বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১২

ভারতে আবারো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিচারহীনতা দৃষ্কৃতকারীদের উসকে দেয়



আবারো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে প্রতিপক্ষের হামলায় ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছে। প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে অপর ঘটনায় দু’জন প্রাণ হারায়। গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিংবা অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মতো বড় বড় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ছাড়াও দেশটিতে প্রায়ই ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রত্যাশিত অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের সাথে এটা বেমানান হলেও নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও ধ্বংস তাণ্ডবের ঘটনা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। 
আসামে এবার শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাতের চরিত্র অন্য ঘটনাগুলোর চেয়ে ভিন্ন। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃবিদ্বেষ ভারতের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের চেয়ে কম। এদের মধ্যে সাধারণত সম্প্রীতি বজায় থাকে। দিল্লি সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে তারা স্বাধীনতা ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার। এবার দেখা যাচ্ছে, বোড়ো উপজাতির অমুসলিম জঙ্গিরা সংখ্যালঘু মুসলিম গ্রামগুলোতে হামলা করছে। এই বর্বরতায় মুসলিমরা প্রাণ হারাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অসহায় মুসলিমরা পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কুচবিহারে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। কোকড়াঝার এলাকায় গত শুক্রবার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হামলায় চার বোড়ো যুবক নিহত হন। এ জন্য নিছক সন্দেহবশত মুসলিমদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু হয়। এমনকি, ৫০০ ুদ্র গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়। এলাকায় সরকার কারফিউ জারি করেছে। অপর দিকে উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে মসজিদের পাশ দিয়ে উচ্চ আওয়াজে গানবাজনা করতে করতে যাচ্ছিল শিবভক্তরা। রোজাদার মুসলিমরা শোরগোল না করার অনুরোধ করলে ওরা ভাঙচুর ও সংঘর্ষ শুরু করে। এ সময় দুই মুসলিম প্রাণ হারান। 
আসামের দাঙ্গার ঘটনাটি রহস্যজনক। চারজন যুবকের হত্যার জের ধরে দাঙ্গার সূত্রপাত। কারা এটা ঘটিয়েছে তার তদন্ত হওয়ার আগেই বোড়োরা মুসলিমদের আক্রমণ করে বসে। এতে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক, দাঙ্গার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ উসকানি দিচ্ছে। এসব এলাকায় ধর্ম-বর্ণভেদে সম্প্রীতি বিরাজ করে থাকে। অন্য দিকে বেরিলির ঘটনাটি উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একটি সাধারণ চিত্র। সেখানে উগ্র হিন্দুদের আক্রমণের শিকার হয়নি এমন কোনো সম্প্রদায় নেই। বিভিন্ন জাতে বিভক্ত হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যেও অত্যাচারের ঘটনা ঘটায়। খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীও আক্রমণের শিকার হয় উগ্র হিন্দুদের দ্বারা। ভারতের অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে মুসলিমরা ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। এ জন্য সরকার দায় এড়াতে পারে না। হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি নতুন দাঙ্গাহাঙ্গামার জন্য উসকানি জোগায়। আমরা আশা করব, ভারত সরকার এবার যথাযথ উদ্যোগ নেবে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে, যাতে দৃষ্কৃতকারীরা দাঙ্গা বাধানোর সাহস না পায়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads