সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০১৫

পুলিশের এমন কাণ্ড বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়


‘রক্ষকই ভক্ষক’ প্রবাদের সাথে আমরা পরিচিত। তাই বলে পুলিশ ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে- এমন চিত্র দেশের জনগণ দেখতে চায় না। কারণ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনই তো পুলিশের কর্তব্য। তবে দুঃখের বিষয় হলো, দেশের মানুষ না চাইলেও ভক্ষকের ভূমিকায় পুলিশের তৎপরতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৩ জুলাই তারিখে আমাদের সময় পত্রিকার একটি শিরোনাম ‘বাস থামিয়ে ১৯ লাখ টাকা ডাকাতি করলো পুলিশ।’ খবরটিতে বলা হয়: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিআরটিসির বাস থামিয়ে পুলিশের এক এসআইয়ের নেতৃত্বে এক ব্যবসায়ীর ১৯ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এসআইয়ের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি মিরপুরের কাফরুল থানায় কর্তব্যরত ছিলেন। অন্য এলাকায় গিয়ে টাকা লুটের ঘটনায় শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) একটি দল এসআই রফিকুল ইসলাম ও লুটে সহায়তাকারী মাইক্রোবাস চালক লুৎফরকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারায়ণগঞ্জের ঝুট ব্যবসায়ী মোঃ নাজমুল যাত্রাবাড়ী থানায় ডাকাতির মামলা করেছেন। গত রোববার গ্রেফতারকৃত এসআই রফিকুল ও মাইক্রোবাস চালককে আদালত হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে আনা হয়।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাব পরিচয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে অপহরণ, লুট, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অপরাধের ঘটনা পুলিশ বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। কিছু অভিযানে পুলিশ পরিচয়ে অপরাধচক্র ধরা পড়লেও তারা ভুয়া পুলিশ সদস্য বলে সনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এবার আসল পুলিশ ধরা পড়েছে। এতে পুলিশ বিভাগের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসআই রফিকের এই অপকর্মের ফলে ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করা অপরাধী চক্রের জন্য সহজ হয়ে উঠবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
বাস ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে একশ্রেণীর পুলিশ। আশঙ্কার বিষয় হলো, অপরাধের সাথে পুলিশের যুক্ত হওয়ার মাত্রা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ২২ জন পুলিশ ও তাদের ৮ জন সোর্স মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। এরাসহ ২১ জন মাদক ব্যবসায়ীর একটি সিন্ডিকেট মিলেমিশে মাদকের ব্যবসা করছে।  আর ২১ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে সরকারি দলের লোকজন থাকায় মাদক ব্যবসা রোধ করা যাচ্ছে না। মাদক ব্যবসায় পুলিশ জড়িত হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে অপরাধীদের দমন করবে কে? আমরা জানি, পুলিশ বিভাগে কর্মকা- পরিচালনার জন্য আইন-কানুন ও বিধি বিধান রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বিধি বিধান মেনেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোনটা করণীয়, কোনটা বর্জনীয় সেই ধারণাও পুলিশকে দেয়া হয়। আর পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমিও রয়েছে। এত কিছুর পরও পুলিশ সদস্যরা কেন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে? পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন : পুলিশের রিক্রুটমেন্টে কি ত্রুটি আছে, প্রশিক্ষণে কি ত্রুটি আছে, পুলিশ প্রশাসন কি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? আর অনেকেই তো বলছেন, দলীয়করণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ ঠিকমত কাজ করতে পারছে না। বিষয়গুলো সরকারের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নইলে দেশের ও জনগণের ক্ষতির মত্রা আরও বেড়ে যাবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads