বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শ্রমিক দিবস, জাগ্রত হোক মানবতা


শ্রমিক তার রক্ত পানি করা বিন্দু বিন্দু ঘামে গড়ে তোলে এক একটি ইমারত। তাদের তৈরি করা বস্ত্রে আমরা হয়েছি সুসভ্য, উৎপাদিত ফসল করেছে পুষ্ট। পাড়ি দিচ্ছি পৃথিবীর সীমারেখা, ছুঁয়ে আসছি সপ্তম আসমান। আমাদের জীবনের প্রতিটি সেক্টরে আছে তাদের রক্ত মাখা অবদান। দেশ গঠনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি এদেরও আছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। শ্রমিকরাই দেশের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। শ্রম ও উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে তারা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে, দেশের অগ্রগতিকে আরো একধাপ এগিয়ে নেয়। এত কিছুর পরও তারা আমাদের কাছে নিগ্রহ ছাড়া আর কিছুই পায় না। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক সবার কাছে অবহেলিত এই দেশ গড়ার কারিগররা। বড়রা যা করে, ছোটরা তা অবিকল অনুকরণ করে। ছোট থেকেই তাদের মাথায় প্রবেশ করানো হচ্ছে শ্রমিকরা অন্য জাতের মানুষ, আমাদের থেকে আলাদা। যে গৃহপরিচারিকা ছোট থেকে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছে সেই শিশুই তাকে এই বুয়া.... বলে সম্বোধন করছে। তাদের শ্রমকে অর্থের মাপকাঠিতে বিচার করা হচ্ছে।  স্নেহ ভালবাসার কি মূল্য দেয়া সম্ভব? কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া তথাকথিত শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের কাছে এরা তো মানুষই না। অথচ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কুলি-মজুর প্রত্যেক শ্রমিকের অবদান রয়েছে। বড় বড় আমলারা তাদের অধীনস্ত কর্মচারীর সাথে অমানবিক আচরণ করে। যা খুবই দুঃখব্যঞ্জক। এতো গেল তাদের মর্যাদার দিক। কথায় আছে, ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’। সম্মান দূরে থাক এত অমানুষিক পরিশ্রম করেও তারা পায় না যথার্থ মজুরী। হিমশিম খেতে হয় সংসার চালাতে। তাই ছোট্ট সন্তানটিকেও নামিয়ে দেয় শ্রম বিক্রি করতে। শ্রমিকের সন্তান শ্রমিক হবে এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। কার্ল মার্কস বলেছেন-“মানব সমাজের ইতিহাস মূলত শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস”। পুঁজিবাদী সমাজ আস্তে আস্তে পুরো সমাজটাকে ভেঙে চুরে তাদের মনমতো সাজিয়ে নিয়েছে। সেখানে সর্বনিম্ন স্তরে আছে শ্রমিকরা।
বহুতল ভবনে উঠতে গেলে অনেকগুলো সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। যে সিঁড়িকে ভর করে উপরে উঠলেন, সে সিঁড়িকেই যদি ভেঙে ফেলেন তাহলে আর কি হলো? সেখান থেকে যদি একবার নিচে পড়ে যান, পরবর্তীতে সেখানে আবার কি করে উঠবেন ভেবে দেখেছেন? যারা কাউকে উপরে ওঠাতে পারে, নিচে নামানোর মন্ত্রটাও নিশ্চয় তাদের জানা আছে। শ্রমিকরা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সিঁড়ি। তাদেরকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অসম্ভবই শুধু নয়, দুঃসাহসেরও ব্যাপার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। যে শ্রমিকরা শুধু দেশের নয়, হাজার হাজার বিদেশীদের বস্ত্রের সংস্থান করছে, বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় তারাই বস্ত্রহীন। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তাদের কল্পনাতীত। যে পারিশ্রমিক তাদের দেয়া হয় তাতে খাবার যোগাড় আর একটু মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করতেই টানাপোড়েন শুরু হয়। ভাল পোশাক তাদের কাছে আকাশ-কুসুম কল্পনা। পূর্বে শ্রমিকদের দিয়ে ১০/১২ ঘণ্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করিয়ে নেয়া হতো। এখনো আমরা এ অবস্থা থেকে বের হতে পেরেছি বলে মনে হয় না। বর্তমানে ৬-৮ ঘণ্টা কাজের প্রচলন থাকলেও কৌশলে তাদের দিয়ে করিয়ে নেয়া হয় এর চেয়ে অধিক কাজ। বিশ্ব যেখানে ছন্দের তালে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে, আমরা সেখানে শ্রমিক বৈষম্য নিয়ে ব্যস্ত। রোড কনস্ট্রাকশন, গার্মেন্টস, কৃষি, চা, পরিবহন সেক্টরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নারীর কোমল হাত পোশাক শিল্পে অপরিহার্য। অথচ মজুরীর বেলায় বৈষম্য। যে হাত দিয়ে সুস্বাদু খাবার পেতে চাইলেন, সেই হাতটাই অপরিষ্কার রাখলেন। লাভটা কি হলো? কোন না কোন দিন ডাইজেস্টের সমস্যা তো হতেই পারে। যেখানেই নারী শ্রমিক সেখানেই মজুরী বৈষম্য। দেশের উন্নয়নটা হবে কি করে? আমার বোধগম্য নয়। নারীই প্রথমে সবার অন্নের ব্যবস্থা করেছে। কৃষি কাজের সূচনা এই নারীদের হাতেই শুরু হয়েছিল। তখন অবশ্য শ্রম বৈষম্য ছিল না। শিল্প বিপ্লব থেকেই নারী-পুরুষ বৈষম্য তৈরি হয়েছে। আমরা যতই নিজেদের আধুনিক বলে পরিচয় দিচ্ছি- ততই নারী পুরুষের বৈষম্য বাড়িয়ে তুলছি। আর এই বৈষম্যই এক সময় নারীকে ঘরে আবদ্ধ করতে/থাকতে অনুপ্রাণিত করেছে। ১৪ এপ্রিল’১৫ পাকিস্তনের নারী গৃহ পরিচারিকারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় “ট্রেড ইউনিয়ন” গঠন করেছে। যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। এই নারীদের আমাদের মত বিশ্বের লক্ষ কোটি নারীর পক্ষ থেকে স্যালুট জানাচ্ছি। “কার পেড়ে আনা আম, কে খায়”-শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কথাটা যে কতটা বাস্তবসম্মত পর্যলোচনা না করলে কথাটার মর্ম সহজে অনুধাবন করা যাবে না। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে “ট্রেড ইউনিয়ন” বা “শ্রমিক সংঘ” গঠন করা হয়। এই সংঘগুলোর মাধ্যমে দাবিও পেশ করে তারা।  দাবি আদায় আর হয়ে ওঠে না। কারণ ভক্ষক কোন দিনই রক্ষক হতে পারে না। খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে শ্রমিক সংঘগুলো শ্রমিকরা গঠন করে ঠিকই। তবে এর নেতৃত্ব থেকে যায় রাজনৈতিক নেতা, মালিকপক্ষ অথবা আমলাদের হাতে। তাই শ্রমিকের আহাজারি কর্তৃপক্ষের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। যে দুধ-ভাতে অভ্যস্ত সে কি করে বুঝবে না খেয়ে থাকার জ্বালা? যে শ্রমিকরা আমাদের জন্য তাদের সুখ শান্তি বিসর্জন দেয় তাদের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত নেই। এত কিছুর পরও কর্মক্ষেত্রে নেই তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ। প্রত্যেকটা শিল্প কারখানা যেন এক একটা মৃত্যুফাঁদ। যেখানে প্রতিনিয়ত তাদের জন্য ওঁৎ পেতে আছে বিভীষিকাময় মৃত্যুর হাতছানি। রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। সময়মতো মজুরী বুঝে পাওয়া শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (স) বলেছেন, “তোমরা শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” শুধু ইসলাম নয় সকল ধর্মেই শ্রমিকের মজুরী প্রদান সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অথচ এখনো শ্রমিকের মজুরী যথাসময়ে পাওয়ার জন্য আন্দোলন করতে হয়। উৎসবগুলিতেও দেখা যায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের  দাবিতে অনশন করতে হচ্ছে। বছরের হাতে গোনা কয়েকটি দিনও তারা অধিকার বঞ্চিত। অথচ মালিকপক্ষ কিভাবে উৎসবটাকে উপভোগ করবে, কোথায় বেড়াতে যাবে সে পরিকল্পনার কথা শ্রমিকদের সামনে বলতে ভুল করে না। এভাবে চলতে থাকলে এই নিরীহ শ্রমিকরাই আবার জেগে উঠবে। যেমন উঠেছিল ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে। সেদিন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের  দাবিতে তিন লক্ষাধিক জমায়েত শ্রমিকদের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ৬ জন শ্রমিক নির্মমভাবে নিহত ও শতাধিক আহত হয়। গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে শ্রমিকরা। তাদের অব্যাহত প্রতিবাদ ধর্মঘটের মুখে  দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। যদি আবারো এমন হয় সেদিন তাদের পাশে থাকবে সর্বস্তরের মানুষ। শোষকরা হয়ে উঠবে কোণঠাসা। পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না। সুকান্তের ভাষায় শ্রমিকরা বলে উঠবে-
তার চেয়ে পোষমানাকে অস্বীকার করো,
অস্বীকার করো বশ্যতাকে।
চলো, শুকনো হাড়ের বদলে
সন্ধান করি তাজা রক্তের,
তৈরি হোক লাল আগুনে ঝলসানো আমাদের খাদ্য।
শিকলের দাগ ঢেকে গজিয়ে উঠুক
সিংহের কেশর প্রত্যেকের ঘাড়ে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪, ১৫, ৩৪, ৩৭ ও ৩৮ অনুচ্ছেদে শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট করা হয়েছে। তবু আজ শ্রমিকরা তাদের অধিকার বঞ্চিত। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “কর্মের অধিকার বিবেচনা করে যুক্তিসংগত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার: যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।” অন্যদিকে সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ বলছে- “সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ: এবং এই বিধান কোনভাবে লংঘিত হইলে তাহা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে”। একইভাবে সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও দন্ড মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। যেমনিভাবে জাতিসংঘ সনদের ২(১) ও ৪ অনুচ্ছেদে নির্যাতন নিষ্ঠুর অমানবিক ও লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও দন্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সকল দেশকে এ সংক্রান্ত আইন তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আমরা প্রায়ই দেখি উচ্চবিত্ত শ্রেণী কিভাবে তাদের গৃহ পরিচারিকাসহ অধীনস্তদের নির্যাতন করছে। আজ পর্যন্ত কোন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে দেখি না। আর সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার ফলেই এ ধরনের ঘটনা একের পর এক বেড়েই চলেছে।
উপমহাদেশে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৮৮১ সাল থেকে কিছু আইন প্রণয়নের সূত্রপাত হয়। ফ্যাক্টরী আইন (১৮৮১) শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আইন (১৯২৩) ট্রেড ইউনিয়ন আইন (১৯২৬) শ্রম বিরোধ আইন (১৯২৯) মজুরী প্রদান আইন (১৯৩৬) শিশু নিয়োগ আইন (১৯৩৮) ও মাতৃত্ব সুবিধা আইন (১৯৩৯)। ১৯৪৭ সালের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকার এগুলি পরিমার্জন করে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭২ সালের প্রথমদিকে জারিকৃত এডপটেশন অব বাংলাদেশ ল’জ অর্ডার (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৮) অনুসারে বাংলাদেশে এসব আইনের অধিকাংশই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
১৯৬৫ সালের দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইনে পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিক প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন, কিশোরের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের জন্য ১ দিন বেতনসহ ছুটি পওয়ার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া পূর্ণ বেতনে বার্ষিক ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ও ১৪ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটির বিধান রয়েছে। এ বিধানটি কেউ মানা তো দূরের কথা জানেন বলেও মনে হয় না।
২০১৩ সালে সংশোধিত শ্রম আইনে নারী শ্রমিকদের ৪ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরসরি ব্যাংক একাউন্টে দেয়া, কোম্পানীতে চাকরির মেয়াদ ৯ মাস হলেই ওই কর্মকর্তা কর্মচারী সেই প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী বলে বিবেচিত হওয়া, যে প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিক রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে বীমা বাধ্যতামূলক। এই বীমা  দাবি শ্রমিকের মৃত্যুর ৯০ দিনের মধ্যে মালিক আদায় করবেন। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার শ্রমিক আছে তাদের স্থায়ী স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করা, ৫শ’ শ্রমিক থাকলে সে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা ছাড়াও প্রসূতি কল্যাণে বাধা দেয়া মালিকের জরিমানা  ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আইন পাশের ২ বছর পার হতে চললেও আজ পর্যন্ত কোন মালিকের জরিমানা হতে শোনা যায় নি। তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে এমন সাধ্য ক’জন শ্রমিকের আছে? এক ঘাড়ে তো আর শ্রমিকদের দুই মাথা থাকে না! এ জন্যই দরকার ট্রেড ইউনিয়ন। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন’’ গঠন করতে গিয়ে মালিকপক্ষের কাছে শ্রমিকদের নিগৃহীত হতে হয় সবচেয়ে বেশি।
আমরা চাই এমন একটা দেশ গড়তে যেখানে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে অত্মমর্যাদার সাথে বসবাস করবে। সুন্দর নিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি পেলে শ্রমিকরা দিতে চাইবে তাদের সর্বোচ্চ মেধা-শ্রম। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে এগিয়ে যাবে দেশ। গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন সমাজ। আমরা হয়ে উঠব সমৃদ্ধশালী। এবারের মে দিবসে এটাই হোক আমাদের শপথ। 
সিনথিয়া পারভীন কাকলী 

বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আবারও গণতন্ত্রের পরাজয়


স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও আমাদের সরকার জনগণকে ভোটের অধিকার দিতে পারলো না। রাজনীতির এমন বাতাবরণে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, স্বাধীনতার লক্ষ্যগুলো কেন পূরণ হচ্ছে না। আসলে সাম্য, ন্যায়, মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য নৈতিক মেরুদন্ড দরকার। তেমন মেরুদন্ডের অভাবেই আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সংকট বাড়ছে। ২৮ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই নির্বাচনে তো সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তারপরও সরকার, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবদানে এমন একটি নির্বাচন হলো, যা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করলো। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় বা কোনো নির্বাচনই যে এখন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, এমন বক্তব্যের প্রতি মানুষের সমর্থনের হার আরো বেড়ে গেল। ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কেমন কলঙ্কজনক হয়েছে তা পত্র-পত্রিকার শিরোনাম থেকেও উপলব্ধি করা যায়। মানব জমিন পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি’। আর প্রথম আলো পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছে, ‘জিতল আ’ লীগ হারল গণতন্ত্র’। প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে যে শঙ্কা ছিল শেষ পর্যন্ত তাই সত্যি হলো। প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩ মেয়রপ্রার্থী বিজয়ী হলেও গণতন্ত্রের পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জাতীয় রাজনীতিতে ঝড় তোলা এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের খেলায় গণতন্ত্র হেরেছে। সরকার সমর্থকরা বিরোধীদের বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রের কাছেই যেতে দেননি। অনেকটা ফাঁকা মাঠে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় উন্মুক্ত কারচুপি করেছেন তারা। আর বিরোধীদল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ভোট শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন। পরিতাপের বিষয় হলো, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মধ্যদিয়ে যে দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করলো, স্বাধীন সে দেশটিতে ৪৪ বছর পরেও আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মত সক্ষমতা অর্জন করতে পারলাম না। এমন ব্যর্থতার পটভূমিতে আমাদের সরকার, সরকারি দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের দায়িত্বকে কতটা উপলব্ধি করতে পারছেন তা জানি না।
‘জালভোটের সহযোগী পুলিশ’ শিরোনামটি আমাদের দুঃখের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ২৯ এপ্রিল প্রথম আলোয় মুদ্রিত রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জালভোট দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকায় ছিল পুলিশ। পুলিশ নিজে জালভোটের সহযোগিতা করেছে, কোথাও সরাসরি জালভোট দিয়েছে, আবার জালভোট প্রতিরোধে বাধাও দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের সময় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ২০টির বেশি কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আরো অবাক ব্যাপার হলো, নির্বাচনে অনিয়ম, জালভোট ও কারচুপির ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা মোটেও লজ্জিত নন। বরং তাদের এসব অপকর্মের চিত্র তুলে ধরাও যেন মস্তবড় অপরাধ। ফলে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বাধা এবং হামলার মুখে পড়তে হয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের। যেখানেই সুযোগ পেয়েছে সেখানেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ক্যামেরা ভাংচুর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্র ছাড়া করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত ৬ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে। ভয় দেখিয়ে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে আরো ১৫ জনকে। প্রথম আলোতে মুদ্রিত রিপোর্টে আরো বলা হয়, ঢাকার বাসাবো উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় গুলীবিদ্ধ হয়েছেন একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক ইয়াসিন হাসান রাব্বি। প্রথম আলোর অন্তত ৮ জন সাংবাদিক হামলা ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। সরকার সমর্থক নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও সাংবাদিকদের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। নির্বাচনের এমন চিত্র অবলোকন করে অনেকেই বলছেন, সেনা মোতায়েন না করার মাজেজাটা এখন বোঝা যাচ্ছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার যে অনিয়ম, কারচুপি ও সন্ত্রাসী ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে তার ভিত্তি একদিনে নির্মিত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের আদর্শ চর্চার বদলে ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সার যে দৌরাত্ম্য চলেছে তারই বিষফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে এখন নির্বাচনসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে। শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ছাত্র ও যুবসমাজ রাজনৈতিক অঙ্গনে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারতেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষাঙ্গনের চিত্রটা কেমন?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ নেতা আরজ মিয়া। এদিকে আরজ মিয়াকে আটক করলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার অপারেশন কর্মকর্তা মো. রফিক জানান, উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল বডি ছাত্রলীগ নেতা আরজ মিয়াকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে পুলিশের কাছ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল আরজ মিয়াকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘটনায় আরজ মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত রোববার বিকেলে মামলা করেছেন লাঞ্ছিত শিক্ষিকা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়- আরজ মিয়া তাকে ধাক্কা দেয়, জামা ধরে টান দেয় ও চড় মারে। শিক্ষিকা লাঞ্ছিত করার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ নেতার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ভিসির ভবন ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা। ভিসির ভবন ঘেরাও এর সময় শিক্ষার্থীদের ব্যানার কেড়ে নেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য যে, প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘যৌন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’।
শিক্ষিকা লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আরজ মিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে এইসব পদক্ষেপের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা তেমন সুখকর নয়। ক্ষমতার দাপটে অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যায় এবং বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ভাবতে অবাক লাগে, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে একজন ছাত্রনেতা কী করে শিক্ষিকার জামা ধরে টান দেয় এবং চপেটাঘাত করে? এমন ছাত্রকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোন সাহসে অপরাধী ছাত্রকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়? পুলিশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে এতটা অসহায় কেন? দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের কথা কি পুলিশ ভুলে গেছে? পেশাগত অঙ্গীকারের চাইতেও রাজনৈতিক আনুগত্য কি এখন পুলিশের কাছে বড় হয়ে উঠেছে? এই যদি হয় অবস্থা তাহলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কেমন করে? অথচ সুশাসনের অভাবেই জনদুর্ভোগের মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকার তো সুশাসনের কথা বলে, দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতায় জনমনে প্রশ্ন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে কি অঙ্গীকারের কথা ভুলে যেতে হয়?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে অন্ধকারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তো ছাত্রনেতাদের আলো ছড়াবার কথা। এই অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাক্সিক্ষত পরিবেশ রক্ষায় কেমন ভূমিকা পালন করছেন? ২৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় মুদ্রিত খবর থেকে উপলব্ধি করা যায়, শিক্ষার আলো ছড়াবার পরিবর্তে ভিসি মহোদয় রাজনীতির পোশাক পরে ভোট-ভিক্ষায় ব্যস্ত। খবরটিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে ভোট চেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মীজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘সাঈদ খোকনকে ইলিশ মার্কায় ভোট দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিন’। গত রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক ভবনের সামনে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিসি ও যুব লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য মীজানুর রহমান দাবি করেন, শেখ হাসিনা তাকে ফোন করে সবার কাছে সাঈদের পক্ষে ভোট চাইতে বলেছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিনি ভোট চান। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম এমপি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এম্বুলেন্স কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ছাত্রলীগের, আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ- আমরা আমরাই তো’। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যে চিত্রটি স্পষ্ট হলো, তাতে সহজেই উপলব্ধি করা যায় ভিসি মীজানুর রহমান শিক্ষা সংক্রান্ত তার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের বদলে এখন দলীয় রাজনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। একজন ভিসি যখন স্পষ্টভাবে দলীয় রাজনীতি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে বলেন, তখন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কেমন হবে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। এমন ভিসির প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তো বেপরোয়া হয়ে উঠবেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা যদি এভাবে কাজ করে যান তাহলে আমাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? বিষয়টি ভেবে দেখার মত শুভবুদ্ধির উদয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হবে কী?
আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন ও শিক্ষাঙ্গনের চিত্র আশাপ্রদ নয়। এর দায় আমাদের সরকার ও শীর্ষ রাজনীতিবিদরা এড়াতে পারেন না। কিন্তু দায় ও দায়িত্বটা তারা আদৌ অনুভব করেন কিনা সেটা জাতির সামনে এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজনীতিবিদদের আচরণ দেখে মনে হয়, নির্বাচন ও ক্ষমতার চেয়ারটাই যেন তাদের জন্য সবকিছু। এ দুইয়ের মাঝে তারা অনেক কথা বলেন। কিন্তু তারা যা বলেন তা করেন না। আর যা করেন তা বলতে চান না। এমন অবস্থায় দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। ফলে জনগণের দুঃখের মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণ এখন এ বিষয়টি ভালভাবেই উপলব্ধি করছে যে, নির্বাচন ও গদি দখল তাদের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইশতেহার ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আদর্শচর্চা, নৈতিক মেরুদন্ড ও যোগ্যতার অভাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে- নানা ছলনা ও কারচুপির মাধ্যমে যে কোনো প্রকারে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পারঙ্গমতা অর্জন করলেও ইশতেহার কিংবা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তারা অক্ষম। এমন অক্ষম রাজনৈতিক দল কিংবা সরকার দিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ সম্ভব নয়। ফলে হতাশা ও ক্ষোভের মধ্যেই এখন জনগণের বসবাস। জনগণের ক্ষোভ ও ঘৃণা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কোনো সুখকর বিষয় নয়। এবারের সিটি নির্বাচন জনগণের ক্ষোভ ও ঘৃণার মাত্রা যে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তা সংশ্লিষ্ট মহল উপলব্ধি করেন কি? তবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ উপলব্ধি মানুষকে সংশোধনের পথে ফিরিয়ে আনতে পারে।

মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আরেকটি ৫ জানুয়ারি


বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক দল ও সকল মহলের আশংকাই শেষ পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম- এই তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ভন্ডল করে ছেড়েছেন। তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই বিশেষ করে ২০ দলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দেয়ার লক্ষ্যে দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার ও পুলিশের ধাওয়ার মুখে রাখার যে কর্মকান্ড শুরু হয়েছিল, গতকাল অর্থাৎ নির্বাচনের দিন তাকেই সর্বাত্মক করা হয়েছে। ভোট শুরু হওয়ারও আগে কেন্দ্রের পর কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডা-সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র ক্যাডাররা। তাদের সম্মিলিত তাড়ার মুখে খুব কম কেন্দ্রেই ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা ঢুকতে পেরেছেন। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছিল তারও পরিপূর্ণ সুফল ভোগ করেছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরাই। এসব বাহিনী প্রকাশ্যেই সরকারের পক্ষে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের দেখেও দেখেনি বরং উল্টো ২০ দলের কর্মী-সমর্থকদের তাড়িয়ে বেড়িয়েছে এবং গ্রেফতার করেছে। ফলে ওই গুন্ডা-সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পেয়েছে। এদের দৌরাত্ম্যের পরিণতিতে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়া দূরে থাকুক এমনকি ভোটকেন্দ্রের ধারেকাছেও যেতে পারেননি। সব মিলিয়েই পরিস্থিতির এত মারাত্মক অবনতি ঘটানো হয়েছিল যে, ২০ দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায়  টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। সকাল ১০টার পর পরই প্রথমে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম। তিনি শুধু নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়াননি, ভীতি ও আতংকের কারণে রাজনীতি থেকেও জীবনের নামে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর এসেছে রাজধানীর পালা। বেলা সোয়া ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট। এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্র থেকে চলে গেছেন সাধারণ ভোটাররা। এরই পাশাপাশি ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকার সুযোগ নিয়ে মাঠ একেবারে ফাঁকা পেয়ে গেছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা। যে যেভাবে যতো বেশি পেরেছে জাল ভোট দিয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রে নাকি আগের রাতেই ‘স্বচ্ছ’ ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। ফলে তাদের ‘বিজয়’ ঠেকিয়ে রাখার প্রশ্ন উঠতে পারেনি। মেয়র থেকে কাউন্সিলর পর্যন্ত সব পদেই ‘বিপুল ভোটে’ বিজয়ী হয়েছে তারা। তিন সিটি করপোরেশনই চলে গেছে ক্ষমতাসীনদের দখলে।
আমরা নির্বাচনের নামে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের এই ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাই এবং সঙ্গত কারণে ফলাফলকেও গ্রহণযোগ্য মনে করি না। এমন অবস্থাই যে সৃষ্টি করা হবে সে সম্পর্কে অবশ্য আগে থেকেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। কারণ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা ও তৎপরতা চালাতে পারেননি, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে তো শেষ পর্যন্তও মিথ্যা মামলার আসামী হিসেবে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাবনাময় সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের করার মধ্য দিয়ে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ এবং সরকারের গোয়েন্দা সংংস্থাগুলো। এ সব মামলায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেফতারের জন্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তল্লাশি চালানো হয়েছে এমনকি নারী প্রার্থীদের বাসায়ও। শেষ ক’দিনের প্রচার মিছিল থেকেও শত শত নেতা-কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে এমন ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করা হয়েছিল যে, প্রার্থীরা নিজেদের বাঁচাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে এ অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, বিরোধী দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আটক করার উদ্দেশ্যে সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফাঁদ পেতেছিল। এজন্যই নির্বাচনী প্রচারণায় সমতা দূরের কথা বিরোধী দলের প্রার্থীদের মাঠেই নামতে দেয়া হয়নি। বলা বাহুল্য, সবকিছুর পেছনে ছিল ৫ জানুয়ারির ছকে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং গণতন্ত্রের আড়ালে সিটি করপোরেশন তিনটিকে দখল করে নেয়া। একই কারণে সব মহলের পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েনের দাবি জানানো হলেও সরকারের ইঙ্গিতে নির্বাচন কমিশন বিষয়টিকে নিয়ে নাটক করেছে। সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আসতে দেয়নি। এর মধ্য দিয়ে আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আসলেও সরকারের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র। কারণ, গণতন্ত্রে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে কোনো নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত। এই সুযোগ প্রত্যেক প্রার্থীরই সমানভাবে থাকা দরকার। আর এ ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের, যা এর কর্তাব্যক্তিরা পালন করেননি। সেজন্যই একদিকে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা সমান সুযোগ পাননি, অন্যদিকে সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রেও নাটক করা হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বলে রাখা দরকার, ক্ষমতার জোরে তিন করপোরেশনকে দখল করা গেলেও সরকারের পক্ষে জনসমর্থন অর্জন করা সম্ভব হবে না। ২৮ এপ্রিলের সিটি নির্বাচন বরং ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মতোই নিন্দিত হতে থাকবে।

সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

পেশীশক্তি এখন নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণে


দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সবাই উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। প্রতিটি মহুুর্ত কাটছে ভয় আর শংকায়। কখন জানি কার প্রিয়জন চলে যায় না ফেরার দেশে অথবা হয়ে যায় গুমের শিকার। এই যখন দেশের অবস্থা তখন সরকার তড়িঘড়ি করে ১৯ মার্চ ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। দেশের জনগণ নির্বাচনমুখী হওয়ায় সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনন্দের সুবাতাস বইতেছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাজারো ভোটারদের মনে। সাধারণ জনগণের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল এই সরকারের আমলে আর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। অবশেষে প্রায় এক যুগ পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনরে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন একেবারে দোড়গোড়ায় হলেও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ’এর নমুনা দেখতে হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর বর্বরোচিত হামলার মধ্যদিয়ে।
আওয়ামী সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারার ফন্দি করেছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই ফাঁদে বিরোধীদল পা না দিয়ে উল্টো আওয়ামী-লীগকে ফাঁদে ফেলেছে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে। বিএনপির নেত্রীর ওপর বার বার হামলা হওয়ার পিছনের রহস্য হচ্ছে বিএনপি যেন নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দেয়। আশা করি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না। সরকার যদি মনে করে ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচন করে নিজেদের প্রার্থীদেরকে জয়ী করবেন তাও করতে পারবেন, কারণ সরকারের হাতে পেশীশক্তির পাশাপাশি আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর দলবাজরা রয়েছেন। কিন্তু জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে, ভুলুন্ঠিত করে পৃথিবীর কোনো শাসকই ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অগ্রণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে ধ্বংস হয়েছে জার্মানীর গণতন্ত্র ও অর্থনীতি। ইতিহাসের কী নিষ্ঠুর রায়! যে চসেস্কুর একটিমাত্র অংঙ্গুলির নির্দেশে প্রাণ দেয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তো লক্ষ সৈনিক তারাই আজ চসেস্কুর প্রাণ নেয়ার জন্য এগিয়ে আসছিল সংগীন উঁচিয়ে। কত সুন্দর কথাই না বলে গেছেন ভলতেয়ার, পীড়ন করলে সে পীড়ন এসে একদা পীড়া দিবে তোমাকেই।
বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক আদর্শে বরাবর সচেতন বলেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারাই অগ্রপথিক। গণতন্ত্রের জন্য তারা লড়তে যেমন প্রস্তুত থাকে তেমনিভাবে নিজের প্রিয় জীবনটাও বিলিয়ে দিতেও পিছপা হন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, গণতন্ত্র  সাধারণ মানুষের দ্বারা বিনষ্ট হয়নি হয়েছে ক্ষমতার মসনদে আজীবন টিকে থাকার স্বৈরাচারী আচরণ থেকে।
তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার মোটামোটিভাবে শান্তিপূণভাবেই চলছিল। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যরে তেমন ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়নি। এরকম একটি সুন্দর পরিবেশের প্রত্যাশা করছিল তিন সিটির হাজারো ভোটারেরা। সকলে আশা করছিল অতীতে যা হবার তাই হয়েছে। এই নির্বাচনে নির্ভয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই গত সোমবারে নির্বাচনের ছন্দপতন ঘটলো। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে সরকারদলীয় ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন তিন তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচার চালানোর সময় জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বেগম জিয়ার গাড়িবহরে বেপরোয়া হামলা চালায়। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো ইট ছোড়া হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি ও নিরাপত্তা কর্মীদের (সিএসএফ) এর গাড়ি লক্ষ্যে। ভাংচুর করা হয় বহরের অধিকাংশ গাড়ি। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে এ তা-ব চলে। এতে কিছু সময়ের জন্য কারওয়ান বাজার এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। হামলাকারীদের হাতে ছিল কালো পতাকা। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর জানান, হামলার সময় খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলী করা হয়েছে।
এই নারকীয় হামলার পরের দিন ঢাকা দক্ষিণের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মিজা আব্বাসের পক্ষে প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগের কর্মী বাহিনী বেগম জিয়ার গাড়ি বহরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। তৃতীয় দিনের মতো বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা খালেদা জিয়ার বহনকারী গাড়িতে হামলা করেছে। এ হামলায় খালেদা জিয়ার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এ সময় তিনি গাড়িতেই ছিলেন। এ ছাড়া তার নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করা হয়। এ হামলায় খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা, তার পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী এবং একজন গাড়িচালক আহত হন। ছাত্রলীগের কর্মীরা একজন সিএসএফ সদস্যকে পিচঢালা রাজপথে  প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে পিটিয়েছে। অথচ পুলিশ বাহিনী ছিল নিরব দর্শকের ভুমিকায়।
সরকারের উচিত ছিল দেশনেত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা। কিন্তু  তা না করে এই বর্বর হামলা চালানোর আগেই তারা বিএনপিনেত্রীর পুলিশ প্রহরা প্রত্যাহার করে নিয়েছে । আল্লাহ না করুক সেদিন যদি ঘাতকের বুলেটের আঘাতে বেগম জিয়া নিহত হতেন, তাহলে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা কতটুকু বলবৎ থাকতো তা আল্লাহপাকই ভালো জানেন। দেশের সাধারণ নাগরিকরা এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সকল পক্ষকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। যে কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা হলে সংগত কারণেই জনমনে ভীতি সৃষ্টি হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে ভোট গ্রহণে। কাজেই এ ধরনের নারকীয় ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্যে নির্বাচন কমিশনকে এক চোখে নুন আর এক চোখে তেল বিক্রি করলে চলবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যারা হামলা করেছে সরকার প্রধান তাদেরকে শাস্তি দেয়ার কথা বলা তো দূরের কথা উল্টো বললেন, বেগম জিয়া নির্বাচনী প্রচারণার নামে নাটক করছেন, মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন। বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি নাটক করে থাকেন তাহলে এই নাটকের ভিলেনের ভূমিকায় যারা গাড়ি ভাংচুর করছে, তাদেরকে শাস্তি দিতে এতো নাটকীয়তা কেন? বেগম জিয়ার প্রচার অভিযানে হামলার ঘটনার কয়েকদিনে পুলিশ কি আক্রমণকারী কাউকে গ্রেফতার করেছে? করেনি কেন? তাদের গায়ে হাত দেয়া যাবে না বলেই কি?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয়কে বিনয়ের সাথে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের কারণে বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে একশত ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবে না কেউ এ পক্ষপাতিত্ব না হলে বাংলাদেশই জয়ী হতো। আমার মনে হয় না ক্রিকেটপ্রেমিকেরা সেটা বলতে চান, আবার তারা এটাও দাবি করেন না যে পক্ষপাতিত্বটা বাংলাদেশের পক্ষে হলো না কেন? শুধু বাংলাদেশ বললে ভুল হবে সারা দুনিয়ার ক্রিকেটপ্রেমিরা বলতে বাধ্য হয়েছেন খেলাটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে হয়নি। কমিশনার সাহেব, দয়া করে কারও সামনে নয়, যখন একাকী থাকেন তখন কিছুক্ষণের জন্যে চোখ বন্ধ রেখে একটু ভাবুন তো, নিরপেক্ষ আম্পায়ার না থাকলে কী হয়? ক্রিকেট খেলার আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্বের কারণে একটি দল হেরে যেতে পারে। কিন্তু আপনি যদি পক্ষপাতিত্ব করে বিবেকের কাছে হেরে যান তাহলে হেরে যাবে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ১৬ কোটি মানুষ। আপনার জীবনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের যে কলংক লেগে আছে তা থেকে রেহাই পেতে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়ে প্রমাণ করে দিন আপনি জনগণের খাদেম কারও আজ্ঞাবহ নন।

রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’


সভ্যতার ক্রমবিকাশের কারণেই বিচারব্যবস্থার বিবর্তন। সভ্যতা যখন বিকশিত হতে থাকে তখন থেকে যেভাবেই কথাটা আসুক না কেন - এটাই দ্রুব সত্য যে, “জোর যার মুল্লাুক তার” এ আলোকেই বিচারক নির্ধারণ, বিচারপদ্ধতি নির্ণয় ও বিচার নিষ্পত্তি হয়ে আসছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের শুনতে হয় যে, “বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে” এবং “বিচার বেচাকেনা হয়।” আরো কথা চাউর হয় যে, “হাওয়া দেখে বিচারের রায় হয়” “অর্থাৎ যার হাতে ক্ষমতা রায় তার পক্ষেই যায়।” আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিসম্পন্ন দেশবরেণ্য আইনজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের এটাই মন্তব্য।
বিচারকের সমালোচনা করা যাবে না। কারণ তাদের কর্মকান্ডের কেউ যাতে সমালোচনা না করতে পারে এ জন্যই আদালত অবমাননার আইন করা হয়েছে। আদালতের সম্মান সমুন্নত থাকুক আইন পেশার স্বার্থেই আমরা এটা চাই। আদালতের ভাবমূর্তি যত বৃদ্ধি পাবে আইনজীবীদের সম্মান ততই বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এখন আদালত অবমাননার আইন ব্যবহৃত হচ্ছে - বিচারকের অপকর্ম ঢাকা দেয়ার অস্ত্র হিসেবে। এখানে আলোচ্য বিষয়টি আদালত অবমাননার উদ্দেশ্যে না হলেও বিচার সংক্রান্ত কথা উঠলে আদালতের প্রসঙ্গ এসে যায়।
বহু বিবর্তনের পর বর্তমানে আমাদের দেশের আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থার যে কাঠামো তার যদি একটু সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করি তা হলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতির অধীনে আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থা নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাগজে কলমে স্বাধীন। তদুপরি ১/১১ সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে অর্ডিন্যান্স করে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করেছেন। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে বিচার বিভাগ কি প্রকৃতপক্ষেই স্বাধীন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির মুখে মুখে তো বিচার বিভাগ অবশ্যই স্বাধীন। কিন্তু এর বাস্তব চিত্র কী? আইন করে স্বাধীন করার পরও যদি তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তবে এর জন্য দায়ী কে?
বিচার বিভাগের সাথে প্রসঙ্গক্রমেই আইন বিভাগের কথা উঠে আসে। জাতীয় সংসদ আইন প্রণেতা। আইন প্রণীত হবে জনগণের কল্যাণে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনপ্রণেতা বা ক্ষমতাসীনদের রক্ষার জন্যই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ কারণেই কমিউনিস্ট এক বিপ্লবী নেতা পার্লামেন্টকে শুয়োরের খোঁয়াড়ের সাথে তুলনা করেছেন। সে ভাষায় কথা না বললেও এটাই বলাবাহুল্য যে, পার্লামেন্ট ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে জনতার ওপর স্টিম রোলার চালানোর কঠিন কঠিন আইন পাশের একটি ফ্যক্টরিতে পরিণত হয়েছে। এ আইন ফ্যাক্টরি সংবিধানের মৌলিক চাহিদা পূরণে কতটুকু সফল তা আবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে।
 দেশের আপামর জনগণ রক্ত দিয়ে দেশটি স্বাধীন করেছিল সার্বভৌম কল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্রের জন্য যার সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে যে, “আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা - যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।”
অনেক আলোচনা পর্যালোচনার পর উক্ত প্রস্তাবনাসহ অন্যান্য প্রস্তাবনা নিয়ে ০৪/১১/১৯৭২ ইং তারিখে জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ সংবিধান রচিত হয়। কিন্তু এখানে প্রশ্ন আসে ০৪/১১/১৯৭২ ইং এর পর শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কতগুলি আইন পাশ করেছে?
 যে গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি হলো, সেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সংবিধানে ১১৭ক অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বাকশাল কায়েম করে সর্বস্তরে গণতন্ত্রের মুখে তালা দেয়া হলো। গণতন্ত্র রক্ষা ও মৌলিক অধিকারের নামে শাসক গোষ্ঠীর শাসন করার অধিকারের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে; কিন্তু জনগণের অধিকার রক্ষায় বা শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতকে রক্ষার আইন প্রণয়ন হয় না। যদিও জনকল্যাণের নামে আইন হয় কিন্তু এর প্রয়োগ হয় জনগণের শোষণের জন্য। দেশে আইনের প্রয়োগ চলছে এখন দুইভাবে। বিরোধী দলের জন্য যেভাবে আইন প্রয়োগ হয় ক্ষমতাসীনদের জন্য হয় তা উল্টোভাবে।
 যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন পাশ হয়েছে - দুর্নীতি দমনের জন্য। কিন্তু এর প্রয়োগ হচ্ছে একপেশে। ১/১১ সামরিক জান্তাবেষ্টিত সরকার অনেক রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর হাই কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের রায়ে - বা দুদকের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের সব-মামলা খালাস এবং বিরোধী দলীয় নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তার দলীয় লোকদের মামলা এখনো ঝুলে আছে। উল্লেখ্য, একজন বিচারপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার শুনানির সময় প্রকাশ্যে বলেছিলেন - “দুদকের অফিসারদের পিটানো উচিত”। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় কী তিনি এ ধরনের মন্তব্য করবেন? বলবেন না।
প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি - সকলেই আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন। আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্ত - স্বাধীন বিচার বিভাগ। প্রশ্ন হলো - বিচার বিভাগ কী স্বাধীন? যদি না হয় তবে এ জন্য দায়ী কে?
সংবিধানের ২য় পরিচ্ছেদের ১১৬ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে - “এ সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে বিচার কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।” সংবিধান এতো বড় নিশ্চয়তা দেয়ার পরও কি বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিজেদের কি স্বাধীন ভাবেন?
বিষয়টি দৃশ্যমান যে, পুলিশ যে ভাষায় কথা বলে সে ভাষাতেই ম্যাজিস্ট্রেটগণ সিদ্ধান্ত দেয়। যেমন- POLICE REMAND বিচার প্রার্থীর জন্য একটি আতঙ্ক। REMAND এর আদেশ দেয়ার পূর্বে REMAND সম্পর্কিত যুক্তিকথা অনেক সতর্কতার সাথে বিবেচনার জন্য শুধু - বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে নয় পাক-ভারত উপ-মহাদেশ এবং ব্রিটিশ উচ্চ আদালতের দিক নির্দেশনা রয়েছে। অথচ বিরোধীদলীয় - জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের এখন মামলায় REMAND দেয়া হচ্ছে যেখানে REMAND এর কোন যৌক্তিকতা নাই। পূর্বে প্রদত্ত REMAND থেকে এখন পর্যন্ত মামলা তদন্তের অগ্রগতি দেখাতে পারছে না। বিরোধী দলীয় রাজনীতি নস্যাৎ করার জন্য আদালতকে সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সুবিধামত পোস্টিং ও প্রমোশনের বদৌলতে আদালত সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে এটাই বর্তমানে সর্বস্তরের অভিযোগ।
কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলে বিচার বিভাগের নাজুক পরিস্থিতি সহজেই উপলব্ধি করা যায়। যেমন- তারেক রহমান সরকারের সবচেয়ে বড় এ্যালার্জি। তারেক রহমান দেশ বিক্রি করেছেন - এটাই সরকার ও সরকারি দল প্রমাণ করতে চেয়েছে। কিন্তু মামলা থেকে তারেক’কে যে বিচারক খালাস দিল সে বিচারক এখন দুদকের ভয়ে পলাতক। দেশে থাকলে দুদক ছাড়াও অন্য কোন নির্যাতনের শিকার হতেন ভেবেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। এখন থেকে কোন বিচারক কি তারেক রহমানকে সাজা না দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন? যদি তাই হয় তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায়?
প্রহসনের নির্বাচনে এরশাদ যাবে না - এ কথা তিনি দৃঢ় চিত্তে যখনই বলা শুরু করলেন তখনই তাকে রোগী বানিয়ে হাসপাতালে রাখা হলো। তিনি গ্রেফতার হবেন নিশ্চিত হয়েই রিভলবারে ৪ (চার) গুলী রিজার্ভ রাখার কথা দেশবাসীকে জানিয়ে ছিলেন। আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। আত্মহত্যা করার পূর্বেই তিনি বন্দী হয়ে গেলেন। তার মুক্তির দাবিতে পোস্টার হলো। এতো নাটকেও বিচলিত হই না; কিন্তু বিচার বিভাগ যখন প্রহসনের নাটকের ক্রীড়নক হয়ে যায় তখনই ব্যথিত হই। যেমন- মঞ্জুর হত্যা মামলার সকল প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে যখন যুক্তিতর্কের জন্য - তারিখ নির্ধারণ ছিল এর পূর্বেই বিচারক বদলি হয়ে গেলেন। নির্বাচনের পর পর এরশাদ বলেছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একতরফা প্রহসনের নির্বাচন। শীঘ্রই নির্বাচন দিতে হবে। নতুন বিচারক ৩৪ বছর মামলা চলার পর তিনি দিলেন অধিকতর তদন্তের আদেশ এ নজীর বাংলাদেশে নাই। এ আদেশের পর এখন এরশাদ বলতে শুরু করেছেন যে - “এ সরকার ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য নির্বাচিত। এর পূর্বে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নাই।” এখানেই বিচার বিভাগের তেলেছমাতি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার এটাইতো নমুনা।
প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ০৫/৪/২০১৪ ইং তারিখে এক বক্তৃতায় বলেছেন, “আইনজীবীদের উচিত বিচারাঙ্গনকে বিতর্ক (কন্ট্রোভার্সি) থেকে দূরে রাখা।” প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে সবিনয়ে বলতে চাই - বিচারাঙ্গনকে বিতর্ক থেকে ঊর্ধ্বে রাখার জন্য আইনজীবীদের দায়িত্ব থাকলেও বিচারকদের কি কোন দায়িত্ব নাই? আদালতের কার্যক্রম নিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলি বিতর্ক হয়েছে তার অধিকাংশই হয়েছে বিচারকদের কারণে। আইনজীবীদের কারণে বিতর্ক বা আদালতের ভাবমূতির্ ক্ষুণ্ন হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সিদ্ধান্ত দেন বিচারক। তবে কোন ক্ষেত্রে আইনজীবী যদি অসৎ হয় আর বিচারক যদি সেখানে সৎ থাকেন সেখানেও আইনজীবীর কারণে বিতর্ক হওয়ার সুযোগ নাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল প্রথম বিতর্কিত হয়েছে বিচারকদের কারণে। স্কাইপিতে বলা কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অপবাদ মাথায় নিয়ে বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। সাকা চৌধুরীর রায় প্রদানের পূর্বেই পত্রিকায় রায় প্রকাশিত হয়েছে। ন্যায় বিচার যদি বাধাগ্রস্ত হয় তবে আদালতকে নিয়ে বিতর্ক হবেই, হবে।
অতি সম্প্রতি রাজনৈতিক কারণে হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন দেয়া যাবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্ট এ্যাপিলেট ডিভিশন দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা বা নির্দোষ মানুষকে আসামী করা যাবে না এ মর্মে পুলিশ ও সরকারকে নির্দেশনা দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিষয়টি দৃশ্যমান হতো। অতএব, আদালতকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার দায়িত্ব আদালতের এবং সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব আরো বেশি।
পিলখানায় যখন সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয় তখন আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। টি.ভি সংবাদ ও পত্রিকার ভাষা থেকে মনে হচ্ছিল - সেনাবাহিনীকে ধ্বংস বা পঙ্গু করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে অবস্থা কোন পিতামাতা তার সন্তানকে সেখানে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না। পূর্বে ছাত্রে ছাত্রে মারামারি হতো। এখন মারামারি, ধর্মঘট চলে শিক্ষকদের মাঝে। রানা প্লাজাসহ কিছু ঘটনায় বিদেশীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসছে না। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, ডেসটিনি এ জাতীয় কিছু কর্মকা-ে দেশের অর্থনৈতিক তারল্য বরফ জমাট বেঁধেছে। সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে পত্রিকা খুললেই খুন আর খুন। প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচন। নতজানু নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ ভূমিকায় দেশবাসী হতাশ, আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়ে অকার্যকর মৃত জাতীয় সংসদ। আন্তর্জাতিক গগনে পদ্মা সেতুর মত  কেলেঙ্কারি বাংলাদেশের ললাটে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা ক্ষমতাশীন দলের ক্যাডার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু কিছু মন্ত্রীর কথাবার্তা নিম্নস্তরের চেয়েও নীচে। নিখোঁজ সালাহ উদ্দিন, ইলিয়াস আলীর মত লোক নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের উদ্ধারের তো দৃশ্যমান উদ্যোগ নাই বরং টিপ্পনী মেরে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া হচ্ছে। এরপরও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর যদি কালিমা পড়ে তবে দেশবাসী যাবে কোথায়?
পরিশেষে বলতে চাই যে, বিচারকগণ মন মগজে নিজেকে যদি স্বাধীন মনে না করেন তবে আইন করে বা বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে বিচার বিভাগকে স্বাধীন বানানো যাবে না, যাবে না, যাবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় সকলের স্বার্থে সকলেরই সক্রিয় হওয়া উচিত। 

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সিটি নির্বাচন ও আচরণ প্রসঙ্গ

সিটি নির্বাচন ও আচরণ প্রসঙ্গ
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর জনগণ কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ভেবেছিল, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে হয়তো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসতে পারে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ মানেই স্থিতিশীল সমাজ। দরিদ্র এই দেশটির মানুষ স্থিতিশীল অবস্থায় পরিশ্রম করে, আয়-উন্নতি করে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে জনগণের আশাবাদ ততই ফিকে হয়ে উঠছে। কারণ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে নানা আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ২৫ এপ্রিল তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় মুদ্রিত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে অস্থির রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসার একটা লক্ষণ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ১৮ মার্চ নির্বাচনের তফসিলের পর থেকে ইসির বিতর্কিত ভূমিকা, খালেদা জিয়ার উপর তিন দফা হামলা, কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রার্থীর নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
সরকার ও প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকান্ড শুধু সিটি করপোরেশন নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মৌলিক অধিকারকেও উপহাস করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে নামায পড়তে মসজিদে ঢুকতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। মানব জমিন পত্রিকায় ২৫ এপ্রিল মুদ্রিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শুক্রবার তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো এলাকায় রহিমা মেটাল জামে মসজিদে গণসংযোগ শেষে জুমার নামায পড়তে যান তাবিথ আউয়াল। আগের দিন তার গণসংযোগের সিডিউলেও বিষয়টির উল্লেখ ছিল। কিন্তু মসজিদের গেটে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা তাবিথ আউয়ালকে বাধা দেন। পুলিশ সদস্যরা বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই মসজিদে নামায পড়বেন, তাই তিনি এই মসজিদে ঢুকতে পারবেন না। বাধা পেয়ে তাবিথ আউয়াল নাখালপাড়া রেলগেট জামে মসজিদে নামায পড়েন। এমন ঘটনায় প্রশ্ন জাগে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে মসজিদে নামায পড়বেন সেই মসজিদে একজন মেয়র প্রার্থী নামায পড়তে পারবেন না-এমন বিধান কোথায় আছে? এমন উদাহরণ থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, স্বচ্ছ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় অধিকার এখন আর নিরাপদ নেই। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এবং সরকারি ঘরানার লোকজন এখন যেন আইনের ঊর্ধ্বে। নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ভোট চাইলেন। গত শুক্রবার জুমা নামায শেষে মোনাজাতের আগে ভোট চেয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এমন বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা যায় কী? আর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও অবাধ না হয় তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরে আসবে কেমন করে? তাহলে কি আবার হরতাল-অবরোধ এবং দমন-অবদমন ও গুম-গুলীর দৌরাত্ম্য ফিরে আসবে? জনগণ তো এমন পরিস্থিতি চায় না। কর্তাব্যক্তিরা কি বিষয়টি উপলব্ধি করবেন?
- See more at: http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=185459#sthash.eFoXDtov.dpuf

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

তিন সিটির নির্বাচন এবং সম্ভাবনার অন্য দিক


মানুষের মুখে মুখে এখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, একদিকে বহুদিন জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি, অন্যদিকে বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর হামলার পর হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা তাদের উদ্দেশ্যের ন্যক্কারজনক প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন। ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের দোসররা অবশ্য বহুদিন কথাটার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলতে পারেন, দেড় বছরও হয়নি গত বছরের ৫ জানুয়ারি যেহেতু সংসদ নির্বাচন হয়েছে সেহেতু বহুদিন পর ভোট দেয়ার কথা উঠতে পারে না। এর যুৎসই, এমনকি দাঁতভাঙা জবাবও রয়েছে। কিন্তু সেদিকে যাওয়ার পরিবর্তে শুধু এটুকু স্মরণ করিয়ে দেয়াই এখানে যথেষ্ট যে, শতকরা পাঁচজন মানুষও ওই নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি। ভোট দিতে যাননি তারা। যাবেনই বা কেন? তার আগেই তো ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষিত হয়েছিলেন! ‘ঐতিহাসিক’ সে সংসদ নির্বাচনের পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো প্রধান দলগুলো যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয় সেটা নিশ্চিত করতেই ক্ষমতাসীনরা বেশি ব্যস্ত থেকেছেন। এজন্য তারা এমনভাবেই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অজুহাত দেখিয়েছেন যাতে দল দুটির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব না হয়। অথচ বিএনপি ও জামায়াত সততার সঙ্গে এবং আন্তরিকভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিল। দল দুটির দাবি ছিল, নির্বাচনকালীন সরকারকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ করা হোক এবং সংবিধানে নির্বাচনকালীন ওই সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধান যুক্ত করা হোক। কিন্তু এটুকু করতেও সম্মত হননি ক্ষমতাসীনরা। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল যে কোনোভাবে বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখা। সে উদ্দেশ্য তারা অর্জনও করে ছেড়েছেনÑ যদিও পাঁচ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিতে যায়নি। এতে অবশ্য তাদের কিছু যায়-আসে না। কারণ, তাদের লক্ষ্য ছিল ছলে-বলে-কৌশলে হলেও ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় গেছেনও তারা।
তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও ক্ষমতাসীনরা একই কৌশলের ভিত্তিতে এগিয়ে চলেছেন। পার্থক্য হলো, বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচন বর্জন করার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে যুৎসই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চেয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনরা এবারের নির্বাচনে ভরাডুবির আশংকা করেছেন। সে অনুযায়ী অনেক আগে থেকে ব্যবস্থাও নিয়েছেন তারা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেয়র, চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলরসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত, গ্রেফতার এবং হয়রানি করা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা, সদস্য বা সমর্থক হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের প্রায় সকলেই এখনও পুলিশের ধাওয়ার মুখে রয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার ও বরখাস্ত হয়েছেন। একই অবস্থায় পড়েছেন আরো অনেক পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও। কারো কারো বিরুদ্ধে নাশকতা ও খুনের মামলাও দেয়া হয়েছে। খবর শুধু এটুকুই নয়। প্রতিটি স্থানে প্যানেল মেয়র হিসেবে বসিয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজনকে। এই প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে সিরিয়াল বা ক্রমিকও মানেনি সরকার। ফলে এক নম্বরে অবস্থানকারীরা বঞ্চিত হয়েছেন। এভাবে চলতে থাকায় দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। পরিণতিতে একদিকে উন্নয়ন কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সেবা পাচ্ছেন না ওই সব এলাকার সাধারণ মানুষ। খবরে বলা হয়েছে, সরকার এ ব্যাপারে পৌরসভা আইন ২০০৯-এর ৩১ ও ৩২ ধারার সুযোগ নিচ্ছে। এ ধারা দুটির বলে কোনো মেয়রের বিরুদ্ধে কোনো মামলার চার্জশিট হলেই তাকে বরখাস্ত ও অপসারণ করার ক্ষমতা পেয়েছে সরকার। কিছুদিন ধরে ঢালাওভাবে সে ক্ষমতারই অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে।
এমন অবস্থার কারণ সম্পর্কে একটু আগেই বলা হয়েছে। সে কারণ ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবির আশংকা। এই আশংকা সত্যও বটে। আসলেও জিততে পারবেন না তাদের প্রার্থীরা। স্মরণ করা দরকার, ২০০৮ সালের ডিজিটাল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষমতায় আসতে পারলেও বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ হেরে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর পর ২০১০ সালের জুন মাসে প্রথম অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে জিতেছিল বিএনপি। এরপর পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছিলেন বিরাট ব্যবধানে। পরাজয়ের এই ধারা অব্যাহত থেকেছে শেষ পর্যন্তও। ২০১৩ সালের জুন ও  জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় ছিল শোচনীয়। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সব মিলিয়ে দেশের আটটি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে একমাত্র রংপুর ছাড়া সবগুলোতেই মেয়রের আসনে জিতেছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা। কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল নারায়ণগঞ্জ। সেখানে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি কিন্তু তা সত্ত্বেও দলগতভাবে আওয়ামী লীগ পরাজিতই হয়েছিল। কারণ, ডা. সেলিনা হায়াত আইভি জিতেছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে। প্রতিটি নির্বাচনেই বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা, লজ্জাকর পরাজয় ঘটেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।
মূলত তখন থেকেই ফন্দি এঁটে এসেছেন ক্ষমতাসীনরা, যার বাস্তবায়ন ঘটানো হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে শুরু হওয়া অবরোধ কেন্দ্রিক আন্দোলনকে অজুহাত বানিয়ে সরকার একদিকে প্রচন্ড দমন-নির্যাতন এমনকি হত্যাকান্ডের অভিযান পর্যন্ত চালিয়েছে, অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের এমনভাবেই ধাওয়ার মুখে রেখেছে যাতে তাদের কারো পক্ষে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সম্ভব না হয়। এখানে উদ্দেশ্যে কোনো রাখঢাক রাখছেন না ক্ষমতাসীনরা। একই কারণে তারা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, যাতে বিএনপি ও জামায়াতের মতো প্রধান দলগুলো নির্বাচনে অংশই না নিতে পারে। অংশ নিলেও তাদের প্রার্থীরা যাতে প্রচারণা চালাতে এবং জনগণের কাছে ভোট চাইতে না পারেন। এজন্যই মামলা, গ্রেফতার এবং গুম ও খুনের মাধ্যমে ভীতি-আতংক ছড়িয়ে দেয়ার ভয়ঙ্কর নীতি-কৌশল নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা চাচ্ছেন, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তিন মহানগরীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূলকেন্দ্র সিটি কর্পোরেশনকে নিজেদের দখলে নিতে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গেলে ঘেমে নেয়ে উঠতে হবে। তা সত্ত্বেও দু-একটি তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। যেমন, ঢাকা উত্তরে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। অতি নগন্য একটি ভুলের অজুহাতে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জনাব মিন্টু উচ্চ আদালতে পর্যন্ত গেছেন। এটুকু সবাই জানেন। এর সঙ্গে আবার অন্য একটি তথ্য জানিয়েছেন দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারস্টার রফিক-উল হক। তথ্যটি হলো, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর জনাব মিন্টুকে দেয়া যমুনা রিসোর্টের ৩০ বছর মেয়াদী ইজারা বাতিল করেছে সরকার। এটা গত পহেলা এপ্রিলের ঘটনা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যের নগ্ন প্রকাশ ঘটেছে। কারণ, আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী না হতে পারলে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে ফাঁকা ময়দান পেয়ে যাবেন তারা। ওদিকে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তার পক্ষে উচ্চ আদালতে তিনটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছে। দুটি মামলার জামিনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জামিন না পাওয়ায় মির্জা আব্বাস নির্বাচনী প্রচারণাই চালাতে পারছেন না। কারণ, গ্রেফতার করা হবে তাকে। এখানেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এসে যায়। অবিলম্বে সব মামলা প্রত্যাহার করে এবং বন্দী ও আত্মগোপনে থাকা নেতাদের মুক্ত পরিবেশে তৎপরতা চালানোর সুযোগ দিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকারকে বলাটা নির্বাচন কমিশনের কর্তব্যও বটে। কথা আরো আছে। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই বহুল আলোচিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, প্রত্যেক প্রার্থী যাতে বাধাহীনভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন। সরকার যাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতারের নামে প্রার্থী ও তার কর্মীদের ধাওয়ার মুখে না রাখতে পারে সে বিষয়েও কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। অন্যদিকে কমিশন কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। শুধু তাই নয়, একজন কমিশনার তো বলেই বসেছেন যে, পুলিশ তার কর্তব্য পালন তথা প্রার্থীদের গ্রেফতার করলে তাদের কিছুই করার নেই। আইনকে আইনের পথে যেতে দিতে হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।
এজন্যই দিন ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনকে নিয়ে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হতে পারেনি। এর বড় কারণ সরকারের পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আস্থাহীনতা। জনগণ বিশ্বাসই করে না যে, এই কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এমন অবস্থার কারণ সৃষ্টি করেছে সরকার নিজেই। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর এবং দল দুটির সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে তৎপরতাই চালাতে পারছেন না। মির্জা আব্বাসের মতো কয়েকজনকে নির্বাচনের মাঠেও থাকতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাবনাময় সব প্রার্থীর বিরুদ্ধেই একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এসব মামলায় অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সব মিলিয়ে এমন ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করা হয়েছে যে, প্রার্থীরা নিজেদের বাঁচাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ গণতন্ত্রে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে কোনো নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত। এই সুযোগ প্রত্যেক প্রার্থীরই সমানভাবে থাকা দরকার। অন্যদিকে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কোনো একটি স্থানেও বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না।
এটুকুই সব নয়। সিটি নির্বাচনের তিনটিতেই বিজয়ী হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আবারও ‘এইচ টি ইমাম ফর্মুলা’ নিয়ে এগোতে শুরু করেছে বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানা গেছে, প্রার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও আশংকা প্রকাশ করে বলেছে, ওই ফর্মুলার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বাইরে আর কারো পক্ষেই জিতে আসা সম্ভব হবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছর ২০১৪ সালের ১২ নবেম্বর ছাত্রলীগের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাধর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের সময় পুলিশ ও প্রশাসনের কার্যক্রমের পেছনে ছিল তার নিজের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। প্রতিটি উপজেলায় তিনি তাদের ‘রিক্রুটেড’ বা চাকরি দেয়া লোকজনকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছিলেন। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন যে তাদের অর্থাৎ সরকারের ‘পাশে দাঁড়িয়েছিলেন’ এবং ‘বুক পেতে দিয়েছিলেন’ সে কথাও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই জানিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। এভাবে গোপন তথ্য ফাঁস করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আসলে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ও আশংকাকেই সত্য বলে প্রমাণ করেছিলেন। সেই থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘এইচ টি ইমাম ফর্মুলা’ বিশেষ ‘প্রসিদ্ধি’ অর্জন করেছে! এর মূল কথা হলো, নির্বাচনে যতো দল বা প্রার্থীই অংশ নিক না কেন, ক্ষমতাসীনরা যাকে চাইবেন তাকেই জিতিয়ে আনা হবে। এজন্য নিজেদের ‘রিক্রুটেড’ লোকজন তথা ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে নির্বাচন হচ্ছে এমন সব এলাকায় মোবাইল কোর্ট বসাবেন তারা এবং বিরোধী প্রার্থীদের হেনস্থা ও প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে। ওদিকে  ‘পাশে’ দাঁড়ানোর এবং ‘বুক পেতে’ দেয়ার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন তো প্রস্তুত থাকবেই! ফলে জিতবেন শুধু সরকার সমর্থিতরাই। এই সময়ে বহুল আলোচিত ‘ফর্মুলা’টি নিয়ে কথা উঠেছে কিছু বিশেষ কারণে। দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীরা হয় সাজানো মামলায় কারাগারে রয়েছেন নয়তো পুলিশ ধাইয়ে বেড়াচ্ছে বলে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পুলিশ এমনকি ক্ষমতাসীনদের তৈরি করে দেয়া তালিকা অনুযায়ী প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে ব্লকরেইড পর্যন্ত করছে। সব মিলিয়েই এমন আয়োজন করা হয়েছে যাতে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা কোনো রকম তৎপরতাই চালাতে না পারেন। একযোগে অন্য সকল পন্থায়ও চলছে ওই ‘ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম। যেমন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। দু’জন প্রতিমন্ত্রী শুধু নন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সিডিএর চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের অনেক বড় বড় কর্তা ব্যক্তিও মন্ত্রীর সঙ্গে সভায় অংশ নিয়েছেন। প্রার্থী নিজে উপস্থিত না থাকলেও খবরে বলা হয়েছে, বিধি লংঘন করে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা নির্বাচনী বৈঠক করেছেন। এতে মোবাইল কোর্ট বসানোর মতো অন্য নানা পন্থায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময়ের মতো তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ‘এইচ টি ইমাম ফর্মুলা’ বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। বলা চলে, প্রস্তুতি সেরেও ফেলেছেন তারা। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা! বলা দরকার, দলের চরিত্র ও স্বভাব অনুযায়ী ক্ষমতাসীনদের জন্য স্বাভাবিক হলেও সংবিধান ও গণতান্ত্রিক বিধি-বিধানের দিক থেকে এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। কারণ, গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে কোনো নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত। প্রচার-প্রচারণা চালানো ও সভা-সমাবেশ করাসহ নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনায় সব প্রার্থীরই সমান সুযোগ থাকতে হবে। অন্যদিকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে বিশেষ করে দেশের প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। বড় কথা, অতীতের বিভিন্ন উপলক্ষের মতো সিটি নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনারা শুধু নিজেদের প্রার্থীদের ব্যাপারেই ব্যস্ত রয়েছেন। সেটাও গ্রহণযোগ্য হতো যদি গোপনে গোপনে এর সঙ্গে মোবাইল কোর্টের আড়ালে ম্যাজিস্ট্রেট তথা বিচার বিভাগ এবং পুলিশ ও প্রশাসনকে জড়িয়ে ফেলার আয়োজন না করতেন তারা। সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই বলা হচ্ছে, নিজেদের অতি তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ক্ষমতাসীনরা আসলে আবারও কুপোকাত হওয়ার লজ্জাকর পরিণতি এড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। অমন কৌশল তারা নিতেই পারেন, অন্যদিকে জনগণের সচেতন অংশ মনে করেন, গণতন্ত্রের ব্যাপারে আদৌ সদিচ্ছা এবং নিজেদের ‘অবদানের’ ব্যাপারে সৎসাহস থাকলে ক্ষমতাসীনদের উচিত ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ধাওয়ার মুখে রাখার পরিবর্তে প্রথমে দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার-মামলা ও গুম-খুন বন্ধ করা এবং তারপর যথেষ্ট সময় দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তখন দেখা যাবে, ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা আসলে কতটুকু। তারও আগে সরকারকে অবশ্যই মেয়র ও চেয়ারম্যানসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং সুযোগ দিতে হবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে। অমন আশা যে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আশা করা যায় না সে কথা নিশ্চয় বলা বাহুল্য। কিন্তু যা না বললেই নয় সে কথাটা হলো, এভাবে চলতে থাকলে আর যা-ই হোক, তিন সিটি নির্বাচনের কোনো একটিতেও জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে না। ভোটাররা সম্ভবত ভোটকেন্দ্রেও যেতে পারবেন না। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারতো। কিন্তু সেনা মোতায়েন নিয়েও শেষ মুহূর্তে ঝামেলা পাকিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই কারণে সিটি নির্বাচনের সম্ভাবনা এবং ফলাফল সম্পর্কে নীরবতা অবলম্বন করাই ভালো।

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও নীতিহীনতার পরিণতি


২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোন সমীকরণই যেন মিলানো যাচ্ছে না। সরকার পক্ষের সকল প্রার্থীর মামলা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রত্যাহার করা হচ্ছে- উপরন্তু ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাসমূহের প্রত্যাহার তো দূরের কথা, পুলিশী হয়রানি আর গ্রেফতার আতঙ্কে প্রার্থীরা সঠিকভাবে ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন না। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির মুখরোচক কথা যতই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন না কেন- মামলা আক্রান্ত প্রার্থীদের গ্রেফতার করতে পুলিশকে রীতিমত উস্কানি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোবারক আলী। গত ১৭ এপ্রিল ‘আ: লীগের ১৬ প্রার্থীকে মামলা থেকে রেহাই’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো’র সংবাদ শিরোনামে উল্লেখ করা হয় যে, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৬ জন প্রার্থীকে ২২টি হত্যা মামলা ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলা থেকে বিভিন্ন উপায়ে রেহাই দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নয়জনের পাঁচটি হত্যা ও সাতটি হত্যা চেষ্টার মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার প্রত্যাহার করা হয়।’ একদলকে মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সোনার ছেলে বানানো আর বিরোধীদলকে মামলায় হয়রানি করার কূটকৌশল দৃশ্যমান হলেও ইসি’র না দেখার ভান জনমনে হাস্য কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। ‘প্রার্থীরা অসমহায়, নির্বিকার ইসি’ শিরোনামে ঐ একই দিনে দৈনিক নয়া দিগন্তে ১ম পৃষ্ঠায় উদ্বেগজনক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়, ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হিমাংশু কিশোর দত্তকে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর জন্য মীরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পুত্র ফয়সাল হুমকি দিয়েছে অন্যথায় গুলী করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে টেলিফোনে জানানোর পরও কোন প্রতিকার দৃশ্যমান হয়নি। ঢাকা দক্ষিণের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলার প্রার্থীকে পল্টন থানা পুলিশ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে সরকার সমর্থিত এক প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য। ঢাকা সিটি উত্তরের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার প্রার্থী এডভোকেট এনায়েত হোসেনের নির্বাচনী প্রচার কর্মীদের ৩ দফা হামলা চালিয়েছে নাজমুল আলম জুয়েলের সরকার সমর্থিত লোকজন। এইভাবে অসংখ্য অভিযোগ আছে যার প্রতিকার ক্ষমতাবান নির্বাচন কমিশন করছে না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। কাজী রকিবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন তাদের একচোখা নীতিমালার জন্য দেশ-বিদেশে বহুভাবেই নিন্দিত হয়েছে। এ ব্যাপারে ‘কানে দিয়েছি তুলো’ নীতিতে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেয়াতে ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বব্যাপী ধীকৃত হয়েছিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো : জাতিসংঘ সহকারী মহাসচিব তারাঙ্কো কর্তৃক চলমান জাতীয় সংলাপের মাঝখানে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা ধ্বংস করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক হঠাৎ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা। সংলাপের একটা চমৎকার পরিণতির ব্যাপারে দেশ-বিদেশে যখন আশাবাদ উচ্চকিত হচ্ছিল, তখন তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করে কার ইঙ্গিতে সংবিধানের দোহাই তুলে ‘সিডিউল’ ঘোষণা করলেন- জাতি তা আজও জানতে পারেনি। জাতিসংঘ ও বিদেশী সকল নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল এ নির্বাচন বয়কট করলেও একদলীয় এ নির্বাচনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার গাল ফুলিয়ে ও তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ‘অত্যন্ত সফল’ নির্বাচনের সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। তাই আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কতটুকু সফলতার মুখ দেখবে- মহান আলাহ্পাকই তা জানেন। ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক প্রফেসর এমাজুদ্দিন গত ১৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ইসি’র ভূমিকাকে ভয়ঙ্কর বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সরকার সমর্থিত ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ‘জানে বাঁচতে চাইলে ইলিশ মাছ মার্কায় ভোট দিন’ মন্তব্যে ইসি’র নির্বিকারত্বে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিএনপি’র সমন্বয় কমিটির সভাশেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, প্রায় ১৬ জন আওয়ামী সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থীর মামলা প্রত্যাহার এবং ঢাকা উত্তরের বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থী কাউসার আহমেদকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার ও ইসি’র মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তবুও বিএনপি মাঠে থাকবে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ চলমান গণআন্দোলনের অংশ মাত্র। তিনি বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ করছি, তবে নির্বাচন কমিশনের কি চোখ-কান নেই? অপর সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার (অব:) হান্নান শাহ বলেন, ইসি’র নিয়োগপ্রাপ্ত ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেটকে চোখে দেখা যায় না। কোথায় কি করেন, বোঝা যায় না। তিনি নির্বাচনের ৭ দিন পূর্ব থেকে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানান।  ঢাকা ও চট্টগ্রামের শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ততই এক অজানা আশঙ্কায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। কিছুতেই তারা যেন এক শান্তিপূর্ণ আশঙ্কায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। কিছুতেই তারা যেন এক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচনের কল্পনা করতে পারছে না। কেননা এই নির্বাচন কমিশনের আওতায় ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দেশব্যাপী মহাবিতর্কিত উপজেলা নির্বাচন জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। সরকারের প্রতি শতভাগ আনুগত্যের ফলে ইসি আজ হাস্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তবে তা থেকে বেরিয়ে আসার মোক্ষম উপায় হলো আসন্ন ৩টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার যারপরনাই আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করা। কিন্তু সে আশা আমরা করতে পারিÑ ‘কিন্তু ইসি জাতির সামনে উদাহরণ সৃষ্টিকারী ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবে কি? নীতি, নীতিমালা ও নীতিবোধ এখন যেন পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু। সমাজ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে যেন তা তিরোহিত হতে চলেছে ক্রমাগতভাবে। জনগণকে প্রতারণা করতে কতই না মায়াকান্না আর ছেলে ভুলানো কথা শোনা হচ্ছে, জনগণকে ভুলানো হচ্ছে প্রকৃত ইতিহাসের কথকতা। সেখানেও গোয়েবলসের নীতিমালা ক্রীয়াশিল! ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে কত চতুরতা। কখনও বা ‘ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান,’ কখনও বা ২০৪১ সালে মধ্যম আয়ের দেশের কল্পনা বিলাসিতার কল্পকথা! গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে চলছে গণতন্ত্রের নামাবলী মার্কা ‘বাকশালী’ শাসনÑ সেখানে জনগণকে ‘হাওয়াই মিঠাই’ খাওয়ানোর কৌতুক শোনানো হচ্ছে বার বার। বেয়াড়া জনগণ, মানবাধিকার সংস্থা আর বিদেশী রাষ্ট্রসমূহ বিংশ শতাব্দির মদিনা সনদ(?) মার্কা এই শাসনকে কেন ‘আহলান সাহলান’ বলে অভিনন্দিত করছে না- সেজন্য শীর্ষ নেতৃত্বের কতই না আহাজারী! দলীয়করণকৃত প্রশাসন, পুলিশ-র‌্যাব, বিজিবি দিয়ে নির্বিচার দমনেও খুশী নন তিনি। কিছুদিন পূর্বে তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, ‘পুলিশ কি অস্ত্র পকেটে পুরে রাখবে?’ অদ্ভুত, এতো আস্কারা পেয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের এখন ‘তাধিন তাধিন’ অবস্থা। জনগণকে রক্ষার বদলে শাসকগোষ্ঠীকে রক্ষার নীতিহীন ক্রিয়াকা-ে তারা এখন লিপ্ত। যার প্রমাণ মিলল গত ১লা বৈশাখের (১৪২২ বঙ্গাব্দ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৭-৩০ মিনিট পর্যন্ত বর্ষবরণ উৎসবে। রাজু ভাষ্কর্যের সামনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী সুসজ্জিত বঙ্গললনাদের ওপর যেভাবে সোনার ছেলেরা নারকীয় উন্মাদনায় বিবস্ত্রসহ যৌনাচার চালালো, পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে আনতিদূরে এসব আচরণে পুলিশ কোনো পদক্ষেপই নিতে পারলো নাÑ ভাবতেই বিস্মিত হতে হয়। ‘শিবির-জামায়াত-বিএনপি’ নির্মূলে এতো পারঙ্গম পুলিশ বাহিনী হাজার হাজার জনগণের সামনে মা-বোনদের রক্ষার্থে কিছুই করতে পারলো না, ভাবলেও বিস্মিত হতে হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা যেসব ধর্ষকামীদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করলোÑ তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে ধর্ষকদের সহায়তাকারী হিসেবে প্রমাণ করে বিশ্বের কাছে তারা আমাদেরকে অপমাণিত করেছে। মহামান্য হাইকোর্টের সুয়োমুটো রুল জারি না হলে ওসব বহিরাগত কাজ বলে দায়সারা মন্তব্য করে পার পাওয়ার চক্রান্ত চলছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি নিজেও মহিলা। আশা করি উপযুক্ত তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তি ও দায়িত্ব অবহেলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির বিধান তিনি করবেন। পবিত্র কুরআনে জুলুমবাজ জালিমদের সম্পর্কে ও তাদের সহায়তাকারীদের সম্পর্কে কতভাবেই না হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। সূরা ইব্রাহিমে আল্লাহ পাক বলেন, ‘জালিমদের কর্মকা- স¤পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন ভেবো না। তবে তিনি তাদেরকে শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন।’ ক্ষমতামদমত্ত জালিমরা নিজেদের পতনের কথা চিন্তাও করে না। তোষামোদকারী ও চাটুকারদের পরিবেষ্টিত অবস্থায় ক্ষমতাসীনেরা সাময়িকভাবে হলেও ‘ক্ষমতাহীন’ হওয়ার কথা কল্পনায় আনতে নারাজ কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হলো : ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে শোষকেরা যতো চক্রান্তই করুক না কেন, নির্মম পরাজয় ও পরাভব ততদ্রুতই তাদের নিকট অমোঘ নিয়তী হয়ে আবির্ভূত হয়। কিন্তু জালিমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। ইতিহাসের এটাও একটি শিক্ষা! পবিত্র আল কুরআনে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছো এবং সেসব জালিমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি- তা তোমাদের স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি (সূরা ইবরাহিম)।’ মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে আল্লাহপাক আমাদের সকলকেই শিক্ষাগ্রহণের তৌফিক দিন আমিন!!
পাদটীকা : দুঃস্বপ্ন দেখলেও যেখানে জামায়াত-শিবিরের উপর দোষ চাপানো ক্ষমতাসীনদের দুরারোগ্য ব্যধিতে রূপ নিয়েছে- সেখানে সরকার নিয়ন্ত্রণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মুখপাত্রদের কথার ধরনে গত ১লা বৈশাখের যৌন হয়রানির দোষারোপ তাদের ওপর বা মৌলবাদীদের ওপর না চাপালে কেমন দেখায়? পুলিশ বাহিনীর পাহাড়সম ব্যর্থতাকে পাশ কাটাতে ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার ও মুখপাত্র গত ১৭ এপ্রিল বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে পয়লা বৈশাখের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছিল। একটি মহল পয়লা বৈশাখের সংস্কৃতিতে ‘শিরক’ বলে প্রচার চালাচ্ছিল। তিনি সন্দেহ করছেন, যারা এই প্রচারণা চালিয়েছে তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ৪র্থ পৃষ্ঠা, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫)। জনৈক বেরসিক পাঠকের মন্তব্য : জামায়াত শিবির কিম্বা হেফাজত-খেলাফতের কর্মীরা দাড়ি-চুল কামিয়ে, প্যান্ট শার্ট পড়ে এরকম ঘটনা তো ঘটাতেও পারে? অতএব, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মুক্তির শুভ সকাল আসবে কখন


নববর্ষের দিনে নারীদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গত ১৯ এপ্রিল দুপুরে পুলিশের জন্য চুড়ি, শাড়ি ও ললিপপ নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। নারীদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে রোববার ৫ম দিনের মতো বিভিন্ন সংগঠন দিনভর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবাদী মানববন্ধনের শিক্ষার্থীরা- ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই’, ‘এই নরপশুদের শাস্তি চাই’, ‘দায়িত্বে অবহেলাকারী পুলিশের বিচার চাই’, ‘পশুত্ব ও পুরুষত্ব এক নয়’, এসব লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। এছাড়া নারী লাঞ্ছনার নিন্দা জানিয়ে ও দোষীদের শাস্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক। এতদিনেও অপরাধীদের কেউ গ্রেফতার না হওয়া সমগ্র জাতির জন্য রচম লজ্জাকর বলে তারা বিবৃতিতে মন্তব্য করেন। এদিকে টিএসসি এলাকায় যৌন হয়রানির ঘটনায় পুলিশ ‘কেলাস’ বক্তব্য দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিবস্ত্র হয়েছে কি হয়নি সেটি মুখ্য বিষয় নয়, যৌন হয়রানি হওয়াটাই মুখ্য বিষয়। আমরা আশা করবো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবে। প্রসঙ্গত তিনি যৌন হয়রানির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন। আমরা তো পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সম্মানের আসনে দেখতে চাই। কিন্তু তারা যদি সম্মানের আসনে নিজেদের অধিষ্ঠিত রাখতে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে এর চাইতে দুঃখজনক বিষয় জাতির জন্য আর কী হতে পারে?
বাংলা-বর্ষবরণ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। সামাজিক অনুষ্ঠানে শুধু যে সমাজের চিত্র ফুটে ওঠে তা নয়, সমাজে বসবাসকারী মানুষের রুচি এবং মূল্যবোধের মানও ধরা পড়ে। এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে নারীদের যৌন নির্যাতনের যে চিত্র লক্ষ্য করা গেছে, তাতে আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের মাত্রা উপলব্ধি করা যায়। একের পর এক নারীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা কোনো বনে-জঙ্গলে ঘটেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পুলিশের চোখের সামনেই ওইসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এখন আবার ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী।
উল্লেখ্য যে, তিনি ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নির্যাতিতা নারীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। লিটন বলেন, এ ঘটনার ছবি রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একজনের কাছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য ওই ছবিটি প্রকাশ না করার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছেন। ছবি প্রকাশ হলে ঘটনার অনেক কিছুই প্রকাশ হবে। লিটন নন্দী আরো জানান, যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারের চেয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় বেশি ব্যস্ত আছে পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কারণে ঘটনার পর এতদিন অতিবাহিত হলেও বখাটেদের কাউকে আটক করা যায়নি।
বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অনুষ্ঠান আয়োজন ও উপভোগে আমরা উৎসাহিত হলেও প্রকৃত অর্থে আমরা এখনও সংস্কৃতিমনা হয়ে উঠতে পারিনি। আর নারীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা কি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনেই ঘটেছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বহু জায়গায় ওই ন্যক্কারজনক ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনসহ আরো কোনো কোনো জায়গা থেকে বর্ষবরণ উপলক্ষে বিভিন্ন পশুপাখির মুখোশ ও মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ উপলক্ষে মঙ্গল, কল্যাণ, শান্তি ও শুভবার্তা উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ওইসব উচ্চারণের তাৎপর্য আমরা কতটা উপলব্ধি করি, কতটা চর্চা করি? আসলে নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ না হয়ে পশুপাখির সাজ-সজ্জায় টোটেম বিশ্বাসকে আশ্রয় করে জৌলুসপূর্ণ শোভাযাত্রা প্রদর্শন করা গেলেও তাতে মানুষকে প্রকৃত সংস্কৃতিমনা করা যায় না। এর বাস্তব উদাহরণ আমরা নারী নির্যাতনের ঘটনায় লক্ষ্য করলাম। প্রসঙ্গত এখানে রবীন্দ্রনাথের একটি বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছিলেন, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি; কিন্তু মানুষ সহজে মানুষ নয়।
মানবজমিন পত্রিকার ১৮ এপ্রিল সংখ্যায় নারী নির্যাতন ঘটনা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের দায়িত্ব পালনের চিত্রে খুশি হওয়া যায় না। এমনকি ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী ও তার সাথীরা ৫ জন নির্যাতনকারীকে ধরে এসআই আশরাফের কাছে সোপর্দ করা হলেও তাদের আইনের আওতায় নেয়া হয়নি; বরং তাদের এসআই আশরাফ ছেড়ে দিয়েছেন। আর অন্যদিকে ঘটনার কথা জানার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এএম আমজাদ ছিলেন দাবা খেলায় ব্যস্ত। নারী নির্যাতনের ঘটনায় সভা-সমাবেশ থেকে দোষীদের শাস্তির সাথে সাথে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা তদন্তেরও দাবি উঠেছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। কারণ জনগণের জান-মাল ও ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকার সেই দায়িত্ব কতটা পালন করে- সেটাই এখন দেখার বিষয়।
একটি সরকার গণতান্ত্রিক সরকার কিনা তার ব্যারোমিটার হলো সুশাসন। দেশে সুশাসন নেই বলেই দুর্বৃত্তরা আজ যত্রতত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর সরকার তো তার অন্যসব দায়-দায়িত্বকে গৌণ বিবেচনা করে বিরোধী জোটকে দমন-পীড়নের কাজকেই মুখ্য করে তুলেছে। এমন অবস্থায় জনমনে এখন গুঞ্জরিত বক্তব্যটি হলো, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলেই সরকার গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। আর গণতান্ত্রিক পদ্ধতির খোলসে ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা দেশ-বিদেশে এখনও বিপুলভাবে পশ্নবিদ্ধ। সরকার তার ভুল ও দুর্বলতা উপলব্ধি করে সংযম ও সংশোধনের পথে হাঁটলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারতো। কিন্তু এর বদলে সরকার দমন-পীড়নের কৌশল অবলম্বন করায় পুুলিশের সাথে সাথে তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
ছাত্রলীগ ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন শিরোনামে পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট মুদ্রিত হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুর ও কুমিল্লায় নিহত হয়েছে ৩ জন, আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ। গত বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ২ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলী ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। গত সপ্তাহে কুমিল্লায় জেলা ছাত্রলীগের কর্মী সভায় দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগ সভাপতি এম সাইফুল ইসলাম নিহত হয়। কুমিল্লা টাউনহল মিলনায়তনে ছাত্রলীগের এই কর্মী সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুটি গ্রুপ। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমিতি ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে এক সপ্তাহ ধরে অচল রয়েছে বুয়েট ক্যাম্পাস। এদিকে পহেলা বৈশাখে ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকা- থেকে রেহাই পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার দায়ে ৬ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে সংগঠন থেকে। এদিকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অপকর্মের তালিকা আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু তালিকা দীর্ঘ করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। তবে প্রশ্ন জাগে, দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনাকাক্সিক্ষত এসব কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে কেন? তাহলে কি তারা ঐতিহ্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে? আমরা জানি, একটি প্রগতিশীল সংগঠনকে ঐতিহ্য ধারণ করেই বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৃজনশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। ছাত্রলীগ কি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে? আমরা মনে করি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিব্রতকর কর্মকান্ডে দু-চারজনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের ইমেজ পুনরুদ্ধার করা যাবে না। নেতাকর্মীদের নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে মুক্ত করে ইতিবাচক কর্মকা-ে প্রাণবন্ত করতে হলে, বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের গভীর পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আর সেই দায়িত্ব পালনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি তাদের যারা পরিচালনা করেন সেই অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। প্রসঙ্গত আমরা বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর উজ্জ্বল অতীতের কথা স্মরণ করতে পারি। তখনকার ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাসে বা রিকশায় চড়ে কাজ করতো। এখনকার মতো দামি গাড়ি হাঁকাতো না। তারা ট্রাফিক আইন মেনে চলতো, ট্রাফিক পুলিশের ওপর চড়াও হতো না। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল না। তারা প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে হত্যা করতো না, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজ দলের নেতাকর্মীকে হত্যা করতো না। তখনকার ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের কাজের ও দায়িত্ব পালনের সীমা উপলব্ধি করতো। সীমা লঙ্ঘন করে তারা নিজেদের ইমেজ ক্ষুণœ করতো না। তখনকার ছাত্র সংগঠন কিংবা ছাত্র আন্দোলন প্রধানত শিক্ষা ও ছাত্রদের বিষয় নিয়ে কাজ করতো। তারা সমকালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আদর্শিক তর্কবিতর্কও করতো। আবার জাতীয় প্রয়োজনে সময়ের দাবি পূরণে তারা এগিয়ে এসেছে সাহসের সাথে। তখন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা জ্ঞানচর্চায় বেশ উৎসাহী ছিল। তারা পাঠচক্র এবং সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করতো। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস পুনঃপাঠ করলে দায়িত্বশীলরা ছাত্রলীগকে ঐতিহ্যের ধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হতে পারেন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন যেভাবে পদ দখল, হল দখল, টেন্ডার দখলে ব্যস্ত রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এর বদলে সংগঠনটির অভিভাবকরা যদি ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির বৃত্তে অবস্থান করে ওদের প্রশ্রয় দিয়ে যান, তাহলে তা হবে আত্মঘাতী কৌশল। পথভ্রষ্ট নেতাকর্মীরা কারো জন্যই কল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে না, নিজেদের জন্যও নয়। তার প্রমাণ পাওয়া গেল এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। ঢাকা দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ আব্দুল হামিদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে গেলে তাকে ধাওয়া দিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। আর এর মূলে রয়েছেন একই এলাকার অপর প্রার্থী ওয়াার্ড ছাত্রীলগের সহ-সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ। উল্লেখ্য যে, কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ আব্দুল হামিদ খান ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ১৮ এপ্রিল তাকে এবং মহিলাসহ ৪০ জন কর্মীকে লাঞ্ছিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করতে হয়। তাই প্রশ্ন জাগে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন লালনের কোনো প্রয়োজন আছে কী? বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং তাদের অভিভাবকরা ভেবে দেখলে ভালো করবেন। তবে তেমন সুমতি তাদের হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা তাদের সুমতির জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবো। কারণ সুমতি ও শুভ ভাবনার অভাবেই দেশের মানুষ আজ নানা দুর্ভোগের শিকার। এমন অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। জানি না মুক্তির সেই শুভসকাল কখন কীভাবে আমাদের জীবনে ফিরে আসবে।

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি এখন ডাকাতের গ্রাম ?


