শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১২

সাংবাদিক হত্যা ও লাঞ্ছনা পুলিশ দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে



বাংলাদেশে যেন সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের উৎসব চলছে। প্রায় প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকসমাজ নিজেরাই এখন খবর হয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার প্রহরী বলা যায় তাদের। সেখানে যদি সাংবাদিকেরাই নিজেদের স্বাধীনভাবে চলার অধিকার হারান অন্যদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতে পারে। হবিগঞ্জের এক স্থানীয় সাংবাদিককে ২০ টুকরো করা হয়েছে। খুনিরা রেললাইনের ওপর ফেলে রেখে যায় তার ছিন্নভিন্ন শরীর। লাশের অবস্থা দেখে বোঝা যায় খুব ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। খুনিরা কাজটি করতে মোটেও বিচলিত হয়নি, তড়িঘড়ি করেনি। মনে হচ্ছে খুনিদের অভয়ারণ্যে বাংলাদেশের মানুষ বাস করছে। একজন সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য একেবারেই নেই। যেকোনো সময় খুনিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে জীবন হারানো ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের সাংবাদিক জুনাইদ আহমেদের আরেকটি পরিচয় তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার সাথে বিরোধ রয়েছে স্থানীয় কিছু মানুষের। ঘটনার দিন তিনি পেশাগত কারণে জেলা শহরে যান। রেললাইনে লাশ পাওয়া এবং সর্বশেষ একজন মেম্বারের সাথে কথা হওয়ার মধ্যে এক ঘণ্টার ব্যবধান মাত্র। অর্থাৎ এক ঘণ্টার মধ্যে খুনিরা তাকে নির্বিঘেœ হত্যা করে। তারপর লাশ টুকরো টুকরো করে রেললাইনে ফেলে রাখে। এতে প্রমাণ হয় খুন করা কত সহজ। জনবহুল শহরে খুনিরা অবাধে মানুষ হত্যা করছে। গরু কাটার মতো লাশকে টুকরো টুকরো করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা যদি খুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকত তাহলে এ কাজ এতটা সহজ হওয়ার কথা ছিল না। 
সাংবাদিকদের ওপর প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনেরা হামলে পড়ছে। এর কারণ হচ্ছে সর্ববিস্তৃত দুর্নীতি। সাংবাদিকেরা দুর্নীতি ও চরম অনিয়মের বিরুদ্ধে চোখ বুজে বসে থাকতে পারেন না। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নাজেহাল হয়েছেন যশোরের দুই সাংবাদিক। স্থানীয় ওসি একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধির গলা চেপে ধরে লাঞ্ছিত করেন। এ ছবি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সাথে থাকা পুলিশদের নির্দেশ দেন অন্য সাংবাদিকদের পেটানোর জন্য।
দূর-দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের হয়রানি ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে সকালে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান একুশে টেলিভিশনের যশোর প্রতিনিধি শিকদার খালিদ, ক্যামেরাম্যান টুটুল ও যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দনের প্রতিবেদক কাজী আশরাফুল আজাদ। অফিস ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে তারা ভুক্তভোগীদের সাাৎকার নিচ্ছিলেন। এ সময় ভবনের দোতলার বারান্দায় এসে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাসুম হাসান সাংবাদিকদের গালাগাল করতে থাকেন। কর্মচারীদের ডেকে তিনি বলেন, ‘ওদের ধরে আন।’ একপর্যায়ে দোতলা থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্যান্ডেল ছুড়েও মারা হয়। পাসপোর্ট করতে আসা কয়েক শ’ লোক এই আচরণে হতভম্ব হয়ে যান।
পুলিশ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে দারুণ সখ্য লক্ষ করা গেল এ ঘটনায়। সাংবাদিকেরা ভুক্তভোগী জনসাধারণের পক্ষে যখন খবর সংগ্রহ করছিলেন তখন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেন। যিনি সাংবাদিকের কলার ধরে লাঞ্ছিত করেন এবং অধীনস্থ পুলিশদের সাংবাদিকদের মারার জন্য নির্দেশ দেন এর আগেও তিনি ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাড়াবাড়ি আচরণ করে বিতর্কিত হন। পুলিশের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে আইনগত অবস্থান নেয়া। দেখা গেল তারা উল্টো সহযোগী হয়ে গেল তাদের। একই কারণে হবিগঞ্জের সাংবাদিক প্রাণ হারালেন খুনিদের হাতে। পুলিশ এখন যেন অন্যায়কারীদের পক্ষের শক্তি। তাই খুনি, সন্ত্রাসী ও দুর্র্নীতিবাজদের এখন পোয়াবারো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads