শতকরা পাঁচ ভাগ কমিয়ে আনবে। কিন্তু একটি দেশও ওই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি, বরং তা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাপলক্রফট’ বিশ্বের ১৭০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৬টি দেশকে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর অক্টোবরে ম্যাপলক্রফট এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৬টি দেশের মধ্যে পাঁচটিই দক্ষিণ এশিয়ার। তালিকায় বাংলাদেশের পরেই আছে ভারত। ক্ষতির দিক থেকে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে দুটি কারণে। এক. সর্বোচ্চ মাত্রায় অনাবৃষ্টি। দুই. চরম জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিপদ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে।
বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে: বিপদ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আইন প্রণয়ন করে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট’ গঠন করেছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর কাজ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষযটিতে উন্নত-অনুন্নত সব দেশের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
১৪ নবেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বান কি মুন এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বান কি মুন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সব দেশই হুমকির মুখে রয়েছে। কোনো দেশই হুমকির বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তন দেশই হুমকির বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিশ্বের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
৭০০ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বকে নিরাপদ ও উন্নত হিসেবে গড়তে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। তবে সবার সমস্যা এক ও অভিন্ন। আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। ইতিহাসের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ গত বছর হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, এখানে আমি তিন বছর আগে এসেছিলাম। ১৯৭৩ সালেও কয়েকবার এসেছি। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ১৯৯১ ও ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ দেশের অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠনেরও প্রশংসা করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দুর্যোগ হয় তা প্রতিরোধ করতে পারলে হাজারো জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বান কি মুন। তিনি বলেন, কিরিবাতির সর্বোচ্চ জমিটি সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৩ মিটার উঁচু। কিরিবাতির ওই এলাকায় আমাকে লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছিল। গত মাসে ৭০০ কোটি জনসংখ্যা অতিক্রম করা এ বিশ্বকে নিরাপদ ও উন্নত হিসেবে গড়তে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্য রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়।’ বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিভিএফ সম্মেলনে আসা মতামতগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ইউএনএফসিসিসির সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব। বান কি মুন বলেন, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের তহবিল বণ্টন এবং নতুন তহবিল গঠনে স্বচ্ছতা আসবে- ডারবান সম্মেলনে, এমন ঘোষণা আসবে বলে আমি মনে করি না।’ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ডারবানেই গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের তহবিল সংগ্রহ শুরু করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। দরিদ্রদের দুঃখ-দুর্দশা দিন দিন বাড়ছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত ও শর্তহীন সহায়তা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু সহায়তায় শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়। সক্ষম দেশগুলোর কাছ থেকে সহজে ও সরাসরি অর্থ এবং প্রযুক্তি সহায়তা পাওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় তহবিল ছাড়ের ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ২০১১- এর দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে ঝুঁকি এবং সামর্থ্যরে ঘাটতিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি মানদণ্ড তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এছাড়া যেসব শর্ত দেওয়া হচ্ছে তা স্বল্পোন্ত অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতেও ব্যর্থ হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রেও সহায়তার সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া ‘দ্রুত অর্থায়ন’ কর্মসূচির কর্মপদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা হচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন এখনও বেড়েই চলেছে। এ ধারা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে বাংলাদেশসহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে এমন দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো কোনো দেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। অথচ এ জন্য আমরা মোটেই দায়ী নই। চরম অবিচারের শিকার আমরা। বিশ্বকে এটি স্বীকার করতে হবে। এর সংশোধন ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’
দ্বিতীয় সিভিএফ বৈঠকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ফোরামের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস স্বাগত বক্তব্য এবং পরিবেশ সচিব মেসবাহ-উল আলম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিএআরএ ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তায় পররাষ্ট্র এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সিভিএফ ফোরামের সদস্য দেশগুলো হলো-আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, কেনিয়া, কিরিবাতি, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, নেপাল, ফিলিপাইন, সেইন্ট লুসিয়া, তাঞ্জানিয়া, তিমুর লেসতি, তুভালু, ভানুয়াতু এবং ভিয়েতনাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দরিদ্রদের দুঃখ-দুর্দশা দিন দিন বাড়ছে। শুধু এর প্রভাবে গত বছর অতিরিক্ত তিন লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে এবং ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ বিনষ্ট হয়। সময়মতো পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলে ক্ষতি আরও বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডারবানে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈঠকের আগে ঢাকায় সিভিএফের দ্বিতীয় বৈঠকের ফলে দুর্গত দেশগুলোর সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে করণীয় নির্ধারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই সিভিএফ বৈঠকের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান হুমকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা ও একটি কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়তে আমাদের অঙ্গীকারেরও প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু তহবিল ও প্রযুক্তির ব্যাপারে ‘যেসব শর্ত ও মানদণ্ড দেওয়া হয়েছে তা সক্ষম দেশগুলোর পক্ষে গেছে বলে মনে করেন।’
জলবায়ু পরিবর্তনের সহায়তার সঙ্গে উন্নয়ন সাহায্যকে মিলিয়ে ফেলার প্রবণতার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন সহায়তা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে আমাদের নতুন ও অতিরিক্ত সাহায্য দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘কানকুনে গৃহীত ২০১১-১২ সালের জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি সুদূরপরাহত। একইভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ চালুর মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহের বিষয়টিও বিশ্ব সম্প্রদায় স্পষ্ট করছে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে চরম অনীহা দেখাচ্ছে। বাধ্যতামূলক ও স্বতঃপ্রণোদিত প্রতিকারের ব্যবস্থা না নেওয়ায় কিয়োটো প্রটোকলের আশানুরূপ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ উদাসীনতা বিশ্ব জলবায়ুকে তছনছ এবং বিভিন্ন দেশকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলে দেবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক দায়-দায়িত্ব পালন ও সহনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একইভাবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোরও নৈতিক দায়িত্ব আছে এবং সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে ভিত্তিতে তাদেরও স্বপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি বহুল স্বীকৃত যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রতিঘাতে মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। বৈশ্বিক আলোচনায় সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি ও মরুকরণ প্রক্রিয়া কম গুরুত্ব পাচ্ছে। বাস্তুচ্যুতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পুনর্বাসন ও চাহিদা পূরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তার জন্য একটি যথোপযুক্ত রূপরেখা প্রণয়নে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জট্রাস্ট ফান্ড অ্যাক্ট ২০১০ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব কী করবে, সে আশায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বসে থাকার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা বলেন, ডারবানে সিওপি ১৭ সম্মেলনের আগে আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সমন্বিত উদ্বেগের বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে সবুজ উন্নয়নের দিশারিতে পরিণত করার আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘উন্নয়ন সহাযোগীরা জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে, যাতে বিশেষ করে জি-৮, জি-২০, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা এবং চ্যালেঞ্জগুলো সার্বিকভাবে অনুধাবন করতে পারে। নারীর ওপরই প্রভাব বেশি: ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের দ্বিতীয় দিনের সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন দেশগুলোর নেতৃত্বে ২০০৯ সালে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম গঠিত হয়। মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে এর সর্বপ্রথম সম্মেলন হয়। এবার হচ্ছে সিভিএফের তৃতীয় সম্মেলনে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া পরিবর্তিত হচ্ছে। ঋতুগুলো স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত ‘দুর্যোগকোষ’- এ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে কম সম্পদ আছে যার, সেই ভুক্তভোগী হবে সবচেয়ে বেশি; বিশেষ করে নারীর ওপরই এর প্রভাব বেশি পড়বে। দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের মতে, বিশ্বের ১.৫ বিলিয়ন দরিদ্র নারী জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের তালিকার সামনের সারিতে রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যন্ত এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। বিপর্যয়-পরবর্তী অবস্থায় ঘরে ও শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতেও নারীরা সহিংসতার শিকার হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আন্ত:সরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, সুপেয় পানি পাওয়া যাবে না এবং জমি অনুর্বর হবে। এছাড়া দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে, কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসবে, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে সমুদ্র তীর রক্ষায় নির্মিত বাঁধগুলো ধ্বংস হচ্ছে। উপকূলীয় ভূমি ক্ষয়ের পরিমাণ ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে। সমুদ্র বেশি উত্তাল হচ্ছে। জেলেদের জীবন হুমকিগ্রস্ত হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ থেকে সরকারের যে আয়, তাও হুমকির সম্মুখীন। দেশে বন্যার পরিমাণ বাড়ছে। উত্তরাঞ্চলে খরা বাড়ছে। ভূমির উর্বরতা কমছে। অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির হারও বেড়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বিঘ্নিত হওয়ায় দেশটিকে ঘন ঘন বন্যা ও খরার সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৭১ সালে বন্যা, ১৯৭২ সালে খরা আবার ১৯৭৪ সালে বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশ। ১৯৭৭ ও ১৯৭৯ সালে খরার পর ১৯৮০ ও ১৯৮৪ সালে বন্যা হয়। মাঝখানে আবারও ১৯৮২ সালে খরা দেখা দেয়। এভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন বাংলাদেশের কৃষির জন্য অবধারিত নিয়তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময় এ দেশে কয়েক হাজার প্রজাতির ধান চাষ হতো। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১০০ তে দাঁড়িয়েছে। বন্যার কারণে আউস ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষক সেচনির্ভর বোরো ধানের দিকে ঝুঁকেছে। অন্যদিকে ডাল চাষের জমি কমে গেছে। পাট, গম ও আখের চাষও কমেছে। দক্ষিণাঞ্চলের আমতলীতে পাট, তামাক, গম ও তিল একেবারেই হারিয়ে গেছে। মনোহরপুরে তিসি, তরমুজ, তিল ও খেসারির স্থান দখল করেছে বোরো ধান। জলাবদ্ধতার কারণে আউস ও আমন ধান ওই অঞ্চল থেকে একেবারেই হারিয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের উলিপুর থেকে হারিয়ে গেছে কাউন, গম ও পাট।
বিপর্যস্ত বাংলাদেশের কৃষি: গত কয়েক বছরে উপর্যুপরি বৈরী জলবায়ুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের কৃষি যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তাতে এ আশঙ্কা দৃঢ়মূল হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে দেশের কৃষি বৈরী জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছে। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিশ্বখাদ্য সংস্থা আয়োজিত যৌথ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের কৃষি ও মৎস্য খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ হ্রাস পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বরেন্দ্র এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত কম হয়। ফলে নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিও উত্তোলন করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। এভাবে এখানে মরুভূমির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। রাজশাহীর আশপাশে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন প্রায় ৮ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন প্রায় ৩২ শতাংশ কমবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি নতুন ধরনের জলবায়ু পরিস্থিতিতে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানিতে মাছ ও অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। বন উজাড় হওয়ার কারণে ৩০টি প্রজাতির বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে বলে জাতিসংঘ তথ্য প্রকাশ করেছে। বিপন্ন প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি। বিগত শতাব্দীতে বাংলাদেশে ১৯টি প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গণ্ডার, বুনো মহিষ, কালো হাঁস, নীলগাই, রাজশকুন ইত্যাদি।
মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে মিঠাপানিতে ২৬০ প্রজাতির স্থানীয় মাছ, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৩১ প্রজাতির বিদেশী মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। চিংড়ির মধ্যে ১৬ প্রজাতির রয়েছে সামুদ্রিক। এছাড়া ৪৫০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ প্রাজাতিই উপকূলবর্তী এলাকার। তথ্য মতে, ১৫, ২০ কিংবা ৩০ বছর আগে বাংলাদেশে যে ধরনের মাছ পাওয়া যেত, বর্তমানে তার বেশির ভাগই বিলুপ্ত অথবা হুমকির মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে না পারলে আগামী কয়েক বছরে অন্যগুলোও বিলুপ্ত হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক হিসাবে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি খাতের অবদান প্রায় ৫৫ শতাংশ এবং গ্রামীণ জনপদের প্রায় ৫৪ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশের কৃষি বৈরী জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি জলবায়ু ও আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম একটি নিদর্শন বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাওয়া। এখন আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টি হয় না। আশ্বিন মাসে চার-পাঁচ দিন এমন পরিমাণে বৃষ্টি হয়, তাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালের চেয়ে ২০০৯ সালে ৩২ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের ২৭-২৮ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ বছর আবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হয়েছে। ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৯, ২০০৯ সালে দেশ খরার কবলে পতিত হয়। খরাসহ বিভিন্ন কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে নিম্নমুখী হয়ে সেচকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে বন্যা হয়। স্বাভাবিক বন্যায় দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু জলবায়ু বৈরী হয়ে ওঠায় সাম্প্রতিক দশকগুলোতে শুধু বন্যার সংখ্যাই বৃদ্ধি পায়নি, এর তীব্রতাও বেড়ে গেছে। ১৯৭০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অন্তত ১২ বছর দেশ অস্বাভাবিক বন্যার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যা ছিল প্রলয়ঙ্করী।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। দেশের মোট আয়তনের ৩২ ভাগই উপকূলীয় এলাকা (১৯টি জেলা), যেখানে প্রায় চার কোটি লোক বসবাস করে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কুতুবদিয়ার ২৫০ বর্গকিলোমিটার, ভোলার ২২৭ বর্গকিলোমিটার ও সন্দ্বীপের ১৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬৫ শতাংশ ইতোমধ্যে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে। ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ এক মিটার উঁচু হতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। এর ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮.৩ শতাংশ নিমজ্জিত হতে পারে। কেউ কেউ অবশ্য এক-পঞ্চমাংশ পানিতে ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ তালপট্টি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নোনা পানি ঢুকছে। শুষ্ক মওসুমেও বিভিন্ন নদীপথ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পর্যন্ত নোনা পানি ঢুকে পড়ছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ওই সব জেলায়। উপকূলীয় জেলাগুলো ছাড়াও বাগেরহাটের উত্তরাঞ্চলে, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ অন্য জেলাগুলোতেও নোনা পানি ঢুকে পড়েছে। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় আট লাখ ৩০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ২০১১-এর দুই দিনের এ সম্মেলনে কোস্টারিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া ফিগারস ওলসেনও যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ কার্বন নিঃসরণ। আমরা যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই, তারাই কথা বলছি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। শক্তিশালী দেশ এ বিষয়ে কোনো কথাই শুনতে চায় না।’ তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় ‘লো-কার্বন ইকোনমি’ গড়ে তুলতে আরও বহু পথ হাঁটতে হবে। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ নাসিম বলেন, ‘এবারের সম্মেলন ডারবানের জন্য বার্তা পাঠানো, কার্বন নিঃসরণ কমানো, অনুন্নত দেশগুলোকে সহায়তা করার বিষয়ে ফসল হবে।’ সিভিএফের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, ভুটান, কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, কেনিয়া, কিরিবাতি, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, নেপাল, ফিলিপাইন, সেন্ট লুসিয়া, তানজানিয়া, তিমুললেসথে, তুভালু, ভানুয়াতু, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে।
আখতার হামিদ খান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন