শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

উন্নয়নের চাপে খাল যখন নালা


ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল। অতীতের এমন চিত্র এখনও লক্ষ্য করা যায়। যেমন ‘উন্নয়নের চাপে খাল সব নালা’ শিরোনামের খবরটি। ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়: ‘উন্নয়নের’ নামে রাজধানীর খালগুলোকে সরু নালায় পরিণত করেছে ঢাকা ওয়াসা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় ১২টি খাল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন করছে সংস্থাটি। চার বছরে এ কাজে ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হলেও খাল উদ্ধার ও উন্নয়ন হয়নি। উল্টো খালে অবৈধ স্থাপনা বেড়েছে। প্রকল্পটির আওতায় খালের দুই পাড় কংক্রিট দিয়ে বেঁধে দেয়ার কাজ প্রায় শেষ। এর ফলে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। রাজধানীর চারটি খাল ঘুরে দেখা গেছে, খালগুলো মূল আয়তনের চেয়ে আরও সরু করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, বেশির ভাগ এলাকায় খালগুলোর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা রয়ে গেছে। কিছু স্থানে উচ্ছেদ অভিযান হলেও সপ্তাহ ঘুরতেই অবস্থা আগের মতোই হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টি হলে খাল  উপচে পানি আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ছে। আবার কংক্রিটের দেয়াল দেয়ায় বৃষ্টির পানি খালে গড়িয়ে পড়তেও পারছে না। ফলে খালপাড়ের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার মুখে পড়ছেন।
আসলেই ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিতেছেন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, ৭০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খাল উদ্ধারও হয়নি, উন্নয়নও হয়নি। উল্টো খালের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা বেড়েছে, বেড়েছে জলাবদ্ধতাও।
উল্লেখ্য যে, ২০-২৫ বছর আগেও রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৫০টি খাল ছিল। এখন ঢাকা ওয়াসার কাগজে আছে ২৬টি। আর কথিত উন্নয়নের তালিকায় আছে ১২টি। রাজধানীর খালগুলো নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণাতেও এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বুয়েটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে করা ওই গবেষণায় ঢাকার ওয়াসা খালের প্রস্থ সংকুচিত করে পাড় বাঁধাই করার সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খালগুলোর প্রস্থ অনেক কমিয়ে পাড় বাঁধাই করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রকল্পের আওতায় জিরানি ও বাসাবো খালের প্রস্থ ৬ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এগুলোর প্রস্থ অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিটার হওয়ার কথা। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে ওয়াসা খাল পুনরুদ্ধারের নামে যা করছে তা বন্ধ করা উচিত। প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেন, একটি খালের আয়তন বর্ষাকালে কত থাকে, অতিবৃষ্টির সময় খালের প্রস্থ কত থাকে- এসব কিছু বিবেচনা করে এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ধারণ করতে হয়। তারপর কী উন্নয়ন করা হবে তা ঠিক করে কাজ শুরু করতে হবে।
রাজধানীর খালগুলোর পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কাজে সাফল্য অর্জিত হয়নি। অথচ সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে, এক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকলে জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না এবং রাজধানীকেও দূষণমুক্ত করা যাবে না। রাজধানীর খালগুলো কারা দখল করছে এবং খালের দুই পাশে কারা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে তাতো সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। তারপরও অপরাধীদের দমন করা যাচ্ছে না কেন? আমরা একথা জানি যে, দুর্বল মানুষরা বা সাধারণ নাগরিকরা খাল দখল করে না, অবৈধ স্থাপনাও নির্মাণ করে না। এসব কাজ যারা করেন তারা বেশ শক্তিশালী। তবে তারা কি এতটা শক্তিশালী যে, সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না? এমন প্রশ্নের জবাব সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে। আর ওয়াসা তাদের কাজে কেন সফল হচ্ছে না সেই বিষয়টিও পরখ করে দেখা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads