শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৫

দখল ও ক্ষমতার রাজনীতি

মতাসীনদের পছন্দ জনগণের টাকা, জনগণের দুর্ভোগ এবং সরকারি জমি। যে কারণে নিজেদের মতো করে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে, চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং সরকারি জমি দখল করে দলের অফিস গড়ার কার্যক্রম। ‘সরকারি দল’ বলতে এখন বুঝতে হবে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, তরিকত ফেডারেশনসহ ৯টি দলকে। আমাদের রাজধানীর শত শত একর জমি এ দলগুলোর দখলে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ভাঙিয়ে একের পর দখলবাণিজ্যে নীলক্ষেতের বাণিজ্য বিতান মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, গাউছুল আজম মার্কেট, নীলক্ষেত স্কয়ার মার্কেটসহ প্রায় ২০টি মার্কেট দখলে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও জোট, এমনকি সাথে অন্যান্য দলের কিছু লোক। পাশাপাশি সেগুনবাগিচায় ১৪ দলের বাম সংগঠনের কার্যালয় নির্মাণের জন্য জমি দখল করা হয়েছে পার্টির নেতৃবৃন্দের তত্ত্ব¡াবধানে। রাজধানীর লালবাগের জগন্নাথ সাহা রোডের পুষ্প সাহার তারাবটি পুকুর ভরাট করে গড়ে উঠেছে শ্রমিক লীগের কার্যালয় ও মার্কেট। মহাখালী রেলগেট ঘেঁষে বিপজ্জনক স্থানে গড়ে উঠেছে ২০টি দোকান। এগুলোর ঠিক ওপরেই ফাইওভার। রেলগেট পার হয়ে উত্তর দিকে মোড় নিলেই চোখে পড়বে দু’টি সংগঠনের অফিস। এর একটির সাইনবোর্ডে লেখাÑ ‘২০ নং ওয়ার্ড ও বনানী থানা যুবলীগ’, অন্যটিতে লেখা আছে ‘ঢাকা বিভাগ শ্রমিক লীগ, বনানী থানা’। যুবলীগের সাইনবোর্ডের ওপরের এক দিকে ছবিতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী, আরেক দিকে যুবলীগ উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি। অফিস দু’টি ঘেঁষেই দোকানগুলোর অবস্থান। সব স্থাপনাই রেলের জমির ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। দোকানগুলো বসিয়েছেন অফিস দু’টির নিয়ন্ত্রণকারীরা। অফেরতযোগ্য অগ্রিম টাকাসহ দৈনিক ভাড়া দিতে হয় দোকানদারদের।
এমন অবস্থা শুধু মহাখালীতে নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই সরকারি জমি দখল করে মতাসীন দলের অফিস নির্মাণ করা যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর থেকেই শুরু হয়েছে এ তাণ্ডব। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের মানুষ বারবার দেখেছে, রাজনৈতিক সরকার মতায় আসার সাথে সাথেই মতাসীন দল ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় অথবা নেতা-নেত্রীর নামে সরকারি জমিতে সাইনবোর্ড টানানোর হিড়িক পড়ে। মতার পালাবদলে পাল্টে যায় সাইনবোর্ডের শিরোনামও। কিন্তু এভাবে আর কত দিন?
ছাত্ররাজনীতি যারা করছেন, তাদের অনেকে ছাত্রজীবনেই হয়ে যাচ্ছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। এর পেছনেও রয়েছে দখলের রাজনীতি। পিছিয়ে নেই ছাত্রমৈত্রীর একাধিক সাবেক সভাপতি। আমাদেরকে বারবার রাজনীতির মাঠে থেকে বুর্জোয়ার বিপরীতে থাকার জন্য মন্ত্র শেখালেও জাসদ ছাত্রলীগের নিউমার্কেটের কার্যালয়টি কিন্তু তাদের নেতা দখলবাণিজ্য করেই জুুটিয়ে দিয়েছেন। এভাবে জনগণের সম্মতি না থাকলেও দেশকে কোনো দখলবাজ সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তারা এখন নিরুপায়।
রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতার রাজনৈতিক চর্চা শুরু না করলে সোচ্চার হবে বাংলাদেশের সচেতন নতুন প্রজন্ম। তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা যে কত বেশি; তার প্রমাণ দিতে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বায়ান্ন ও একাত্তরকে এবং প্রতিটি আন্দোলনকে। আন্দোলনের হাত ধরে রাজনীতিতে তরুণেরা বারবার ফিরে এসেছে স্বকীয়তা নিয়ে। ফিরে আসার যদি প্রয়োজন হয় আবারো; তাহলে এবার হবে বাংলাদেশকে লোভী-দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসী-খুনি-চাঁদাবাজদের কবল থেকে মুক্তির জন্য নিবেদিত... 
মোমিন মেহেদী

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads