শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১২

পদ্মা সেতু ও বিশ্বব্যাংক সরকারের অবস্থান স্বচ্ছও নয় জবাবদিহিমূলকও নয়


পদ্মা সেতু এখন বিব্রতকর ইস্যু। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছে না। বিশ্বব্যাংকের এ অবস্থান স্পষ্ট। অপর দিকে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য যেমন অসঙ্গতিপূর্ণ, তেমনি পরস্পরবিরোধীও। অবস্থা এমন সৃষ্টি করা হয়েছে যে জনগণ শুধু ুব্ধ নয়, অসহায়ও বোধ করছে। কারণ পূর্বাপর প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, অর্থমন্ত্রী বলছেন ভিন্নভাবে। একবার বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত মেনে নেয়া হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে, দেশপ্রেমের কারণে অভিযুক্ত মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ প্রতিক্রিয়ায়ও অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগকে তিনি শর্ত পূরণের দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং মন্তব্য করেছেন ‘আবুল ডাউন’। এরপর জনগণ আশা করেছিল সরকারের অবস্থান আর অস্বচ্ছ থাকবে না। নীতিনির্ধারকেরা অভিন্ন সুরে কথা বলবেন। 

তিক্ত হলেও সত্য যে, লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে পুরো বিষয়টিকে আবার বিতর্কিত করে তুললেন। প্রধানমন্ত্রী আবার বিশ্বব্যাংককে অভিযুক্ত করে বললেন, বিশ্বব্যাংকের আবদার রক্ষা না করায় ঋণচুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তিনি পদত্যাগকারী মন্ত্রীকে দেশপ্রেম ও সততার সনদ দিলেন। বিশ্বব্যাংক ইস্যুতে সরকারের অবস্থান স্বচ্ছও নয়, স্পষ্টও নয়। এ বিষয়টিই জনগণকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। পদ্মা সেতু এত দিন হয়নি। সব কিছু ইতিবাচক না হলে নিকট-ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি ছিল জনগণের একটি স্বপ্ন, সরকারের প্রতিশ্রুতি। জনগণের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কষ্ট, সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হজম করা সম্ভব। কত স্বপ্নই তো অপূরণীয় থাকছে, অনেক প্রতিশ্রুতিও পূরণ হচ্ছে নাÑ সেসব কষ্ট ও দুঃখবোধ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে জনগণ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, জনগণ সরকারের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতাকে দায়ী করে সান্ত্বনা খুঁজে নিতে চেষ্টা করছে। জনগণ যা বলার প্রথম সুযোগেই ব্যালটের মাধ্যমে প্রকৃত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেবে। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির একটি বাড়তি সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যও। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডাতে পারল না। মেরুদণ্ড সোজা করে সত্য কথা বলে জনগণের সামনে দাঁড়ানোর সাহসও প্রদর্শন করল না, কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাংকের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো দৃঢ়তাও প্রদর্শন করল না। এর ফলে জাতি হিসেবে আমরা অপমানিত হলাম। রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সম্পর্কে বিশ্বজনমত শ্যেনদৃষ্টিতে তাকানোর সুযোগ পেল। সরকার দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিতে বাধ্য হলো। বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে দায় নিলো কিন্তু পরিমিতিবোধ ও বাকসংযমের অভাবে অভিযোগ থেকে সরকার মুক্ত হলো না। 
আমরা মনে করি, দেশের জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত। জনগণের সামনে সব অভিযোগ তুলে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী করা হয়েছে তাও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকদের সামনে দূরদর্শী হওয়ার ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শনের সুযোগ কমে গেছে। তার পরও দলীয় ইগো, ব্যক্তিগত জেদ ও ুদ্রচিন্তা পরিহার করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার অবকাশ আছে। এখন জাতীয় ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করা এবং দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা জরুরি। সরকার যায় সরকার আসে, বিশ্বব্যাংকসহ সব বিশ্বসংস্থার সাথে সমঝোতা করে চলার দায় ও প্রয়োজন দুটোই থেকে যায়। তাই জাতীয়ভাবে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার স্বার্থে সরকারকে দ্বৈতনীতি পরিহার করে পথ চলতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করলে সমস্যা কমে আসবে। দ্বিমুখী নীতি ও সাংঘর্ষিক বক্তব্য পরিহার করে চললে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাতে ভবিষ্যতের জন্য অভিযোগ ও কলঙ্কমুক্ত হয়ে পথচলা সহজ হবে। শুধু পদ্মা সেতু নয়, আরো বড় পরিকল্পনায় উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্বব্যাংককে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads