শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫

সূচনা পর্বে দুর্নীতি


শুনতে কিছুটা অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু যে দুর্নীতির কারণে পুরো জাতিকেই মাঝে-মধ্যে লজ্জায় ডুবতে হয় তারও একটা সূচনা পর্ব রয়েছে। ব্যাপকভাবে চর্চিত বিষয় হিসেবে অনেক পুরনো হলেও বাংলাদেশে দুর্নীতির শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পরপর। ক্ষমতায় তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। সরকার এখনকার মতো আওয়ামী লীগের। স্বাধীনতা যুদ্ধে কার কি ভূমিকা ছিল, আওয়ামী লীগের কতজন আসলে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং বিশেষ কোন-কোনজন এমনকি আত্মসমর্পণ করে নিজের প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি সুকৌশলে পাকিস্তান রাষ্ট্রকেও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়েছিলেন- এ ধরনের কোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ বা পর্যালোচনা করার কোনো সুযোগ পাওয়া যায়নি। কারণ, ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতের বদৌলতে অনেকটা হুট করে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হলে কি হবে, ভূমিকা, যোগ্যতা ও অধিকার থাকুক না থাকুক, একই বন্ধুরাষ্ট্রের কল্যাণে ক্ষমতায়ও বসেছিল আওয়ামী লীগ। জাতির প্রধান নেতা হিসেবে যুদ্ধের সময় যাকে তার অবর্তমানে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল সেই সম্মানিত, জনপ্রিয় ও আদৃত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে রাতারাতি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্তি দিয়েছিলেন। শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবের সরাসরি নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম আমল।
দলের এবং নেতার আমলনামা অবশ্য সুন্দর বা নিষ্কলুষ হতে পারেনি। কারণ, আওয়ামী লীগের লোকজন রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই বলে নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্য নয়, লুটপাটের জন্য। সে লুটপাটও ছিল সীমা ছাড়ানো, যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবকে পর্যন্ত চিৎকার করে জানতে চাইতে হয়েছিল, তার নিজের ‘ভাগের কম্বলটা’ গেলো কোথায়? অন্য কারো তখন কথা বলার অবস্থা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই না পেরে অর্থাৎ বাধ্য হয়ে তার দলের লোকজনকে ‘চাটার দল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। সেই থেকে ‘চাটার দল’ এক ঐতিহাসিক গালিতে পরিণত হয়েছে! কথায় কথায় এর উল্লেখ করেন প্রধানত আওয়ামী লীগের বিরোধী দলগুলো।
আমার মতো সাধারণ অনেকের অভিজ্ঞতাও প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছিই ছিল। এক পরিচিতজনের কথা বলি। টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে তাদের বাসা। তার জন্ম সেখানে, বড়ও হয়েছেন সেখানেই। রাজনীতিতে ছিলেন মওলানা ভাসানীর অনুসারী, করতেন পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন। ১৯৬৯-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে টাঙ্গাইলে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ১৯৭০-এর নির্বাচন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে জড়িত থেকেছেন, অংশও নিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের দিনগুলোতে তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কারাগারে থাকতে ও মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছিল। এসব কারণেই যুবক তথা কলেজ ছাত্র হলেও টাঙ্গাইল শহরে যথেষ্ট পরিচিতি এবং কিছুটা প্রভাব ছিল আমার ওই পরিচিতজনের। কিন্তু অমন এক ছাত্রনেতাকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের মতোই রিলিফের ‘ভাগ’ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল। তাদের দু’ বাসা পশ্চিমের বাসায় থাকতেন একজন আওয়ামী লীগ নেতা। এলাকায় নবাগত ওই নেতার নাম ধরা যাক দুদু মিয়া। তার স্ত্রী আমার পরিচিতজনকে ভাই ডাকতেন, তিনি আবার ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ডাকতেন দুলা ভাই। যেহেতু বোন এবং শালা-দুলা ভাইয়ের ব্যাপার সেহেতু দৃশ্যত সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর। রোডের এবং আকুরটাকুর পাড়ার লোকজনও তাদের সম্পর্কে জানতো। অনেকে হাসি-রসিকতাও করতো।