প্রায় এক দশক বা তারও আগে দেশের বরেণ্য কবি আল মাহমুদ একটি কবিতা লিখে দারুণ বিপাকে পড়েছিলেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল আর বুয়েটের মাঝামাঝি এলাকায় প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি ছিনতাই ডাকাতি রাহাজানি হতো। ঐ পথে চলাচলকারী নারীরাও নিরাপদ ছিলেন না বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো। সে খবরে ফুঁসে উঠেছিল সাধারণ মানুষও।
এর ওপর ভিত্তি করে কবি আল মাহমুদ লিখেছিলেন একটি কবিতা। তার শিরোনাম ছিলো- ‘কদর রাত্রির প্রার্থনা’। সেই কবিতায় লুণ্ঠিত লাঞ্ছিত নিগৃহীত মানবতা পুনরুদ্ধারের জন্য কদর রাত্রে মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন কবি। তিনি লিখেছেন ‘হে আল্লাহ/হে সমস্ত উদয়দিগন্ত ও অস্তাচলগামী আলোকরশ্মির মালিক/আজকের এই পবিত্র মহাযামিনির সব রকম বরকত আমাকে দাও।/আমাকে দাও সেই উত্তেজক মুহূর্তে স্বর্গীয় পুলক যাতে/একটি সামান্য গুহার প্রস্তুরীভূত শিলাসহ কেঁপে উঠেছিলেন/মহানবী মোহাম্মদ (সাঃ)/না আমি তো পড়তে পারছি না এই অন্ধকারের অন্তস্তলে/বিদ্যুতের ঝলকানি কোন্ অক্ষর আর ইঙ্গিতময় বাণী ক্রমাগত লিখে যাচ্ছে/ শুধু আমার মাতৃভূমিকে পেঁচিয়ে আবর্তিত হচ্ছে এক কুটিল অন্ধকার।’
তারপর স্বদেশের জন্য তার অনেক আবেগময় তাড়িত প্রার্থনা। ‘আমরা বৃষ্টির প্রার্থনা করে তোমার কাছে পেলাম/আমাদেরই অনুতপ্ত অশ্রুবারী/তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষুব্ধ নিঃশ্বাসে দুমড়ে-মুচড়ে উড়ে গেলো/কত গ্রাম আর অসহায় মানুষের বাসস্থান/উহ্, গাছগুলোর দিকে তাকালে অন্তরাত্মার না না/ করে ওঠে। যেন যুদ্ধ শেষে/অসংখ্য বল্লম বিজয়ীরা মৃতের ময়দানে উলটো করে পুঁতে রেখেছে।’
কবিতায় তিনি আরও বলেছেন, ‘হে আল্লাহ্/পবিত্রতম মহাযামিনীর অধিপতি,/তুমি তো একের পাপ অন্যের ঘাড়ে বর্তাও না।/পিতার পাপ পুত্রকে স্পর্শ না করার, হে প্রতিশ্রুতিদানকারী/দ্যাখ সহস্রাধিক মানুষের লাশ নিয়ে আমরা কোরআন নজুলের/পুণ্য রজনীতে এখন সিজদারত/আমাদের রাজ-রাজড়াদের পাপে তুমি যেন আমাদের ধ্বংস করে দিও না।/কেন এক প্রাচীন তৈহীদবাদী জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার রজ্জু/তুমি পরাক্রান্ত পৌত্তলিকদের হাতে তলে দিতে চাও?/আমরা কি বংশানুক্রমে তোমার দাস নই?/আমরা তোমার নামের কোনো জেহাদেই অতীতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিনি।/তোমার অনুগ্রহ থাকলে/আমাদের সিজদারত সন্ততিরাও রক্ত-বারুদের সমাধানই/শেষ পর্যন্ত বেছে নেবে/ এই পুণ্য রজনীতে আমাদের আবরিত স্ত্রীদের ও কন্যাদের গোনা প্রভু/মাফ করে দাও।/কদর রাত্রির প্রার্থনায় বলা হয়েছে, ‘হে অনুকম্পার মহান অধিপতি,/এই মহানগরীর ভদ্রবেশী বেশ্যা, লম্পট, হেরোইনসেবী ও ছিনতাইকারীর/প্রাত্যহিক পাপের দেনায় আমরা এমনিতেই অতিষ্ঠ,/এর সাথে যোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান পন্ডিতেরা/শিক্ষার প্রতিটি প্রাঙ্গণ কিশোর হত্যার মহাপাপে এখন রক্তাক্ত, পঙ্কিল।/প্রকৃত পাপীদের বিনাশ তরান্বিত করতে তুমি কি বাংলাদেশের/প্রতিটি বিদ্যাপিঠকে বিরান করে ফেলবে?/এমনিতেই গ্রামে গ্রামে ধসে পড়া স্কুল, বাড়িগুলোর ভেতর থেকে/শেয়াল আর পেঁচার ডাকে প্রাইমারী স্কুলের আবু মাস্টারের ঘুম নেই/তার মধ্যে তারই একমাত্র শহুরে পড়ুয়া মেয়েটির গলার চেন ও হাতের বালা/জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তা থেকে ছিনতাই হলো। বুকের উপর ছুরি রেখে/খুলে দে হারামজাদী, চুপ্’।
আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমরা তো চুপ করেই আছি, তবু হে পরোয়ারদিগার/জানতে সাধ জাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি ডাকাতদের গ্রাম?/বাল্যে যেমন কোনো গাঁয়ের পাশ দিয়ে নাও বেয়ে ফিরতে গেলে/মুরুব্বীরা বলতেন, ওপথে যেও না অমুকটা হলো ডাকাতের গ্রাম।/প্রভু/ডাকাত, ছিনতাইকারী, পন্ডিত ও বেশ্যাদের হাত থেকে তুমি ইল্মকে রক্ষা করবে না?-রাব্বি যিদনী ইল্মা-/প্রভু, আমাদের জ্ঞান দান করো।’
সেখানে গ্রাম জীবনের বর্ণনা ছিল। চোর-ডাকাতের গ্রামের পরিচিতি ছিল। তা নিয়ে ছেলেপেলেদের আগে থেকেই অভিভাবকরা শিখিয়েছেন, ও গ্রামের পাশ দিয়ে যেন আমরা কেউ না যাই। আমাদের গ্রামেও ডাকাতের বাড়ি ছিল। চোরের বাড়ি ছিল। আমরা সেসব বাড়ি এড়িয়ে চলেছি। তা নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত ছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’য়ও আছে চোরের গ্রামের অসাধারণ বর্ণনা ও তাদের জীবনধারার বিবরণ। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘পুল পার হইয়া কিছুদুর অবধি রাস্তার দু’পাশে শুধু চষা ক্ষেত। তারপর গ্রাম আরম্ভ হইয়াছে। এদিকে বসতি কম। রাস্তার দক্ষিণে ঝোপঝাপের বেষ্টনীর মধ্যে পৃথক কয়েকটা ভাঙাচোরা ঘর বৃষ্টিতে ঘরে-বাইরে ভিজিয়াছে। ওখানে সাত ঘর বাগদী বাস করে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ওরাই সবচেয়ে গরীব, সবচেয়ে ছোটলোক, সবচেয়ে চোর। দিনে ওরা যে গৃহস্থের চাল মেরামত করে রাত্রে সুযোগ পাইলে তাহারই ভিটায় সিঁদ দেয়। কেও না কেও ওদের মধ্যে ছয় মাস-এক বছর জেলেই পড়ে আছে। ছাড়া পাইবার পর গ্রামে ফিরিয়া বলে, শ্বশুর-ঘর থে ফিরলুম দাদা। বেশ ছিলাম গো!’
কবি আল মাহমুদের অনন্য সাধারণ কবিতাটি প্রকাশিত হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ এখানকার-ওখানকার তথাকথিত পন্ডিতেরা মূর্খের মতো তারস্বরে চিৎকার আরম্ভ করলো। বললো, আল মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা একেবারে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছেন। এই নষ্ট লোকেরা আজকের দিনের মতোই মূর্খতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে দিয়েছিলো। কেউ কেউ এমনও ইঙ্গিত করেছিলেন যে, আল মাহমুদ যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি তাই তার এতবড় ধৃষ্ঠতা। এমন অমার্জনীয় অপরাধের জন্য তাকে করজোড়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যে কবি জাতির কল্যাণের জন্য, জাতির ইলমের জন্য শবেকদরের রাত্রে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করছেন, সেই উন্নতশির কবি কতগুলো নাখান্দা লোকের কাছে একালের মেরুদ-হীন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাইয়ের মতো করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন? হাসনাত আব্দুল হাইয়ের একটি গল্পের প্রতিবাদ করেছিলো কিছু শাহবাগী লাফাঙ্গা। আর তিনি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বসলেন। এমনকি ঘোষণা করলেন, ভবিষ্যতে তার লেখা এই ছোট গল্পটি তিনি তার কোনো বইয়ে ঠাই দেবেন না। আল মাহমুদ মাথা সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। দাঁড়িয়ে আছেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত তার ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র তৃতীয় সংস্করণে কবিতাটি সমুজ্জল হয়ে আছে। আত্মমর্যাদাবান মানুষের এমনই হতে হয়।
এখন কি জবাব দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বঘোষিত প-িতেরা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিভিন্ন কলেজেও এবারের পহেলা বৈশাখে নারীদের ইজ্জতহানির যে মহোৎসব অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-ছাত্ররা তার কি জাবাব দেবেন? আল মাহমুদের যে কাব্যগ্রন্থে এই কবিতাটি সন্নিবেশিত হয়েছে তার নাম ‘একচক্ষু হরিণ’। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। যদি সেদিন দরিদ্র স্কুল মাস্টার আবু মিয়ার ‘একমাত্র শহুরে পড়ুয়া মেয়েটির’ ছিনতাইয়ের বিচার হতো, আল মাহমুদের বিরুদ্ধে রাস্তায় রাস্তায় চিল্লাপাল্লা না করে ছিনতাইকারীদের ধরে শাস্তির বিধানের দাবি করা হতো, তাহলে আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণশ্লীলতাহানির ঘটনা কিছুতেই ঘটতো না। সেসব বুঝবার শক্তি এই ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের আছে বলে মনে হয় না। আর মহান আল্লাহ তা’য়ালা যাদের কলফ্ এ সিল মেরে দিয়েছেন, যোগ্যতার প্রশ্ন নেই, তারাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পদ অলঙ্কৃত করছেন। আর সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নিগ্রহ এখন দৈনন্দিন ও স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ‘রাব্বি যিদনি ইল্মা/প্রভু, আমাদের জ্ঞান দান করো’। আর শাসকের পাপের জন্য আমাদের শাস্তি দিও না।
এখন ভিন্নচিত্র দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণী-যুবতী, মা-কন্যা নির্বিশেষে যারা গণহারে দলিত, মথিত, লাঞ্ছিত হলেন, শ্লীলতাহানির শিকার হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলো না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তো হবার কথা-উদার জ্ঞান, মুক্ত মন ও মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য। দুশ্চরিত্র শাসকেরা সেই মৌলিক মূল্যবোধগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। আর তাই একেবারেই আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ চালু হয়েছে বাংলাদেশে।
কিন্তু তার ভেতরেও ‘সত্য’ সাধকের অভাব হয় না। কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেছেন, ‘সত্য কে আজ হত্যা করে অত্যাচার খাঁড়ায়?/ নাই কিরে কেউ সত্য সাধক বুক খুলে আজ দাঁড়ায়?’ দু’চারজন সত্য সাধক তো আছেন। এত গড্ডালিকা প্রবাহের মধ্যেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী ও তার সহযোগীরা। ছাত্রলীগের নির্যাতনে বস্ত্রহারা নারীরা যখন অধিকতর লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছিলেন, তখন এগিয়ে গিয়ে বাধা দিয়েছেন নিজের গায়ের শার্ট, পাঞ্জাবী খুলে তাদের আব্রু রক্ষার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের দল মেয়েদের এই শ্লীলতাহানির দৃশ্য যেন উপভোগই করছিলো। লিটন যখন তাদের বলছিলেন, মেয়েটিকে বাঁচান, পুলিশ তাদের বলেছে-ওটা তাদের ডিউটির এলাকা নয়। আর্তচিৎকারকারী মেয়েদের বাঁচাতে আসেনি পুলিশ। দু’ঘণ্টা তান্ডবের পর জনতাই যখন ফুঁসে উঠেছিলো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো, তখন এগিয়ে এসেছিলো পুলিশ। সম্ভবত কৃতিত্বটুকু নেবার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলীকে জানানো হয়েছিলো বহু আগেই। তিনি দেখছি বলে কম্পিউটারে দাবা খেলছিলেন। এগিয়ে আসেননি। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়? ধিক্কার দেই সেই সব কর্তৃপক্ষকে, যারা এইসব নষ্ট লোকদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন, যারা তাদের প্রক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ করেছেন।
এই প্রক্টরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেননি। কবি আল মাহমুদও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। মহাকবি সেক্সপীয়ার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম-এদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না। কিন্তু আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ বছর লেখাপড়া করেছি। এখান থেকেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছি। বেদনায় নীল হয়ে যাই। আমার ভালোবাসার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এখন ডাকাতদের গ্রামে পরিণত হয়েছে। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলে এখন ঐ ধর্ষণকারীদের রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা যা বলছেন তার সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, ভিডিও ফুটেজ বা স্টিল ক্যামেরার ছবি কোনোটাই মিলছে না। শ্লীলতাহানিকারীদের ছবি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লাঞ্ছনার শিকার নারীকে লাঞ্ছিত হতে দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বলছে-তাদের চেনা যাচ্ছে না। এই গণদুশমনদের হাত থেকে জনগণকেই সম্মিলিতভাবে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে হবে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সেই তওফিক দান করুন। আমীন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রকাশ্যে বিবস্ত্রকরণযজ্ঞ কে থামাবে? অপমানদগ্ধ নারীকে কে বাঁচাবে?


বস্ত্রহীন-বিপন্ন নারীর বাঁচাও বাঁচাও আর্তচিৎকার প্রায় সবাই শুনেছেন। পহেলা বৈশাখের দিন নারীর প্রতি সহিংসতা ও চরম অবমাননার ঘটনাটি সবার নজরে এসেছে। অবশ্য এটাও ঠিক যে, অনেক ঘটনা নজরের বাইরেই রয়ে গেছে। সব খবর সবসময় প্রকাশ পায় না। কখনো আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্তরাও লোকলজ্জার ভয়ে অনেক কালো দাগ আর যন্ত্রণা চেপে রাখে। জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণের সেঞ্চুরির খবর এসেছিল। যারা সেঞ্চুরি করতে পারেনি, তাদের খবর হয়তো আসেনি। একজন আদিবাসী ছাত্রীকেও সম্প্রতি পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়েছে সেখানে। এসবই রতন-মানিকদের কীর্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের সন্নিকটে জাতীয় পর্যায়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীকে বিবস্ত্র ও লাঞ্ছিত করার খবরটিও চেপে রাখা যায়নি। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ধারণও করেছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বা সামাজিক মিডিয়ায় সবিস্তারে ও সচিত্র বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে। চরম নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের এহেন অবক্ষয় পৃথিবীর অন্যত্র দেখা যায় কিনা, সন্দেহ। শাহবাগকেন্দ্রিক কথিত আন্দোলনের নামে তরুণ-তরুণীদের উত্তেজিত করার পাশাপাশি পর্দার আড়ালে আদিরসের খেলা জমানো হয়েছিল। এসব বদমায়েশি উগ্র-রাজনীতির উন্মাদনা করেছে এমনই পশুরা, যারা উত্তেজনা-উস্কানি ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। অন্ধকারের এসব নেতিবাচক শক্তির পশুত্বই বারবার প্রত্যক্ষ করেছে সমগ্র জাতি। মুখে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ আর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ধুয়া তুলে জঘন্যতম নারী নির্যাতনের খলনায়করা এখন সত্যকে মিথ্যা আর ভালোকে মন্দ বলে অভিহিত করছে। সময় এসেছে আয়নায় উদ্ভাসিত এদের কুচরিত্র ও আসল অবয়ব প্রকাশ এবং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার। এরা যে আসলে কত নিকৃষ্ট, সেটাও মানুষের অনুধাবনের প্রয়োজন রয়েছে। না হলে এই ঘৃণ্য অপশক্তিই ঘৃণা আর পশুত্বের দ্বারা নারীত্ব আর মানবতার চরম লাঞ্ছনা ঘটাতেই থাকবে। ধর্ম, দর্শন, নৈতিকতার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। বাংলাদেশকে লুটপাটের দেশ আর নারীদের পথে-ঘাটে উপভোগের সামগ্রীতে পরিণত করবে। মানুষ নিশ্চয় নিজের মা-বোনদের ইজ্জত-আব্রু, নিজের বিশ্বাসকে প্রকাশ্যে পদদলিত হতে দেবে না।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস ও বাস্তবতা লক্ষ করলে দেখা যায়, দেশে রাজনৈতিক বিপর্যয় যথেষ্ট হয়েছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও সামান্য নয়। আইনশৃঙ্খলার বিপর্যয় তো অতলস্পর্শী। নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অনেকবারই পহেলা বৈশাখ বা এ ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার সেটা আরো আগ্রাসী রূপেই ঘটেছে এবং লক্ষ করার বিষয় হলো, নিগৃহীত নারীর বাঁচাও বাঁচার চিৎকারে দু-একজন ছাড়া অন্যদের মধ্যে সামাজিক প্রতিরোধ তৈরি হয়নি। জাতির বিবেকের পক্ষেও সুতীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়নি। কর্তাব্যক্তিরা নারীর অপমানে বিশেষ কুণ্ঠিত হয়েছেন বলেও মনে হয় না। হলে, সেখানে দায়িত্বরত অথচ অকর্মন্য পুলিশের চাকরি থাকার কথা নয়। যারা সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী রূপে উপস্থিত ছিলেন এবং যারা খবরটি পরে জেনেছেন, তাদেরও অপমানে নতজানু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিশেষ কিছুই হয়নি। এদেশে হত্যার বিচার না হলে কিংবা গুম-হওয়া মানুষ পাওয়া না গেলে যেমন কিছুই হয় না; দেশের প্রধান শহরে দিবালোকে নারীর বস্ত্রহরণ করলেও মনে হচ্ছে মানুষের বিবেকের দরজায় সশব্দ প্রতিবাদ ও ঘৃণার স্ফূলিঙ্গ জ্বলে ওঠে না। মানুষ বরং আনন্দিত হয় চটুল বিতর্কে, রুটিহীন আক্রমণে, অশালীন বক্তৃতায়। কর্তারাও ঘটনার প্রতিবিধানের বদলে রাজনৈতিক ঘোলাজল ও প্রতিপক্ষ নিধনেই পারদর্শী। সাগর-রুনী, ইলিয়াস আলী, সালাহউদ্দিন ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে কার্যকর তৎপরতার বদলে বাজার-মাৎ-করা রাজনীতি যথেষ্ট হয়েছে। এদেশে যে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার কার্যকারণ অনুসন্ধানের চেয়ে সেটি নিয়ে গুজব উৎপাদন ও রাজনৈতিক যুদ্ধ শুরু করাই সহজ। এ কারণেই কেন পহেলা বৈশাখের মতো আয়োজনের মধ্যে প্রকাশ্য-জনসমক্ষে নারীকে উলঙ্গ করার মতো ঘটনা ঘটেছে, সেটা অনুধাবন করা জরুরি। বিশ্বের যেসব দেশকে ফ্রি সেক্স বা উদার জীবনযাপনের জন্য আমরা নিন্দা করি, সেসব দেশেও এমন অনাচার করার সাহস কেউ পায় না! প্রায়ই অনেকে ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলেন এবং হিন্দি ছবির কদর্যতার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যে হচ্ছে, সেটাও সত্য। সেই ভারতেও নারী একাকী থাকলে কখনো কখনো নিগৃহীত বা ধর্ষিতা হয়; কিন্তু হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বা উৎসব আমেজের মধ্যে দলবদ্ধ হয়ে নারীকে বস্ত্রহীন করা হয় না।
তাহলে প্রশ্ন হলো, এদেশে এমনটি হচ্ছে কেন? এদেশে তো ধর্মীয় রক্ষণশীলতা না থাকলেও শালীনতা আছে। মানবাধিকারের বিরাট বিরাট প্রবক্তা আছেন। নারী আন্দোলনের অনেক অগ্নিময়ী সেনানী আছেন। তদুপরি রাজনীতির ময়দানের পক্ষ আর প্রতিপক্ষ দুর্গের কর্ণধার হয়ে আছেন দুজন নারী। শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার বহু ব্যক্তি ও সংগঠন আছে। সবাই মিলে এতদিন তাহলে কী করলেন যে কতিপয় কামাসক্ত সদম্ভে তাদের পাশবিক লালসা চরিতার্থ করতে পারলো? এসব অপরাধী কারা? কী তাদের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরিচয়? এসব প্রশ্ন নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং সঠিক উত্তর বের করতে হবে। যারা ঘটনার অনুসন্ধান করবেন তারাই শুধু নয়; প্রতিটি সচেতন নাগরিককেই এখন এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর রাজনৈতিক ঘোলাজল সরিয়ে বের করতে হবে। জানতে হবে, আমরা কাদের সঙ্গে আছি বা কারা আমাদের সঙ্গে আছে। পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট ইত্যাদি উৎসব কেন অপরাধীদের দাপট দেখানোর ক্ষেত্রে পরিণত হয়? চারদিকে কেন পাশবিক শক্তির অভয়ারণ্য? এসবই এখন ব্যক্তি মানুষ বা সামাজিক মানবগোষ্ঠীর কল্যাণ যারা চান, তাদের চিন্তা-ভাবনার বিষয়।
মনে রাখা ভালো, শুধু গান-বাজনার নাম সংস্কৃতি নয়, সংস্কৃতি হলো শুদ্ধবোধ ও বিশ্বাস। ধর্মীয়, নৈতিক ও আদর্শিক দৃঢ়তা সংস্কৃতির শক্তি। সেটা নস্যাৎ হয়ে গেলে হৈ-হুল্লোড়, উগ্র-উচ্ছ্বাস, বাড়াবাড়ি ও বেলেল্লাপনা বাড়বেই; বিপর্যয় আসবেই। রাজনীতি বা অর্থনীতিতে যেমন এসেছে; সংস্কৃতিতেও এখন তেমনি বিপর্যয় ধেয়ে আসছে। অর্থাৎ একটি ক্ষেত্রের বিপর্যয় আরো অনেকগুলো ক্ষেত্রে ধস ডেকে আনছে। বৈশাখী আয়োজনে নারীর বস্ত্রহরণের ঘটনার মাধ্যমে সর্বব্যাপী ধস ও বিপর্যয়ের চিত্রটিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল অপরাধীরা এবং অপরাধীরা যে এখন আর কাউকে পরোয়া করে না, সে বার্তাটিও জানিয়ে গেলো প্রকাশ্য সূর্যালোকে হাজার হাজার মানুষের সামনেই অপকর্মটি সংগঠিত করার দ্বারা। এসব অপরাধের ফলে সৃষ্ট ক্ষত আর লজ্জা কার?
অপরাধের আগেই উচিত অপরাধের কারণ বন্ধ করা। আল্লামা সাঈদী ইংরেজি নববর্ষের নামে রাতভর মদ্যপান আর উচ্ছৃঙ্খলার বিরুদ্ধে জনমত গড়েছেন সারা জীবন। প্রাজ্ঞ আলেম ও চিন্তাবিদ জানতেন, এসব কুপ্রবণতা মানুষের পশুত্বকে বলবান করবে। তাই তিনি মুসলমানদের নিজের ধর্ম-সংস্কৃতি আঁকড়ে থাকার আহ্বান জানাতেন। তথাকথিত সেক্যুলার ও প্রগতিশীল মহল আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুধু তাকেই নয়, যারাই ইসলাম আর নৈতিকতার কথা বলেছেন, তাদেরই মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক, যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে ফেলা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব যেমন জনআন্দোলনকারী বিপ্লবীদের জঙ্গি নাম দিচ্ছে, এখানেও ইসলাম, নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারের পক্ষের মানুষদের চরিত্রহনন করা হচ্ছে। তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়েও দেয়া হচ্ছে। যারা অন্যায়, অনৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদেরই যদি সরিয়ে দেয়া হয়, তখন তো পাশবিক শক্তিরই জয়জয়াকার। এমন পাশবিক অপশক্তিই চারদিক থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে সমাজ ও মানুষকে ক্রমেই ঘিরে ফেলছে। আমাদের নারীরা, আমাদের সমাজের আদর্শ মানুষ, আলো ও আদর্শের পতাকাবাহী তরুণেই তাই আজকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। আর ধর্ষণের সেঞ্চুরিকারীরা পুরস্কৃত।
এমন পরিস্থিতি অবশ্যই চিন্তার কারণ। এতে সমাজ ও মানুষের মানমর্যাদা-নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত হতে বাধ্য। তারপরও এ অবক্ষয়ের মধ্যেও রয়েছে আলোর দিশা। ইউরোপ-আমেরিকার প্রচ- ভোগবাদ ও ইন্দ্রীয় সুখের নামে বিকৃতি ও বিপদ টের পেয়ে সেখানে দলে দলে মানুষ যেভাবে ইসলামে দাখিল হচ্ছে, পর্দা মেনে নিচ্ছে, বাংলাদেশেও সেটা হবে; হতে বাধ্য। ইউরোপ-আমেরিকায় ইসলামের নৈতিক ও আদর্শিক দিকগুলোকে ব্যবহারিক জীবনে সবচেয়ে বেশি মেনে নিচ্ছে সেসব দেশের নারী সমাজ। কারণ তারা দেখেছে পশ্চিমা সমাজ কি নৃশংসভাবে নারীকে উপভোগ করে এবং এক সময় পরিত্যাগ করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আর ইসলাম? নারী এবং অপরাপর মানুষকে ইহ ও পরকালীন জীবনে মর্যাদার নিশ্চয়তা আর সম্মান দান করে। করে বলেই মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও অকুতোভয়চিত্তে নন্দিত জননেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান হাসতে হাসতে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। শহীদ আবদুর কাদের মোল্লা আদর্শের জমিনে অটল থাকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। শহীদ আবদুল মালেক থেকে এদেশের মাটিতে ইসলাম, নৈতিক মূল্যবোধ ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার যে চলমান সংগ্রাম, তা নারীকে লাঞ্ছনার হাত থেকে বাঁচাতে এবং মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে উচ্চমর্যাদায় আসীন করার প্রত্যয়ে দীপ্ত। দেশের সর্বত্র অবদমিত ও নিগৃহীত নারী-পুরুষ ক্রমে ক্রমে আদর্শের বাতিঘরের আলোকস্তম্ভ দেখতে পাচ্ছেন। অন্যদিকে তারা এটাও দেখতে পাচ্ছেন খলনায়ক ও উত্তেজনার নামে মানুষকে দিকভ্রান্তকারীদের কুচরিত্র। সত্য আর মিথ্যার নিরন্তন দ্বন্দ্বে আকীর্ণ বাংলাদেশ আদর্শের পথে মহৎ আত্মত্যাগের প্রেরণায় মানবতাবিরোধী প্রকৃত অপশক্তির ছদ্মবেশ অচিরেই উন্মোচিত করবে এবং এদের পদাঘাতে পদাঘাতে পর্যুদস্ত করে সত্য ও মানবিক মর্যাদার আলোকমালা প্রজ্বলিত করবেই। কারণ কোনো মহৎ ও আদর্শিক ত্যাগ ও সংগ্রাম কখনোই ব্যর্থ হয় না। বিশেষত যখন চারদিকে নির্যাতিত নারী ও মানুষের আহাজারি আর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার, তখন ইসলাম ও মুসলমানদেরই ঐতিহাসিক দায়িত্বে মানবতার ত্রাণে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে মুসলমানদের মূল দায়িত্ব এবং ইসলামের স্বর্ণালী যুগে স্পেন থেকে সুদূর চীন পর্যন্ত মুসলমানরা মানবতাবাদী এমন আদর্শিক দায়িত্বই পালন করেছেন। বিপর্যস্ত মানবিক-মর্যাদা ও অধিকারহীনতার বাংলাদেশে এখন সেই নৈতিক-আদর্শিক দায়িত্ব পালনের দায়িত্ব চূড়ান্ত পর্যায় চলছে। সম্মিলিত ইসলামী আন্দোলনকে এখন আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ও অবক্ষয় প্রতিহত করে মানুষ ও মানবতাকে বাঁচাতে হবে। কারণ এযাবতকাল মানুষ তথাকথিত উদার ও আদর্শহীন রাজনীতিকে দেখেছে মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠস্বরূপ। এদের দ্বারা গুণগত-আদর্শিক উত্তরণ আসলেই সম্ভব নয়। এরা একে অপরের প্রকাশ্য শত্রু হলেও মূলগত বন্ধু। এখন প্রয়োজন সাচ্চা, পরীক্ষিত, আদর্শবাদী আন্দোলনের দিন। যারা সামনের কাতারে এসে নারীর লজ্জা মুছে দেবে। নারীকে প্রকাশ্যে বস্ত্রহীনতা থেকে রক্ষা করবে। আর কাউকে ইজ্জত-আব্রুর জন্য বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে দেবে না। যারা নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যও আপস করেন না; তারা এবং তাদের অনুসারীরাই বিপন্ন নারী-পুরুষ-মানবতাকে বাঁচাতে পারবে। এই সত্য যত দ্রুত মানুষ উপলব্ধি করবে; তত দ্রুত বাংলাদেশের বিদ্যমান কালো অধ্যায় ও অন্ধকার কেটে যাবে।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরবে কে?


ছাত্রলীগ, ছাত্রসমাজের কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। ছাত্র রাজনীতির নামে ছাত্র হত্যার মহাউৎসবে মেতে উঠেছে এই সংগঠনটি। কে বিরোধী আর কে নিজ দলের বাছাই করার সময় এই দলের ক্যাডারদের হাতে নেই। সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা, অপরকে পিটিয়ে ছাতু বানানোই এদের কাজ। ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করা এখন তাদের কাছে ডাল-ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক নির্যাতনেও বেশ এগিয়ে। এদের অপকর্মের তালিকা করতে বসলে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে।
আজকের লেখার এই শিরোনামটি তৈরি করে রেখেছিলাম চার মাস আগেই। কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সময় করতে না পারায় লেখা হয়ে উঠেনি। সাথে এই ভাবনাটিও অবশ্যই ছিল যে সত্য তুলে ধরতে গিয়ে কার চক্ষুশূল হতে হয়! কারা আবার কি মনে করে! আজ সিদ্ধান্ত নিয়েই লেখা শুরু করলাম।
ছাত্রলীগের এরা তো আমার দেশের সন্তান, আমাদেরই কারো ভাই, কারো আত্মীয়, কারো প্রতিবেশী। এরা হয়তো দেশের কল্যাণ ও ছাত্রসমাজের জন্য কিছু করার চিন্তা নিয়েই রাজনীতিতে এসেছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তারা আজ ছাত্রসমাজের অঘোষিত শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ছাত্রনেতাদেরই কেউ কেউ ব্যবহার করছে। সমাজে তৈরি করছে প্রতিহিংসার দাবানল, ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা। ক্ষমতার মুলা সামনে ঝুলিয়ে ছাত্র রাজনীতির নবীন ছেলে বা মেয়েটিকে করে তুলছে অন্ধ। কেউ সমাজে পরিচিতি লাভ করছে ক্যাডার, আবার কেউ সন্ত্রাসী, কেউ অমুক-তমুক ভাইয়ের ডান-বাম হাত হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আসা ছাত্রটি যে লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, তা আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বরং সে হয়ে উঠছে প্রতিহিংসাপ্রবণ। কাকে টেক্কা দিয়ে কীভাবে ওপরে ওঠা যায়, এটাই চিন্তায় থাকে। সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে নিজেই শুধু ক্ষমতাধর হবে, অন্য কেউ যেন না হয়। এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই নেতৃত্বের একটা জায়গায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নেতৃত্বের প্রত্যাশা নিয়েই শুরু হয়ে যায় অপরের সাথে দ্বন্দ্ব।
গত ১১ এপ্রিল কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলম গিয়েছিলেন কর্মী সভা করার জন্য। মূলত সেখানে কাউন্সিল মিটিং কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারির উপস্থিতিতেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। নেতারা কমিটি গঠন সম্পূর্ণ না করেই ফিরে আসেন। পরদিন মারা যায় সাইফুল নামে একজন। গুলীর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাইফুলকে ছুরি দিয়ে আহত করে তাদেরই অপর পক্ষ। সাইফুলের নিথর দেহ এমনভাবে রাস্তায় পড়েছিল তা যে কোন বিবেকবান মানুষেরই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে বাধ্য।
ঠিক যেভাবে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াত-শিবিরের মুজাহিদ, মাসুম, জসিমদের লাশ পড়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশি কষ্ট অনুভব করেছি কারণ সাইফুল আমার খুব পরিচিত ছিল। সাইফুল স্থানীয় এমপি বাহারের গ্রুপ করে, যারা মেরেছে সুমন দাসের নেতৃত্বে, তারা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের গ্রুপ করে।
একইভাবে ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা সাতটায় হল দখলকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও রংপুরের কিশোরগঞ্জ গ্রামের মিল্টন এবং বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও দিনাজপুর সদর উপজেলার বড় গুড়গোলা এলাকার জাকারিয়া নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থা ছয়জনের।
দিনাজপুরের এই ঘটনাও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অরুণের সমর্থকদের সাথে ছাত্রলীগের রজ্জবের সমর্থকরা শেখ রাসেল হলের দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এর আগে গত বছরের ২০ নবেম্বর শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাবিপ্রবিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে নিহত হন সিলেট সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন। ২২ নবেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় শিরোনাম হয়- ‘ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ, ৬ বছরে নিহত ৩৯’। সেখানে বলা হয়েছে এই হিসেব ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ নবেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত। সেখানে আরো তুলে ধরা হয়েছে এসব কর্মকান্ডের কারণে ছাত্রলীগ ১৬৩ জনকে বহিষ্কার করেছে। যদিও এ সকল বহিষ্কার শুধুই লোক দেখানো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ফিল্মি কায়দায় ভারি অস্ত্র হাতে ছাত্রদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়ে বহিষ্কার হয়েছিল যে তুহিন, সেই তুহিনই আবার পরে বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারি হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অস্ত্রের প্রশিক্ষণের কথা মনে হয় সবারই কম বেশি জানা আছে। এর আগে আরো কত হত্যাকান্ড যে ঘটেছে এর কোন ইয়ত্তা নেই।
ছাত্রী নির্যাতনের কথা বলতে গেলে আসলে নিজেদেরকেই লজ্জিত হতে হয়। সেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানিকের সেঞ্চুরির ঘটনা সকলেরই মনে থাকার। আজো অবাক হই, মানিক সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করে উৎসব পালন করেছিল! তখন মন্ত্রিপর্যায়ের একজন নাকি তার পিঠ চাপড়িয়ে বলেছিলেন, দুষ্টু ছেলে এসব করতে নেই! বাহ!
এই পয়লা বৈশাখে যা দেখালো তারা! টিএসসি, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ যতগুলো ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার সবকটিতেই ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা জড়িত। এসব ঘটনায় নিজ দলের ৮ জনকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। পর্দার অন্তরালে যে আরো কত কী ঘটছে!
ছাত্র-ছাত্রীদের নির্যাতনের পাশাপাশি শিক্ষকরাও বাদ যাচ্ছে না ছাত্রলীগের হাত থেকে। গত ১২ এপ্রিল ফেইসবুকের একটি কমেন্টের সূত্র ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে তার ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ। তার সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তা শুধু ছাত্রলীগ নয় পুরো ছাত্রসমাজকে লজ্জিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আহ্বানে বিচারের দাবিতে সেখানে একাডেমিক কর্মবিরতি চলছে। অন্যদিকে আবার ছাত্রলীগই সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেইসবুকের কমেন্টের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। শিক্ষক নির্যাতন করে আবার মামলা দায়ের!
গত নবেম্বর ২০১৪ হাবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজনকে বহিষ্কার করার পরে কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে শিক্ষকরা আবার বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন। 
গত কিছুদিন আগে প্রশ্ন ফাঁস ছিল সকলের মুখে মুখে। এক্ষেত্রেও ছাত্রলীগই প্রধান ভূমিকায়, তা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে।
এছাড়া অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, ভর্তিবাণিজ্য, সাংবাদিক-পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনা বার বারই ঘটিয়ে আলোচনায় এসেছে, আসছে ছাত্রলীগ।
হায়রে ছাত্র রাজনীতি! হায়রে ছাত্রলীগ! হায়রে মনুষ্যত্ববোধ!
প্রশ্ন হলো, শুধু কি ছাত্রলীগই দায়ী? নাকি ছাত্রলীগের পাশাপাশি যারা তাদেরকে আজ বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিজের কাজে ব্যবহার করছে তারাও দায়ী? ছাত্ররাজনীতি তো হবে ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতার জন্য, কল্যাণের জন্য, ভবিষ্যৎ সৎ যোগ্য আদর্শ নেতৃত্ব তৈরির জন্য। এখনই যদি ছাত্রনেতারা প্রতিহিংসা, লুটপাট, দখলদারী, অনৈতিকতার সাথে জড়িয়ে যায়, তাহলে জাতি তাদের কাছ থেকে কি পাবে?
বর্তমানে ছাত্রলীগের যে অবস্থা, তাতে এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি তোলা অস্বাভাবিক হবে না। কিন্তু আওয়ামী সরকার ছাত্রলীগকে বড় আদরেই রেখেছে। এই সংগঠটির লাগাম টেনে ধরা আজ সময়ের দাবি। কিন্তু কে ধরবে? কারা সেই সাহসী?

Ads