যুদ্ধের তথা স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের ওই দুলা ভাই নেতা দুদু মিয়ার কাছেই তাদের পাড়ার জন্য বরাদ্দ করা রিলিফের মালামাল এসেছিল। কিন্তু আমার পরিচিতজন এবং তাদের পরিবারের একজনও ‘ভাগ’ পায়নি। এর কিছুদিন পর এসেছিল ‘ন্যায্যমূল্যের’ কাপড়। স্বাধীনতার পরপর সে সময় ‘ন্যায্যমূল্য’ এবং ‘ন্যায্যমূল্যের’ দোকান খুব ‘পপুলার’ হয়ে উঠেছিল। সাধারণ দোকানে যে জিনিসের দাম ২৫ টাকা সেটাই ন্যায্যমূল্যের দোকানে বিক্রি হতো দু’-তিন টাকায়। কিন্তু হাতে টাকা থাকলেও খোলা বাজার বা দোকান থেকে কিছু কেনার তখন সুযোগ ছিল না। কারণ, সরকারি ব্যবস্থাই এমন ছিল যে, কয়েকগুণ পর্যন্ত বেশি দাম না দিয়ে কিছু কেনা যেতো না। এজন্যই সবাইকে ‘ন্যায্যমূল্যের’ দোকানে গিয়ে ভিড় জমাতে হতো। কিন্তু দোকানে গেলে বা ভিড় জমালেই চলতো না। কারণ, প্রতিটি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত লোকজনকে। তারা শুধু ক্রেতাদের চেহারাই দেখতো না, বিক্রি করা বা না করাটাও তাদের অনুগ্রহের বিষয় ছিল। বেশিরভাগ পণ্যই চলে যেতো কালোবাজারে, বিক্রি হতো ‘ব্ল্যাকে’। আওয়ামী লীগের কল্যাণে ‘ন্যায্যমূল্যের’ মতো ‘ব্ল্যাক’ বা ‘ব্ল্যাকে’ কথাটাও সে সময় ‘জনপ্রিয়’ হয়ে উঠেছিল! শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এর অর্থ বুঝতো।
এবার এত কথা বলার কারণ জানানো যাক, দেখা যাক আমার ওই পরিচিতজনের অভিজ্ঞতা কেমন হয়েছিল। কিছুটা বন্ধুদের চাপে এবং কিছুটা প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য তিনি পাড়ার সেই আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় গিয়েছিলেন। কারণ, সরকারের প্রচারণা অনুযায়ী তার নামেও শার্টের একটা কাপড় বা পিস আসার ও থাকার কথা ছিল। এগুলো ‘জাপানী টেট্রন’ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু পরিচিতজন গিয়ে দেখেন, তার নামে আসা শার্টের পিসটি বিক্রি হয়ে গেছে! অর্থাৎ তার পরিচয় দিয়ে অথবা নাম ব্যবহার করে কেউ একজন সেটা নিয়ে চলে গেছে! অথচ আগেও বলেছি, আমার ওই পরিচিতজন নিতান্ত সাধারণ কেউ ছিলেন না। যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন, চেহারায়ও সবাই তাকে চিনতো। তার ওপর বাসাও ছিল একেবারে পাশাপাশি। সুতরাং ওই নেতা দুদু মিয়া চাইলে যার-তার পক্ষে পরিচিতজনের নামে বরাদ্দ হিসেবে আগত কাপড় নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং ‘চাটার দল’ বলে কথা! পরদিন দুদু মিয়ার স্ত্রী অবশ্য তার জন্য একাধিক শার্টের কাপড় নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। বিনামূল্যেই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমার পরিচিতজনের আম্মা একটাও রাখেননি। কারণ, সেটা তাহলে অন্য কারো ‘ভাগের’ কাপড় হতো!
এভাবেই স্বাধীনতার পরপর দুর্নীতির শুরু হয়েছিল। এর ব্যাপক কুফলের চিত্র দেখা যেতো বাজারে ও রাস্তাঘাটেও। একজন আনোয়ারের কথা মনে পড়ে (নামটা কল্পিত)। স্বাধীনতার আগে সে একটি সিনেমা হলের মাইক নিয়ে ‘চলিতেছে, চলিতেছে- রূপবাণীতে চলিতেছে’ বলে সিনেমার প্রচারের কাজ করতো। মানুষ তাকে বলতো সিনেমা হলের ‘মাইকম্যান’। স্বাধীনতার পর সেই আনোয়ারের হাতেও ৫৫৫Ñ ‘ফাইভ ফিফটি ফাইভ’ সিগারেট দেখতাম। উল্লেখ্য, সে সময় এই ব্র্যান্ডের সিগারেটই ছিল সবচেয়ে দামী এবং ধনী ও অভিজাত লোকজন ছাড়া কেউ সেটা খাওয়ার কথা কল্পনা করতে পারতো না। অথচ ‘মাইকম্যান’ আনোয়ার শুধু ৫৫৫ খেতোই না, ধরাতোও একটার পেছনে একটা। কারণ ততদিনে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে তার প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল। অন্যদিকে বিরোধী দলের লোকজনকে দেখতাম, মাত্র ১৫ পয়সার একটি স্টার সিগারেট কিনতেও তিনবার ভাবতেন। কোনোভাবে একটা কিনতে পারলেও খেতেন দু’-তিনজন মিলে। একই চিত্র দেখা যেতো কাঁচা বাজারেও। বিশেষ করে বড় সব মাছই চলে যেতো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যাদের ‘চাটার দল’ না বলে পারেননি।
বলা দরকার, সবকিছুর পেছনে ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি-কৌশল ও কর্মকা-। রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে দলটির কোনো পূর্বচিন্তা ও পরিকল্পনা তো ছিলই না, সেই সাথে উদ্দেশ্যের মধ্যে কেবলই লুটপাট ছিল বলেই রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেও সরকার ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছিল। উদাহরণ দেয়ার জন্য ‘জাতীয়করণের’ কথা বলা যায়। সরকার পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া শিল্প-কারখানা এবং ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোকে ন্যাশনালাইজ বা জাতীয়করণ করেছিল। মালিকরা বিতাড়িত হয়ে চলে যাওয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করা তথা রাষ্ট্র বা সরকারের মালিকানায় নিয়ে আসা ছাড়া আসলে কোনো উপায়ও ছিল না। কিন্তু মুজিব সরকার একেই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত ও জাহির করেছিল। সরকারের শিল্পনীতিও ছিল ধ্বংসাত্মক এবং হাস্যকর। কারণ, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শোষক পুঁজিপতিদের বৃহৎ শিল্প-কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত করার পাশাপাশি জাতীয় পুঁজি ও শিল্পের বিকাশ ঘটানোর ব্যবস্থা নিতে হয়। অন্যদিকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সিলিং করেছিল মাত্র তিন লাখ টাকা, যা দিয়ে এমনকি একটি লুঙ্গি বা গেঞ্জির কারখানাও তখন স্থাপন করা যেতো না। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো, সরকার ১৯৭২ সালেই ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত সিলিং-এর পরিমাণ বাড়িয়েছিল। ১৯৭৪ সালে এই পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল তিন কোটি টাকা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ততদিনে আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতে টাকার পাহাড় জমেছিল বলেই সরকার সিলিং-এর পরিমাণও বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল। অর্থাৎ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়, ‘চাটার দল’-এর জন্য পুঁজি বিনিয়োগের আয়োজনই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য।
কথাটা শুনে এমন ভাবনা আবার ঠিক নয় যে, কেবলই রিলিফের এবং ‘ন্যায্যমূল্যের’ পণ্য ‘ব্ল্যাকে’ বিক্রি করেই ‘চাটার দল’ এত বিপুল টাকার মালিক হয়েছিল। মাঝখানে খুবই ফলপ্রসূ একটি পন্থা হিসেবে ছিল জাতীয়করণকৃত শিল্প-কারখানা এবং ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির অঘোষিত মালিকানা। এসব প্রতিষ্ঠানে ‘প্রশাসক’ করা হয়েছিল শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনকেই। প্রশাসকদের প্রত্যেকেই এক-একজন নব্য মালিকে পরিণত হয়েছিলেন। আপত্তি উঠতো না তারা যদি যার যার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্যকে লাভজনক অবস্থায় রাখার চেষ্টা চালাতেন। অন্যদিকে গোড়ায় গলদ ছিল বলেই ‘প্রশাসক’রা কেবলই নিজেদের আখের গুছিয়েছিলেন। ফলে লাটে উঠেছিল সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আদমজীর মতো বিরাট বিরাট শিল্প-কারখানার বারোটা আসলে ওই ‘চাটার দল’ই বাজিয়ে গেছেন। নিজেরা টাকার পাহাড় বানালেও তারা কিন্তু সে টাকাকে শিল্প বা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করেননি, যার ফলে জাতীয় পুঁজির সুষ্ঠু বিকাশ ঘটতে পারবে। বস্তুত এভাবেই আওয়ামী লীগের ‘চাটার দলের’ কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের শিল্প-কারখানা।
রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্য সব খাতেও একই ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানো হয়েছিল। এর ফলে মানুষ আয়-রোজগারের কোনো পথ পায়নি। পণ্যমূল্যের চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, মূল্য বেড়েছে এমনকি ২২০০ বা দুই হাজার দুইশ শতাংশ পর্যন্ত। সব মিলিয়েই অনিবার্য হয়েছিল ১৯৭৪ নালের দুর্ভিক্ষ। হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে সে দুর্ভিক্ষে। বিস্তারিত সে আলোচনায় যাওয়ার পরিবর্তে বর্তমান পর্যায়ে শুধু এটুকু বলে রাখাই যথেষ্ট যে, পদ্মা সেতুর মতো  কোনো কোনো প্রসঙ্গে যে দুর্নীতি নিয়ে এত হইচই হয়ে থাকে তার সূচনা ঘটেছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর। তখনও ক্ষমতায় আওয়ামী লীগই ছিল। পার্থক্য হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যেখানে ‘চাটার দলের’ ওপর দোষ চাপিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে কোনো ‘নব্য চাটার দল’  আছে তা বলতে পারছেন না।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads